আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৮

0
87

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৮

৯.
কেটে গেছে দুটোমাস। নম্রতার কলেজ চয়েজ হয়ে গিয়েছে। তূর্যের চাকরি নিয়ে সে বেশ ব‍্যস্ত। তুর তার পড়াশোনায় মনোযোগ বসিয়েছে। শুভ্রতাও এখন আগের থেকে ভালোই আছে। পড়াশোনা করছে। মজা করছে এভাবেই কেটে যাচ্ছে তার দিনগুলো। রাদিফকে আর দেখা যায় নি ওইদিনের পর থেকে। আল্লাহ ভালো জানে কোথায় আছে সে! হুট করে এসেছিল আবার হুট করেই উধাও হয়ে গেছে। শুভ্রতার মনে হাজারো প্রশ্ন রেখে চলে গেছে সে।

————————–

শুভ্রতা সন্ধ্যায় পড়তে বসেছিল। তখনই তার রুমে শামসুল হক এলেন। শুভ্রতা বাবাকে দেখে মুচকি হেসে পড়ার টেবিল থেকে উঠে বিছানায় বাবার পাশে বসে বলল
“বাবা কিছু বলবে?”

শামসুল হক মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন
“মা আমার একটা কথা রাখবি!”

শুভ্রতা মুচকি হেসে বাবার হাত দুটো নিজের হাতে আবদ্ধ করে নরম কন্ঠে বলল
“বাবা তুমি আমাকে কথা বলতে এতো সংকোচ করছো কেন! আমি জানি তুমি কখনোই আমার খারাপ চাইবে না। এখন ফটাফট বলে ফেলো তো।”

শামসুল হক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলতে শুরু করলেন
“দেখ মা আমায় তুই ভুল বুঝিস না। আমি কখনোই চাইনি তোর পড়াশোনা মাঝে তোর বিয়ে হোক। সবসময় চেয়েছি তুই নিজে আগে কিছু বলবি তারপর তোর বিয়ে দিবো। কিন্তু আজ বাধ‍্য হয়েই তোর কাছে এসেছি। রঙ্গন খুব ভালো ছেলে। পড়াশোনার পাশাপাশি তার নিজের বিজনেসও আছে। তোকে ভালো রাখবে ও। কাল ওরা তোকে দেখতে আসবে। তুই যদি না করে দিস তাহলে আমি তাদের না করে দিবো।”

শুভ্রতা মুচকি হেসেই জবাব দিলো
“আসতে বলে দেও তাদের। আমি জানি তুমি কখনোই ভুল ডিসিশন নিবে না। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি বাবা।”

শামসুল হক ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে মেয়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে রুম ত‍্যাগ করলো।

শুভ্রতা নিজের ওড়নাটা গায়ে ভালোমতো জড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশের দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চুপ করে রইলো। পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে শুভ্রতা ধীর কন্ঠে বলল
“কি হয়েছে নম্র! কিছু বলবি!”

“আপুনি জিজু কিছু বেশ সুন্দর। একদম হিরোদের মতো দেখতে।”

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলল
“জিজু মানে!”

নম্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“আরে আপুনি কাল যারা আসবে।”

শুভ্রতা ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো
“তাদের আমাকে পছন্দ হবে না।”

নম্রতা ভ্রুকুচকালো। অবাক হয়ে বলল
“এ কথা কেন বলছো আপুনি!”

শুভ্রতা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“এখনকার দুনিয়ায় সাদা চামড়ার অনেক চাহিদা। সেখানে তোর কিভাবে মনে হয় তারা আমাকে পছন্দ করবে। নিজের বিজনেস আছে আবার। তাহলে কথাই আলাদা। আমার মতো শ‍্যামবর্ণে একটা সাধারণ মেয়েকে তো তার পছন্দ করার প্রশ্নই উঠে না।”

তখনই পিছন থেকে তুর বলে উঠলো
“তেমনটা যদি না হয়। তখন কি হবে বল তো!”

শুভ্রতা আকাশপানে তাকিয়ে বলল
“তেমনটা হবেনা।”

তুর একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে শুভ্রতার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। সে জানে শুভ্রতা নিজে যা ভাবে তাই।

নম্রতা বলে উঠলো
“ওদের বাসা থেকে বলে দিয়েছে কালকেই নাকি আংটি পড়িয়ে যাবে।”

শুভ্রতা আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। তুর এবার কপাল কুচকে বলল
“এমন ভাব করছিস যে আমার বাপের মতো তোর বাপও তোর জন‍্য বইড়া বেডা ঠিক করছে। পোলায় যে কি সুদর্শন। তুই দেখলেই ক্রাশ খাবি। রঙ্গন ভাইয়া তো তোকে আগে থেকেই…!”

তুর হঠাৎ এমন কথা বলতে গিয়ে থেমে যেতে দেখে শুভ্রতা তীক্ষ্ণ চোখে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“কি বলতে গিয়ে থেমে গেলি তুর!”

তুর আমতা আমতা করে বলল
“ভাইয়া এখনই আসবে। তোরা থাক আমি যাই।”

বলেই শুভ্রতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ভো দৌড় দিলো তুর।

শুভ্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে ফোন নিয়ে বসলো। ফোন দেখতে দেখতে আড়চোখে নম্রতার দিকে তাকাতেই দেখলো সে উদাসীন হয়ে মেইনগেটের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রতা ভ্রুকুচকে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো তূর্য বাইক নিয়ে ঢুকছে। শুভ্রতা মনে মনে হাসলেও কিছু বলল না। বেশ কিছুদিন যাবত সে দেখতে নম্রতার পরিবর্তন। নম্রতা তূর্যকে দেখলে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। শুভ্রতা ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে রুমে চলে এলো।

কিছুক্ষণ বাদে তারা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

নম্রতা খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে বারান্দায় এসে দাড়ালো। একটা মিষ্টি সূরের গান ভেসে আসছে। নম্রতা মুচকি হাসলো। সে তো এটাই শুনতে আসে প্রতিরাতে।

তূর্য খাওয়াদাওয়া শেষ করে রুম অন্ধকার করে বারান্দার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে গান ধরেছে। এটা তার একটা অভ‍্যাসের মধ্যে পড়ে। মনের কথাগুলো গানের মাধ‍্যমে
রাতের অন্ধকারে এভাবেই প্রকাশ করে।

আর অন‍্যদিকে নম্রতাও চোখ বুজে দেয়ালের অপরপাশে বসে তূর্য গানগুলো অনুভব করে।

আদোও কি দুইজনের একজনও জানে তাদের মাঝের দূরত্ব শুধুমাত্র এক‍টা দেওয়াল। হয় তো হ‍্যাঁ। নয়তো না।

১০.
বিকেলের কথা.,
শুভ্রতাকে সাজিয়ে বসার রুমে আনার পর পাত্রের বাবা রফিকুল সাহেব মুচকি হেসে বললেন
“বিয়ান সাহেব আমি আজকেই আমার বউমাকে আংটি পড়িয়ে যেতে চাই। আপনার সঙ্গে তো আগেই কথা হয়েছে আমার এই ব‍্যাপারে।”

শামসুল হক মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন
“বিয়ান সাহেব আমি আমার মেয়ের সিদ্ধান্তকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে এসেছি। এবারও এর নড়চড় হবে না। আমার শুভ্রতা মা যা বলবে তাই হবে।”

শুভ্রতা মাথা নিচু করেই রয়েছে। সে কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। হুট করে আজই বিয়ে হয়ে যাবে। এটা তো তার কল্পনা অতীত ছিলো। সে তো মনে করেছিলো পাত্রপক্ষ তাকে দেখা মাত্রই না করে দিবে। কিন্তু এ তো উল্টো হয়ে গেল।

