#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১২
সবাই হাসলো রাদিফের কথায়। তুর মুখ ভেংচালো রিজভীকে। রিজভী হাসলো।
রাদিফ নিজের হাসি থামিয়ে বলল
“আচ্ছা বাবা এখন মেইন কথায় আসি তাহলে। যেহেতু আমাদের বিয়েটা হুট করেই হয়েছে। কারো কোনো প্রস্তুতি ছিলো না। সেহেতু আমি সবাইকে ট্রিট দেওয়ার জন্য এখানে একত্রে ডেকেছি আমার শালিকারা ও মন খারাপ করে ছিলো। তাই এই ব্যবস্থা করা।”
তুর দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল
“জিজু তোমার মতো যদি আমি একটা জামাই পেতাম।”
তূর্য ভ্রুকুচকে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“তুর তোর বড় ভাই সামনে যে বসে আছে ভুলে গেছিস।”
“ভাইয়া আমি কি খারাপ কিছু বলেছি! বিয়ে তো করাই লাগবে একদিন। তুমি বুঝবে না। তোমার বোঝার বয়স হয় নি।”
তূর্য অবাক কন্ঠে বলল
“বুঝতে বুঝতে বুড়া হয়ে গেলাম আর তুই বলতেছিস বোঝার বয়স হয় নি।”
ওদের কথার মাঝেই খাবার চলে এলে। প্রসঙ্গ পাল্টে সবাই বিভিন্ন কথা বলতে লাগল।
খাওয়ার মাঝেই রিজভী তুরের কানে কানে বলল
“তোমার জিজুর চেয়েও ভালো জামাই হবে তোমার। আরে আমি রিজভী কোনো দিন খারাপ হতে পারি। আমি সবসময়ই ইনোসেন্ট ভোলাভালা ছেলে।”
তুর ঝট করেই রিজভীর পায়ে পারা দিলো। রিজভী কুকিয়ে উঠলো। অন্যদিকে তুরের এমন ভাব যে সে কিছুই জানেনা। তুর রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল
“কি বেয়ান সাহেব! হঠাৎ কি হলো আপনার!”
রিজভী কটমট দৃষ্টিতে তাকালো তুরের দিকে। তুরের পেট ফেটে হাসি পেলেও সে সেই হাসি চেপে রইলো। তূর্য রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল
“তাই তো রিজভী হুট করে এমন কুকিয়ে উঠলে কেন!”
রিজভী জোরপূর্বক হেসে বলল
“আসলে ভাইয়া পায়ে হয় তো লাল পিঁপড়া কামড়িয়েছে মনে হচ্ছে।”
রাদিফ ভ্রুকুচকে বলল
“কি বলিস লাল পিঁপড়া!”
“হুম ভাইয়া বড় লাল পিঁপড়া।”
তুর কটমটিয়ে তাকালো রিজভীর দিকে। রিজভী ভাবলেশহীন।
শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে রাদিফ হুট করেই শুভ্রতার বাম হাতটা চেপে ধরলো। শুভ্রতা কেঁপে উঠলো। হতভম্ব হয়ে শুভ্রতা তাকালো রাদিফের দিকে।
রাদিফের ভাব এমন যে সে এখন খাওয়া ছাড়া আর কোনোদিকে মনোযোগ দিতে ইচ্ছুক না। শুভ্রতা বিরবিরিয়ে বলল
“ভাব এমন যেন ভাঁজা মাছটা উল্টো করে খেতে পারেনা। অন্যদিকে ব্যাটায় যে হারে বজ্জাত কে বুঝবে!”
রাদিফের কানে শুভ্রতার কথা আসতেই সে মিটমিটিয়ে হেসে ধীর কন্ঠে বলল
“শুধু তুমি জানলেই চলবে।”
শুভ্রতা মুখ ভেংচালো। রাদিফ নিজের প্লেট থেকে খাবার তুলে শুভ্রতার মুখের সামনে তুলে ধরলো। শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে রাদিফের দিকে তাকালো। রাদিফ ইশারায় খেতে বলল।
কি করছে এই লোকটা এখানে সবাই আছে। শুভ্রতা চোরা চোখে তাকালো সবার দিকে। সবাই খাওয়াতে ব্যস্ত। শুভ্রতা খাবার মুখে নিতেই তুর ঠাস করে একটা ছবি তুলে নিলো। শুভ্রতা অবাক চোখে তাকালো তুরের দিকে। তুর দাঁত কেলিয়ে বলল
“জোশ হয়েছে একদম। ফাটাফাটি হো গেয়া মেরি ইয়ার।”
রাদিফ ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। রিজভী হুট করেই তুরের কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ছবিটা দেখে বলল
“ভাইয়া আর ভাবি পারফেক্ট জুটি।”
তুর ছো মেরে ফোন কেড়ে নিলো। রিজভী তুরের দিকে তাকালো। তুর মুখ ঘুড়িয়ে রইলো।
তূর্যের একটা ফোন আসায় সে একটা দূরে চলে গেল।
তুর সেদিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে শুভ্রতাকে বলল
“ভাইয়ার মতিগতি তো আমার ভালো ঠেকছে নারে শুভ্র।”
“কেন কি হয়েছে!”
“আরে বেডি বুঝিস না কেন! প্রেম প্রেম ভাব।”
“কি বলিস কে সে! ওই মেয়ে?”
তুর ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“নারে গাধাটা তো পরে খোঁজ নিয়ে দেখছে ওই মাইয়ার বিয়া হয়ে গেছে। এখন কাহিনী অন্য মাইয়ারে নিয়ে মনে হচ্ছে।”
“কি বলিস”
ওদের কথার মাঝেই রাদিফ কপাল কুচকে বলল
“কি এতো ফিসফিস করছো তোমরা! আমাদেরও একটু বলো আমরাও একটু শুনি।”
তূর্য ফোন পকেটে রেখে বসতে বসতে বলল
“কি এতো কথা শুনি তো।”
তুর জোরপূর্বক হেসে বলল
“তেমন কিছুনা।”
তূর্য আড়চোখে তাকালো নম্রতার দিকে। নম্রতা বেশ চুপচাপ। ভ্রুকুচকে এলো তূর্যের। তূর্য নম্রতাকে জিঙ্গাসা করলো
“নম্রতা কিছু সমস্যা!”
নম্রতা ধীর কন্ঠে বলল
“কিছু না”
সবাই যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই নম্রতা শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরে রইলো। শুভ্রতার মনটাও বেশ খারাপ হয়ে গেল। নম্রতার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলো শুভ্রতা। কপালে দীর্ঘ এক চুমু দিয়ে বলল
“পাগলী এমন করিস না। আমি যাবো তুই দেখা করতে আসবি। এমন মন খারাপ কেউ করে নাকি। এখান থেকে এখানেই তো।”
নম্রতা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রতা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে নম্রতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
“মন খারাপ করো না নম্রতা। যাও তোমাকে প্রমিস করছি প্রতি সপ্তাহে দুইদিন করে শুভ্রতাকে ওই বাসায় নিয়ে যাবো।”
নম্রতার চোখমুখ চিকচিক করে উঠলো। উচ্ছসিত কন্ঠে বলল
“সত্যি”
রাদিফ হাসিমাখা মুখেই বলল
“হুম একদম সত্যি। এখন অনেক রাত হয়েছে বাসায় না গেলে বাসায় টেনশন করবে তো।”
তূর্য তুর আর নম্রতা একটা রিক্সায় উঠে বসলো। চোখে আড়াল না হওয়া না পযর্ন্ত নম্রতা তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার দিকে। তুর বুঝতে পেরে নম্রতাকে একপাশ করে জড়িয়ে নিলো। নম্রতা মাথা এলিয়ে দিলো তুরের কাধে। তূর্য পিছু ঘুরে তাকালো একবার।
১৩.
কেটে গেছে পাঁচটা মাস..,
রাদিফের পড়াশোনা শেষ। সে এখন সম্পূর্ণ মন দিয়েছে তার বিজনেসে। দিন যাচ্ছে রাদিফের ভালোবাসা বেড়েই চলছে শুভ্রতার প্রতি। শুভ্রতা রাদিফের ব্যবহার বরাবরের মতোই মুগ্ধ। শুভ্রতা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে রাদিফের প্রতি।
রিজভী আর তুরের ঝগড়ার পরিমাণ বেড়েছে আগের চেয়ে। সাপে নেউলের মতো লেগেই থাকে সারাক্ষণ।
তূর্য হাজার ব্যস্ততার মাঝেও প্রিয়তমাকে ভালো রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। নম্রতার সঙ্গে রাতে ঘুমানোর আগে কথা বলে সময় নিয়ে। নম্রতা সারাদিনে কি করলো না করলো সব বলে তূর্যকে। তূর্য ভেবে পায় না যে মেয়ে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। সেই মেয়েটা তার সঙ্গে বকবক করতেই থাকে। হয়তো এটাই ভালোবাসা।
———————-
সদ্য গোসল করে শুভ্রতা চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো রাদিফ এখনো ঘুমাচ্ছে। ছুটির দিন বলেই কি এতো ঘুম পাড়তে হবে। শুভ্রতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে নয়টা বাজে। শুভ্রতা রাদিফের কাছে গিয়ে রাদিফের পিঠে আলতো হাতে ধাক্কা দিয়ে বলল
“শুনছেন উঠুন। বেলা অনেক হলো উঠুন এবার।”
রাদিফ হুট করেই শুভ্রতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। শুভ্রতা রাদিফের এমন করে হুট করে টানায় চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রইলো।
রাদিফ মুচকি হাসলো। শুভ্রতার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো যত্ন সহকারে কানের পিছে গুজে দিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল
“আমার মায়াবতী”
শুভ্রতা রাদিফের ঘুম জড়ানো কথায় কেঁপে উঠলো। তার শিরা উপশিরা দিয়ে শীতল রক্ত প্রবাহিত হয়ে গেল।
শুভ্রতাকে কেঁপে উঠতে দেখে রাদিফ ঠোঁট আরো প্রসারিত করে হেসে মুখ গুজলো শুভ্রতার গলার। শুভ্রতা এবার কাঁপা কন্ঠে বলল
“ছাড়ুন আমাকে প্লীজ। এমনিতেই অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। তার উপর দুপুরে তো আবার আপনার ফ্রেন্ডের বিয়ের দাওয়াত আছে। ওখানে তো যেতে হবে।”
রাদিফ অনড় অবস্থাতে থেকেই বলল
“যেতে হবে না”
তখনই রাদিফের
#চলবে