#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৪
রাদিফ আমতা আমতা করতে করতে বলল
“না মানে”
রাদিফ আড়চোখে তুরের দিকে তাকালো। শুভ্রতার তীক্ষ্ণচোখে তুরের দিকে তাকালো।
তুর রাগী চোখে একবার রাদিফের দিকে তাকিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে আবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলল
“পালা তুর পালা।”
বলেই দৌড় দিলো তুর। শুভ্রতা ওর পিছনে দৌড় দিতে নিলেই রাদিফ পিছন থেকে ডেকে বলল
“মায়াবতী!”
শুভ্রতার পা থমকে গেল রাদিফের কন্ঠে। কি ছিলো তার কন্ঠে।
রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্রতার সামনে দাড়িয়ে ভ্রুউঁচিয়ে বলল
“থেমে গেলে যে। যাইহোক এই অধমকে কি কিছু সময় ধার দেওয়া যাবে মেডাম!”
শুভ্রতা কপাল কুচকে রাদিফের দিকে তাকাতেই। রাদিফ ঠোঁট উল্টে অসহায় দৃষ্টিতে শুভ্রতার উত্তরের আশায় তাকিয়ে রইলো।
শুভ্রতা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“আপনি মেয়ে মানুষের মতো ঢং করতে পারেন বাবা।”
“মানে!”
“মানে কিছুই না। আপনি বুঝতে পারবেন না। আপনার বোঝার বয়স হয় নি।”
রাদিফ ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“বুঝতে বুঝতে বুড়ো হয়ে যাচ্ছি তাও নাকি বোঝার বয়স হয়নি।”
শুভ্রতা মুখ ভেংচালো। রাদিফ মুচকি হেসে খালের পাড়ে মাটিতেই বসে পড়লো। শুভ্রতা শুধু আড়চোখে দেখতে লাগল রাদিফ কি করছে। রাদিফ জিন্সটা ফোল্ড করে খালের স্বচ্ছ ঠান্ডা পানিতে পা ভেজালো। ঘাড় ঘুড়িয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“আসো ভালো লাগবে।”
শুভ্রতা কেন যেন না করতে পারলো না। সেও চুপচাপ রাদিফের থেকে বেশ দূরত্ব নিয়ে বসে পা ডুবালো খালের পানিতে।
“বাদাম ভাঁজা খাবে!”
শুভ্রতা রাদিফের কথায় ভ্রুকুচকে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বলল
“আপনি এখন বাদাম ভাঁজা কোথায় পাবেন!”
রাদিফ মুচকি হেসে শুভ্র পাঞ্জাবির পকেট থেকে বাদাম ভাঁজা বের করে শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“পকেটেই ছিলো তাই বললাম।”
“ওও, কিন্তু কথা হচ্ছে কি আমার কিছু প্রশ্ন আছে আপনার কাছে?”
রাদিফ হেসে বাদামটা শুভ্রতার হাতে দিয়ে বলল
“এতো কথা আমি শুনতে চাইনা মায়াবতী। আমি জানি আপনি কি শুনতে চান। কিন্তু তা বলার এখনো সময় হয়নি। সময় হলে আমি নিজেই বলবো।”
“আপনার মাঝে এতো রহস্য কেন বলুন তো!”
রাদিফ বাঁকা হেসে শুভ্রতার মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গিয়ে বলল
“রহস্যের বেড়াজালে বাধতে চাই তোমাকে। বাধতে চাই নিজের জন্য। নিজের মনিকঠায় বেধে রাখতে চাই শুভ্র বোকাফুলকে।”
শুভ্রতা ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তুলে বলছে
“টাইম পাস করার জন্য আপনারা কি শুধু আমাকেই পান। আসলেই আমি বোকাফুল। তা না হলে আমাকে আপনারা এতো সহজে বোকা বানাতে পারেন।”
রাদিফের বুকে যেন তীরের মতো আঘাত করলো শুভ্রতার কথাগুলো। মেয়েটা এগুলো কি বলছে! টাইমপাস মনে হচ্ছে তার কাছে! রাদিফ কিছু না বলে হনহন পায়ে জায়গা ত্যাগ করলো।
শুভ্রতা মলিন হাসলো। ছেলেটা তাহলে সত্যিই টাইমপাস করছিলো। আর সে কি না! পুনরায় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো শুভ্রতার ঠোঁটের কোণে।
৬.
তুর বসে আছে নিজের রুমে। তখনই তার রুমে ওর বাবা আসলো। তুর মিষ্টি হেসে ওর বাবাকে বলল
“বাবা কি বলবে!”
আতিকুর রহমান মুখে গাম্ভীর্য নিয়ে বললেন
“পাত্রপক্ষ তোমায় কাল দেখতে আসবে। কাল ভার্সিটি যেতে হবে না। তুমি রেডি হয়ে থেকো।”
“কিন্তু বাবা আমি তো এখন বিয়ে করতে চাই না। আমি পড়াশোনা…!”
“বিয়ের পরেও পড়াশোনা করতে পারবে তুমি। আর কোনো কিন্তু আমি শুনতে চাই না।”
বলেই গটগট পায়ে চলে গেলেন আতিকুর রহমান। তুর থম মেরে বসে রইলো। এতো তাড়াতাড়ি তো সে বিয়ে করতে চায় না। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। এই ইচ্ছাটাও কি তার পূরণ হবেনা।
তুরের চোখের কাণিশ বেয়ে অবাধ্য নোনাজল গড়িয়ে পড়তে লাগল।
কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে দ্রুত চোখে জলটুকু ডান হাতের পিঠ দিয়ে মুছে পিছে তাকাতেই দেখলো তূর্য দাঁড়িয়ে আছে ভ্রুকুচকে। তূর্যকে দেখে তুর যেন নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। তূর্যের কোমর প্যাঁচিয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
তূর্য পরম স্নেহে আদরে ছোট বোনটার মাথা হাত বোলাতে লাগল। অস্থির কন্ঠে বলল
“কি হয়েছে তোর! এমন করছিস কেন! কে কি বলেছে একবার বল আমায়। তাকে তো আমি।”
তুর মুখ তুলে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল
“আমি এখন বিয়ে করবো না ভাইয়া। আমি পড়াশোনা করতে চাই ভাইয়া।”
তূর্য অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে চেচিয়ে বলল
“বিয়ে মানে! কি বলছিস তুই!”
তুর দমে দমে বলে উঠলো
“বাবা এসে বলে গেল কাল নাকি পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে আমাকে।”
তূর্য যেন ক্ষেপে গেল। ফর্সা মুখটা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। গায়ের রগগুলো রাগে ফুলে উঠেছে। রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো
“সোহানা বেগম প্রচণ্ড বাড় বেড়েছে। হয় তার একদিন না হয় আমার। আজ একটা হেস্তোনেস্তো করেই ছাড়বো।”
তুর আতকে উঠলো। ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“শান্ত হ ভাইয়া। প্লীজ মাথা গরম করিস না।”
তূর্য রাগে কাঁপতে কাঁপতেই বলল
“আমার ধর্য্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে ওই মহিলা আজ। আমার মায়ের জায়গা নিয়েছে। আমি চুপ ছিলাম। আমার বাবাকে আমাদের থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছে তাও আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু আমার বোনের সঙ্গে এমন করবে। না না আমি কখনোই তা মেনে নিবোনা।”
“ভাইয়া দয়া করে শান্ত হ। এমন করিস না প্লীজ। বাবা কষ্ট পাবে।”
তূর্য তাচ্ছিল্যের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলল
“তুর তুই খুব সহজ সরল রে। তুই কি মনে করিস আমি চাকরি করি বলে তোর কোনো খবর রাখিনা। ওই মহিলা প্রতিনিয়ত তোকে খাটায় তা আমি জানিনা ভাবছিস। তখন তো তোর কষ্টের কথা কেউ ভাবেনা।”
তুর এবার দমে গেল। মাথা নিচু করে রইলো সে।
তূর্য আর কিছু না বলে গটগট পায়ে রুমে ত্যাগ করে আতিকুর রহমান আর সোহানা বেগমের রুমের দিকে যেতে লাগল। একটা কথা তার কানে এলো। সোহানা বেগম বলছেন
“তুরের সাথে তোমার ওই বন্ধুর একবার বিয়ে হয়ে গেলে আমাদের বিজনেস এ আর কোনো সমস্যা থাকবে না।”
তূর্য রুমে ঢুকে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো
“কখনোই এই বিয়ে হতে দিবোনা আমি। আপনারা কিভাবে ভাবলেন যে আমি বেঁচে থাকতে আমার ছোট বোনটাকে নিয়ে আপনারা খেলবেন। আর কত নিচে নামবেন আপনারা ছিহ…!”
আতিকুর রহমান গম্ভীর কন্ঠে বলল
“ঠিক করে কথা বলো তূর্য আমরা তোমার বাবা মা হই।”
তূর্য তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল
“বাবা মা আপনি না বললে বুঝতেই পারতাম না।”
আতিকুর রহমান চেচিয়ে বলে উঠলেন
“তূর্য”
তূর্য তেজ নিয়ে বলে উঠলো
“অনেক হয়েছে আর না। আমি আমার বোনকে নিয়ে আজই আপনাদের সংসার ছাড়বো।”
সোহানা বেগম নেকা কান্না জুড়ে দিলো। তুর এতক্ষণে এসে দাড়িয়েছে রুমে। গুটিশুটি মেরে ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতেই সোহানা বেগম নেকা কান্না করতে করতে তুরকে বললেন
“দেখ না তুর তোর ভাই কি সব বলছে!”
তুর অসহায় দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকালো। তূর্য মাথা নাড়িয়ে তুরকে সর্তক করলো। তুর মাথা নামিয়ে নিলো। তূর্য পুনরায় বলল
“সম্পদ সম্পদ করছেন না আপনারা। একদিন দেখবেন এই সম্পদের জন্যই আপনারা মরবেন।”
“তূর্য তুমি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছো।”
“বাড়াবাড়ির আর কি দেখেছেন আতিকুর রহমান। এবার দেখবেন।”
“তূর্য”
“চেচিয়ে লাভ নেই আপনার কি তাশের সংসারে আমি আমার বোনকে থাকতে দিবোনা। আজকেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। তবে যাওয়ার আগে একটা কথা বলে দিচ্ছি আল্লাহ ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।”
“দেখ তূর্য তোমার মা মারা যাওয়ার থেকে আমি আর সোহানাই তোমাদের আদর যত্নে মানুষ করে তুলেছি। এখন তুমি আমাদের সঙ্গে এমনটা করতে পারোনা।”
“লাইক সিরিয়াসলি আতিকুর রহমান। আপনি আদুরে সঙ্গে আমাদের মানুষ করেছেন। হাসালেন আমায়। জ্বরে বা অসুস্থ হয়ে যখন বিছানায় পড়ে থাকতাম তখন আমার ওই ছোট্ট বোনটা এসে আমার সেবা করতো। পারতো না ঠিক মতো তবুও চেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না তার মধ্যে। আর আপনি একবারও খোঁজ অবদি নেন নি আমার। আপনার সো কল্ড দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী আমার ছোট বোনটাকে কাজের লোকের মতো খাটাতো। তবুও মেয়েটা কোনোদিন টু শব্দ টুকু করেনি। হাসিমুখে সবার সঙ্গে মিশে যে কত সুখী। কিন্তু! তারপরও আমাদের উপর আপনার কিসের অধিকার।”
তুরের চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। তীক্ত দৃশ্যগুলো মনের মণিকোঠায় ভেসে উঠছে তার। এতো সবকিছু এতোদিন মুখ বুজেই সহ্য করেছে সে। কিন্তু একটু সুখ তো সে আশা করেই। এই বাসায় তো আর সুখ আসবেনা তার। ভেবেই তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো তুরের ঠোঁটে।
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )