আপনার শুভ্রতা পর্ব-১৩

0
147

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১৩

রাদিফ অনড় অবস্থাতে থেকেই বলল
“যেতে হবে না”

তখনই রাদিফের ফোনটা বেজে উঠলো। রাদিফ শুভ্রতাকে এক হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে রেখেই অন‍্য হাত দিয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরে বলল
“হালা এত সকালে ফোন দিছোস কেন!”

নিবিড় কপাল কুচকে বলল
“সকাল কই ব‍্যাটা। কাল হলুদের পর এখানে থাকতে বললাম থাকলি না। আজ আমার বিয়ে আসবি না।”

“যাইতাম না কি করবি!”

নিবিড় রাগান্বিত কন্ঠ বলল
“হুম এখন তো আসবিই না। বউ তো পাইছিস এখন তো আমারে চিনবিই না। নিজের বিয়েতে তো আমাকে বললিও না।”

রাদিফ ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“আইতাছি আর ড্রামা করা লাগতো না।”

নিবিড় হেসে বলল
“আয় বন্ধু আয়। তোরে নিয়ে আমি বিয়া করতে যামু।”

রাদিফ কল কেটে শুভ্রতার দিকে তাকালো। শুভ্রতা ভ্রুকুচকে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল
“আজ ওই নীল রঙের শাড়িটা পড়বে কেমন। আর ওতো সাজতে হবে হালকা সাজেই তোমাকে মায়াবতী লাগে। কাজল দিতে ভুলবেনা কিন্তু।”

রাদিফের কথা শুভ্রতা মুচকি হেসে বলল
“আচ্ছা বাবা সবই কর‍বো। আগে ছাড়ুনই তো।”

রাদিফ ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“কি আর করার যাও তাহলে।”

“আমি একা কেন যাবো! আপনিও ফ্রেশ হয়ে আসুন। নাস্তা করে তো আবার যেতে হবে।”

রাদিফ উঠে চলে গেল ওয়াশরুম। শুভ্রতা ঘর গোছ করে রুমের বাহিরে ‍বেড়িয়ে পড়লো।

সকালের নাস্তা শেষে শুভ্রতা শাড়ি বের করলো নীল রঙের। সময় নিয়ে শাড়িটা পড়ে নিলো সে। নীল কাঁচের চুড়ি পড়ে নিলো। সাথে গলায় কানে হালকা গহনা পড়ে নিলো। চোখে গাঢ় করে কাজল দিলো। নীল শাড়িতে বেশ মানিয়েছে তাকে। কাজল দেওয়াতে চোখ দুটো বেশ আর্কষণীয় হয়ে উঠেছে। ছোট গোল মুখটাতে মায়ার যেন কোনো কমতি নেই। পাতলা গোলাপি ঠোঁট বরাবরই শুভ্রতার সৌন্দর্য যেন আরও বাড়িয়ে তুলেছে রাদিফের কাছে। শুভ্রতা চুলটা বাঁধতে নিবে তখনই রাদিফ দরজায় হেলান দেওয়া থেকে ধীরে ধীরে শুভ্রতার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল
“চুলটা খোলায় থাকুক।”

শুভ্রতা চুল ছেড়ে দিলো। আয়নাতেই পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“রেডি হবেনা!”

রাদিফ ছোট করে উত্তর দিলো
“হুম”

রাদিফ টাউজারের পকেট থেকে একটা বেলি ফুলের গাজরা বের করে শুভ্রতার চুলের খাঁজে আটকে দিলো। শুভ্রতার দুইবাহু ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বেশ কিছুসময় শুভ্রতার মুখপানে চেয়ে বলল
“মাশাল্লাহ্ আমার মায়াবতীর যেন কারো নজর না লাগে।”

শুভ্রতা লাজুক হেসে মুখ নিচু করতেই রাদিফ শুভ্রতার থুতনিতে হাত রেখে শুভ্রতা লাজুক মায়াবতী মুখ‍টা উঁচু করে ধরে কপালে দীর্ঘ এক চুমু দিয়ে ধীর কন্ঠে বলল
“ভালোবাসি মায়াবতী”

তখনই রিজভী রুমে প্রবেশ করতেই চোখ হাত দিয়ে বলল
“আমি কিছু দেখিনি ভাই”

শুভ্রতা ছিটকে সরে গেল রাদিফের থেকে। রাদিফ চোখ ছোট ছোট করে রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল
“ঢং বাদ দিয়ে কি বলতে এসেছিস বল।”

রিজভী চোখ থেকে হাত সরিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলল
“না মানে তোমরা রেডি হয়েছো নাকি তাই শুনতে এসেছিলাম।”

রাদিফ ভাবলেশহীন ভাবে বেডের উপর রাখা নীল রঙের পাঞ্জাবি আর জিন্স নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল। রিজভী একবার সেদিকে তাকিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“ভাবি তুরের কি অন‍্য কোনো নাম্বার আছে?”

শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল
“কেন বলো তো!”

রিজভী আমতা আমতা করে বলল
“না মানে ঝগড়ার পরিমাণ একটু বেশি হয়ে গেছিলো। তাই আর কি ব্লক করেছে আমাকে।”

শুভ্রতা ভ্রু নাচিয়ে বলল
“দেবর জি তোমার ভাব ভঙ্গি তো ভালো ঠেকছেনা। প্রেমে টেমে পড়লে নাকি।”

রিজভী মাথা চুলকে হাসলো। শুভ্রতা হেসে বলল
“আর তো নাম্বার নেই। সমস্যা হবে না রাগ কমলে একাই ব্লক খুলে ঝগড়া করবে চিন্তা নিও না।”

রিজভী মাথা চুলকাতে চুলকাতেই বোকা হাসলো।

রাদিফ ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে বলল
“তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস। আমাকে তো খুব তাড়া দিলি। নিজে রেডি হবিনা।”

রিজভী ভাব নিয়ে শার্টের কলার ঝাকুনি দিয়ে বলল
“এই রিজভী কখনো রেডি হতে দেড়ি করে না। আমি আগে থেকেই রেডি।”

রাদিফ পাঞ্জাবি হাতা গোটাতে গোটাতে আয়নার সামনে গিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল
“রেডি হয়ে গেলেই ভালো। এখন গিয়ে গাড়ি বের করে। আমরা আসছি। আর বাবা কোথায় যাবে না?”

রিজভী ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“যাবেনা বলল। ছুটির দিনে সে ঘুম বাদ দিয়ে ওখানে যাবে না। আবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বের হবে। সব মিলিয়ে না করে দিছে।”

রাদিফ পারফিউম দিতে দিতে বলল
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুই তাহলে যা।”

রিজভী চলে গেল। শুভ্রতা এতক্ষণ আড়চোখে রাদিফকেই দেখছিলো। নীল পাঞ্জাবিতে লোকটাকে বেশ সুদর্শন লাগছে শুভ্রতার কাছে। ফর্সা গায়ে নীল রঙটা বেশ মানিয়েছে। চাপ দাড়ি,লম্বা নাক,মায়া ভরা চোখ,চোখে চিকন ফ্রেমে চশমা, এক কথায় শুভ্রতা যেন এক দফা ক্রাশ খেল রাদিফের দিকে।

রাদিফ শুভ্রতার আড়চোখে তাকিয়ে থাকার বিষয়টি খেয়াল করতেই দুষ্টু হেসে বলে উঠলো
“তোমারি তো জামাই বউ। পরে না তাকিয়ে থেকো। এখন যেতে হবে তো।”

রাদিফের কথায় লজ্জা পেল শুভ্রতা। তড়িঘড়ি করে চোখ সরিয়ে নিলো সে রাদিফের থেকে। রাদিফ ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে শুভ্রতার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর নাক টেনে দিয়ে বলল
“লজ্জাবতী”

বলেই শুভ্রতার ডান হাতটা ধরে রাদিফ বাহিরে চলে এলো।

রিজভী গাড়ি বের করে ওদের জন‍্যই অপেক্ষা করছিলো। তখনই ওরা এসে গাড়িতে বসতেই রিজভী ড্রাইভ করতে লাগল।

রাদিফ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলো। রাদিফ তখনই শুভ্রতার কোমরে হাত রেখে ওকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। শুভ্রতা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রাদিফের দিকে। রাদিফ অন‍্যদিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসলো। শুভ্রতা কিছু বলতেও পারছেনা। বললেই রিজভীর সামনে ওকে লজ্জায় পড়তে হবে। শুভ্রতা অসহায় দৃষ্টিতে রাদিফের দিকে তাকাতেই। রাদিফ দাঁত বের করে হাসলো। শুভ্রতা বিরবিরিয়ে বলল
“অসভ‍্য লোক”

রাদিফ শুভ্রতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
“শুধু তোমার”

শুভ্রতা মুখ ভেংচি কাটলো।

হুট করেই গাড়ি ব্রেক করাতে দুইজনই খানিকটা ঝুকে পড়লো। রাদিফ বলল
“কিরে রিজভী কি হলো!”

রিজভীর রাগে গায়ের শিরা উপশিরা জ্বলে জ্বলে যাচ্ছে। শ‍্যামবর্ণের মুখটা রাগের কারণে এক অদ্ভুত ভয়ংকর লাগছে। কপাল বেয়ে ঘাম জমে গেল বিন্দু বিন্দু। রাদিফ আবারো বলল
“কিরে কি হলো তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন!”

রিজভী পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“ভাইয়া আমার শরীরটা না ভালো লাগছে না। তুমি আর ভাবি না হয় বিয়ে বাড়ি চলে যাও গাড়ি করে। আমি রিক্সা করে বাসায় চলে যাই।”

রাদিফ বেশ অবাক হলো। হটাৎ করে রিজভীর কি এমন হলো যে ছেলেটা যাবে না বলছে। রাদিফ চিন্তিত কন্ঠে বলল
“শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে!”

“না ভাইয়া মাথাটা একটু ধরেছে। তোমরা চলে যাও। আমি বাসায় যাচ্ছি।”

“তুই একটা কাজ কর গাড়িতে তুই চলে যা। আমরা রিক্সায় চলে যাবো নি।”

“কিন্তু ভাইয়া!”

“কোনো কিন্তু না। সাবধানে যাস কেমন।”

বলেই রিজভীকে কিছু বলতে না দিয়ে রাদিফ আর শুভ্রতা নেমে গেল।

রিজভী সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে নিজেকে কন্টোল করা চেষ্টা করতে লাগল।

রাদিফ একটা রিক্সা ডাকলো। নিজে রিক্সায় উঠে শুভ্রতার উদ্দেশ্য হাত বাড়িয়ে দিলো। শুভ্রতা মুচকি হেসে রাদিফের হাতে হাত রাখলো। রাদিফও মুচকি হেসে শুভ্রতার হাত শক্ত করে ধরে রিক্সায় উঠালো শুভ্রতাকে। শুভ্রতা উঠতেই রিক্সা চলতে লাগল। রাদিফ শুভ্রতাকে একহাতে আগলে বসে রইলো।

শুভ্রতার ঠোঁটে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো। লোকটাকে যত দেখে সে যেন মুগ্ধ হয়। মনের গহীনে সুপ্ত অনুভূতিরা আনাগোনা করে। শুভ্রতাকে মুচকি হাসতে দেখে রাদিফের ঠোঁট ও প্রসারিত হলো। সেও তো চায় তার মায়াবতী সবসময় এমন হাসিখুশি থাকুক।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে