আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৪

0
70

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৪

মৃদু বাতাসে শুভ্রতা খোলা চুলগুলো উড়ে এসে পড়ছে রাদিফের মুখে। মন মাতানো গন্ধে রাদিফ যেন বারবার প্রেমে পড়ছে শুভ্রতার। শুভ্রতার মুখের দিকে অপলক চেয়ে রইলো রাদিফ। শুভ্রতার বেশ লজ্জা লাগল। লোকটা কেমন হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

খানিক বাদেই শুভ্রতা আর রাদিফ পৌঁছে গেল বিয়ে বাড়িতে। জাকজমক সাজে সাজানো হয়েছে বাড়িটা। রাদিফ খানিকটা ঝুকে শুভ্রতার কানে কানে বলল
“বউ আমার না বিয়ে করতে মন চাইছে।”

রাদিফের কথায় চকিতে ওর দিকে তাকালো শুভ্রতা। রাদিফ হেসে দিয়ে বলল
“এমন অনুষ্ঠান করে যদি আমাদের আবার বিয়ে হয় তাহলে কেমন হবে বলো তো বউ।”

শুভ্রতা লাজুক হেসে বলল
“আপনিও না”

রাদিফ হেসে ভিতরে ঢুকলো। নিবিড় রেডি হচ্ছিলো। রাদিফ সেদিকে গেল। শুভ্রতা নিবিড়ের মায়ের কাছে গেলো। নিবিড়ের মা হাসিমুখে বললেন
“শুভ্রতা মা তুমি এসেছো। তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম।”

শুভ্রতা ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বলল
“আন্টি ভালো আছেন?”

“হুম মা তোমাকে দেখে একদম ভালো হয়ে গেছি। কি সুন্দর লাগছে তোমাকে!”

শুভ্রতা মুচকি হেসে বলল
“ধন‍্যবাদ আন্টি”

অন‍্যদিকে রাদিফ নিবিড়ের রুমে ঢুকতেই নিবিড় একটা বালিশ ছুড়ে দিলো ওর দিকে। রাদিফ বালিশ ধরে বলল
“কি করছিস এগুলো। লেগে যাবে তো।”

নিবিড় গাল ফুলিয়ে বলল
“হ তুই থাক তোর বউয়ের কাছে। আমি তো কেউ না তোর।”

রাদিফ ভ্রুযুগল কুচকে বলল
“মেয়েদের মতো এতো ঢং কোথায় থেকে শিখলি তুই”

নিবিড় মুখ ঘুরিয়েই বসে রইলো। রাদিফ বেশ কিছু সময় নিয়ে মানালো ওকে।

—————-

তুর হা হয়ে বসে আছে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সামনের সাত প্লেট ফুচকার দিকে। কি হচ্ছে তার সঙ্গে এগুলো। সামনে বসে থাকা রিজভীর দিকে তাকালো সে। রিজভী পায়ের উপর পা রেখে বসে মুখটা শক্ত করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ আগেই রিজভী তুরকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসেছে। এখন তারা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।

তুর অবাক কন্ঠে বলল
“এতো ফুচকা কে খাবে!”

রিজভী দাঁতে দাঁত চেপে বলল
“কেন তুমি!”

তুর যেন এবার অবাকের চরম পর্যায় চলে গেল। কি বলছে এসব এই লোক। মাথা ঠিক আছে তো। তুর অবাক কন্ঠেই বলল
“আপনি ঠিক আছেন তো। কি বলছেন এসব।”

রিজভী এবার রাগী কন্ঠেই বলে উঠলো
“রাস্তায় তো ভালোই হেসে হেসে ফুচকা খেতে পারো। ছেলে নিয়ে ঘুরে বেড়াও।সেই পাশের ছেলে যে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে তা তো চোখে পড়ে না। খুব শখ না রাস্তার পাশে গিয়ে হেসে হেসে ফুচকা খাওয়ার। সব শখ আজ মেটাবো। এখনি সব ফুচকা খাবে।”

তুরের এবার চিক্কুর দিয়ে কান্না করতে মন চাইছে। রিজভী এবার ধমকে বলল
“খাও বলছি”

তুরের এবার রাগ উঠে গেল। তুর রাগান্বিত কন্ঠে বলল
“রাস্তায় ওই ব‍্যাটার লগেই আমি ফুচকা খাবো হেসে। আপনি কি করবেন!”

রিজভীর রাগে কপালের রগ ফুলে গেল। চোখ লাল হয়ে এলো। মুখের রঙ পাল্টে গেল। তুর রিজভীর দিকে তাকাতেই ভয়ে কেঁপে উঠলো রিজভীর ভয়ংকর চেহারা দেখে। পরপর কয়েকটা ঢোক গিললো সে। তুর আর কথা বাড়ালো না ফুচকা খেতে শুরু করলো। কয়েকটা খাওয়ার পরেই তুর বুঝতে পারলো ফুচকাগুলোই বেশ ঝাল দেওয়া। চোখ মুখের রঙ পাল্টে গেল তার। তবুও খেতেই থাকলো সে।

রিজভী পলকহীন গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুরের দিকে।

দুই প্লেট ফুচকা খাওয়ার পর রিজভী ধীর কন্ঠে বলল
“থাক আর খেতে হবে না।”

তুর কথা শুনলো না খেতেই থাকলো। রিজভী এবার রেগে তুরের হাত চেপে ধরলো। তুর হাত ছাড়ানো চেষ্টা করতে করতে বলল
“ছাড়ুন আমাকে খেতে দিন।”

রিজভী একটা ওয়েটারকে ফুচকার প্লেটগুলো নিয়ে যেতে বলল।

তুর কটমট দৃষ্টিতে তাকালো রিজভীর দিকে। ঝালের কারণে ঠোঁট লাল হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে নাক দিয়ে পানি বের হচ্ছে। ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।

রিজভী তুরের হাত ছেড়ে তুরের দিকে টিস্যু এগিয়ে দিলো। তুর ঝালে মুখ দিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। নাজেহাল অবস্থা তার। তুর রক্ত চোখ নিয়ে তাকালো রিজভীর দিকে। তুরকে বেশ অস্বাভাবিক লাগছে। রিজভীর হুট করেই খারাপ লাগা শুরু হলো। বেশি বেশি কি হয়ে গেল।

তুর মাথা ধরে বসে রইলো কিছু সময়। তুরকে চুপ থাকতে দেখে রিজভী কিছু বলতে নিবে তখনই তুর নরম কন্ঠে থেমে থেমে বলে উঠলো
“আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসবেন।”

রিজভী চিন্তিত কন্ঠে বলল
“বেশি খারাপ লাগছে।”

তুর এবার একাই ব‍্যাগটা কাধে নিয়ে উঠে এগিয়ে যেতে নিলেই রিজভী তুরের এক হাত টেনে ধরলো। তুর পিছনে ফিরে তাকালো না।

রিজভী অপরাধী কন্ঠে নিচু কন্ঠে বলল
“সরি রাগ উঠে গিয়েছিল।”

তুর কিছু বলল না। রিজভী উঠে দাঁড়ালো। কিছু বলতে নিবে তার আগেই তুর বলল
“দয়া করে আমাকে যেতে দিন।”

রিজভী কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বলল
“তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন তুর! কি হয়েছে বলো আমায়!”

তুর এবার ক্ষেপে গেল। খানিকটা চেঁচিয়ে বলল
“বাসায় যাবো বললাম না। কথা কানে যায় না আপনার।”

রিজভী আর কথা বাড়ালো না। গাড়িতে করে তুরকে নিয়ে তুরের বাড়ির সামনে আসতেই তুর গাড়ি থেকে নেমে গেল। তুর নেমেই হনহন করে চলে গেল। রিজভী কিছু বলতে গিয়েও বলল না।

রিজভী ভেবেছিল তুর হয় তো কিছু বলবে। কিন্তু সে তো কিছুই বলল না। রিজভী তুরের যাওয়ার পানেই তাকিয়ে রইলো। রিজভী চোখের আড়াল হয়ে যেতেই ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো রিজভী। গাড়ি চালিয়ে চলে এলো বাসায়।

———————

নিবিড়ের বিয়ের সব কাজ শেষে রাদিফ আর শুভ্রতা বেড়িয়ে পরলো সেখান থেকে। নিবিড়ের মা ওদের থেকে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু রাদিফ রাজি হয়নি। ওরা কাল আবার অনুষ্ঠানে আসবে বলে চলে আসে।

শুভ্রতা আর রাদিফ দুইজন পাশাপাশি হেঁটে চলছে ফুটপাত দিয়ে। হুট করেই রাদিফ শুভ্রতার একটা হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে নিলো। শুভ্রতা কিছু বলল না। বেশ ভালো লাগছে তার এভাবে একসঙ্গে হাঁটতে। রাদিফের মনটা বেশ ফুড়ফুড়ে লাগছে। সে চাইছে সময়টা এখানেই থমকে যাক। প্রিয়তমার হাত ধরে পাড়ি দিতে চায় হাজার হাজার মাইল। ভেবেই ঠোঁট প্রসারিত হলো রাদিফের। শুভ্রতা মনোযোগ দিয়ে রাদিফের পায়ের ধাপের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটছে। শুভ্রতা আঙুল তুলে আইসক্রিমের দোকানে দিকে দেখিয়ে বলল
“একটা আইসক্রিম কিনে দিবেন আমাকে!”

শুভ্রতার এমন বাচ্চাদের মতো করে আইসক্রিম চাওয়াতে বেশ হাসি পেল রাদিফের। হুট করেই হেসে দিলো সে। রাদিফকে হাসতে দেখে ঠোঁট উল্টালো শুভ্রতা। রাদিফ শুভ্রতাকে আইসক্রিমের দোকানে গিয়ে দুটো আইসক্রিম কিনলো। শুভ্রতার হাতে আইসক্রিম দিতেই শুভ্রতা বেশ খুশি হলো। শুভ্রতা কৌতূহল নিয়ে বলল
“দুটোই আমার”

রাদিফ মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। শুভ্রতা খেতে লাগল। শুভ্রতা অর্ধেক আইসক্রিম খেতেই রাদিফ শুভ্রতার হাত থেকে আইসক্রিমটা কেড়ে নিয়ে খেতে লাগল।

শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“এটা কি হলো!”

রাদিফ ভাবলেশহীন ভাবে বলল
“কি আর হবে তুই অন‍্য আইসক্রিমটা খাও।”

শুভ্রতা মুখে ভেংচি দিয়ে অন‍্য আইসক্রিমটা খেতে লাগল।

আইসক্রিম খাওয়া শেষে রাদিফ একটা রিক্সা ডাকলো।

রিক্সাতে দুইজন মিলে উঠে বসলো। রাদিফে শুভ্রতার মাথা নিজের কাধে রাখলো। শুভ্রতা মুচকি হাসলো। ওর খুব ক্লান্ত লাগছিল। এই শান্তির কাধটাই তো এত সময় চাইছিলো। লোকটা কি সুন্দর তার মনের সকল কথা বুঝে যায়।

রাদিফ শুভ্রতাকে আগলে বসে রইলো। শুভ্রতার চুলের সুগন্ধ ভেসে আসছে রাদিফের নাকে। রাদিফের শুভ্রতা। তার ভালোবাসা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সে জানে শুভ্রতাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তার কি চাই। রাদিফ আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো শুভ্রতার কপালে।

শুভ্রতা চুপচাপ গুটিশুটি মেরে রাদিফের কাধে মাথা হেলিয়ে বসে রইলো।

হালকা ঠান্ডা বাতাসে পরিবেশটাও যেন এক স্মৃতিমূখর মুহূর্তে সৃষ্টি করেছে। রাদিফ কি যেন মনে করে পকেট থেকে ফোন বের করে চুপচাপ কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। শুভ্রতা কপাল কুচকে বলল
“চুপ করে ছবি তোলা লাগবে কেন!”

রাদিফ আমতা আমতা করতে লাগল। শুভ্রতা রাদিফের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল
“সুন্দর করে হাসি দিন।”

শুভ্রতার কথায় রাদিফ হাসলো। শুভ্রতা হাসিমুখে ফটাফট কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো। ছবি তোলা শেষে ছবি গুলো দেখতে দেখতে বলল
“পিকগুলো বেশ সুন্দর হয়েছে। আমাকে পাঠিয়ে দিয়েন তো।”

রাদিফ ধীর কন্ঠে বলল
“আচ্ছা”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে