#আনন্দ_অশ্রু
#সূচনা_পর্ব
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি
সারা শরীরে ব্যাথা নিয়ে বসে আছি বাসর ঘরের। মাত্র পনেরো বছর বয়সে বধূ সেজে আছি। এই বিয়েতে বাড়ীর কিছু মানুষ ছাড়া সবাই রাজি। বাইরে খুব শোরগোল হচ্ছে খুব স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না তবে এটা বুঝতে পারছি যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সে আমার থেকে আট দশ বছরের বড় তাই বাড়ীর বড় ছেলে তাকে আর আমার শাশুড়িকে নানা কথা বলছে,,
আম্মা আপনি কীভাবে পারলেন নাতিনের বয়সী একটা মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করে আনতে। আপনার বিবেক বুদ্ধি কী সব লোভ পেয়েছে। মাত্র পনেরো বছর বয়স মেয়েটার আর তাকে বউ বানিয়ে দিয়েছেন তেইশ বছর বয়সী এক যুবকের এইজন্যই কী আপনি আমাকে বিয়ের সকল বিষয় থেকে দূরে রেখেছেন। আর তুই, কীভাবে রাজি হয়ে গেলি আম্মার কথায় তোর কী একটু বিবেকে বাধা দেয়নি।
হোনো হাইউল আগের কালে আরো ছোটো থাকতে মাইয়া মানুষ বিয়া দিয়া স্বামীর ঘরে পাঠাইত। মাইয়া মানুষ যতো ছোটো থাকতে বিয়া হইবো ততো সুন্দর সংসারী হইবো।
আম্মা আপনি আপনার আগের কালের কথা বাদ দেন আপনার সাথে কথা বলতে আমার কেমন জানি লাগছে, আর তুই এখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো বল কিছু।(তানজিল সুলতানা, হাইউলের বউ)
আমি কী বলবো মিয়া ভাই আমি হলাম আম্মার ছোট ছেলে আমাকে আম্মা খুব মানসিক চাপ দিয়ে এই বিয়েতে রাজি করিয়েছে। নয়তো আমি কেনো যাবো নিজের ভাতিজীর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করতে। আর ওই মেয়েটাই বা কেমন এতো অল্প বয়সে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলো।
খবরদার রেহান মেয়েটাকে একটা বাজে কথাও বলবি না। তুই জানিস মেয়েটার জন্মের পর মাকে হারিয়েছে। ওর মা মারা যাওয়ার পর ওর নানার বাড়ির সবাই ওর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় মেয়েটার যখন সাত বছর বয়স তখন মেয়েটার বাবাও মারা যায় অনাথ মেয়েটার পাশে দাড়ানোর মতো কেউ ছিলো না।সৎ ফুফু নিয়ে যায় ওকে অতটুকু একটা মেয়েকে দিয়ে বাড়ী সব কাজ করায় ঠিক মতো খেতেও দিতো না। ছোট্ট পরীর মতো মেয়েটাকে ওর ফুফু টাকার লোভে পরে বিক্রি করে দিতে চেয়েছে কিন্তু ওর ফুফা খুব ভালো মানুষ তার জন্য বেচেঁ যায় মেয়েটা। কিছু দিন পর আম্মা মেয়েটাকে তোর জন্য পছন্দও করলো মেয়েটা বিয়ে করতে রাজি ছিলো না বলে ওর ফুফু ওকে খুব মেরেছিল। আজ সকালেও মেয়েটা বিয়ে করবে না বলে ওর ফুফুর পায়ে ধরে ছিলো কিন্ত ওর ফুফু নির্দয়ের মতো মেয়েটাকে মেরে রক্তাক্ত করেছে।
মিয়া ভাই আমি এসব কিছুই জানতাম না আম্মা আমাকে বলেছে মেয়েটা নাকি বিয়েতে রাজি আর মেয়েটার বয়স আঠারো। আজ জানতে পারলাম ওর বয়স মাত্র পনেরো। এটা জানার পর আমি বিয়ে করতে চাইনি কিন্তু আম্মা কসম দেওয়াতে আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।
নাফিসার বাবা শোন, বিয়েটা যখন হয়েই গেছে এখন তো আর কিছু করার নেই মেয়েটা খুব অসহায় আমরা ওকে আমাদের সাথে রাখি সম্পর্কের কথা বাদ দেই আমরা ওকে নাফিসার মতো আদর যত্নে রাখবো।
ভাবী বিয়ে যখন করছি আমার বউয়ের দায়িত্ত্ব আমিই নিবো তোমরা শুধু ওকে আপন করে নিও। আর আম্মা শোনো বিয়ে করানো পর্যন্তই তোমার দায়িত্ব ছিলো এখন তোমার দায়িত্ব শেষ। তুমি এখন শুধু নামায পড়বে খাবে ঘুরবে ফিরবে তোমার আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যাবে ঘুমাবে ভুল করেও আমার আর আমার বউয়ের সংসারে হস্তক্ষেপ করবে না। এমনিতেও মিয়া ভাইয়ের কাছে আমাকে খারাপ বানিয়েছো দোহায় লাগে আর কিছু করোনা। আর মিয়া ভাই তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি ওর ওপর কোনো ধরনের অধিকার ফলাবো না নাফিসা, নাজিয়া, নিতুল, আনাম, আর্শি ওরা যেভাবে এই বাড়িতে বড় হচ্ছে মেয়েটাও তেমন ভাবেই বড় হবে আচ্ছা ওর নাম কী কখন থেকেই মেয়েটা মেয়েটা করে যাচ্ছি।
ছোটো কাকা মিষ্টি কাকীমণির নাম হলো আসফিয়া হাসনাত মায়া। দেখতে একদম রসগোল্লার মতো।( আর্শি)
শোনেন আম্মা আজ থেকে মায়ার সকল দায়িত্ব আমি নিচ্ছি আপনি কোনো ভাবেই মায়ার বিষয়ে দখল দিতে আসবেন না তাহলে আমি ভুলে যাবো এটা আমার পরিবার আপনার আর রেহানের নামে বাল্য বিবাহের মামলা করে দিবো। কথা টা মনে রাখবেন।
একটু ধমকের সুরে কথা গুলো বললো হাইউল।
যাও কিছু কৈমু না, অহন তোমরা যার যার ঘরে যাও আমার শরীলটা ভালো লাগতাছে না একটু ঘুমাইলে ভালো লাগতো মাইজ্জা বউ চলো আমারে ঘরে দিয়া আসো।
হ্যাঁ, মেজো মা দাদুমণিকে রুমে দিয়ে আসো সাথে দুই তিনটা ঘুমের টেবলেট খাইয়ে দিও যেনো শান্তিতে ঘুমাইতে পারে।(নাফিসা)
এই চুপ এতো কথা কিসের যা ঘরে যা।(তানজিল)
রেহান মায়াকে একটু সময় দাও। আর এই ওষুধ গুলো খাইয়ে দিও মায়ার গায়ে খুব জর। আজকে ওকে কিছু বলো না যা বলার কালকে বলো।
ভাবী তুমি চিন্তা করো না আমি সবটা সামলে নিবো। তুমি শুধু মায়াকে নিজের মনে করে আগলে নিও।
হুমম এখন ঘরে যাও আর এই খবার গুলো নিয়ে যাও।
ঠিক আছে যাচ্ছি।
———–
দরজা খুলে ভিতরে একটা লোক ঢুকলো লম্বা একটা ঘোমটা টানা দিয়ে থাকার কারণে মায়া লোকটার মুখ দেখতে পাচ্ছে না কিন্তু এটা আন্দাজ করতে পারছে যে লোকটার বয়স২২- ২৩হবে। লোকটাকে দেখে মায়া বুঝতে পারছে যার সাথে বিয়ে হয়েছে এটাই সে। সারা শরীরে ব্যাথা নিয়ে কষ্ট করে খাট থেকে নীচে নেমে রেহানের কাছে যায় তাকে সালাম করতে নিলে রেহান ধমকের সুরে বলে,
এই মেয়ে কী করছো তুমি?
জ্বি সালাম করতে এসেছি।
আমি কি তোমাকে বলেছি আমাকে সালাম করো?
না।
তাহলে কেনো সালাম করতে আসছো?
ওইযে যে আমাকে এই ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেলো সে বলেছে
আপনি আসলে যেনো আপনার পায়ে সালাম করি।
মায়ার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে রেহান বলে, মেজো ভাবী। আচ্ছা পায়ে ধরে সালাম করতে হবে না মুখে সালাম দিবে আর কোনো
দিন করো পায়ে ধরবে না। বুঝতে পেরেছো আমার কথা।
মায়া মাথা নাড়িয়ে শায় জানালো।
নাও এইবার খাবার গুলো খেয়ে ওষুধ গুলো খাও।
আচ্ছা।
বলেই খাবার খাওয়া শুরু করলো মায়া। মায়ায় এমন ভাবে খাবার খাওয়া দেখে রেহান বলে, আস্তে আস্তে খাও তোমার খাবার কেউ নিয়ে যাবে না।
খুব ক্ষিদে পেয়েছে কাল থেকে কিছুই ক্ষেতে দেয়নি ফুফু শুধু পানির ওপর বেচেঁ আছি।
মায়ার কথা শুনে রেহান কি বলবে কী করবে বুঝতে পারছে না শুধু টলমল চোঁখে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। কী মিষ্টি চেহরাটা দুধে আলতা গায়ের বরণ। গালে পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে রেহানের খুব মায়া হচ্ছে নিজের অস্থিরতা কাটিয়ে বলে, তুমি আরাম করে খাও আমি পানি নিয়ে আসছি।
হুমম যান আর একটু তারাতারি আসবেন আমার একা একা ভয় লাগে, অনেকক্ষন ভয়ে ভয়ে বসে ছিলাম।
মায়ার কথায় একটু হাসলো রেহান। তারপর পানি আনতে চলে গেলো। মায়া আরাম করে খাচ্ছে আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছে তার নসিবে আজ রিযিক রাখার জন্য।
পানি নিয়ে ঘরে ঢুকলো রেহান আর হেসে হেসে বলছে, আচ্ছা মায়াকন্যা আমাকে দেখে তোমার ভয় লাগেনা?
আপনাকে ভয় পাওয়ার কি আছে আপনি কী আমার রক্ষশী ফুফু নাকি যে আপনাকে ভয় পাবো। আপনি তো ভালো মানুষ।
আমি ভালো মানুষ তোমাকে কে বললো?
কেউ বলেনি, আপনাকে দেখে মনে হলো।
রেহান মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে, মাত্র পনেরো বছরের একটা মেয়ে মনে কোনো পাপ নেই মনের সকল কথা কি সুন্দর করে বলে দিচ্ছে মেয়েটাকে কষ্ট দিলে আল্লাহ্ সইবে না। অথচ মেয়েটা এতটুকু বয়সে কত কষ্ট সহ্য করেছে। তাই রেহান মনে মনে শপথ করলো সে মায়াকে প্রতিষ্ঠিত করবে প্রাপ্ত বয়স না হওয়া পর্যন্ত সে কখনোই মায়ার কাছে স্বামীর অধিকার চাইবে না।
#চলবে……….