#আপনার_শুভ্রতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১
১.
রেদোয়ানের কথাগুলো যেন তীরের মতো ঠেকছে শুভ্রতার। দীর্ঘ চারবছর যে মানুষটাকে ভালোবেসেছে সেই আজকে পুরো ভার্সিটির সবার সামনে তাকে এমন করে অপমান করবে তা কল্পনাও করেনি শুভ্রতা। চোখ বেয়ে নোনাজল পড়তে শুরু করেছে। বাকি সবাই মুখ টিপে হাসছে। আর শুভ্রতাকে নিয়ে টিটকারি মারছে।রেদোয়ান নাক মুখ কুচকে বলল
“তুই কিভাবে ভাবলি তোকে আমি ভালোবেসেছি। তোর মতো মেয়েকে কি আমার মতো ছেলের সঙ্গে মানায়। আমি তো জাস্ট টাইম পাস করেছি।”
সঙ্গে সঙ্গে পরপর দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলো শুভ্রতা রেদোয়ানের গালে। রেদোয়ান গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। শুভ্রতার রাগে গা থরথর করে কাঁপছে। শুভ্রতা শ্যামবর্ণের মুখটা অদ্ভুত রকমের ভয়ংকর লাগছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে অসম্ভব। মনে হচ্ছে আর একটু হলেই চোখ বেয়ে আগুন বের হবে যেটা দিয়ে জ্বালিয়ে ফেলবে সবাইকে। শুভ্রতা ডান উঁচিয়ে রেদোয়ানকে রাগান্বিত কন্ঠে বলল
“তুই কি ছেলে খেলা পেয়েছিস। মেয়েদের কি তোর হাতের পুতুল মনে হয়। খবরদার এমনটা ভেবে থাকলে তুই ভুল ভাবছিস। মেয়েরা হতে পারে নরম কিন্তু ওরা অসহায় কিংবা তোদের হাতের পুতুল না। আমার নরম রূপ দেখেছিস। আসল রূপ দেখাইনি।”
রেদোয়ান অপমানিত দৃষ্টিতে চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছুক্ষণ আগের মুখ টিপে হাসতে থাকা মানুষরা এখন তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। রেদোয়ানের পাশ থেকে ওর বান্ধবী রিয়া বলে উঠলো
“এই মেয়ে তোর এতো বড় সাহস তুই রেদোয়ানের গায়ে হাত তুলিস। তোকে…!”
রিয়াকে আর কিছু বলতে না দেখে ওর দিকে ফিরলো। শুভ্রতার তাকানো দেখে দমে গেল রিয়া। শুভ্রতা চেঁচিয়ে বলে উঠলো
“কি হলো চুপ হয়ে গেলি কেন! কি করবি আমাকে! মারবি তো! মার মেরে দেখ। একটু কথা তোদের মাথায় ঢুকিয়ে নে ভেঙে যাওয়া মানুষের সঙ্গে লাগতে আসিস না। তোদের ভেঙে দিবে।”
কথাগুলো বলেই গটগট পায়ে সেই জায়গা ত্যাগ করলো শুভ্রতা।
২.
ভার্সিটির কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচের ব্রেঞ্চটিতে বসে আছে শুভ্রতা। কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো স্বচ্ছ খালের পানিতে পরে এক অপরূপ সৌন্দর্য প্রকাশ করছে। জায়গাটা বেশ প্রিয় শুভ্রতার। মন ভালো করার মতো জায়গা।
“সাহসী মেয়েদের চোখে জল মানায় না। আর সে যদি হয় মায়াবতী তাহলে তো প্রশ্নই উঠে না।”
হঠাৎ একটা পুরুষালি কন্ঠে শুভ্রতা ভ্রুকুচকে তাকালো পাশে। ওর পাশে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে একটা বলিষ্ট সুপুরুষ বসে আছে। হাতে তার বাংলা সাহিত্যের একটা গল্পের বই। পরনে আকাশি রঙের পাঞ্জাবি। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখের চিকন ফ্রেমের চশমা ফর্সা গরনের সুদর্শন ছেলেটাকে এক পলকে দেখে নিলো শুভ্রতা। ছেলেটা আবার বলে উঠলো
“কি হলো এভাবে কি দেখছেন! আমি জানি আমি সুন্দর। তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন। তা তো ঠিক না মায়াবতী।”
শুভ্রতা চোখের পানি হাতে উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে খালের স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে বলল
“ফ্লাট করছেন!”
ছেলেটা মুচকি হেসে শুভ্রতার দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে বইয়ের দিকে চোখ রেখে বলল
“এই অধমের এতো সাহস আছে নাকি যে আপনার সঙ্গে ফ্লট করবো। আপনি যে জোরে জোরে থাপ্পড় মারেন।”
শুভ্রতা মুখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকালো। ছেলেটা আবারও মুচকি হাসলো। ডান হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলল
“আমি রাদিফ আহমেদ,আপনি!”
শুভ্রতা উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলো। রাদিফ বইটা বন্ধ করে ব্যাগে রেখে ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
“আপনি অন্যরকমের এক তেজি নারী। ভাবলাম আপনার সঙ্গে কথা বলে আপনার প্রতিবাদের ধরনটাকে নিজের মাঝে নিয়ে আসা যেতেই পারে। ফ্রেন্ড না হয় নাই হতে পারি কথা তো বলতেই পারি মায়াবতী।”
শুভ্রতা তবুও চুপ করে রইলো।
রাদিফ শুভ্রতার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দু কদম এগোতেই শুভ্রতা গম্ভীর কন্ঠে বলল
“শুভ্রতা শুভ্রা”
রাদিফ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। বাম হাত দিয়ে মাথা পিছনে থাকা চুলগুলোই হাত বোলাতে বোলাতে আবারও এসে শুভ্রতা থেকে দূরত্ব বজায় রেখে আগের জায়গাই বসলো।
শুভ্রতা কিছু না বলে আগের ন্যায় চুপচাপই বসে রইলো। রাদিফ ও চুপ করে রইলো।
নিরবতা ভেঙে শুভ্রতাই বলল
“আপনি হঠাৎ আমার সঙ্গে কথা বলতে আসলেন কেন! আপনাকে তো আমি চিনি না। এর আগে তো আমাদের দেখা হয়নি। তাহলে…!”
রাদিফ শুভ্রতার কথা বলার অপেক্ষাই ছিলো। চোখের চশমাটা ঠিক করে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল
“নাম তো জানাই হলো। এখন আর অচেনা কোথায়! আগে দেখা হয় নি ঠিক কিন্তু আজ তো হয়েছে।”
“আপনার কথাগুলো যেন কেমন!”
“কেমন!”
“বেশ অদ্ভুত”
রাদিফ আবারও মুচকি হেসে বলল
“তাই বুঝি আগে কেউ বলে নি তো তাই জানতাম না।”
শুভ্রতা কিছু বলল না।
——————–
অনেকক্ষণ পর রাদিফ হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিরবতা ভেঙে বলল
“বাসায় যাবেন না?”
এতক্ষণে শুভ্রতার হুশ হলো ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখলো ওর মা অলরেডি ফোন দিয়েছে সাতবার। নিজের উপরই নিজে বিরক্ত হলো শুভ্রতা। তাড়াতাড়ি করে শুভ্রতা তার মায়ের নাম্বার কল দিতে সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ হলো। অপরপাশ থেকে শুভ্রতা মা রেহানা বেগম ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলেন
“কিরে ফোন ধরিস না কেন! বাসার কথা মনে নাই তোর। একজন যে চিন্তায় মরছে সেদিকে কোনো খেয়াল নাই তোর।”
“আম্মু জ্যামে আটকে আছি। আসছি আমি আর কিছুক্ষণ।”
বলেই কল কেটে দিলো শুভ্রতা। সে জানে এখন কল না কাটলে ওর মা তান্ডব চালাতো। তাড়াহুড়ো করে উঠে দাড়ালো শুভ্রতা।
“চলে যাচ্ছেন!”
শুভ্রতা ভ্রুকুচকে রাদিফের দিকে তাকাতেই রাদিফও উঠে দাঁড়ালো। ব্যাগটা কাধে নিয়ে বলল
“চলুন এগিয়ে দিই আপনাকে।”
শুভ্রতা রাদিফের সামনে দাড়িয়ে বলল
“আপনার মতলব কি বলেন তো!”
#চলবে কি?