আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৯

0
165

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৯

রাদিফ ছাদের দেয়ালে দুটো ঘুষি বসিয়ে দিলো। শুভ্রতা অস্থির কন্ঠে রাদিফের হাত ধরতে নিবে তার আগেই রাদিফ অন‍্য হাত দিয়ে শুভ্রতার বাহু শক্ত করে ধরে বলল
“তুই কি রে! তোকে আর কত বলবো আমি। আমি তোকে ভালোবাসি। আজই তোকে আমি বিয়ে করবো দেখতে থাক তুই।”

বলেই শুভ্রতাকে ছেড়ে হনহনিয়ে চলে রাদিফ। শুভ্রতা শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রাদিফের যাওয়ার দিকে। কি হলো এটা! শুভ্রতা হকচকিয়ে বেশকিছুসময় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই।

শুভ্রতা ধীরপায়ে বসার রুমে আসতেই নম্রতা ছুটে এসে একটা মিষ্টি শুভ্রতার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। শুভ্রতা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। তুর এসে ‍বলল
“কিরে বিয়েতে নাকি তুই রাজি। ভাইয়া তো দেখি আজকেই তোকে বিয়ে করার জন‍্য লাফাচ্ছে। ব‍্যাপার কি!”

শুভ্রতা আরো অবাক হলো তুরের কথা শুনে। শামসুল হক মেয়ের কাছে এসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল
“মা তুই কি রাজি এই বিয়েতে!”

শুভ্রতা সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো রাদিফ চোখ রাঙাচ্ছে তাকে। চোখমুখ লাল হয়ে আছে তার। শুভ্রতা কপাল কুচকালো কি এমন বলেছে সে যে রাদিফ এমন করছে!

রফিকুল সাহেব শুভ্রতার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন
“মা আমার কোনো মেয়ে নেই। আমি তোমাকে আমার ছেলের বউ না মেয়ে করে নিয়ে যেতে চাই। তুমি কি তোমার এই বাবাকে ফিরিয়ে দেবে মা। ছেলেটা আমার অনেক ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে। এই প্রথম সে আমার কাছে কিছু চেয়েছে। জানো তো ও আমাকে পাগল করে দিচ্ছিলো তোমাকে এনে দেওয়া জন‍্য।”

শুভ্রতা তাকালো রাদিফের দিকে। রাদিফ মাথা নিচু করে সোফায় বসেই আছে। শুভ্রতা আর না করতে পারলো না। জীবনটা ছেড়ে দিক না হয় আল্লাহর কাছে। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন‍্যই করেন। শুভ্রতা রাজি হয়ে গেল। সবাই আলহামদুলিল্লাহ্ বলে উঠলো। রাদিফের ঠোঁটেও এক মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।

রফিকুল সাহেব ফোন করে তার ছোট ছেলে রিজভীকে কাজী নিয়ে আসতে বললেন। রাদিফও তার রুম থেকে শুভ্রতার জন‍্য কিনে রাখা শাড়ি আর কিছু গহনাও রিজভীকে আনতে বলল।

তুর আর নম্রতা শুভ্রতাকে নিয়ে ঘরে আসতেই শুভ্রতা রাগী চোখে তুরের দিকে চোখ তাকিয়ে কোমরে হাত রেখে বলল
“তুই আগে থেকে ওনার কথা আমাকে বলিসনি কেন!”

তুর ভাবলেশহীন ভাবে বলল
“তুই পাত্রের কথা জানতে চেয়েছিলি!”

শুভ্রতা ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে ধপ করে বেডে বসে বলল
“হালায় তো দেখি বিয়ে পাগলা বেটা। এখন আমার কি হবে রে! ওই হালায় তো হুট করেই আমার কথায় রেগে গিয়ে বিয়া নিয়ে লাগছে। বহুত মছিবত।”

তুর মিটিমিটিয়ে হাসলো।

শুভ্রতা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল
“আমি তো ভাবছিলাম দেখতে আসবে। না করে চলে যাবে। এখন আমার কি হবে তুর রে!”

রাদিফ দরজার সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
“কি আর হবে, মিস থেকে মিসেস হয়ে যাবে। মিসেস রাদিফ আহমেদ রঙ্গন হয়ে যাবে। এই আর কি।”

শুভ্রতা থতমত খেয়ে গেল রাদিফের কথায়। এই ব‍্যাটা আবার কখন আসলো। রাদিফ ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল
“যখন থেকে আমার নামে কথা বলা শুরু করেছো তখন থেকেই আমি এখানে আছি।”

রাদিফ হাতের পেকেটগুলো নিয়ে রুমে ভিতরে ঢুকে পেকেটগুলো নম্রতার হাতে দিয়ে বলল
“শালিকা তোমার আপুকে এগুলো পড়িয়ে রেডি করি দেও তো তাড়াতাড়ি।”

রিজভী কপাল কুচকে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“এই আপনি এখানে কি করছেন!”

তুর ভ্রুযুগল কুচকে রিজভীর দিকে তাকালো। রিজভীর কথায় সবাই তুর আর রিজভীর দিকে তাকালো। রাদিফ বলল
“তুই তুরকে চিনিস। তুর তুমি রিজভীকে চিনো।”

তুর রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“না ভাইয়া আমি এই রামছাগলকে আজই প্রথম দেখলাম।”

রিজভীর মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেল। নাকের পাটা ফুলিয়ে তুরকে চোখ রাঙিয়ে বলল
“এই যে মিস কাকে রামছাগল বলছেন। আপনি আমাকে চিনেন।”

তুর মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল
“এমনি রামছাগল বলেছি। আমি তো আপনাকে চিনিই না। আপনি এমন ভাব করছেন। মনে হচ্ছে আমি আপনার সঙ্গে এক যুগ আগে থেকে পরিচিত।”

রিজভী চোখমুখ শক্ত করে বলল
“এই মেয়ে তুমি এতো ঝগড়ুটে কেন! না বুঝে চেঁচাচ্ছো।”

রাদিফ এবার বলেই উঠলো
“আরে থাম তোরা। রিজভী বল তো তুই কিভাবে তুরকে চিনিস।”

রিজভী তুরকে চোখ রাঙালো। তুর পাত্তাই দিলো না। রিজভী রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“ভাইয়া আমার গফ ছিলো না আনিসা। একদিন রাস্তায় আমি আমার বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করছিলাম। তখন এই ঝগড়ুটে মেয়ের জন‍্য আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে।”

তুর অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
“এই মিয়া আপনি এগুলো কি বলছেন! আমি তো আপনারে চিনিই না। খবরদার বেহুদা কথা বলবেন না বলে দিলাম।”

রিজভী মুখ ভেংচি কাটলো। তুর রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“দেখছেন ভাইয়া আপনার এই বাদর ভাই আমাকে মুখ ভেংচাচ্ছে।”

শুভ্রতা চেঁচিয়ে বলল
“চুপ, দুইজনই একদম চুপ। রিজভী আপনি বলুন তো আসল কাহিনী।”

রিজভী মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বলল
“ভাবি গো তোমারে আর কি ‍বলতাম বলো। এই মাইয়া ওইদিন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো খাম্বার মতো। আমার গফ ওই পিক তুলে আমাকে দেয়। আর বলে আমি নাকি ওর লগে ইটিশ পিটিশ করি। আমার কথা না শুনেই ব্রেকআপ করে দেয়। আমার কোনো কথা শুনেই নি। আমার কত টাকা গেল। কত কষ্ট করে পটাইছিলাম।”

রাদিফ কপাল চাপড়ে বলল
“তুই আসলেই রামছাগল। এখানে তুরের দোষ কোথায়। সব দোষ তোর সো কল্ড গফ। এখন এগুলো বাদ দিয়ে চল তো তুই। আর তুর কিছু মনে করোনা। ও পাগল।”

“ভাইয়া”

“আল্লাহ রাস্তায় তুই চুপ যা। আর চল এখান থেকে। কাজী সাহেব চলে এসেছে এতক্ষণে।”

“কিন্তু ভাইয়া!”

“কোনো কিন্তু না চল তো।”

বলেই রাদিফ রিজভীকে নিয়ে যেতে লাগল। রিজভী চোখ রাঙালো তুরকে। তুর মুখ ভেংচালো।

নম্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“তুর আপি এখন এসব বাদ দিয়ে আপুকে রেডি করাই তো। জিজু তাছাড়া আবার নিজেই সাজাতে চলে আসবে।”

তুর ফিক করে হেসে দিলো। কি যেন ভেবে তুর বলল
“নম্র ভাইয়া এসেছে। তুই গিয়ে দেখ তো ভাইয়া রেডি হলো নাকি। আর আমার আলমারি থেকে নীল রঙের শাড়িটা নিয়ে আয় তো।”

“কিন্তু তুর আপি!”

“আর কিন্তু কিন্তু করিস না তো। এখন বাহিরে গেলেই ওই রামছাগলের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। আর আমার মেজাজ খারাপ করবে। যা নারে বনু।”

নম্রতা বাধ‍্য হয়েই গেল। দরজায় টোকা দিতেই তূর্য এসে দরজা খুললো। নম্রতা ফুস উঠে বলল
“ওই মিয়া আপনি সারাদিন খালি গায়ে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান কেন! লজ্জাসরম কি বানের জলে ভাসিয়েছেন।”

নম্রতার মুখে হুট করে এমন কথা শুনে ভড়কালো তূর্য। নম্রতা আবারো বলল
“জামা কাপড় নেই আপনার মিয়া।”

তূর্য গলা খাকিয়ে বলল
“তুমি এগুলো কি বলছো!”

নম্রতা এবার আরো দ্বিগুণ ক্ষেপে হিসহিসয়ে বলল
“আমি যখনই আপনার সামনে আসি। আপনি খালি গায়ে অবতারের মতো দাঁড়িয়ে থাকেন।”

তূর্য এবার নিজের দিকে তাকালো। সে জিন্স পড়ে আছে। সে পাঞ্জাবীই খুঁজতেছিলো। তূর্য কিযেন ভেবে দুষ্টু হেসে বলল
“খালি গায়ে দেখলে কি হয় পিচ্চি।”

নম্রতার তূর্যের এমন ধারার আচরণ দেখে অবাক হলো। নম্রতাকে এমন অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনে মনে হাসলো তূর্য। তূর্য পুনরায় গলা পরিষ্কার করে বলল
“কি হলো বলছো না যে!”

নম্রতা আমতা আমতা করে বলল
“কি হবে কিছুই হবেনা। দেখি সরুন তো।”

বলেই নম্রতা তূর্যের পাশ কাটিয়ে যেতে নিবে। তখনই তূর্য পিছন থেকে নম্রতার হাত টেনে বলল
“তোমার লক্ষণ তো ভালো ঠেকছেনা মেয়ে! প্রেমে পড়েছো নাকি!”

নম্রতার বুক ধুকপুক করছে। লোকটা কি বুঝে গেল! তূর্য একটানে নম্রতাকে ওর বুকে এনে ফেলল। নম্রতা চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। তূর্য মুচকি হাসলো।

নম্রতা কপালে পড়ে থাকা অবাদ্ধ চুলগুলো আলতো হাতে কানে গুজে দিয়ে তূর্য ফিসফিসিয়ে বলল
“তুমি আসলেই বোকাফুল। চোখের মধ্যে অনুভূতি নিয়ে ঘুড়ে বেড়াও আর মনে করেছো আমার থেকে লুকিয়ে থাকলেই সব লোকাতে পারবে। কিন্তু পিচ্চি ভুলে যেও না আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়।”

নম্রতার গলা শুকিয়ে এলো। তূর্য ঝট করেই নম্রতাকে ছেড়ে খানিকটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। নম্রতার যেন শ্বাস আটকে আসছিলো। লোকটা এতটা সময় ওর এতো কাছে ছিলো। তূর্য গম্ভীর কন্ঠে বলল
“তাড়াতাড়ি নিজের কাজ সেরে চলে যাও। তাছাড়া কিন্তু!”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে