আধার রাতের আলো পর্ব-১৭+১৮

0
955

#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১৭(ভালোবাসার পূর্ণতা)

আলো বেগম হুরের হাত দুটো’ ধরে বলে, মা তুই আমাকে কথা দে,কখন আমার ছেলেটাকে একা ছাড়বি না।এই সময়টাতে ছেলেটার পাশে থাকবি?

হুর আলো বেগমের হাত ধরে বলে,”মা” যে সম্পর্ক আল্লাহ তায়ালা তৈরি করে দিয়েছেন। সেটা আমি কখন আমার দেহে প্রাণ থাকতে শেষ করবো না। আর হতেও দেবো না। ছেড়ে যাওয়ার তো প্রশ্ন-ই আসে না!

– মায়ের মন তো বুঝতেই পারছিস।আমার বোনের মেয়েরা ভালো না। ওরা ঝামেলা করবে।

– আপনি নিশ্চিত থাকুন।

______________________________________________
আদিয়ার ফোনটা সেই কখন থেকে বেজেই যাচ্ছে। আদিয়া জানে কল যে করেছে সেই মানুষটা নাহিদ ছাড়া কেউ না। কিন্তু কোন মুখে নাহিদের সাথে কথা বলবে সে! চোখ থেকে টুপ টুপ করে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ছে। খোলা বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে এক মনে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে।

নাহিদ ও নাছোড়বান্দা কল করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে।
এক সময় বিরক্ত হয়ে আদিয়া কল রিসিভ করে কড়া কন্ঠে কিছু বলবে তার আগেই নাহিদের কান্না মাখা কন্ঠ ভেসে আসে আদিয়ার কানে। নাহিদ কোনমতে বলছর আদিয়া আমাকে ক্ষমা করে দিও। আদিয়া কিছু বলবে তার আগেই কল কেটে যায়।
আদিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। উঠো বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে এটা তার রুমের বেড।তারমানে স্বপ্ন ছিলো!চোখের কোণ ভিজে উঠলো আদিয়ার।কত রাত পার করেছে নাহিদের সাথে কথা বলে,সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নাহিদ কখনো সেটা কাজে লাগায়নি।বরং বারবার বলতো বিয়ের পর তোমাকে মন মতো স্পর্শ করবো।এখন সব স্পর্শ জমা থাক।বেহায়া মন তো চাইবেই তোমাকে ছুঁয়ে দিতে।কিন্তু আমি চাইবো তোমাকে পবিত্র ভাবে ছুঁয়ে দিতে।যে স্পর্শে পাপ নেই, যে স্পর্শে বাজে উদ্দেশ্য নেই,শুধু আছে এক প্রেমিক পুরুষের তেত্রিশ বছরের পবিত্র ভালোবাসা।হাতের উল্টো পিটে চোখের জল মুছে নিচ্ছে বারং বার।নিজের অবাধ চলাফেরা তার কাছ থেকে সব কেঁড়ে নিলো।বেড ছেড়ে উঠে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের পানে তাকিয়ে বলে,আমিও ঠিক তোমার মত নিঃসঙ্গ চাঁদ।তবে তুমি পূর্নতা পাও ভালোবাসায়।আর আমার কপালে সেই সৌভাগ্য নেই।কেন আগে আমার জীবনে হুর এলে না। কেন কেউ আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো না আমি ভুল পথে চলছি। এখন যে আমার বেঁচে থাকা দুষ্কর, আত্মহত্যা মহা পাপ।আমি কি করে এই মুখ নিয়ে দাঁড়াবো নাহিদের সামনে! মানুষ যখন একা হয়ে যায়, তকন সঙ্গী হিসেবে,চাঁদ আর বিশাল আকাশকে খুঁজে নেয়।বিনা সংকোচে নিজের ভিতরে জমানো কথাগুলো তাদের কাছে জমা রেখে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়।

নাহিদের চোখে ঘুম নেই দেশ ছেড়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থায় কম্পিলিট, এখন শুধু টিকেট হাতে পাওয়া বাকী। হোয়াটসঅ্যাপে নিজের প্রিয়তামাকে মেসেজ লিখছে আর কাটছে।সেন্ট করা হচ্ছে না।ভালোবাসা একটা সময় এসে অসহায় হয়ে পরে। না সামনের মানুষটাকে বোঝানো যায়, তাকে ছাড়া আমার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। আর না নিজেকে সামলে নেয়া যায়। এই যে এই মূহুর্তে নাহিদের ইচ্ছে করছে, আদিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু চাইলেই কি সব সম্ভব।

মাহতাব সাহেবের লাশ আজ দু’দিন ধরে মেডিকেলের মর্গে বে ওয়ারিশ লাশের পাশে পড়ে আছে। কেউ তার খোঁজ করেনি। আজ কোথায় তার অংহকার?কোথায় তার দাম্ভিকতা।সব শেষ।

______________________________________________
হুর রুমে আসলো, কিন্তু রুমে তো ফুয়াদ নেই। হুর এদিকে ওদিকে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো,কিছুক্ষণ খোঁজার পর মৃদু কন্ঠে ডাকলো, ডাক্তার আপনি কোথায়? কিছু সময় থেমে আবার ডাকলেন, নুরের বাবাই আপনি কোথায়? কোন সাড়া না পেয়ে হতাশ হলো। ঠিক তখনি কেউ হুরের চোখের উপর হাত রাখলো। হুর শিহরিত হলো। ফুয়াদ এক হাত হুরের চোখের উপর রেখে আরেক হাত হুরের কোমড়ে রেখে হুরকে নিজের বক্ষের সাথে।মিশিয়ে নিলো।হুরের কম্পিত কন্ঠে বললো,”আপনি” আর কিছু বলার আগেই ফুয়াদ হুরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে হুরের ঠোঁটে আঙুল রেখে বলে,হুশ একদম কোন কথা নয় আজকে শুধু অনুভব করবে আমার ভালোবাসাকে।তোমাকে আজ আদরের চাদরে মুড়িয়ে নেবো।আগামীকালের নতুন সূর্যের সাথে পরিচিত হবে এক নব হুরের। যার শরীরে প্রতিটি কোনায় কোনায় লেগে থাকবে ফুয়াদের ভালোবাসা। যার হৃদয়ে স্থায়ী হবে ফুয়াদ নামক এক যুবকের বসবাস। হুরের কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, চেয়েও কিছু বলতে পারছে না।হৃদ যন্ত্র কেমন বেসামাল হয়ে পড়ছে! এ কেমন অনূভুতি? এ অনূভুতির সাথে তো হুর পরিচিত নয়।অর্ধ আলো অর্ধ অন্ধকারে ফুয়াদ চেয়ে আছে তার হুর পরির দিকে,এ যেনো তাকিয়ে থেকে তৃষ্ণা মিটিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা। তবে এ কেম কথা তৃষ্ণা তো বেড়েই চলেছে। হুরকে শক্ত করে এবার জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। দুজনেই মনে মনে দোয়া পরে নিলো। রাতের নিরবতা ভেদ করে দু’জন মানুষ নিজেদের হৃদ যন্ত্রের বেসামাল পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে ব্যস্ত।কিছু সময় জড়িয়ে রেখে।হুরকে কোলে তুলে নিলো ফুয়াদ। নিজের কোলের মধ্যে রেখেই হুর কে নিয়ে বেডে বসলো। হুরের চোখ খুলছে তো লজ্জায় আবার বন্ধ করে নিচ্ছে।ফুয়াদ এই প্রথম হুরের অধরে অধর মিলিয়ে দিলো।হুর যেনো জমে গেলো। খামচে ধরলো ফুয়াদের পাঞ্জাবি। মিনিট দু’য়েক পর হুরের ঠোট ছেড়ে হুরের গালে চুমু খেলো। তারপর আদুরে কন্ঠে বলল, আজ আমি আমার প্রিয়তমা সঙ্গীনির জন্য গাইবো,,,,,,,,

অনুভবের গভীরে,
শুন্য আমার কুটিরে
মুছে দিলে যতনা,,,,,তুমি কি তা জানো না!
সঙ্গীনি প্রিয়তমা তুমি শুধু তোমার উপমা।
তুমি তা জানো না।
সঙ্গীনি প্রিয়তমা তুমি শুধু তোমার উপমা।

বঁধু বেশে সেজে এসে,
নিয়ে নিলে ভালোবাসা,,,,
সেই থেকে মন সঙ্গী তুমি,স্বপ্ন আশা কান্না হাসা।

মুখরিত আলো ছাঁয়ায়,অনুরতি মোহ মায়ায়,,
তোমার ঘিরে জেগে থাকা।
সুখ নিরন্তর ভালোবাসা।
এখন আমার দৃষ্টি নত।
ভাবনা গভীর শত-শত।

তুমি আমার অন্য আলো।
আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালো,,,,,
তুমি কি তা জানোনা!
সঙ্গীনি প্রিয়তমা, তুমি শুধু তোমার উপমা….
তুমি কি তা জানো না।

এভাবেই ভালোবাসাময় কেটে গেলে একটি রাত। সুবহে সাদিক সবে শুরু হচ্ছে। মুয়াজ্জিনের মধুর কন্ঠে আজান ভেসে আসছে হুরের কানে। নিজের প্রিয়তম স্বামীর বুকে শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে হুর। পিট পিট করে চোখ খুলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো ফুয়াদের বক্ষ থেকে।পড়নের এলোমেলো ড্রেসটা ঠিক করে কাভার্ড থেকে ফুয়াদের আনা একটা লাল রঙের জামদানী শাড়ি বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে নিজের ভেজা চুলের ফোটা ফোটা পানি ফুয়াদের চোখ মুখে ছেটাতে লাগলো। ফুয়াদের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,উঠে পরো প্রিয়।তোমার সাথে আমি শুধু দুনিয়াতে নয় আখেরাতেও থাকতে চাই।
ফুয়াদ উঠে বসলো, হুরের দিকে তাকালো লাল টুকটুকে শাড়ীতে হুরকে যেনে লাল পরি লাগছে।ফুয়াদ বললো,হুর পরি তোমার ওই লাল রাঙা শাড়ী আমার হৃদয়ে ঝড় তুলে দিচ্ছে।

হুর জায়নামাজ পেতে তাতে দাঁড়িয়ে একবার ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে বলে,ফ্রেশ হয়ে আসুন আপনার লাল পরি সব সময়ের জন্যই আপনার। এবার তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হোন নামাজ পড়তে হবে।
হুর নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো, ফুয়াদ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে হুরের পাশেই নামাজে দাঁড়ালো,হুর ফুয়াদের জন্য জায়নামাজ পেতে রেখেছিলো। ফুয়াদ সালাম ফেরাতেই হুর বলে,আপনার ডান আর আমার ডান এক করে আমরা আজ মোনাজাত করবো।

মোনাজাত শেষ হতেই হুর সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করলো,ফুয়াদ মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করলো।

হুরের তেলাওয়াত শেষ হতেই ফুয়াদ হুরের কপালে চুমু দিলো। হুরের হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে বলে,তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য।তুমি আমার আধার_রাতের_আলো।হুর ফুয়াদের কপালে চুমু দিয়ে বলে,তোমাকে পেয়ে আমি পূর্ণ। তুমি আমার #আধার_রাতের_আলো। ফুয়াদ এক হাতে হুরকে জড়িয়ে ধরে বলে,সত্যি তোমার মত কেউ আমার জীবনে এসে আমার শেষ হয়ে যাওয়া জীবনটাকে আবার নতুন করে রঙিন করে তুলবে,বুঝতেই পারিনি। আমার হুর পরি, আমার বিবিজান সব সময় আমার হৃদয়ের রানী হয়ে থাকবে।

#চলবে

#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৮

হুর কিচেনে সকালের নাস্তা বানাচ্ছে আর ভাবছে, সুন্দর মুহূর্ত গুলো যদি বাক্স বন্দী করে রাখা যেতো তাবে ভালোই হতো।এই মুহূর্তগুলো ভেবে অনায়াসে মন ভালে হয়ে যাবে।ভালোবাসি বলে দেয়ার চেয়ে সামনের মানুষটার কাজে কর্মে প্রাকাশিত ভালোবাসাটা বুঝে নেয়াটা বেশি আনন্দের। আজকাল তো আই লাভ ইউ শব্দটা সস্তা হয়ে গেছে। খুব সহজেই বলে দেয়া যায়। তবে সেই ভালোবাসা অনূভুতি হীন। কেউ ইংরেজিতে আই লাভ ইউ বলার চেয়ে বাংলাতে আমি তোমাকে ভালোবাসি বলার মধ্যে মনে হয়,আবেগ অনূভুতি বেশি থাকে। কি আদুরে লাগে। চুলায় রান্না রেখে হুরের মন ভাবনার জগতে ঘুরপাক খাচ্ছে। ফুয়াদ এসে দ্রুত গ্যাস অফ করে বলে,বিবিজান আপনার ধ্যান আজকাল কোথায় থাকে? এক্ষুনি চা পরে যেতো সব।

হুর ফুয়াদের কথা শুনে ফুয়াদের৷ দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি থাকতে তো কিছুই হবে না ডাক্টার সাহেব।ফুয়াদের গলা দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,আচ্ছা ডাক্টার সাহেব তুমি আমাাকে এতোকিছু বললে,এতো ভালোবাসলে, কিন্তু আমাকে ভালোবাসি বললে না কেন?

ফুয়াদ হুরের গাল টেনে বলে,একরাতে স্বামীর ভালোবাসায় পাগল হয়ে গেলে হুর পরি! কি আবল তাবল বলে যাচ্ছ?এটা কিচেন যখন তখন কেউ চলে আসবে। ছাড়ো আমাকে।

– উঁহু ছাড়বো না। ছাড়লে যদি পালিয়ে যাও। তখন আমি তোমাকে কোথায় খুঁজবো?

– আমি কোথাও পালাবো!তুমি নাস্তা বানানো শেষ করে আসো তারপর তোমার কথার উত্তর দিচ্ছি।

– ভীতু ডাক্টার বউকে ভালোবাসি বলতে ভয় পায়।ফুয়াদের গলা ছেড়ে দিয়ে বলে,যাও লাগবে না তোমার৷ ভালোবাসি বলা।

ফুয়াদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো হুরের দিকে মেয়েটার কি হলো হঠাৎ?

– এভাবে তাকিয়ে থাকার দরকার নেই আমার নজর লেগে যাবে। আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে নজর দেবেন ডাক্টার সাহেব?

ফুয়াদ রান্নাঘর থেকে বের হয়ে হল রুমে এসে বসলো কি হলো হুরের। আচ্ছা ওকে আমি ভালোবাসি বলিনি ঘটা করে তাই কি রাগ করেছে!মেয়েরা এতো অদ্ভুত হয় কেনো? এতো ভালোবাসলাম আর সে কিনা ভালোবাসি বলিনি সেখানে আটকে আছে!

ফুয়াদ কিচেন থেকে বের হতেই হুর মুচকি হাসলো। যাক ভালোই জব্দ করতে পেরেছি।

নাস্তা রেডি করে সকলকে নাস্তা দিলো। নুরকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে নুর হুরকে বললো,ভালো মা আজকে তোমাকে লাল টমেটো লাগছে।সুইট সুইট টমেটো।

সিঁদুর লাল শাড়ী সোনালী পাড়। হাতে স্বর্ণের বালা, কানে ঝুমাকো কানের দুল,গলায় তিন লেয়ারের একটা স্বর্নের চেইন। হাতে আংটি। যেনো হুরের রুপ উপচে পরছে।

আদিয়া বলল,ভাবি আজকে তো আমার ভাইয়ের নজর তোমার উপর থেকে সরবেই না।এদিকে আসো নজর টিকা লাগিয়ে দেই।হুর লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলো।

আদিয়া সুর তুলে বলে লাজে রাঙা হলো রাঙা বউ গো।

ফুয়াদ প্লেট নিয়ে উপরে চলে আসলো।আলো বেগম হেসে বলে,ছেলেটাকে আমার লজ্জা না দিলেও পারতি।

নুর খিলখিল করে হেসে বলে,লজ্জা তো মেয়েরা পাবে। বাবাই তো ছেলে তার আবার কিসের লজ্জা।হুর নুরের গাল টেনে বলে, পাকা বুড়ি একদম।তোমাকে এসব কে বলেছে হু। এখন যাও উপরে যেয়ে রেস্ট করো আজ তো স্কুলে অফ ডে।

নুর চলে গেলো। হুর খেতে বসবে তার আগেই আলো বেগম বলে,নাস্তার প্লেট নিয়ে উপরে চলে যা। দু’জনে এক সাথে নাস্তা কর।

হুর কিছু বলবে তার আগেই আদিয়া বলে,আর কোন কথা না। সোজা উপরে চলে যাও ভাবি জি।

আদিয়া চলে আসলো রুমে। ফুয়াদ খাবার রেখে কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।

হুর এসে ফুয়াদের পাশে বসে পরোটা ছিড়ে ফুয়াদের মুখের সামনে ধরে বলে,হা করো তো। ফুয়াদ একবার হুরের দিকে তাকিয়ে হা করলো। হুর ফুয়াদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলে,তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি কেন বলোতো?

-ভালোবেসে

– এহহহহ আসছে ভালোবেসে। শুনে রাখো ডাক্টার মেয়েরা যখন এক্সট্রা ভালোবাসা দেখায় তখন বুঝে নিতে হয় সে কিছু চায়।

– ওহহহ তার মানে আমার বিবিজান কিছু চাইবে!তা কি আর্জি বলে ফেলুন বান্দা আপনার খেদমতে হাজির।

– আগে খেয়ে নাও পরে বলছি।
ফুয়াদও নিজের প্লেট থেকে খাবার তুলে নিয়ে হুরের মুখে তুলে দিলো। দু’জনে এক সাথে খাবার শেষ করলো।

হুর নিজের শাড়ীর আঁচল দিয়ে ফুয়াদের মুখ মুছে দিলো। ফুয়াদ হুরের শাড়ির আঁচল ধরে বলে,আমার আবার প্রেম প্রেম পাচ্ছে। কেমন মনে হচ্ছে সেই নবীন প্রেম জেগে উঠেছি। সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।আচ্ছা হুর পরি এ স্বপ্ন কখনো ভেঙে যাবে না তো?

হুর ফুয়াদের টি-শার্টের বাটনে হাত রেখে বলে,এটা বাস্তব আর আপনার হুর পরি স্বপ্নের মতোই আপনার বাস্তবে বিচরণ করবে। ফুয়াদ হুরকে ঘুরিয়ে হুরের কাঁধে মাথা রেখে দু’হাতে হুরের কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে,বিবিজান আমার তো আজ হসপিটালে যেতে ইচ্ছে করছে না। ঘরে এতো সুন্দর হুর পরি রেখে হসপিটালে মন বসবে না। আমাকে তো তোমার ভালোবাসার জালে বন্দী করে ফেলেছো।

– পাগলামি কথা রাখো আর রেডি হয়ে চলে যাও। তোমার হুর পরি তোমার অপেক্ষায় থাকবে।আর হ্যা আমার কথাটা আমি চিঠিতে লিখে তোমার বুক পকেটে রেখে দিয়েছি। পড়ে নিও।এবার ছাড়ো। উঁহু আগে বলো,এই আপনি তুমি মিলিয়ে বলার কারণ কি?

– ভাল্লাগে তাই বলি। তোমার সমস্যা।

ফুয়াদ হুরের চুলগুলো ঘাড় থেকে সরিয়ে বলে, আচ্ছা হুর তোমার চুল এতো ছোট কেন?

– আপনার কি আমার চুল পছন্দ না?

ফুয়াদ হুরের ঘাড়ে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,সেটা কখন বললাম। তোমার চুল সুন্দর তবে আর একটু বড় হলে আরো ভালো লাগতো।

হুর ফুয়াদের কাছ থেকে সরে বলে,আপনিও দেখতে সুন্দর তবে আর একটু ফর্সা হলে আরো ভালো লাগতো।

ফুয়াদ শব্দ করে হেসে বলে,বাহহ তুমি তো দারুণ। এবার মনে হচ্ছে আমি কখনো বোরিং হবো না। এদিকে আসো তো বিবিজান।

হুর আস্তে করে এসে দাঁড়ালো ফুয়াদ হুরের চুলগুলো নাড়িয়ে বলে,তোমার এই ছোট চুলেও তোমাকে পরি লাগছে।এতোটুকু কথায় গাল ফোলাতে হবে না।হুরের কপালে চুমু দিয়ে বলে, এবার তাহলে আমি হসপিটালে যাই তুমি থাকো। হুর ফুয়াদ কে ইশারা করে নিচু হতে বললো।
ফুয়াদ হুরের কোমড় ধরে তাকে উঁচু করে ধরলো। হুর ফুয়াদের কপালে ভালোবাসা এঁকে দিয়ে বলে,এবার আমাকে ছাড়ুন আর রেডি হোন।

______________________________________________
নাহিদ দাঁড়িয়ে আছে মর্গের সামনে। নাহিদএকজন ডাক্তার কতশত লাশ দেখেছে সে। আজ বুকের ভেতর কেমন যেনো করছে।হ্যাঁ এটা ঠিক মাহতাব সাহেবের চরিত্র ভালো ছিলো না। কিন্তু নাহিদ ছোট থাকতে নাহিদকে সেই কোলে পিটে করে মানুষ করেছে। দু’দিন বাবার কোন খোঁজ না পেয়ে থানায় মিসিং ডায়েরি করে। সেখান থেকেই আজ কল আসে। নিজের ফোনটা বের করে প্রথমেই কল করে ফুয়াদকে। ফুয়াদ রিসিভ করতেই নাহিদ ফুয়াদকে সবটা বলে, ফুয়াদ বলে আমি এক্ষুনি আসছি।

একজন লাশের মুখের উপর থেকে সাদা কাপড় সরিয়ে দিলো। নিজের বাবার লাশ চিনতে নাহিদের এক মিনিটও সময় লাগলো না। নাহিদ বললো ওনার সব ডিটেইলস আমাকে দিন। একজন বললো,উনি পরশু রাতে এক্সিডেন করছেন। আর স্পটেই ডেড হয় ওনার। সম্ভবত ওনারা কোনে বার থেকে নে’শা করে বের হয়েছিলো। ফুয়াদও ততক্ষণে চলে আসে। নাহিদ আর ফুয়াদ মিলে মাহতাব সাহেবের শেষ বিদায়ের ব্যবস্থা করে। নাহিদ ভেতরে ভেঙে পরলেও বাহিরে তা বোঝার সাধ্য নেই। যতই নিকৃষ্ট হোক বাবা তো বাবাই।

আজিমপুর কবরস্থানে কবর দিয়ে এসে নাহিদ একটা নদীর পারে বসে আছে। ফুয়াদ নাহিদের পাশে বসে নাহিদের কাঁধে হাত রেখে বলে,আমরা বুঝ হওয়ার পর থেকেই জানি একদিন আমাদের চলে যেতে হবে।এটাই প্রকৃতির নিয়ম। মন খারাপ করিস না। বরং আঙ্কেলের আত্মার মাগফিরাত কামনা কর।
নাহিদ ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। ফুয়াদ নাহিদকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

আদিয়া নাহিদের বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিচলিত হলো এটা ভেবে নাহিদের এখন কি অবস্থা। সেই কখন থেকে কল করেই যাচ্ছে সুইচ অফ আসছে বারবার।

আদিয়া, আলো বেগম আর হুর এক সাথেই বসে আছে এমন সময় বর্ষা একটা কাগজ হাতে তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে….

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে