#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২
শুভ্রতা রাদিফের সামনে দাড়িয়ে বলল
“আপনার মতলব কি বলেন তো!”
রাদিফ মুচকি হেসে খানিকটা ঝুকে শুভ্রতার কপালে উড়তে থাকা চুলগুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে বলল
“মতলব আর কি হবে মায়াবতী। তেমন কিছুই না। এখন চলুন তো। নাকি মায়াবতীর আমার মতো অধমের সঙ্গে সময় অতিবাহিত করতে ভালো লাগছে!”
শুভ্রতা কপট রাগ দেখিয়ে বলল
“অসহ্য”
বলেই হাটা শুরু করলো। রাদিফও পিছু পিছু যেতে নিলে শুভ্রতা ওর দিকে ঘুরে বলল
“খবরদার আমার পিছু পিছু আসবেন না। তাহলে কিন্তু খবর করে ছাড়বো বলে দিলাম।”
রাদিফ সেখানেই দাড়িয়ে গেল। মুচকি হাসি ফুটিয়ে বলল
“মায়াবতীদের রাগলে আরো মায়াবতী লাগে। রাগ করেন না প্লীজ।”
শুভ্রতা ভ্রুকুচকালো। কি যেন ভেবে রাদিফকে পাত্তা না দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগল। রাদিফ শুধু শুভ্রতার যাওয়ার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো।
৩.
শুভ্রতা বাসায় ফিরতেই ওর মা ওকে কিছুসময় ঝারলো। শুভ্রতা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। বেশ কিছুসময় পর রেহানা বেগম গম্ভীর কন্ঠেই বললেন
“ফ্রেশ হয়ে খেতে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।”
শুভ্রতা কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেল। মাথাটা ব্যথা করছে তার। হাতটাও টনটন করছে। গায়ের জোরেই চড়টা মেরেছিল তখন।
শুভ্রতা রুমের দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে টাওয়েল আর জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হতেই বেডের উপরে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা নম্রতাকে দেখে কপাল কুচকে বলল
“কিরে তোর আবার কি হয়েছে!”
নম্রতা চোখ ঘুরিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে উচ্ছসিত কন্ঠে বলল
“আপুনি তোর থাপ্পড়টা সেই ছিলো।”
নম্রতার মুখে এই কথা শুনে বেশ অবাক হলো শুভ্রতা। এ কথা ও জানলো কিভাবে। শুভ্রতা যেন ভাবনায় পড়ে গেল। নম্রতা ঠোঁটে মেকি হাসি ফুটিয়ে বলল
“আরে আপুনি এতো ভেবে কি করবি বল তো। আমিই বলছি একটু আগে তুর আপু কল করে বলল।”
শুভ্রতা বিষয়টা বুঝতে পেরে চুল মুছতে মুছতে বলল
“ও তো আজ ভার্সিটি যায় নি। তাহলে জানলো কিভাবে?”
নম্রতা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল
“তা তো আমি বলতে পারলাম না। তোর বান্ধবী তুই জানিস।”
ওদের কথার মাঝেই রেহানা বেগমের ডাক পড়লো। শুভ্রতা টাওয়েলটা নম্রতার হাতে দিয়ে বলল
“বারান্দায় মেলে দে”
শুভ্রতা খাবার খেয়ে পুনরায় নিজের রুমে এসে দেখলো নম্রতা এখনো বসেই আছে আগের অবস্থায়। শুভ্রতা ভ্রু কুচকালো। সে ধীর পায়ে নম্রতার পাশে গিয়ে বসে বলল
“কি হয়েছে তোর!”
নম্রতা তাকালো বোনের দিকে। ঠাস করে বোনের কোলে শুয়ে বলল
“আপুনি সবাই এতো স্বার্থ খোঁজে কেন!”
শুভ্রতা নম্রতার মাথায় আঙুল চালাতে চালাতে বলল
“কে বলেছে সবাই স্বার্থপর!”
“আমি জিপিএ পাইভ পেয়েছি তাই সবাই আমার সঙ্গে কেমন যেন করছে। আমরা কত ভালো ফ্রেন্ড ছিলাম। কিন্তু এখন আমার সঙ্গে কথা বলা অফ করে দিয়েছে। আপুনি ভালো রেজাল্ট করাটা কি আমার দোষ। আমি তো সবসময় ওকে সাহায্য করেছি। তবুও ও ওর অন্য ফ্রেন্ড বানালো আমাকে ছেড়ে।”
“দেখ বনু তোর বয়সটাই এমন এখন অনেকেই তোকে ছেড়ে যাবে। কেবল তো এসএসসি দিলি। দিন যাবে মানুষ চিনতে পারবি। বন্ধুবান্ধবের মধ্যে বিচ্ছেদ হবে। তবে মনে রাখিস যে তোর প্রকৃত ফ্রেন্ড সে কখনোই তোকে ছেড়ে যাবেনা। বুঝলি পাগলি। আর তুই অবশ্যই ভালো রেজাল্ট করেছিস। ওর তোর ভালোই হিংসা করছে। করুক হিংসা। তুই তোর জীবন উপভোগ করবি। কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না।”
“আপুনি তোর বফ তো রেদোয়ান ভাইয়া ছিলো তাকে তুই
থাপ্পড় দিলি কেন!”
শুভ্রতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
“ছিলো একসময়। কিন্তু সে আমার ধোকা দিয়েছে। আমি ভুল মানুষকে ভালোবেসে আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি। আমি মনে করি আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। ওই লোকের কথা আর তুলবি না। এরকম ছেলের জন্য মানুষ ভালোবাসা নামক পবিত্র শব্দটা কলঙ্কিত করে। বাদ দে এসব। আর তুই তোর ওই ফ্রেন্ড নিয়ে ভাবিস না। হয় তো ও তোর জন্য মঙ্গলকর ছিলো তাই আল্লাহ তোর কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছে।”
নম্রতা শুভ্রতার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল
“আপুনি ঘুরতে যাবি!”
শুভ্রতা একটু ভেবে বলল
“সন্ধ্যার দিকে যাবোনি। এখন একটু রেস্ট নিয়ে নিই।”
শুভ্রতার হ্যাঁবোধক উত্তরে নম্রতা বেশ খুশি হলো। শোয়া থেকে উঠে বসে টুক করে শুভ্রতার গালে চুমু খেয়ে বলল
“আমার কিউটি আপুনি।”
নম্রতার কাজে শুভ্রতা হাসলো।
———————
সন্ধ্যার দিকে শুভ্রতা আর নম্রতা হাঁটতে বেড়িছে। আশেপাশে ঘুরে ফুচকা খেয়ে বাড়িতে ফিরলো দুইজন।
শুভ্রতার মনটাও এখন বেশ ফুড়ফুড়ে লাগছে। নম্রতার সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে খারাপ হয়নি। বরং ভালো হয়েছে।
শুভ্রতা বই নিয়ে পড়তে বসলো। বেশকিছুসময় পড়ে রাতের খাবার খেয়ে আরো কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে শুয়ে পরলো সে।
চোখ বুজতেই হুট করে রাদিফের হাসিমুখটা ভেসে উঠলো। শুভ্রতা ধপ করে উঠে বসলো। এমন হলো কেন তার সাথে। ওই অসহ্য লোকটাকে কেন তার মনে পরলো। চোখ বুজতেই কেন তাকে দেখতে পেল।
শুভ্রতা পুনরায় শুয়ে বালিশের পাশে হাতরে ফোনটা হাতে নিলো। রেদোয়ানকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে সস্থির নিশ্বাস ফেলল। সে বেশকিছুদিন আগে থেকে খেয়াল করছিলো রেদোয়ান তাকে ইগনোর করছে। তাই তো বিয়ের কথা বলতেই রেদোয়ানের আসল রূপ বেড়িয়ে এলো। সে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলো। তারই ভুল ছিলো। কেন সে ওই ফালতু ছেলের জন্য নিজে কষ্ট পাবে। তার চরিত্রের সাথে কখনোই তা মিলবে না। কিন্তু রাদিফ!
শুভ্রতা একবার ভাবলো তুরকে একটা কল দিবে। কিন্তু মেয়েটা তো ঘুরতে গেছে। থাক পরে আসলে না হয় সব বলবে। ঘুরে আসুক।
শুভ্রতা ফোনটা নিয়েই বারান্দায় গেল। রাস্তায় থাকা ল্যাম্পপোস্টের আলো গুলো জ্বলছে টিপটিপ করে। রাস্তায় মানুষ নেই দু তিনটা কুকুর এদিক সেদিক ঘুরছে। শুভ্রতা নিচ থেকে চোখ ফিরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। আজ পূর্ণিমা না হলেও চাঁদ আলো দিচ্ছে। মেঘগুলো চাঁদের সঙ্গে কানামাছি খেলছে। শুভ্রতা পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ বুজে এলো শুভ্রতার। ঘুমটা ধরে আসতেই শুভ্রতা ঢুলুঢুলু পায়ে রুমে এসে বেডে শুয়ে পরলো।
৪.
শুভ্রতা ক্লাস শেষ করে আজও সেই খালের পাড়ে এসে ব্রেঞ্চে বসেছে। দৃষ্টি তার স্বচ্ছ খালের পানির দিকে।
আজকেও হুট করে রাদিফ শুভ্রতার পাশে ধপ করে বসলো। শুভ্রতার খেয়াল করলো আজও সে শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে। তার থেকে দূরত্ব নিয়েই বসেছে। তা দেখে কেন যেন অজান্তেই ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো শুভ্রতার।
রাদিফ বইটা খুলে নিরবেই সেদিকে চোখ রাখলো। শুভ্রতা আড়চোখে রাদিফকে দেখছে। রাদিফ বই থেকে চোখ ঘুরিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে গেল তাদের। শুভ্রতা সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে ফিরে তাকালো। রাদিফ বিষয়টি বুঝতে পেরে ঠোঁট কামরে হাসলো।
হুট করে রাদিফ ঠাস করে বইটা ব্যাগে ঢুকিয়ে উঠে দাড়ালো। শুভ্রতা কপাল কুচকে রাদিফকে পর্যবেক্ষণ করছে শুধু। রাদিফ খানিকটা সামনে গিয়ে একটা কূষ্ণচুড়া ফুল কুড়িয়ে নিলো। নিজে মনে কি যেন বিড়বিড় করে আবারও ব্রেঞ্চে এসে বসলো।
শুভ্রতা কিছু বলছে না শুধু নিরবে রাদিফের কর্মকাণ্ড দেখছে। রাদিফ এবার নিরবতা ভেঙে ফুলটা শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“ফুলটা যদি গ্রহণ করে এই অধমকে ধন্য করতেন তাহলে বেশ খুশি হতাম।”
শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“যদি না নেই তবে!”
রাদিফ ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“তবে এই সতেজ ফুলটির জায়গা মায়াবতীর এলোকেশে না হয়ে বইয়ের ভাঁজে হবে। এই আর কি।”
শুভ্রতা কিছু বললো না। রাদিফ পুনরায় প্রশ্ন করলো
“নিবেন না মায়াবতী”
শুভ্রতা তীক্ষ্ণ চোখে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল
“আমার নাম আছে”
রাদিফ ভাবলেশহীন ভাবে বলল
“তাতে কি!”
“আমার নাম ধরে ডাকলে খুশি হতাম। মায়াবতী শুনতে ভালো লাগছে না। আর আপনি কতটুকু চিনেন আমাকে।”
রাদিফ চোখ বুজে ব্রেঞ্চে হেলান দিয়ে বসে মুচকি হাসলো।
শুভ্রতা প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে জিঙ্গাসা করলো
“কথায় কথায় এতো হাসেন কেন!”
রাদিফ চোখ বুজেই বলল
“কেন ভালো লাগেনা বুঝি।”
শুভ্রতা এবার খানিকটা ঝাঝালো কন্ঠেই বলল
“হেয়ালি না করে বলুন কতটুকু চেনেন আমায়।”
#চলবে