আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৭

0
160

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৭

বলেই তুরকে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতা। তুর মুচকি হাসলো। তখনই সেখানে নম্রতা এলো। হাতে তার গল্পের বই। নম্রতা ছাঁদের মাঝে রাখা বেঁতের চেয়ারে বসে পড়লো। ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“এতো হাসাহাসি করিস না আপুনি। ফুপি এক বিরাট কাহিনী করেছে।”

নম্রতার কথায় কপাল কুচকে এলো শুভ্রতার। সে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো
“কি কাহিনী করলো আবার সে!”

“আর বলিস না আপুনি তার গুণধর পূত্রের সঙ্গে তোর বিয়ে দিতে এসেছে। বাবাকে বলবে সেই কথা। তোকে বউ করে নিয়ে সম্পদ নিবে।”

শুভ্রতা হো হো করে হেসে বলল
“উনি পারেন ও বটে। বাবা খালি একবার শুনুক দুর দুর করে তাড়াবে।”

নম্রতাও হাসলো। সে জানে তার বাবা কখনো তার বোনকে এভাবে বিয়ে দিবেনা। আর শাফিনা বেগমের ছেলে শফিকের চরিত্র তেমন একটা ভালো না। নরজও বেশ খারাপ। তাই তো সে আসলেই তারা বেশিরভাগ সময় রুমেই থাকে।

হুট করেই তুরের মনটা খারাপ হয়ে গেল। নম্রতার দৃষ্টিতে পরতেই বলল
“তুর আপি তোমার মুখে হঠাৎ আধার নামলো কেন!”

শুভ্রতাও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো তুরের দিকে। তুর মলিন হেসে নম্রতার পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলল
“আঙ্কেলের মতো যদি আমার বাবা হতো।”

শুভ্রতা বুঝতে পারলো তুরের অবস্থা। শুভ্রতা তুরের কাছে এগিয়ে এসে ওর কাধে হাত রেখে বলল
“আবারও মন খারাপ করছিস তুর। এবার কিন্তু মারবো তোকে।”

“তুর আপি একটা মজার কথা শুনবে। হাসতে হাসতে তোমার দাঁত পড়ে যাবে।”

তুর ভ্রুকুচকে জিঙ্গাসু কন্ঠে বলল
“কি এমন কথা নম্র! যে হাসতে হাসতে আমার দাঁত পড়ে যাবে।”

নম্রতা নানা কথা বলে তুরকে হাসালো। তুরের মনটাও বেশ ফুড়ফুড়ে হয়ে গেল।

হুট করেই ফোনের দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে এলো শুভ্রতার। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে টেরও পায়নি। শুভ্রতা তুর আর নম্রতাকে তাড়া দিয়ে নিচে নামলো।

———————

ঘুমের মাঝে শরীরে কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো শুভ্রতা। তড়িৎ গতিতে উঠে যেতে নিলেই একটা শক্ত হাত তার হাত বিছানার সঙ্গে চেপে ধরলো সেই ব‍্যক্তি। শক্ত হাতে তার মুখ চেপে ধরলো। শুভ্রতার ভয়ে গলা শুকিয়ে যেতে লাগল। এসব কি হচ্ছে তার সঙ্গে। মুখটা চেপে ধরায় কিছু বলতেও পারছেনা সে। ছাড়া পাওয়ার জন‍্য ছটফট করতে লাগল সে।

তখনই শাফি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো
“কি হয়েছে সোনা। এতো নড়াচড়া করছো কেন! তোমাকে তো ভালোবাসা দিতে এলাম। আর তুমি এমন করছো। এটা কিন্তু ঠিক না বেইবি। আজকের পরে তো তোমার বাপের বিয়েতে রাজি হওয়াই লাগবে সোনা। আমাকে অপদার্থ বলা না। আমি যে কি করতে পারি তা আজকে দেখিয়ে দিবো।”

কথাগুলো কর্ণপাত হতেই ঘৃণায় শুভ্রতার নাক মুখ কুচকে এলো। এতো নিচে যে শাফি নামতে পারে তা কল্পণাও করেনি শুভ্রতা। রাগে চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো তার।

শাফি জোরজবরদস্তির করে শুভ্রতার গলায় মুখ রাখতে যাবে তখনই শুভ্রতা পাশের টেবিল থেকে হাতরে এসির রিমোট পেলো। কিছু না ভেবেই জোরে করে শাফির মাথায় সেটা দিয়ে আঘাত করলো। শাফি এক‍টা আর্তনাদ করে শুভ্রতাকে ছেড়ে পাশে শুয়ে পড়লো। শুভ্রতা মুখ ছাড়া পেতেই তার বাবাকে ডাকতে লাগল।

শুভ্রতা বিছানা থেকে উঠে দৌড় দিতে নিবে তখনই শাফি শুভ্রতার হাত চেপে ধরে। শুভ্রতা কি করবে তা ভাবতে ভাবতে বাড়ির সকলেই শুভ্রতার রুমের সামনে এসে দরজা ধাক্কাতে থাকে।

তবুও শাফি শুভ্রতার হাত ছাড়ছেনা। শুভ্রতা উপায়ান্তর না পেয়ে একটা লাথি মেরে দেয় শাফির পেটে। শাফি শুভ্রতাকে ছেড়ে দিয়ে বসা থেকে পুনরায় শুয়ে পড়ে পেটে হাত দিয়ে।

শুভ্রতা ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। শামসুল হক থমকে গেলেন। মুহূর্তেই রাগে ওনার চোখ রক্ত বর্ণ ধারণ করে। মেয়েকে রেহানা বেগমের কাছে দিয়ে শামসুল হক ছুটে শাফির কাছে গিয়ে শাফিকে মারতে থাকে। শাফিনা বেগম শামসুল হককে আটকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু শামসুল হক থামছেন না। শাফির নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। শামসুল হক হাঁপিয়ে বেডে বসে পড়লো। শাফিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বলে উঠলেন
“তুই তোর অমানুষ ছেলেকে নিয়ে বের হয়ে যা। ভোরের সূর্য উঠার পরে যদি তোদের দেখি একদম মেরে ফেলবো। কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে। আমার সঙ্গে তোর আর কোনো কথা নাই। আজ থেকে আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।”

শাফিনা বেগম নেকামি করতে করতে শামসুল হকের পা ধরে কান্নাকাটি করতে লাগলো। তবুও শামসুল হকের কথার এপারঅপার হলো না। উনি ওনার সিদ্ধান্তে স্থির। রেহেনা বেগম মেয়েকে ধরে নিজেদের রুমে নিয়ে এলেন। গ্লাসে পানি নিয়ে শুভ্রতার সামনে ধরতেই সে তা ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। শুভ্রতার গলাটা এতক্ষণ শুকিয়ে কাঠ হয়ে ছিলো। পায়ের কোলে মাথা রেখেই সে শুয়ে পড়লো। রেহেনা বেগম পরম স্নেহে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে শুক্রিয়া আদায় করলেন যে মেয়ের কোনো ক্ষতি ওই আমানুষটা করতে পারেনি বলে। শুভ্রতা গুটিশুটি মেরে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লো।

————————–

ভোরেই শাফিনা বেগম আর শাফি শুভ্রতাদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে। শামসুল হক আর একটা কথাও বলেন নি তাদের। শুভ্রতা জ্বর এসেছে খুব। রেহানা বেগম মেয়ের মাথা জল পট্টি দিচ্ছিলেন। তখনই রুমে শামসুল হক এলেন মলিন হয়ে যাওয়া ফেকাসে মেয়েটার মুখটার দিকে তাকিয়ে তার বুকটা কেঁদে উঠলো। ধীর পায়ে মেয়ের মাথার কাছে এসে কপালে হাত রেখে ধীর কন্ঠে রেহানা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন
“তুমি গিয়ে নাস্তা বানাও। আমি আছি এখানে।”

রেহেনা বেগম মেয়ের হাতে একটা চুমু খেয়ে চলে গেলেন রান্না ঘরে। রান্নাঘরে নম্রতাকে দেখে ভ্রুকুচকে বললেন
“এখানে তুই কি করছিস!”

নম্রতা মায়ের দিকে না তাকিয়েই বলল
“তুমি আপুনির কাছে যাও আম্মু। আমি কিছু একটা করছি।”

রেহেনা বেগম মেয়ের এমন কথা শুনে মনে মনে হাসলেন। তবুও উপরে গাম্ভীর্য ফুটিয়ে তুলে বললেন
“তা আপনি কি করবেন!”

নম্রতা মাথা চুলকে বলল
“নুডলস!”

রেহেনা বেগম মেয়ের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
“যা তুর আর তূর্যকে ডেকে আন। আজ যেহেতু শুক্রবার। ওরা এখানেই খাওয়াদাওয়া করবে। এটা আমার আদেশ বলে আসিস। আর আমিই রান্না করছি। তোর আপুনির কাছে তোর বাবা আছেন। সমস্যা নেই।”

নম্রতা মায়ের বাধ‍্য মেয়ের মতো ওড়না ঠিকঠাক করে তুরদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। দুবার কলিংবেল বাজাতেই তূর্য ঘুমু ঘুমু চোখে দরজা খুলে নম্রতাকে দেখে বলল
“কি হয়েছে এত সকালে!”

নম্রতা অবাক চোখে শুধু তাকিয়ে আছে তূর্যের দিকে। অপর পাশ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে চোখ কোচলে সামনে তাকাতেই কপাল কুচকে এলো তূর্যের নম্রতার এমন হা হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে।

তূর্য এবার নিজের দিকে তাকাতেই বুঝতে পেলো নম্রতার এমন হা হয়ে তাকিয়ে থাকার কারণ। সে শুধু টাউজার পড়ে আছে। ঘুমানোর সময় সে সাধারণত টিশার্ট খুলেই ঘুমায়। ঘুম থেকে উঠে সোজা দরজা খুলতে এসেছে বলে টিশার্টের কথা মনে নেই তার। কিন্তু নম্রতার রিয়েক্ট দেখে মনে হচ্ছে সে কিছুই পড়েনি। তূর্য একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল
“তুর রুমেই আছে। এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।”

তূর্য কথা বলতে দেড়ি কিন্তু নম্রতার দৌড় দিতে দেড়ি হলো না। তূর্য শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো নম্রতার যাওয়ার দিকে।

অন‍্যদিকে নম্রতা তুরের রুমে এসে হাঁপাতে লাগল আর বকতে লাগল তূর্যকে। লোকটার কি লজ্জা সরম নাই নাকি। এমন টিশার্ট না পড়ে একটা মেয়ের সামনে আসে। অসভ‍্য লোক। নম্রতা বকবক করতে করতেই তুরের কাছে গিয়ে ওকে ডাকতে ডাকতে বলল
“তুর আপু উঠো তাড়াতাড়ি। এতোকিছু হয়ে গেল তুমি এখনো পড়ে থেকে ঘুমাচ্ছো।”

তুর ধড়ফড়িয়ে উঠে ঘুমের ঘোরেই বলল
“ডাকাত!ডাকাত!”

নম্রতা একরাশ বিরক্তি নিয়ে তুরকে ধাক্কিয়ে বলল
“আমি নম্র,ডাকাত না। এবার তো উঠো। আম্মু তোমাকে আর তোমার ভাইকে আমাদের বাসায় যেতে বলেছে।”

তুর ভ্রুকুচকে বললো
“কেন!”

নম্রতা ওরা মায়ের কথা বলতেই তুর আর কথা বাড়ালো না। ছোট থেকেই রেহেনা বেগম তুরকে শুভ্রতাদের মতোই আদর করেন। তুরও রেহেনা বেগমকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসে। তুর কপালে কুচকে নম্রতাকে বলল
“শুভ্র এলো না যে!”

নম্রতা মুহূর্তেই মুখটা মলিন করে আগের রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বললো। তুর চমকে উঠলো শুভ্রতা এমন অবস্থার কথা শুনে। সে নম্রতাকে বলল
“তুই গিয়ে ভাইয়াকে বল ফ্রেশ হয়ে নিতে। আর মামুণি (তুর শুভ্রতার মাকে মামুণি বলেই ডাকে।) যে ডেকেছে এটা বলে আয়। আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

নম্রতা কিছু বলতে নিবে তার আগেই তুর ওয়াশরুমে চলে গেল। নম্রতা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওয়াশরুমের দরজার দিকে। উপায়ান্তর না পেয়ে নম্রতা ধীর পায়ে রওনা হলো তূর্যের রুমের দিকে।

তূর্য কেবলি শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। সকাল সকাল যে ভ‍্যাবসা গরম উঠেছে। তাতে বেশ বিরক্ত সে। টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে গম্ভীর কন্ঠে বলল
“দরজার বাহিরে দাড়িয়ে না থেকে ভিতরে এসে যা বলার তা বলো।”

নম্রতা হুট করে তূর্যের বলা কথায় থতমত খেলো। ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে দৃষ্টি মেঝে রেখে বলল
“আম্মু আপনাকে আর তুর আপুকে আজকে আমাদের বাসায় খেতে বলেছেন।”

তূর্য ছোট করে ওও বললো। নম্রতা ছুটে চলে গেল আবারও। তূর্য হাসলো নম্রতার কাজে। পিচ্চি মেয়েটা অকারণেই তাকে ভয় পায়। তাকে ভয় পাওয়ার কি আছে তা খুজেই পায় না তূর্য। একটা টিশার্ট পড়ে রান্না ঘরে গেল সে কফি বানাতে। সকালে এক কাপ কফি না হলে হয় না তার। তাও আজ শুক্রবার ছুটির দিন বলে কথা। সকালে কফি তো খাওয়াই যায়। নম্রতা আর তুর চলে গেছে শুভ্রতাদের বাসায়। সে একটু পরে যাবে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে