আনকালচার্ড বউ পর্ব ০৬ এবং শেষ
(অসামাজিক বউ)
লেখক ঃ- আবু জাফর
আবু মেহরিমা কে নিয়ে হসপিটালে গেলো।
নিয়ে গিয়েই ডাক্তার মেহরিমার অবস্থা দেখে মেহরিমা কে OT তে নিয়ে গেলো।
আবু OT এর বাইরে অপেক্ষা করতেছে OT থেকে ডাক্তার বেড় হবার পর ডাক্তার বললো যে আপনার মেয়ে হয়েছে।
মেয়ে ভালই আছে কিন্তু মায়ের অবস্থা তেমন একটা ভালো না।
প্রচুর ব্লেডিং হচ্ছে। রক্ত সল্পতায় ভুগছে। আবু নিজেও রক্ত দিলো এক ব্যাগ। মেহরিমা যখন অচেতন হয়ে শুয়ে আছে পাশের বেডে আবু মেহরিমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে একটা মেয়ে কতটা অসহায় হতে পারে।
হঠাৎ মেহরিমার জ্ঞান ফিরলো। আবুর দিকে তাকিয়ে বলতেছে আমি বাঁঁচবো তো??
যদি বেঁচে যায় তাহলে আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই। মানা করবেন না। আর যদি মরেও যায় তবে আপনি আরেকটা বিয়ে করবেন না।
কারণ আপনি এপারেও আমার ওপারেও আমার।
আবু আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না মেহরিমার হাত ধরে বললো।বউ তুই শুধু আমাকে মাফ করে দে।
মেহরিমা আবুর চোখের জল নিজে হাতে মুছে দিয়ে বললো ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।
এমন সময় ডাক্তার এসে বললো কেটে যাওয়া রগের মাথায় ক্যাথেটার লাগানো আছে।
ওইটা বেড় করতে ছোট একটা অপারেশন করতে হবে।
বলেই আবুর সামনে থেকে মেহরিমা কে নিয়ে গেলো।
আবু সেদিন প্রথম আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বলেছিলো।
আল্লাহ আমার বিনিময়ে হলেও তুমি বউ টাকে ফিরিয়ে দাও।
আবু অনেকক্ষণ যাবত OT বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় আছে আবুর বউ সুস্থ হয়ে ফিরবে। ডাক্তার OT থেকে বেড় হয়ে বললো।
সরি উনি আর বেঁচে নেই। অপারেশন থিয়েটারে প্রচন্ড ব্লেডিং এর জন্য উনি মারা গেছে।
আবু তখন ডাক্তারের পা ধরে বললো তোদের পায়ে ধরি ডাক্তার মেয়েটাকে তোরা ফিরিয়ে দে না ভাই। আমার সব টুকু রক্ত নিয়ে হলেও আমার বউ টাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দে প্লিজ।
ডাক্তার গুলা আবুর ছোট মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে মেহরিমার মুখ সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে সামনে থেকে নিয়ে গেলো।
মেহরিমাকে দাফন করে আবু চলে আসতেছে ওর মনে হচ্ছে মেহরিমা ওকে পিছন থেকে ঢেকে বলতেছে মশারী টা টানিয়ে দেন না।
এই সপ্তাহ টা আমাকে দিয়ে দেন না প্লিজ।
আমাকে কাচা পাতার চা এনে দিয়েন এক কেজি।
আবুর একবার পিছন দিকে তাকিয়ে চোখটা মুছে আবার বাসার দিকে হাটা শুরু করলো।
আজ পাচটা বছর হয়ে গেলো। আবু আর বিয়ে করেনি। এখনো মাঝে মাঝে রাতের বেলা আবুর মনে হয় কেউ জেনো তাকে জড়িয়ে ধরে বলতেছে।
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।
তুমি আমাকে ভালোবাসো না।
আজ সন্ধ্যা থেকেই আবুর মেহরিমার কথা খুব মনে হচ্ছে। এক কাপ চা আর একটা সিগারেট ধরিয়ে আবু ব্যালকনিতে গিয়ে বসলো। পাশে পরে থাকা পত্রিকার হেডলাইনে চোখ পড়লো আবুর
, স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে স্ত্রীর আত্মহত্যা।
দেখেই আবুর চোখটা ভিজে গেলো।
ভিতর টা কেমন জেনো হুহু করে উঠলো।
আবুরও মনে হয় তার ভুলের জন্যই মেহরিমা আবুকে ছেড়ে চলে গেছে।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ পিছন থেকে আবুর পাচ বছরের মেয়েটা এসে আবুকে জড়িয়ে ধরলো।আবু মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো।
মেয়েটা বললো বাবা আজকে না আমার জন্মদিন। আবুর চোখটা তখনো ভেজা আবু চোখটা মুছেই মেয়ে টাকে নিয়ে কেক কাটলো।
রাতে বাবা মেয়ে খাওয়াদাওয়া করে হাটতে বেড় হলো।
চাঁদের আলোতে রাস্তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ আবুর মেয়ে আবুর হাতটা টেনে থামিয়ে দিলো।
আবু থেমে গিয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাকালো।
মেয়েটা বলে উঠলো আচ্ছা বাবা
তুমি কি এখনো আমার সেই আনকালচার্ড মাকে ভালোবাসো???
সমাপ্ত
Fatafati