“আঙ্কেল আমি আর শুভ্রতা কি একটু কথা বলতে পারি আলাদা।”

শুভ্রতা পরিচিত কন্ঠ পেয়ে চকিতে সামনের দিকে তাকালো। সামনে তাকিয়ে সে থমকে গেল।কারণ সামনে রাদিফ আর তাদের ভার্সিটির সভাপতি স‍্যার বসে আসে। দুইজনের মুখেই মুচকি হাসি বিদ‍্যমান। রাদিফ একটা চোখ চিপে দিলো শুভ্রতাকে সবার অগোচরে। যা নম্রতা আর তুরের দৃষ্টি এড়ালো না। দুইজনই মুখ টিপে হাসলো। শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“বাবা পাত্রের নাম রঙ্গন ছিলো না।”

রফিকুল সাহেব হেসে বললেন
“হ‍্যাঁ রঙ্গনই তো। আর ছেলের নাম রাদিফ আহমেদ রঙ্গন।”

শুভ্রতার এবার মাথা ঘুরতে শুরু করেছে। কি হচ্ছে তার সঙ্গে। শামসুল হক শুভ্রতাকে বললেন
“মা রঙ্গনকে নিয়ে ছাদে চলে যাও। ওখানে গিয়ে কথা বলে আসো।”

শুভ্রতা থমকানো চোখে বাবার দিকে তাকাতেই উনি চোখ দিয়ে ইশারা করলেন।

রাদিফ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল
“চলুন তাহলে যাওয়া যাক।”

শুভ্রতা মাথা নিচু করে ছাদের দিকে যেতে লাগল। ছাদে এসে ছাদের কাণিশ ঘেঁষে দাঁড়ালো সে। পড়নে তার আকাশি রঙের শাড়ি। মাথায় ঘোমটা দেওয়ার পরেও অবাদ্ধ চুলগুলো উঁড়ছে আপন গতিতে। চোখের কাজল যেন এক মায়াবী রূপ দিয়েছে তাকে। কপালের অবাদ্ধ চুলগুলো বেশ বিরক্ত করায় শুভ্রতা চুলগুলো বাঁধতে নিবে তখনই রাদিফ ধীর কন্ঠে বলে উঠলো
“থাক না উড়তে দেও। ভালো লাগছে।”

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে রাদিফের দিকে একবার তাকিয়ে ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে চুল বাঁধতে বাঁধতেই বলল
“এগুলোর মানে কি!”

রাদিফ ঝট করে শুভ্রতার বাহু ধরে নিজের সামনাসামনি করে চুলের খোপা খুলে দিয়ে বলল
“না করলাম না বাঁধতে। কথা শোনো না কেন!”

শুভ্রতা রাদিফের মুখ পানে তাকিয়ে বলে উঠলো
“কে হন আপনি আমার! যে আমি আপনার কথা শুনবো।”

রাদিফ শুভ্রতার কথায় বাঁকা হেসে ফিসফিসিয়ে বলল
“হবু বর হই আমি তোমার।”

শুভ্রতা কেঁপে উঠলো। বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে তার। রাদিফের কথায় কি এমন ছিলো যে তার হৃদস্পন্দ বেড়ে গেল!

রাদিফ পুনরায় ফিসফিসিয়ে বলল
“ভালোবাসা ছিলো”

শুভ্রতা থমকে গেল। অবাক দৃষ্টিতে রাদিফের দিকে তাকাতেই রাদিফ মুচকি হেসে বলল
“আমার মনের গহীনে বসবাস তোমার মায়াবতী। আর তোমার মনের কথা আমি বুঝবোনা এটা কোনোদিন হয়।”

শুভ্রতা রাদিফের থেকে খানিকটা সরে গিয়ে বলল
“এসব সবই আপনার মোহ মি.রাদিফ আহমেদ রঙ্গন। কিছুদিন পর সব কেটে যাবে। তাই বলছি ভেবে সিদ্ধান্ত নিবেন।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে