আপনার শুভ্রতা পর্ব-১০

0
164

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১০

তূর্য গম্ভীর কন্ঠে বলল
“তাড়াতাড়ি নিজের কাজ সেরে চলে যাও। তাছাড়া কিন্তু!”

নম্রতা আর দাড়ালো না তুরের রুমে চলে গেল। তুরে শাড়ি নিয়ে আবারও দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল। তূর্যও রেডি হয়ে শুভ্রতাদের বাসায় গেল।

———————-

শুভ্রতা সাদা রঙের মধ্যে সোনালি রঙের পাথর বসানো একটা শাড়ি পড়েছে। চুলের খোঁপায় বেলি ফুলের মাথা। চোখে টানা করে কাজল। হালকা গহনা গায়ে জড়িয়ে হালকা মেকআপে সেজেছে। শুভ্রতা আসতেই রাদিফের চোখ আটকে গেল শুভ্রতার উপর। এত সুন্দর লাগছে কেন মেয়েটাকে! শুভ্রতা একপলক তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফের পড়নে সবসময়ের মতোই শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি। চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। কিন্তু রাদিফ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে শুভ্রতার দিকে। রাদিফকে এমন হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুর মিটমিটিয়ে হেসে শুভ্রতার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল
“দেখ দোস্ত জিজু কেমন হা হয়ে তাকিয়ে আছে।”

তুরের কথায় কান গরম হয়ে আসলো। মেয়েটাও না। আর ওই লোকটার ও কি আক্কেল নেই। সবার সামনে কিভাবে হা করে তাকিয়ে আছে।

শুভ্রতাকে রাদিফের পাশে বসাতেই রাদিফ ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে শুভ্রতাকে ফিসফিসিয়ে বলল
“মায়াবতী তোমার রূপে আমি প্রতিটা মুহূর্তে পাগল হয়ে যাচ্ছি। প্রেমে পড়ছি বারবার বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন ভাবে। আজ থেকে এই মায়াবতী শুধুমাত্র আমার হয়ে যাবে। ভাবতেই কিযে আনন্দ লাগছে। বলে বোঝাতে পারবোনা।”

শুভ্রতা চুপ করে মাথা নিচু করেই বসে রইলো।

তিন কবুল বলার মাধ্যমে শুভ্রতা আর রাদিফের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। দুইজন বাধা পড়লো পবিত্র বন্ধনে।

রিজভী তুরের কাছে দাঁড়িয়ে বলল
“তোমাকে নীলকমল লাগছে ঝগড়ুটি।”

তুর বুঝতে পারলো না সুনাম করলো নাকি অপমান করলো। সরু চোখে তুর রিজভীর দিকে তাকাতেই রিজভী দাঁত বের করে হাসলো। তুর চোখ রাঙালো রিজভীকে। রিজভী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রাদিফের কাছে এসে দাঁড়ালো।

অন‍্যদিকে নম্রতা হালকা গোলাপি রঙের একটা গাউন পড়েছে। মাথা নিচু করেই আছে সে। কারণ সামনের দিকে তাকালেই তূর্যের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। কারণ তূর্য তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।

বিয়ে শেষ হতেই আলোচনায় বসলো সবাই। শামসুল হক আর রেহানা বেগম অনুষ্ঠান করে মেয়েকে ওই বাড়িতে পাঠাতে চান বলে মত দিলেন। রফিকুল সাহেব কিছু বলতে নিবেন তখনই তার ফোনের মেসেজ টুন বেজে উঠলো। উনি পায়জামার পকেট থেকে ফোনটা বের করেই দেখলেন তার ছেলে তাকে এখানে বসেই মেসেজ দিয়েছে। রফিকুল সাহেব মেসেজ ওপেন করে দেখলেন রাদিফ লিখেছে
“আব্বু আমি শুভ্রতাকে আজই আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো। এটা আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তুমি যদি এখন না করো তাহলে কিন্তু তোমার মিষ্টি খাওয়া একদম অফ করে দিবো বলে দিলাম।”

কি হুমকি রে বাবা! ছেলে হয়ে বাবাকে হুমকি দিচ্ছে। রফিকুল সাহেব ছেলের দিকে তাকাতেই রাদিফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন‍্য দিকে তাকালো। রফিকুল সাহেব জানেন যে তার ছেলে যা বলে তাই করে। তাই তিনি ব‍াধ‍্য হয়েই শামসুল হককে বললেন
“না বেয়ান সাহেব আমি আমার মেয়েকে এমন করে রেখে যেতে পারবোনা। ভাই এখন মেয়েকে নিয়ে যাই। ওদের পড়াশোনা শেষ হোক তারপর না হয় অনুষ্ঠান করা যাবে। এক মাস পরেই তো রঙ্গনের পরীক্ষা তারপরেই তো ওর পড়াশোনা শেষ। আর বিজনেসটাও একটু সামলে নিক।”

“ভাই সাহেব এখন মেয়ে আপনাদের। আমি আর কি বলবো বলুন।”

রাদিফের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। শুভ্রতার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলো। এমন হুট করেই যে অন‍্যের বাড়ি চলে যেতে হবে তা কল্পনাও করেনি সে।

রাদিফ শুভ্রতার কানের কাছে গিয়ে বলল
“এরপর যেন আর কখনো চোখে পানি না দেখি মায়াবতী। শুধুমাত্র আমার মৃত্যুদিন ব‍্যতিত।”

রাদিফের কথায় হুট করেই শুভ্রতা থমকে গেল। বুকে এক চিনচিনে ব‍্যথা অনুভূত হলো তার। কত স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুর কথা বলে দিলো। যতই হোক এখন তো সে তার স্বামী। লোকটা খুব খারাপ।

রাদিফ পুনরায় বলল
“মন খারাপ করোনো মায়াবতী। তোমার যখন ইচ্ছে হবে এখানে আসার একবার শুধু আমাকে বলবে। আমি তোমাকে নিয়ে আসবো।”

শুভ্রতা মায়ের দিকে তাকালো। রেহানা বেগম একপাশে দাঁড়িয়ে ওড়নার শেষ অংশ দিয়ে লুকিয়ে চোখের পানি মুছতেছে। শুভ্রতা হুট করেই মায়ের কাছে গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। নিরবে কান্না করছে সে।

অন‍্যদিকে নম্রতা কান্নাকাটি করে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। কান্না করার ফলে ফর্সা নাক লাল হয়ে গিয়েছে। তূর্য নম্রতার মাথায় টোকা দিয়ে বলল
“নাক যে লাল বানিয়ে ফেলেছো মনে হচ্ছে তোমার বিদায় হচ্ছে। তবে চিন্তা করোনা আর কিছুদিন অপেক্ষা করো।”

নম্রতা কান্না রেখে অবাক চোখে তাকালো তূর্যের দিকে। তূর্য বাঁকা হেসে চলে গেল সেখান থেকে।

তুরও ইতিমধ্যে কান্নাকাটি করে বন‍্যা বানিয়ে ফেলেছে। রিজভী তুরকে বলল
“বিশ্বাস করো একদম পেত্নির মতো লাগছে তোমাকে।”

তুর রেগে কিছু বলতে আঙুল উঠিয়ে কিছু বলতে নিবে তখন রিজভী তুরের আঙুল ধরে বলল
“মেডাম এতো রাগ তো ভালো না। কেবল তো শুরু অপেক্ষা করো। আমার গফের সঙ্গে ব্রেকআপ করিয়েছো। তোমাকে আমার বউ বানিয়ে ছাড়বো। আমি ও রিজভী।”

তুর হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রিজভীর দিকে। মনে মনে বলল
“রামছাগলে কয় কি! ব‍্যাটা তো তুরকে চিনে না। এতোই সহজ নাকি তাইবা ইসলাম তুরকে পটানো।”

মুখ ভেংচালো তুর।

১১.
শুভ্রতা বসে আছে ফুলে সাজানো রুমে। শুভ্রতা ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে লাগল। ঘড়টা বেশ গোছানো। রাদিফের পড়ার টেবিলের উপরে দুইটা ছবি উল্টো করে রাখা দেখে শুভ্রতা ভ্রু কুচকালো। ধীর পায়ে সেখানে গিয়ে ছবিটা হাতে নিতেই বেশ অবাক হলো। একটা তার সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে থাকা ছবি। হুট করেই তোলা একটা পিক। পাশের আরেকটা মহিলার ছবি। চেহারা রাদিফের মতো হলেও শ‍্যামবর্ণের এক মায়াবতী। শুভ্রতা ছবি দেখছিলো তখন রাদিফ দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
“আমার জীবনের দুই বিশেষ নারী। একজন আমার মা। আর একজন আমার ভালোবাসা।”

শুভ্রতা ছবিটা রেখে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“আপনার মা অনেক সুন্দর।”

রাদিফ মুচকি হেসে বলল
“আব্বু তো সেইজন‍্যই আম্মুর প্রেমে পড়েছিলো।”

শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“সত‍্যি”

রাদিফ হেসে মাথা নাড়িয়ে শুভ্রতার হাতে একটা সালোয়ার কামিজ দিয়ে বলল
“ফ্রেশ হয়ে আসো। অনেক রাত হয়ে এসেছে। ওই বাসা থেকে তো খেয়ে আসাই হলো। তাই সবাই শুয়ে পড়েছে। তোমার উপর দিয়েও বেশ ধকল গিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসো নামাজ পড়ে ঘুমাবে। মাগরিবের নামাজ পড়েছো?”

“হুম পড়েছি।”

“আচ্ছা যাও তাহলে।”

শুভ্রতা রাদিফের হাত থেকে সালোয়ার কামিজ নিতেই রাদিফ কার্বাট থেকে একটা টাওয়েল এগিয়ে দিলো। শুভ্রতা ওয়াশরুমে চলে গেল।

রাদিফ রুমেই চেন্স করে নিলো। পাঞ্জাবি ছেড়ে টিশার্ট আর টাউজার পড়ে নিলো।

শুভ্রতা একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলো চুল মুছতে মুছতে। রাদিফ বিছানার উপর থেকে ফুলগুলো ঝেড়ে ফেলছিলো। শুভ্রতার দিকে তাকাতেই রাদিফের চোখ আটকে গেল। সদ‍্য গোসল করায় বেশ স্নিগ্ধ লাগছে শুভ্রতাকে।

রাদিফের ভাবনায় ছেদ ঘটলো শুভ্রতার গলায়। শুভ্রতা বলল
“ওযু করে আসুন।”

রাদিফ ঝট করে ওযু করে আসে। দুইজন মিলে নামাজ পড়ে খাটে বসতেই হুট করে রাদিফ শুভ্রতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রতা বেশ অবাক হলো। পিঠে উষ্ণ পানি অনুভব হতেই হতভম্ব হয়ে গেল শুভ্রতা। লোকটা কি কান্না করছে! কিন্তু কেন! শুভ্রতা চুপ করেই রইলো।

কিছুক্ষণ পর রাদিফ শুভ্রতাকে ছেড়ে শুভ্রতা গোল ছোট মুখটা নিজের দুইহাতে আজলাভাবে ধরে বলল
“জানো তো ওইদিন আমার ফ্রেন্ড তার ভালোবাসাকে চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেলে। শুধুমাত্র দেড়ি করায় মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়। তখনই আমার ভিতরে তোমাকে হারানোর ভয় চেপে বসে। তোমাকে আমি হারাতে চাইনি বলে ওইদিন বাবা তোমার কথা বলি। জানো তো ওনি সেইদিন তোমার ছবি দেখে আম্মু আর তার প্রেমের বিয়ের কথা বলেন। আমাকে বিজনেসের আইডিয়া দেয়। পরে তোমার বাবাকে রাজি করানো সহ আজ তুমি এখানে সবটাতে বাবা আমাকে সাহায্য করেছে। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মায়াবতী। ছেড়ে যাবে না তো আমায়।”

শুভ্রতা হাত রাখলো রাদিফের হাতে। ধীর কন্ঠে বলে উঠলো
“এখন আপনি আমার স্বামী। আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”

রাদিফের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। শুভ্রতার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে আসে। দুইজন মিলে মেঝেতে বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে। রাদিফ নিরবতা ভেঙে বলল
“রেদোয়ানকে আমি কিভাবে চিনি জানতে চেয়েছিলে না সেদিন।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে