#আনন্দ_অশ্রু
#পর্ব_৬
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি
তোমার সাহস কী করে হয় এতো রাতে আমার ঘরে আসার? কী প্রমান করতে চাও তুমি? দিন দিন তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি, আসলে ভুলটা আমারি সেই প্রথম দিন থেকে যদি তোমাকে তোমার জায়গাটা বুঝিয়ে দিতাম তাহলে হয়তো তুমি এতটা সাহস দেখাতে পারতে না। দেখো মায়া আমার মেজাজ টা আরো বিগড়ে যাওয়ার আগে চলে যাও এখান থেকে।
বন্ধু আমি ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি ভেবে ছিলাম আপনিও হয়তো আমাকে পছন্দ করেন ভালোবাসেন।
তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমার মতো মেয়েকে ভালোবাসবো? কী যোগ্যতা আছে তোমার? আমাকে দেখো আর তোমাকে দেখো তোমার সাথে আমার যায় না। সত্যি তুমি ভুল করেছো আমার সহানুভূতি গুলোকে ভালোবাসা ভেবেছো। তোমাকে অসহায় ভেবে একটু পাশে কি দাড়িয়েছি তুমিতো হাত টাই ধরে বসে আছো। আবার নির্লজ্জ্বর মতো এতো রাতে আমার ঘরে এসেছো।
বন্ধু আমি বুঝতে পারছি আপনি আমার ওপর রাগ করে আছেন। আপনি যা ইচ্ছে আপনি আমাকে বলুন কিন্তু আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না।
বাহ্ তোমার সাহস দেখে আমি খুব অবাক হচ্ছি এই মেয়ে কোন মুখে তুমি আমাকে যেতে মানা করছো শুনি, শোনো মেয়ে এমন কান্না কটি করে আমাকে বশ করতে পারবে না আর কে তুমি যে তোমার কথায় আমি আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করবো। আমাদের টা খেয়ে আমাদের টা পরে এখন আমার ক্ষতি করতে এসেছো। তোমার কোনো অধিকার নেই আমার ওপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপানোর আমি তোমাকে সেই অধিকার দেই নি। কী যোগ্যতা আছে তোমার রেহান শিকদারের পাশে দাঁড়ানোর, না তোমার অডেল সম্পত্তি আছে আর না আছে কোনো পরিচয় লেখাপড়া টাও নেই তাহলে কোন দিক দিয়ে তুমি আমার যোগ্য। যেদিন তোমার মনে হবে আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো যোগ্যতা তোমার আছে সেদিন এসো ভেবে দেখবো।
রেহানের এমন কর্কশ কথা গুলো শুনে মায়া নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না আহত হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে আছে রেহানের মুখের দিকে। মায়ার বিশ্বাস হচ্ছে না যে মানুষটা সব সময় মায়ার সাথে হেসে কথা বলতো শাসন করলেও কথায় ঠান্ডা ভাব থাকতো সেই মানুষটা আজ এতো কর্কশ স্বরে কথা বলছে।
শোনো মেয়ে তোমার ওই সস্তা চোঁখের পানি দেখার মত সময় আমার কাছে নেই। যাও এখান থেকে।
রেহানের কথা শুনে মায়া চোঁখের পানি মুছে চলে যেতে নিল। রেহান আবার মায়াকে থামতে বললো,,
দাড়াও, কাল সকালে আমার ফ্লাইট সবাই যাবে আমার সাথে আমাকে বিদায় জানাতে তুমি ভুল করেও তাদের সাথে আসবে না আমি যাওয়ার সময় তোমার চেহরাটা দেখে যেতে চাই না। তাই কাল ভুল করেও আমার সামনে আসবে না।
মায়া ভেবে ছিলো রেহান তাকে সবার সাথে যেতে বলবে কিন্তু রেহান তাকে তার সামনে যেতে নিষেধ করেছে। মায়া কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। মায়া যাওয়ার পর রেহান যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো।
সকাল সাড়ে নয়টার নাগাত বাড়ীর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রেহান। তার সাথে হাইউল আর মমিন। পুরো রাস্তা রেহান একটা কথাও বলেনি শুধু এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মোবাইল ফোনের দিকে। ফোন স্ক্রীনে মায়ার হাসি মাখা একটা ছবি বার বার দেখছে।
সাড়ে এগারটার ফ্লাইটে বাংলাদেশ ছেড়ে উড়াল দিলো অচেনা এক শহরে।
এক সপ্তাহ পর…….
স্বাভাবিক ভাবেই তানজিলের কাধে মাথা রেখে বসে আছে মায়া। রেহান যাওয়ার পর মায়া একটুও কান্না করেনি। মায়ার অবস্থা দেখে তানজিল মায়ার সাথে কথা বলে মায়া তানজিলকে সব কিছু বলে তারপর একটু কান্না করেছে কিন্তু তানজিল মায়াকে সামলে নেয় আর মায়াকে ঠিক মতো লেখা পড়া করতে বলে মায়া আবারো লেখা পড়ায় মন দিবে বলে তানজিলকে কথা দেয়। এখন মায়ার সকল দায়দায়িত্ব তানজিল নিচ্ছে। মায়া এখন তিশার কাছে যায় না তার সাথে কথাও বলে না। তিশাও আজকাল মায়াকে গা জ্বালানো কথা বলে মায়া মাঝে মাঝে তার সাথে তর্কে জড়াতে চায় কিন্তু তানজিলের জন্য পারে না।
দেখতে দেখতে মাস ছয়েক পার হয়ে গেছে এর মধ্যে মায়া রেহানের সাথে কোনো কথা বলেনি আর রেহানও মায়ার সাথে কথা বলতে চায় নি। মায়া রেহানের করা অপমানের যোগ্য জবাব নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দিবে। সেও দেখিয়ে দিবে তার যোগ্যতা কতটুকু আর এই কথা গুলো তানজিল মায়াকে বুঝিয়েছে।
মায়া আর নাফিসা কলেজে যাওয়া শুরু করেছে। তানজিল প্রতিদিন হসপিটালে যাওয়ার সময় তাদের কলেজে নামিয়ে দিয়ে যায় আবার বাসায় নিয়ে আসে। মেয়েদের ব্যাপারে সে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। তানজিল মায়া আর নাফিসাকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছে****মেডিকেলে যদি চান্স না পায় তাহলে দুজনকে বুয়ার চাকরি দিবে আর কোনো সুইপারকে ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দিবে। মায়া কিছুটা নিশ্চিন্তে ছিলো এটা ভেবে তাকে তো আর বিয়ে দিবেনা কিন্তু মায়ার সকল চিন্তা ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দেয় তানজিল জানায় মায়াকেও বিয়ে দিয়ে দিবে যদি সে***মেডিকেলে চান্স না পায় তাহলে রেহান তাকে আর এই বাড়িতে রাখবে না রেহান নিজে দাড়িয়ে থেকে মায়াকে বিয়ে দিয়ে দিবে।
এই কথা শোনার পর মায়া আর নাফিসা দুইজন দুইজনার দিকে কাদো কাদো হয়ে তাকায় তারপর দুজনেই লেখা পড়ায় আরো বেশি মনোযোগী হয় নাফিসা বুয়ার চাকরি আর সুইপারকে বিয়ে করার ভয়ে ভালো করে পড়া শুরু করে। কারণ তার মা যা বলে তা দেরি হলেও করে দেখায় আর মায়া রেহানকে নিজের যোগ্যতা দেখাবে বলে।
মাস পেরিয়ে বছর ঘুরে এলো মায়া আর নাফিসা HSC দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিছু দিন পর নির্বাচনী পরীক্ষা। তানজিল নিয়ম করে দুজনকে পড়ায় মেয়েদের নিয়ে কোনো গাফিলতি সে করে না। রেহান যাওয়ার পর রহিমা বানু তানজিলের ওপর সকল দায়িত্ব দিয়ে দেয়। এটা নিয়ে তিশা ভীতরে ভীতরে রাগ পুষ্ছে। তিশার সকল কাজ কর্মে রহিমা বানু অবগত তাই সে তিশার কাছে সকল দায়িত্ব দিয়ে সুন্দর সাজানো গোছানো এই সংসারটাকে নষ্ট করতে চায় না। রহিমা বানু জানে তানজিল নিজের সবটা দিয়ে সংসারটা সামলাবে। মমিনও জানে তিশার হতে দায়িত্ব গেলে কিছুই ভালো থাকবে না তাই সেও মনে মনে তানজিলের পক্ষে আছে কিন্তু তিশাকে বুঝতে দেয়না। সে শান্তি প্রেমী মানুষ মনের কথা গুলো প্রকাশ করে বউ নামক মাথা ব্যাথার রোগী সে হতে চায় না।
প্রতিদিন রেহান ফোন করে যখন রেহান সবার সাথে কথা বলে মায়া তখন ছাদে চলে যায় আর নয়তো কোরআন শরীফ নিয়ে বসে পরে। তানজিল মায়ার বিষয়টা বুঝতে পারে কিন্তু মায়াকে কিছু বলে না। রেহান আর দেড় বছর পর দেশে ফিরবে এই কথাটা সবাই জানে শুধু জানে না মায়া আর নাফিসা। নাফিসা জানা মানে মায়াও জানে। নাফিসা মায়ার কাছে কোনো কথা লুকাতে পারে না মায়া আর নাফিসা হলো দুজন দুজনের ক্রাইম পাটনার।
দেড় বছর পর…………?
#চলবে…………