আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৫

0
164

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৫

তূর্য তুরের হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। ছোট তাহিয়া এসে তূর্যের কোমর জড়িয়ে ধরে বলল
“ভাইয়া তুমি আপুনিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো। আমিও যাবো।”

তূর্য হাটু গেড়ে বসে পড়লো। আলতো হাতে তাহিয়ার গালে হাত রেখে বলল
“তোর আম্মু তোকে বকবে তো। আমি আর তোর আপুনি তোর সঙ্গে দেখা করবো প্রমিস।”

“ভাইয়া আম্মু কি তোমাদের বকেছে আবারও।”

তূর্য হাসলো। তাহিয়া কপালে ছোট করে একটা চুমু দিয়ে বলল
“বনু এখন আমরা যাই। তুই যেন দুষ্টু করিস না একদম।”

তানিয়া ঠোঁট উল্টালো ভাইয়ের কথায়। তুরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো তাহিয়া। তুর হাটু গেড়ে বসে তাহিয়ার সামনে বসে বলল
“ভালো করে পড়াশোনা করবি ঠিক আছে। এখন কিন্তু তোকে পড়া নিয়ে বকাবকির জন‍্য এই তুর থাকবেনা।”

তাহিয়া এবার কেঁদেই দিলো। তুর অসহায় দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকালো। তূর্য জিন্সের পকেট থেকে চকলেট বের করে তাহিয়ার হাতে দিতেই তাহিয়া মুচকি হাসলো।

তূর্য তুরকে উদ্দেশ্য করে বলল
“তোর বইখাতা আর সার্টিফিকেটগুলো গুছিয়ে নে। আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমি রুম থেকে নিয়ে আসছি।”

তুর হ‍্যাঁবোধক মাথা নাড়ালো।

তূর্য উঠে দাড়ালো। কি যেন ভেবে আবারও বলে উঠলো
“ভালো কথা ওই লোকের টাকায় কেনা কিছু নিবিনা।”

তুর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল
“ভাইয়া ওই লোকটা তোমার চাকরি পাওয়ার পর আমাকে কি কিছু কিনে দিয়েছে।”

তূর্য এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে রওনা হলো।

দরকারি সব কাগজপত্র নিয়ে বেড়িয়ে পরলো তূর্য আর তুর। সোহানা বেগম নেকামি করতে এসেছিলেন। তবে তূর্যের রক্ত লাল চোখের তাকানি দেখে দমে যায়। আতিকুর রহমান চুপচাপ সব দেখেছেন খালি। তিনি তো বলতে পারতেন। তবে তা ভাবাই ভুল। তাহিয়া তো কান্না করতে করতে অস্থির। তুর আর তূর্যের খুব খারাপ লাগছিলো তাহিয়ার জন‍্য।আট বছরের বাচ্চা আর কি বুঝবে।

অন‍্যদিকে শুভ্রতা এই নিয়ে অনেকবার কল করেছে তুরকে। কিন্তু ওর কোনো রেসপন্স না পেয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে সে। তুর তো এমনটা করেনা। শুভ্রতা বাধ‍্য হয়েই তূর্যের ফোনে কল করলো। তূর্য কেবলি বাইক নিয়ে একটা হোটেলের সামনে থামলো। শুভ্রতার কল পেতেই রিসিভ করে কানে ধরে বলল
“শুভ্রতা বল। হঠাৎ করে আমার ফোনে কল করলি যে। কিছু হয়েছে তোর!”

শুভ্রতা অস্থির কন্ঠে বলল
“ভাইয়া তুর কল রিসিভ করছেনা। ও ঠিক আছে তো ভাইয়া।”

তূর্য মুচকি হাসলো শুভ্রতার কর্মকান্ডে। মেয়েটা অনেক ভালোবাসে তার ছোট বোনটাকে। সেও ছোটবোনের মতোই দেখে শুভ্রতাকে। তুরের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
“কিরে তোর ফোন কোথায়?”

তুর দেখলো ওর ফোনটা বন্ধ হয়ে আছে। চার্জ শেষ হয়ে। তুর বলল
“ভাইয়া ফোনে চার্জ নাই তাই বন্ধ হয়ে গেছে। কেন কি হয়েছে!”

তূর্য নিজের ফোনটা তুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“শুভ্রতা অস্থির হয়ে গেছে তোকে কলে না পেয়ে। নে কথা বল আর আমার পিছু পিছু আয়। আমি সব ঠিকঠাক করছি।”

তুর ফোন নিয়ে কানে ধরতেই শুভ্রতা রাগান্বিত কন্ঠে বলল
“কিরে ফোন কেন রেখেছিস। চার্জ দিতে পারিস না যখন ফোন ফালায় দে। মানুষ যে টেনশন করে তা তো তোর মনেই থাকেনা।”

তুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছি আমি আর ভাইয়া।”

শুভ্রতা দমে গেল। চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলো
“কি বলছিস!”

“হুম”

একে একে সব খুলে বলল তুর শুভ্রতাকে। শুভ্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“তূর্য ভাইয়া একদম ঠিক কাজ করেছে। তুই আর কত কষ্ট সহ‍্য করবি। তোদের কোনো সাহায্য লাগলে আমাকে বলবি। আমি যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করবো।”

হুট করেই তূর্য তুরের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলল
“অনেক বড় হয়ে গেছিস তুই!”

শুভ্রতা থতমত খেয়ে গেল। তূর্য বলল
“চিন্তা করিস না আমরা ঠিক আছি। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।”

“ভাইয়া তোমরা কোথায় উঠেছো! আমাদের বাসায় আসো না হয়।”

তূর্য মুচকি হেসে বলল
“জানিস তো কখনো কখনো আপন মানুষই আঘাত করে শেষ করে দেয়। আবার পর হয়েও আপন মানুষের মতো সবসময় কাছে থেকে যায়।”

শুভ্রতা ঠোঁট উল্টে অভিমানী কন্ঠে বলল
“ভাইয়া তুমি আমাকে পর বলছো।”

“নারে তুই তো আমার ছোট বোন। আমার আদরের ছোট বোন।”

শুভ্রতা মুচকি হেসে প্রশ্নবোধক কন্ঠে বলল
“কি হলো ভাইয়া বললে নাতো!”

“পাশের একটা হোটেলে উঠেছি। রাতটা এখানে থেকে সকালে বাসা খুঁজে সেখানে সিফট করবো ইনশাআল্লাহ।”

“আচ্ছা ভাইয়া সাবধানে থেকো কিন্তু। আর কি হয় জানিও কিন্তু আমাকে।”

“আচ্ছা তুইও ঘুমিয়ে পড়।”

“আল্লাহ হাফেজ ভাইয়া।”

“আল্লাহ হাফেজ”

তূর্য কল কেটে রুমে গেল। তুরকে বিছানা শুতে বলে তূর্য ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে যাওয়ার জন‍্য টিশার্ট আর টাউজার ব‍্যাগ থেকে বের করতে লাগল।তুর কথা বাড়ালো না। বেশ ক্লান্ত লাগছে তার। ধপ করে শুয়ে চোখ বুজলো তুর। তূর্য মুচকি হেসে তুরের ফোনটা চার্জে বসিয়ে পাতলা কম্বল তুরের গায়ে টেনে দিয়ে এসির পাওয়ারটা সহনীয় পর্যায় দিয়ে দিলো।

তূর্য বেশ সময় নিয়ে একটা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। সোফায় এসে শুয়ে পরলো। বাসা খুঁজতে বেশি বেগ পেতে হয়নি তার। শুভ্রতাদের বাসায় নাকি ফ্লাট ফাঁকা আছে। সেখানেই উঠবে তারা। তুরকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকদিন মিস গেছে অফিস। আর মিস দেওয়া যাবেনা। বাড়িআলার সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। কাল সকালে তুরকে ওখানে রেখে অফিস যাবে সে। ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো তূর্য।

———————

শুভ্রতা তুরদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বাড়ির পাশের ফ্লাটটা যে ফাঁকা তা মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছে তূর্যকে। সঙ্গে বাড়িআলার নাম্বারটাও মেসেজ করে দিয়েছে।

শুভ্রতা বারান্দায় গিয়ে বসলো। রাত এখন সাড়ে বারোটা। পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদের পাশে টুকরো টুকরো মেঘ ভাসছে আকাশে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। শুভ্রতা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশ পানে। চাঁদের আলোই শুভ্রতা মায়াময় চেহারাটা আরো বেশ মায়াবী লাগছে। লম্বা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। শুভ্রতা পলকহীন ভাবে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বলতে লাগল
“চাঁদ তোমার মতোই একাকিত্বে ভুগছি আমি। কিন্তু তোমার সৌন্দর্য আরো ফুটিয়ে তোলার জন‍্য সঙ্গী হিসেবে তোমার পাশে টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে চারদিকে। তুমি হাসোজ্বল মুখে আজীবন মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে সময় অতিবাহিত করছো। কিন্তু আমার সঙ্গী হিসেবে তো কেউ নেই। যার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবো।”

শুভ্রতা থামলো। দমটা আটকে আসছে তার। শুভ্রতা আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে তুলে বলল
“আমি তো আর তোমার মতো সুন্দর না তাই হয় তো আমার সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ নেই। আমি তো শ‍্যামলা। ওহ সরি আমি কালো মানুষের কাছে। আমার জন‍্য কেউ অপেক্ষাও করবেনা। সঙ্গও দিবে না। ভালোবাসা তো দূরের কথা। আচ্ছা আমি কি এতোটাই খারাপ দেখতে! আচ্ছা আল্লাহর সৃষ্টি জীব আমি এতোটা তো খারাপ আমার মনে হয় না। আমার কাছে আমার রূপ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবুও মানুষের কেন এতো মাথা ব‍্যথা। কথা শোনাতে তারা কেন পিছু পা হয় না!”

পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ্রতা তাকিয়েই রইলো আকাশের দিকে। হুট করেই মেসেজ টুন বেজে উঠলো শুভ্রতার ফোনে। শুভ্রতার ভ্রুযুগল কুচকে এলো। ফোনটা হাতে নিয়ে স্কিনে তাকাতেই চোখগুলো ছোট ছোট হয়ে গেল শুভ্রতার।

আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে
“মাঝরাতে এমন করে জেগে না থেকে ঘুমিয়ে পড়ো।”

শুভ্রতা পাত্তা দিলোনা। হয় তো কেউ ভুল নাম্বারে মেসেজ করেছে। আবারও মেসেজ এলো
”তোমাকে বলছি শুভ্রতা। ঘুমিয়ে পড়ো।”

কপাল কুচকে এলো শুভ্রতার। শুভ্রতা এবার মেসেজ দিলো
“কে আপনি?”

“আমি কে তা না জানলেও চলবে চুলগুলো বেঁধে শুয়ে পড়। এতো রাতে বারান্দায় থাকা ভালো না।”

শুভ্রতা বারান্দায় থেকে চোখ রাখলো বাহিরের দিকে। কিন্তু না কিছুই তো দেখা যাচ্ছেনা। আবারও মেসেজ এলো
“খুঁজে লাভ নেই পাবেনা আমায় ঘুমিয়ে পড়ো।”

শুভ্রতা বিরক্ত হলো। বারান্দার দরজা ঠাস করে বন্ধ করে রুমে চলে গেল। রাত দুটো বেজে গেছে। শুভ্রতা আর কিছু না ভেবে শুয়ে পড়লো। কাল আবার তুররা আসবে। শুভ্রতা ফোনটা চার্জে লাগিয়ে শুয়ে পরলো। চোখ বুজতেই চোখে ঘুম নেমে এলো। শুভ্রতা ঘুমের রাজ‍্যে হারিয়ে গেল।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে