আনন্দ অশ্রু পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

0
1110

#আনন্দ_অশ্রু
#অন্তিম পর্ব
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি

দুই দিন পর শাফায়াত আর নাফিসার বিয়ে। এতো ধুম ধাম করে বিয়েটা না হলেও বেশ ভালো ভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। কাছের যত আত্মীয় স্বজন আছে সবাই উপস্থিত। পুরো শিকদার বাড়ি আজ ব্যাস্ত। বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা জাকজমোক না হলেও আনন্দের কমতি নেই। তানজিল আর তিশা বাড়ির মেহমানদের দেখছে, মমিন আর হাইউল বিয়ের বাজার ঘাট করছে, রেহান আর শাহাদাৎ বাড়িটাকে সাজানোর দায়িত্বে আছে। মায়া নাফিসাকে মেহেদী পড়ানো নিয়ে ব্যাস্ত শাফায়াত নিতুল আর আনামকে নিয়ে রেহানের কাজে টুকি টাকি সাহায্য করছে।শাফায়াতের মা আর শাহাদাতের বউ মিলে নাফিসার জন্য বিয়ের জিনিস পত্র কিনতে মার্কেটে যাচ্ছে তানজিল আর তিশাও সাথে যাবে।

শত ব্যস্ততার মাঝেও রেহান তার আসু সোনার খবর নিতে ভুলেনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসে মায়াকে একটু করে জড়িয়ে ধরে আবার চুমুও খায়। এই গুলো করে নাকি তার কাজের প্রতি এনার্জী বিল্ডআপ হয় তাই সে সুযোগ পেলেই মায়ার কাছে ছুটে আসে। মায়া অবশ্য বিরক্ত হয় না সে জানে রেহানকে এইগুলো করতে মানা করলেও সে শুনবে না উল্টো মানা করার অপরাধে জড়িয়ে ধরে রাখার টাইম আর চুমুর সংখ্যা বাড়বে। তাই চুপ করে থাকাই স্রেও। এদিকে শাফায়াত চুপি চুপি নাফিসার সাথে দেখা করে কথা বলে একটু একটু জড়িয়ে ধরতে চায় কিন্তু জড়িয়ে ধরার সাহস করে উঠতে পারে না তাই নাফিসাই লজ্জা শরমকে সাইড করে শাফায়াত কে জড়িয়ে ধরে। একবার নাফিসা জড়িয়ে ধরলে শাফায়াত নির্লজ্জর মতো ছাড়তে চায় না।

এইদিকে নাফিসা আর শাফায়াতের বিয়েতে কোনো ভাবেই খুশি হতে পারছে না আর্শি শাফায়াত কে দেখলেই কান্না করে দেয়।শাফায়াত দেখেও না দেখার ভান করে বসে থাকে। মায়া আর নাফিসা বিষয়টা সামাল দিতে আর্শিকে নিয়ে ছাদে চলে যায় আর তার সাথে কথা বলতে থাকে,

আর্শি বোন আমার তুই কি এই বিয়েতে খুশি না?(নাফিসা)

না না আপাই আমি তোমার জন্যে খুব খুশি। তোমার এমন কেনো মনে হলো?(আর্শি)

আর্শি আমরা জানি তুমি শাফায়াত কে পছন্দ করো, আর তুমি ভীতরে ভীতরে খুব কষ্ট পাচ্ছো।

ছোটো কাকীমনি আমি শাফায়াত ভাইয়াকে পছন্দ করি ভালবাসি কিন্তু শাফায়াত ভাইয়া তো আমাকে পছন্দ করে না। সে তো নাফু আপাই কে ভালোবাসে।

আর্শি তুমি যেটাকে ভালোবাসা বলছো সেটা ভালোবাসা না এটা শুধু মাত্র ভালোলাগা। তুমি শাফায়াত কে ভালবাস না শুধু ওকে ভালোলাগে। তুমি খুব ছোটো তাই এই ভালো লাগাকে ভালোবাসা বলছো।ভালোবাসা কখন হয় জানো?

না কাকীমনি?

যখন তুমি আমাদের মত বড় হয়ে যাবে তখন ভালোবাসা হবে। আর দেখবে শাফায়াতের চেয়েও সুন্দর একজন কে ভালোবাসবে তুমি।

আর বানু তুই মন খারাপ করিস না তোর জন্যে আমি নিজে একটা সুন্দর ছেলে এনে দিবো পরে তুই ওর সাথে প্রেম করিস তার পর বিয়ে ঠিক আছে?

নাফিসা আর মায়ার কথায় হাসলো আর্শি। তিশা ছাদের দরজায় আড়ালে দাড়িয়ে ওদের কথা গুলো শুনছিল। আর্শির মনে যে শাফায়াত কে নিয়ে অনুভূতির জন্ম হচ্ছে সেটা তিশাও বুঝতে পেরেছে কিন্তু মায়ার অনুভুতি গুলো নিয়ে খেলার অনুশুচনায় আর পুরনো দিনের কথা গুলো মনে করে মেয়েকে কিছু বলতে পারেনি। আজ আর্শির প্রতি মায়ার উদার মনোভাব দেখে তিশার বড্ডো অপরাধ বোধ হচ্ছে। নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় মায়া নাফিসা আর আর্শি ওদের শিরির কাছে আসতে দেখে নিচে চলে যায় তিশা।
__________________

মেহেদীর অনুষ্ঠান শেষ করে ঘরে গেলো মায়া রেহান আগে থেকেই ঘরে বসে ছিলো। মায়া ঘরে ঢুকতেই রেহান মায়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি ঠেকিয়ে বলে,

আসু আজ সারাদিন তোমায় অনেক মনে পরছে শুধু কাজের জন্য তোমার কাছে আসতে পারিনি।

সারাদিনিতো আমার কাছে কাছে ছিলেন সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরছেন চুমুর কথা নাহয় বাদই দিলাম।

এমন একটু একটু চুমু দিলে কি আর চুমুর স্বাদ পাওয়া যায় আমার তো গভীর চুম্বন লাগবে।

ইসস আইছে আমার চুমুখোর বর কি সুন্দর তার আবদার খানা যেখানে সেখানে যখন ইচ্ছা চুমু খায় আবার বলে এই চুমুতে নাকি হয়না তার গভীর চুম্বন লাগবে। দেখি ছাড়েন ফ্রেশ হবো ওয়াশরুমে যাবো।

কথা টা বলেই রেহানের বাহুর বেরি থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো মায়া রেহান এক ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে দুষ্টু হেসে জিজ্ঞাসু কণ্ঠে বলে,

তাহলে তুমি আমাকে গভীর চুম্বন দিবে না তাইতো?

মায়া মুখ বাঁকিয়ে হেসে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় “না”। রেহান দুষ্টু হেসে আবারো বলে,

ঠিক আছে তুমি দিবে না বলেছো মেনে নিচ্ছি কিন্তু এখন যা হবে সেটার জন্য আমি দায়ী থাকবো না আগেই বলে দিলাম।

বলেই মায়ার দিকে ছুটে গেলো মায়া রেহানের ছুটে আসা দেখে সেও ছুটছে পুরো ঘর জুড়ে দুজনে বাচ্চাদের মতো ছুটে বেড়াচ্ছে। ওদের ছোটা ছুটির সময় দরজায় টোকা পরে রেহান থেমে গিয়ে বলে,

আগে এই রোমাঞ্চের হাড্ডিটা কে দেখি তারপর তোমাকে দেখছি।

মায়া মুখ বেঙ্গিয়ে হাসলো রেহান দড়জা খুলে দেখে তিশা দাড়িয়ে আছে। রেহান কিছু বললো না তিশাকে ঘরে আসতে বললো। তিশা ঘরে ঢুকে সোজা মায়ার কাছে চলে যায় মায়ার এক হাতে হাত রেখে ওপর হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মায়া অবাক হয়ে একবার রেহানের দিকে তাকাচ্ছে আবার তিশার দিকে তাকাচ্ছে। মায়ার দিকে তাঁকিয়ে অপরাধীর স্বরে তিশা বলে,

তোমার সাথে অমনটা না করলেও পারতাম। আমি পুরোনো কথামনে করে দিয়ে তোমার খুশী নষ্ট করতে চাই না, যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও। চাইলে আজ তুমি প্রতিশোধ নিতে পারতে কিন্তু তুমি তা করনি। আবারো তোমার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

কথা গুলো বলে তিশা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো মায়া কিছু বলার সুযোগ পেলো না। রেহান দড়জা লাগিয়ে দিয়ে মায়ার কাছে আসে মায়াকে জিজ্ঞেস করে,

তুমি কি মেজো ভাবীর কথা ভাবছো?

মায়া মুচকি হেসে বলে, আমি ক্ষমা করে দিয়েছি ক্ষমা করা উত্তম কাজ। তাই আমিও আর মেজো ভাবীর ওপর নারাজ নই।

মায়ার কথা শুনে রেহান মায়ার কপালে চুমু খায় তারপর জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

এখন পালাও দেখি?

মায়া রেহানের উদ্দেশ্য বুঝে গেছে আর রেহান মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারবে না তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আর রেহান কে বাধা দিলেও সে থামবে না। রেহানের চুমু দরকার মানে চুমু লাগবেই। মায়া রেহানের সাথে তালমিলাছে আর রেহান নিজের কাজে ব্যাস্ত।
____________________

আজ নাফিসা আর শাফায়াতের বিয়ে সকালে হলুদের গোসল করিয়ে নাফিসাকে বউ সাজতে পাঠানো হয়েছে। রেহান আর শাহাদাৎ মিলে শাফায়াত কে তৈরি করছে।শাফায়াতের হাসি দেখে রেহান বলে,

তোর জন্যে আজ আমি আমার বৌকে একবারের জন্যও দেখিনি। তুই যদি জামাই না হতি তাহলে তোকে যে কোন ছাদের ওপর নিয়ে ঝুলিয়ে রাখতাম সেটা আমিও জানি না।

ছোটো শ্বশুর আজ আর হুমকি দিয়েন না এমন শুভ দিনে পুরোনো হুমকি বাদ দেন নতুন কিছু চিন্তা করেন।

শাফায়াত তুই জামাই বলে যে তোকে আমি কিছু করবো না এটা ভাবিস না বলে দিলাম। আমি যদি বিয়েটা ঠিক করে দিতে পারি তাহলে ভাঙতেও পারবো বুঝলি।

ছোটো শ্বশুর আপনি হয়তো জানেন না আপনি বিয়ে ভাঙলেও আজ বিয়েটা হবে।আপনাদের মেয়ে যদি শোনে বিয়েটা আজ হচ্ছে না তাহলে সে নিজেই আমাকে নিয়ে পালাবে। আর অবশ্যই আপনি চাইবেন না এমন মানহানি শিকদার বংশের হোক।

কী মনে করে যে তোর ভাইয়ের সাথে আমার বন্ধুতো আল্লাহ্ করাইছে সেটা আল্লাহই ভালো জানে।

আপনার জামাই বানানোর জন্য।

শাফায়াতের এমন কথায় শাহাদাৎ হাসলো রেহান বাংলার পাঁচের মতো করে মুখ খানা করেছে এটা দেখে শাফায়াত রেহানের চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলে,

ছোটো শ্বশুর এমন একটা জামাই পেয়ে কই খুশিতে নাচবেন তা না করে বাংলার পাঁচের মতো মুখটা করে রেখেছেন। বলি একটু হাসেন আমি ওতো টাও দুষ্টু জামাই না আপনি যতোটা ভাবেন।আপনাকে ভয় পাই না কিন্তু আপনাকে সম্মান করি।

রেহান শাফায়াতের কথায় মুচকি হাসলো মুখে হাসির রেখা টেনে বলে,

শাহাদাৎ বন্ধু জামাই আমার আজ আবেগী হয়ে গেছে বলি আজ কোন দিক দিয়ে সূর্য উঠলো।

বলেই তিন জন হাসতে শুরু করলো।
_____________________

নাফিসা আর শাফায়াতের বিয়েটা ঠিক ঠাক ভাবেই সম্পূর্ণ হলো।
এখন তাদের নতুন জীবন শুরু করার পালা।

শাফায়াতের ঘরটাকে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।নাফিসাকে মায়া ঘরে বসিয়ে দিয়ে চলে গেছে।শাফায়াত ঘরে ঢুকতেই বলে,

শোন হুর যদি সালাম করার কোনো নিয়ম থাকে তাহলে মুখে সালাম দাও পায়ে ধরতে হবে না।

শাফায়াতের কথা শুনে নাফিসা মুচকি হেসে মুখে সালাম দিলো।শাফায়াত সালামের উত্তর দিয়ে নাফিসাকে বিয়ের পোশাক ছেড়ে সাধারণ কিছু পরতে বলে আর অজু করে আসতে বলে। নাফিসা শাফায়াতের কথা মতো ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আসে। তারপর দুজনে একসাথে নামায আদায় করে। জায়নামাজ ভাঁজ করে রেখে নাফিসা শাফায়াতের সামনে দাঁড়ায় শাফায়াত নাফিসার হাত ধরে বলে,

আমি তোমার শখের পুরুষ হতে চাই আমাকে কী তুমি অনুমতি দিবে?

নাফিসা মুচকি হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।শাফায়াত নাফিসার সম্মতি পেয়ে নাফিসার কপালে ভালবাসার পরশ এঁকে দেয়।

পূর্ণতা পেল ওদের ভালোবাসা ।
_______________

বেলকনিতে রেহানের কাধে মাথা রেখে বসে আছে মায়া। রেহানের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,

আমাকে ছেড়ে দুরে যাবেন না বন্ধু আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

রেহান মায়ার কপালে ভালবাসার এক গভীর পরশ এঁকে দিয়ে বলে,

আমি তোমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে থাকতে পারবো না তাই তুমি এই চিন্তা বাদ দাও।

রেহানের কথায় মুচকি হাসলো মায়া, আবারও রেহানের কাধে মাথা রেখে চন্দ্রবিলাশ করছে।

(পূর্ণতা পাক পৃথিবীর সকল অপূর্ণ ভালোবাসা )

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে