আপনার শুভ্রতা পর্ব-১১

0
149

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১১

রাদিফ নিরবতা ভেঙে বলল
“রেদোয়ানকে আমি কিভাবে চিনি জানতে চেয়েছিলে না সেদিন।”

শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“থাক না এসব কথা।”

রাদিফ শুভ্রতার একটা হাত নিজের হাতের মাঝে আবদ্ধ করে বলল
“তোমার জানা উচিত। রেদোয়ান আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো ছোটবেলার। কিন্তু প্রতিনিয়ত ওর হিংসা বাড়তো আমার উপর। এর কারণ হচ্ছে আমার রেজাল্ট ভালো আর ওর তেমন একটা ভালো না। এরপর থেকে আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। একদিন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে টিচারের কাছে বকা খাইয়ে নেয়। আমি তবুও কিছু বলিনি। পরে সবার কাছে আমি পরীক্ষায় চিট করেছি বলে। সবাই বিশ্বাস ও করে। পরে আমাকে সেই স্কুল থেকে টিসি দেয়। এরপর থেকে আমার সঙ্গে ওর সম্পর্কের ছেদ ঘটে। ওকে যখন দেখলাম ভার্সিটি তাও একি ডিপার্টমেন্টে আমি হতাশ হয়েছিলাম। তারপর তোমাকে সবার সামনে যখন অপমান করছিলো তখন আমি কিছু বলতে যাবো তখনই তুমি যেভাবে প্রতিবাদ করেছিলে আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম।”

রাদিফের কাধে শুভ্রতার মাথা হেলে পড়তেই রাদিফ ফিরে তাকালো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা ঘুমিয়ে পড়েছে। রাদিফ মুচকি হাসলো। শুভ্রতাকে আলতো করে কোলে তুলে নিলো সে। আলতো হাতে ওকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো। শুভ্রতাকে নিজের বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো সে।

———————

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে এসে পড়তেই শুভ্রতা ঘুম ভেঙে গেল। নিজেকে শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ দেখে ভ্রুকুচকে এলো শুভ্রতার। মাথা নামিয়ে পেটের দিকে তাকাতেই চোখগুলো গোল গোল হয়ে গেল শুভ্রতার। রাদিফের শক্ত হাত আকড়ে ধরে আছে শুভ্রতার পেট। শুভ্রতা বেশ লজ্জায় পড়ে গেল তখন কানে উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব হতেই কেঁপে উঠলো সে। রাদিফ শুভ্রতার কানে কানে বলল
“এখনি এমন লাল নীল হলে হবে মায়াবতী। শুধু তো একটু জড়িয়েই ঘুমিয়েছি। এটা কি অপরাধ হয়েছে জান।”

শুভ্রতার কর্ণকূহরে কথাগুলো পৌঁছাতেই শুভ্রতার অসস্থি যেন আরো বেড়ে গেলো। ছটফট করতে লাগল সে। রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার কানের লতিতে চুমু খেয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
“ঘুমাও তো জান।”

শুভ্রতা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল
“বেলা হয়েছে অনেক। ছাড়ুন আমাকে প্লীজ।”

রাদিফ শুভ্রতার পিঠে মুখ গুজে দিলো কোনো উত্তর না দিয়ে। তখনই দরজায় টোকা পড়লো। একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এলো অপর পাশ থেকে
“রঙ্গন দরজা খুলছোনা কেন! কি হলো দরজা আটকিয়ে রেখেছো কেন!”

রাদিফ বিরক্ত হলো বেশ। রাদিফ বিরক্ত নিয়েই বিরবিরালো। অন‍্যদিকে মেয়েটা দরজা ধাক্কাতেই আছে। রাদিফ বাধ‍্য হয়ে শুভ্রতাকে ছেড়ে দিলো। বিরক্ত নিয়েই বলল
“দরজাটা খুলে দেও তো।”

শুভ্রতা রাদিফের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। ওড়নাটা গায়ে ভালো মতো জড়িয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। একটা মেয়ে পরনে তার ওয়েস্টার্ন ড্রেস। চুল ছেড়ে রেখেছে। মেকআপ করে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। মেয়েটা ভ্রুকুচকে তাকালো শুভ্রতার দিকে। মেয়েটা শুভ্রতাকে এড়িয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলো রাদিফ উল্ট হয়ে শুয়ে আছে। গায়ে টিশার্ট না দেখে মেয়েটা রেগেই বলে উঠলো
“রঙ্গন তোমার একি অবস্থা। তুমি এই মেয়েটার সঙ্গে এক রুমে কি করছিলে।”

শুভ্রতা কপাল কুচকে ফেললো। এই মাইয়া বলে কি! মেয়েটা শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“কি সমস্যা তোমার। তুমি রঙ্গনের রুমে কি করছো!”

শুভ্রতা দুহাত বুকে গুজে দাঁড়িয়ে বলল
“একজন বিবাহিত পুরুষের রুমে নিশ্চয়ই তার বউ ছাড়া আর কেউ থাকবেনা সকালে।”

মেয়েটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো
“মানে”

রাদিফ টিশার্টটা পড়ে নিয়ে বেড থেকে উঠে এসে মেয়ে‍টার সামনে দাঁড়িয়ে বলল
“নিধি তুই এত সকালে আমার রুমে কেন এসেছিস। তোর হয় তো জানার কথা আমি এখন বিবাহিত। তোর আক্কেল নেই।”

নিধি রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“তুই এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছো! আমার মধ্যে কি ছিলো না যে আমাকে ছেড়ে ওই মেয়েটাকে বিয়ে করলে। মেয়েটার গায়ের রঙও তো..”

নিধির কথার মাঝেই রাদিফ একটা চড় বসিয়ে দিলো নিধির গালে। নিধি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রাদিফের দিকে। শুভ্রতাও থতমত খেয়ে গেল। রাদিফের রাগে চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল। রাগান্বিত কন্ঠেই বলে উঠলো
“পরবর্তীতে রাদিফ আহমেদ রঙ্গনের স্ত্রীকে কিছু বলার আগে ভেবে কথা বলবি। তাছাড়া ভুলে যাবো তুই আমার চাচাতো বোন। আমাকে তো তুই চিনিস আমি যা বলি তাই করি। খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।”

নিধি রক্ত লাল চোখে একবার শুভ্রতা আর রাদিফের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেড়তেই রিজভীর মুখোমুখি হয় নিধি। রিজভীকে হাসতে দেখে নিধির মেজাজ যেন আরও খারাপ হয়ে গেল। সে কিছু বলতে নিবে তার আগেই রিজভী বলল
“ভাইয়া আর ভাবির মাঝে আসার মতো ভুল করিস না। ভাইয়া ভালোবেসে ভাবিকে বিয়ে করেছে। এটা মনে রাখিস।”

নিধি কিছু না বলে ছুটে চলে গেল।

———————

খাবার টেবিলে বসে সবাই একসঙ্গে খাবার খাচ্ছিলো। তখনই রাদিফ রফিকুল সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল
“বাবা নিধি এসেছিলো সকালে। এসেই আমার রুমে চলে আসে কোন সাহসে। আমি একটা কথা বলে দিচ্ছি ও যদি আমাদের মাঝে আসে তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

রফিকুল সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বললেন
“আমি তোমার চাচার সঙ্গে কথা বলবো এই নিয়ে।”

————–

খাওয়া শেষে রুমে আসতেই শুভ্রতা রাদিফকে বলল
“ওই মাইয়া আপনার সঙ্গে এতো চিপকে চিপকে থাকতে চায় কেন!”

শুভ্রতার কথায় কপাল কুচকালো রাদিফ। পরক্ষণেই ঠোঁটে শয়তানি হাসি নিয়ে বলল
“কেন তুমি জেলাস নাকি জান!”

শুভ্রতা কিছু না বলে মুখ ঘুড়িয়ে রাখলো। রাদিফ বেশ হাসি পেলো শুভ্রতার কান্ডে। তবুও নিজের হাসি চেপেই সে শুভ্রতার পাশ ঘেঁষে বসে বলল
“দুনিয়ার যতো সুন্দর মেয়েকেই আমার সামনে নিয়ে আসা হোক না কেন তুমি আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর নারী। যাকে ছাড়া হয় তো আমি মরে যাবোনা। তবে আমার আত্মা বাঁচবে না। ভালোবাসি যে। খুব বেশি ভালোবাসি।”

শুভ্রতার কানের কাছে বলা রাদিফের কথাগুলো বুঝতে পেরেই শুভ্রতার কান গরম হয়ে গেল। রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতাকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
“আমি আজ থেকে প্রমিস করছি মায়াবতী, আমি সবসময় সব অবস্থায় তোমার পাশে থাকবো।”

শুভ্রতা মুচকি হাসলো রাদিফের কথায়। তখনই শুভ্রতার ফোনটা বেজে উঠলো। শুভ্রতা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মায়ের নাম। ঠোঁট প্রসারিত হলো তার। রাদিফ হাসিমুখেই বলল
“তুমি কথা বলো আমি রিজভীর সঙ্গে কিছু কথা বলে আসছি।”

শুভ্রতা মাথা নাড়ালো। রাদিফ টুক করে শুভ্রতার গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। অন‍্যদিকে শুভ্রতা গাল হাত রেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো রাদিফের যাওয়ার দিকে। ফোনটা আবার বেজে উঠতেই শুভ্রতার ধ‍্যান ভাঙলো। শুভ্রতা ঝট করে কল রিসিভ করলো।

অপরপাশ থেকে চাপা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতেই শুভ্রতার বুকটা হু হু করে উঠলো। নম্রতা নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করে দমে দমে বলল
“আপুনি আমি তোমাকে অনেক মিস করছি। ভালো লাগছেনা তোমাকে ছাড়া আপুনি।”

শুভ্রতার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে নিবে তার আগেই রাদিফ আলতো হাতে শুভ্রতার চোখ মুছিয়ে দিয়ে ওর ফোনটা নিজের কানে নিয়ে রাদিফ বলল
“শালিকা রেডি থেকো আজ বিকেলে। তুর আর তূর্য ভাইয়াকেও বলো। আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাবো।”

“কিন্তু তূর্য ভাইয়া তো অফিস আছে!”

“অফিসের যাবে সমস্যা হবেনা।”

নম্রতা মুচকি হাসলো।

১২.
পড়ন্ত বিকেলে শুভ্রতা, রাদিফ,নম্রতা, রিজভী,তুর সবাই মিলে বসে আছে একটা রেস্টুরেন্টে। অ‍পেক্ষা করছে তূর্যের। তূর্য ক্লান্ত চিত্তে এসে ঠাস করে নম্রতার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। মুচকি হেসে বলল
“সরি সবাইকে। একটু দেড়ি হয়ে গেল।”

রাদিফ মুচকি হেসে বলল
“সমস‍্যা নেই ভাইয়া।”

তূর্য ঠোঁটে ক্লান্তি মাখা হাসি নিয়ে তাকালো নম্রতার দিকে। নম্রতা আগে থেকেই তূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকাতে তূর্য ঠোঁট কামরে হেসে সবার অগোচরে চোখ টিপলো। নম্রতার বিষম উঠে গেল।

শুভ্রতা তাড়াতাড়ি পানি এগিয়ে দিলো। নম্রতা ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।

রিজভী তুরের কানের কাছে এসে বলল
“কি বেয়ান কি অবস্থা আপনার! ঝগড়া করছেন না যে!”

শুভ্রতা রিজভীর কথা শুনতে পেয়ে মিটিমিটি হাসলো। রাদিফ রিজভীর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
“ভাই এখন আর ঝগড়া করিস না দয়া করে। তাছাড়া তোদের ঝগড়া থামাতে থামাতে রাত পেড়িয়ে যাবে। আমাদের আর ভালো করে আড্ডায় দেওয়া হবে না।”

সবাই হাসলো রাদিফের কথায়। তুর মুখ ভেংচালো রিজভীকে। রিজভী হাসলো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে