আপনার শুভ্রতা পর্ব-০৩

0
182

#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৩

শুভ্রতা এবার খানিকটা ঝাঝালো কন্ঠেই বলল
“হেয়ালি না করে বলুন কতটুকু চেনেন আমায়।”

রাদিফ এবার চোখ খুলে মুখটা শুভ্রতার কিছুটা কাছে নিয়ে এসে বলল
“শুভ্রতা শুভ্রা, অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শামসুল হক আর রেহানা বেগমের বড় সন্তান। একটা ছোট বোনও আছে। এবার এসএসসি দিয়েছে। আর কিছু কি শুনতে চান মায়াবতী!”

শুভ্রতা বেশ অবাক হলো। চোখগুলো বড় বড় করে বলল
“আপনি কে!”

রাদিফ স্মিত হেসে বলল
“আমি রাদিফ”

“আপনি আমার খবর জানলেন কিভাবে?”

“কেউ যদি কোনো কিছু চায় চেষ্টা করলেই সে পায় বুঝলে মায়াবতী।”

“অসহ‍্যকর লোক আপনি।”

রাদিফ হাসলো। শুভ্রতা উঠে দাড়িয়ে চলে যেতে নিলেই রাদিফ বলল
“প্রেম অসুখে পড়েছেন কোনোদিন মায়াবতী!”

শুভ্রতা পিছু ফিরে তাকাতে দেখতে পেল রাদিফ বইয়ের দিকেই মনোযোগ দিয়ে রেখেছে। কপাল কুচকে ফেললো শুভ্রতা। মনে বিড়বিড়ালো
“মাথার সমস্যা আছে নাকি এই লোকের!”

রাদিফের কান পযর্ন্ত কথাটা গেল নাকি ঠিক বোঝা গেল না। শুভ্রতা আর ঘাটালো না। সে ব‍্যাগটা কাধে আরেকটু টেনে তুলে সামনে এগোতেই রেদোয়ানের মুখোমুখি হলো শুভ্রতা।

রেদোয়ানকে দেখতেই শুভ্রতার রাগে শরীর তির তির করে কাঁপতে শুরু হলো। হাতে থাকা রুমাল দিয়ে কপালের ঘামটা মুছে ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই রেদোয়ান শুভ্রতার ডান হাতটা আকড়ে ধরলো। শুভ্রতা রাগী চোখে রেদোয়ানের দিকে তাকাতেই রেদোয়ান শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“ভালোই তো একদিনেই ভার্সিটির সভাপতির ছেলেকে পটিয়ে ফেলেছিস। আবার আমাকে খারাপ বলিস।”

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল
“মানে”

রেদোয়ান শুভ্রতার হাত আরও শক্ত করে ধরে বলল
“এখন ভালো সেজে কি হবে! রাদিফ আহমেদ এর সঙ্গে তোর কি!”

“রাদিফ আহমেদ সভাপতি ছেলে মানে!”

“ঢং করছিস আমার সঙ্গে। সব জেনেশুনে ফাঁসিয়েছিস এখন নেকামি করছিস।”

শুভ্রতা কিছু বলতে নিবে তার আগে পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠে রাদিফ বলে উঠলো
“রেদোয়ান শুভ্রতার হাত ছেড়ে দে।”

শুভ্রতা চোখ ফিরিয়ে রাদিফের দিকে তাকাতেই থমকে গেল। রাদিফের ফর্সা মুখটা রাগে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। পাতলা ঠোঁটগুলো রাগে কাঁপছে।

“ছাড়বোনা কি করবি তুই!”

শুভ্রতার হাত আরও শক্ত করে ধরতেই শুভ্রতা বাম হাতের একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় রেদোয়ানের গালে। রেদোয়ান শুভ্রতার গায়ে হাত দিতে নিলেই রাদিফ শক্ত হাতে রেদোয়ানের হাত ধরে ফেলে। সে ঝাঝালো কন্ঠে বলল
“আমি কে তুই কিন্তু এখনো চিনিস না।”

“ক্ষমতা দেখাচ্ছিস আমাকে!”

“ক্ষমতার আর কি দেখেছিস তুই।”

“আমার ব‍্যাপার আমাকে বুঝে নিতে দে রাদিফ।”

রাদিফ শুভ্রতার হাত রেদোয়ানের হাত থেকে ছাড়িয়ে রেদোয়ানের কানে কানে কি যেন বলল। রেদোয়ান যেন দমে গেল। শুভ্রতা অবাক চোখে শুধু দেখছে সব।

রাদিফ আঙুল রেদোয়ানকে দেখিয়ে শুভ্রতার হাত ধরে সেই জায়গা ত‍্যাগ করলো। শুভ্রতা হতভম্ব হয়ে আছে।

ভার্সিটির গেট পেরিয়ে যেতেই রাদিফ শুভ্রতার হাত ছেড়ে দেয়। শুভ্রতা তীক্ষ্ণ চোখে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“আপনি সভাপতি স‍্যারের ছেলে! রেদোয়ানকে আপনি চেনেন! আর কিইবা ওকে বললেন যে ও দমে গেল!”

রাদিফ গম্ভীর কন্ঠে বলল
“বাসায় চলে যাও। এতোকিছু জেনে তোমার লাভ নেই।”

রাদিফ একটা রিক্সা ডেকে শুভ্রতাকে তুলে দিলো। শুভ্রতার বাসার ঠিকানা রিক্সাচালককে বলায় শুভ্রতা বেশ অবাক হলো। শুভ্রতাকে হতভম্ব করিয়ে চলে গেল রাদিফ। শুভ্রতার মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

শুভ্রতা বেশ চিন্তিত হয়ে বাসায় ফিরলো। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রুমে যেতেই ফোনটা বাজতে লাগলো। ফোনের স্কিনে তুরের নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে শুভ্রতার ঠোঁট প্রসারিত হলো। সে ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় গেল।

তুর অস্থির কন্ঠে বলল
“কি হয়েছে রেদোয়ান ভাইয়ার সঙ্গে তোর ঝামেলা হয়েছে শুনলাম।”

শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“হুম যা শুনেছিস সব সত্যি। তোকে আমি বলছিলাম না ও আমাকে ইগনোর করছিলো। সেইজন‍্য আমি বিয়ের কথা বলতেই ও ওর আসলরূপ দেখিয়ে ফেলে। আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলাম রে।”

“আমি আগেই বলেছিলাম পোলা ভালো না। ওই বেডার হাবভাব আমার ভালো লাগে না।”

“অন্ধ ছিলাম আমি।”

“তুই অন্ধ কালা সব। ছ‍্যাকা খাইয়া এখন আবেগে ভাসতেছিস। ওই ফালতু ছেলেকে ভালোবাসলি তুই কি দেখে ক তো আমাকে!”

“কি জানি কি হয়েছিলো আমার!”

“মিরকি হয়েছিলো তো ফক্কিনি।

“থাক বাদ দে তোর কি খবর! চট্টগ্রাম থেকে কবে ঢাকায় ফিরছিস?”

“আর বলিস না ভাইয়ার একটা মাইয়া মনে ধরেছে। যেতেই চাচ্ছেনা এখান থেকে।”

“কি বলিস তুর তূর্য ভাইয়ার আবার কাকে পছন্দ হলো!”

তুর ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“জানিনা গাধাটা নামটাম কিছু জানেনা। এসে ‍বলছে ভাল লাগছে। ওরে চাই। ফালতু পোলা ওই। কালকেই ফিরবো ইনশাআল্লাহ।”

“আচ্ছা আয়”

কল কেটে রুমে আসতেই শুভ্রতা দেখলো ওর মা রেহানা বেগম বসে আছে বেডের উপর। শুভ্রতা মায়ের পাশ ঘেঁষে বসতেই রেহানা বেগম বলল
“রেডি হয়ে নে আম্মা নাকি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তোর বাবা ফোন দিয়ে বলল রেডি হয়ে থাকতে।”

“কি বলছো আম্মু দাদিমার অবস্থা যেহেতু খারাপ সেহেতু তো যেতেই হবে। আমি সব গুছিয়ে নিচ্ছি। তুমি টেনশন করো না।”

৫.
কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। শুভ্রতা আজই ফিরেছে গ্রাম থেকে। এখন ওর দাদিমা ভালোই আছে আগের থেকে। রাতে ফিরায়। ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়লো শুভ্রতা।

সকালের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল শুভ্রতার। শুভ্রতা আড়মোড়া ভেঙে ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। ভার্সিটিতে যাওয়ার জন‍্য একদম রেডি হয়েই রুম থেকে বের হলো।

শামসুল হক বসার ঘরে বসে খবর দেখছিলেন। শুভ্রতা হাসিমুখে বাবার কাছে গিয়ে কিছুসময় কথাবার্তা বলে মায়ের কাছে গেল। রেহানা বেগম ওকে নাস্তা দিলে তা খেয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো শুভ্রতা ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

ভার্সিটির গেট পেরিয়ে যেতেই তুর ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতাকে। শুভ্রতাও মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো তুরকে।

তুর শুভ্রতাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
“কেমন আছিস দোস্ত? আর দাদিমা কেমন আছে?”

“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। উনিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন এখন।”

“তোকে অনেক মিস করছিলাম আমি।”

“আমিও রে একা একা ক্লাস করতে খুব অসহায় লাগছিলো আমার।”

কথা বলতে বলতেই ক্লাসে চলে গেল ওরা দুইজন।

———————

ক্লাস শেষে তুর আর শুভ্রতা খালের পাশের ব্রেঞ্চে এসে বসেছে। শুভ্রতা রাদিফের কথা সব বলল তুরকে। তুর রাদিফের কথা শুনে কিছু ভাবলো। তারপর ভাবুক কন্ঠেই বলল
“ছেলেটা কি লম্বা ফর্সা সুদর্শন পুরুষ। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি আছে। আবার চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা।”

শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
“হুম তুই যেমন বলছিস তেমনি। কিন্তু তুই জানলি কিভাবে!”

তুর দাঁত বের করে হেসে বলল
“দুলাভাই ইধার আ রেহি হে।”

শুভ্রতা ভ্রুকুচকে বলে উঠলো
“মানে”

তুর চোখ দিয়ে ইশারা করে সামনের দিকে তাকাতে বলল। শুভ্রতাও তাকালো সেদিকে। রাদিফ আসছে এইদিকে। চুলগুলো তার এলোমেলো হয়ে মৃদু বাতাসে উড়ছে। এই ছেলেটা সবসময় শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পড়ে কেন! সে কি জানেনা এতে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় শতগুণে! এগুলোই ভাবনায় আসছিলো শুভ্রতার।

শুভ্রতা বেশ অবাক নিজের ভাবনা দেখে। নিজেই নিজেকে এর জন‍্য গালি দিতে লাগল। তুর শুভ্রতাকে ধাক্কা দিয়ে বলল
“কি বান্ধবী আমার কি এতো ভাবছো!”

শুভ্রতা কটমট দৃষ্টিতে তুরের দিকে তাকিয়ে বলল
“বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু এবার।”

“কি বেশি বেশি হচ্ছে মায়াবতী!”

“আপনার মাথা”

“তোমার দাদিমা কেমন আছেন এখন!”

শুভ্রতা রাদিফের এই প্রশ্নে আকাশ থেকে পড়লো। রাদিফ কিভাবে জানলো। শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“আমার দাদিমা কেমন আছে মানে!”

“না মানে উনি তো অসুস্থ ছিলেন তাই জিঙ্গাসা করলাম এখন কেমন আছেন?”

শুভ্রতা আরো দ্বিগুণ সন্দেহ নিয়ে বলল
“আপনি জানলেন কিভাবে যে আমার দাদিমা অসুস্থ!”

“না মানে জেনেছি একভাবে।”

“সত‍্যি করে বলুন বলছি।”

রাদিফ আমতা আমতা করতে করতে বলল

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে