#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১৫
এতো সুন্দর মূহুর্তে আদিয়ার কথটা বলতে ইচ্ছে করছিলো না হুরের। হুর ফুয়াদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। হুর কোমল কন্ঠে বললো,আসুন আমরা দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়ি।
ফুয়াদ বলল,কিসের নামাজ?
– আল্লাহ তায়ালার কাছে আপনাকে পাওয়ার খুশিতে দু’রাকাআত শুকরিয়ার নামাজ।
– এর কি কোন নিয়ম টিয়ম আছে?
– না এর কোন বাধ্যকতা নেই তবে নফল ইবাদত তো করাই যায়।আমাদের নতুন জীবনটা না হয় নামাজ দিয়ে শুরুহোক।
ফুয়াদ হুরকে কোলে তুলে নিলো ওয়াশরুম দুজনেই ওজু করলে।
রুমে এসে হুর নিজের আঁচল ফুয়াদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, এই নিন আপনার ব্যক্তিগত তোয়ালে।
ফুয়াদ মুচকি হেসে হুরের ওড়নার আঁচলে নিজের হাত মুখ মুছে নিয়ে বলে,তুমি সব সময় এমন থাকবে নাকি কখনো পাল্টে যাবে?
আজকে এই সুন্দর মূহুর্তে এসব কথা একদম মুখে আনবেন না। আল্লাহ তায়ালা হুরের দেহে যতখন প্রাণ রাখবেন। ততক্ষণ হুর শুধু আপনার। আমার কথায় বিশ্বাস রাখুন আর আল্লাহ তায়ালার উপরে ভরসা রাখুন।
– হুর যাদের বাড়ি ঘর নদীর ভাঙেন চলে যায়। তারা দ্বিতীয় বার ঘর বাঁধতে ভয় পায়।তাদের মনে হয় আমার সখের ঘর আবার না চলে যায় নদীর তলদেশে।আমিও এক ঘর ভাঙা মানুষ, তাই ভয় হয় নতুন করে ঘর বাঁধতে।
– ইনশা আল্লাহ আমি আপনার ভয় দূর করে দেবো।শুধু আপনি আমার পাশে থাকুন। একটু ভালোবাসা শাসন দিয়ে আমাকে আগলে রাখুন।
ফুয়াদ নিজের বক্ষে হুরকে আবার আগলে নিয়ে বলে,আমার সবটা দিয়ে তোমাকে আগলে রাখবো। তুমি শুধু শেষ অব্দি থেকে যাও।
হুরও দু’হাতে ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে বলে,একজন স্ত্রীর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান তার স্বামীর বক্ষ। সেখানে যখন ঠাই দিয়েছেন। কখনো আপনাকে আশাহত করবো না।
– তোমার সাথে আমার আগে কেন দেখা হলো না হুর?
– আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তখন হয়তো আপনি আমাকে বিয়ে করতেন না।এখন বাদ দিন এসব কথা আপনি পাঞ্জাবি পড়ুন। আমি জায়নামাজ নিয়ে আসছি।
হুর চলে যেতেই ফুয়াদ নিজেই নিজেকে বলে,তোকে এটা করতেই হবে।দ্বিতীয় বার ভুল করা যাবে না।বিথী নামক কালো অধ্যায়ের কোন জায়গা নেই তোর জীবনে। এখন এ জীবনে শুধু হুর হবে তোর #আধার_রাতের_আলো
হুর জায়নামাজ নিয়ে আসার সময় খেয়াল করলো নুরকে কেউ কিছু বলছে,মেয়েটার কোলে আর ও একটা বাবু।নুর দ্রুত নিচে চলে আসলো। হুরকে দেখেই নুর কেঁদে দিয়ে বলে,ভালো মা কমাকে এই বাজে মায়ের হাত থেকে বাঁচাও।হুর বললো,প্লিজ আমার মেয়েটাকে ছেড়েদিন। আপনার কিছু বলার থাকলে আমাকে বলুন।
– তুই কে তোকে কেন বলবো, আমার মেয়েকে নিজের মেয়ে বলে আমার স্বামীকে নিজের স্বামী করে নিয়েছিস। বেহায়া মেয়ে।
– আপনি যা খুশি বলুন আগে আমার মেয়েটাকে ছাড়ুন। হুর নুরের হাত ছাড়িয়ে নিতেই নুর হুরকে জড়িয়ে ধরে বলে,ভালো মা আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায়ও যাবো না।
হুর নুরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,আমার জান বাচ্চাটা আমাকে ছেড়ে কেন যাবে।তুমি তো আমার সাহসি মেয়ে।যাওতো মা নিজের রুমে যাও।আর তোমার ফুপিকে বলো নিচে আসতে।
নুর দৌড়ে চলে গেলো,
বিথী হুরের সামনে এসে বলে,তোকে তো আমি পরে দেখে নেবো আগে আমার মেয়েটাকে হাতে আনি। বলেই সামনে পা বাড়ায়। হুর বিথী পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলে,আমার পরিবার আমার সংসাসার,আমার মেয়ে সেখানে অন্য কারো ছাঁয়াও আমি সহ্য করবো না।
বিথী রাগ দেখিয়ে বলে,আমার রাস্তা থেকে সরে দাঁড়া।
– আপনার রাস্তা আপনার উল্টো দিকে সামনের দিকের রাস্তাটা আমার। আর ডিভোর্সের পর সে আপনার হ্যাসবেন্ড নেই। আর রইলো নূর যাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। তার অধিকার আর আপনার নেই। আপনি আসতে পারেন।
বিথী রাগে হুরের গালে চড় দেবে ঠিক সেই মূহুর্তে আদিয়া বিথীর হাত ধরে বলে,সাহস কম দেখা বিথী এটা তোর বাড়ি না। আমাদের বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাদের বাড়ির বউদের গায়ে হাত দেয়া এতো সহজ নয়।
ফুয়াদ ভাবছে মেয়েটা কোথায় গেলো জায়নামাজ আনতে দশ মিনিট হয়ে যাচ্ছে এখনো আসছে না কেন? রুম থেকে বের হয়ে নুরের রুমে আসলো। নুর জানালা ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ফুয়াদ বলল,নুর।
নুর ফিরে তাকালো। নুরের চোখে জল দেখে দ্রুত নূরকে কোলে তুলে বুকের সাথে আগলে নিয়ে বলে,তুমি ঠিক আছো তো? কি হয়েছে মা।
বাবাই বাজে মা বলেছে আমাকে নিয়ে যাবে।কথাটা বলেই নুর ফুপিয়ে উঠলো,
ফুয়াদ নূরের কপালে চুমু দিয়ে বলে, কেউ তোমাকে নিতে পারবে না। তোমার বাবাই আছে তো।
– নিয়ে যাবে ওই বাজে মা, ভালো মাকে বকে দিচ্ছে।
-কোথায় তোমার ভালো মা?
– নিচে।
– তুমি রুমেই থাকো মা। আর হ্যাঁ, একদম কাঁদবে না। তোমার বাবাই থাকতে তোমার চোখে যেনো একটুও পানি না আসে।নুরের কপালে চুমু দিয়ে নুরকে রেখে দ্রুত নিচে আসলো।
বিথী ফুয়াদকে দেখেই ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলো। বিলাপ করে বলতে লাগলো, আমি মানছি আমি ভুল করেছি। তাই বলে কি নিজের মেয়েকে দেখতেও পারবো না। আমি কি এখানে থাকতে এসেছি চলেই যাবো শুধু একবার দেখতে দাও আমার মেয়েটাকে। শতহোক মেয়েটাকে তো দশমাস গর্ভে আমিই ধারণ করেছি।
হুর আর আদিয়া পুরোই বোকা বনে গেলো। আদিয়া বলে, আবার কি নাটক শুরু করলে? তোমার কোন নাটকেই কাজ হবে না।
– এভাবে কেন বলছো,আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।আমার ভুলে আজ আমার দুধের শিশুটা পিতৃহারা। সব আমার কর্মের ফল।
ফুয়াদ এসে বলে,আপনার এসব সংলাপ সিনেমার ডিরেক্টরকে শুনালে কোন রোল পেয়ে যাবেন। এখানে কাজের কাজ কিছুই হবে না।
বিথী হুট করে ফুয়াদে এক হাতে জড়িয়ে ধরে। হুর সাথে সাথে বিথীকে সরিয়ে দিয়ে বলে,যা বলার আমার স্বামী থেকে দশ হাত দূর দাঁড়িয়ে বলুন। একদম ওকে টাচ করবেন না।
বিথী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে, ওর সারা শরীরে আমার স্পর্শ লেগে আছে। সেগুলো কি করে মুছবে?
হুর বলে, লেগেছিলো কিন্তু এখন নেই। এখন তার শরীরে প্রতিটি স্থানে আমার স্পর্শ তার হৃদয়ে আমার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা তোমার স্পর্শ মুছে দিয়েছে।
ফুয়াদ হুরের মাথাটা নিজের বুকে চেপে রেখে বলে,আমার বিবিজান প্লিজ শান্ত হোন এসব পঁচা সামুকে আপনি পা কা/টতে নামবেননা। আমি আপনার মানে শুধুই আপনার।
বিথী অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফুয়াদের দিকে আজ হুরের পরিবর্তে তার থাকার কথা ছিলো। একটা ভুল সব শেষ করে দিয়েছে।
হুর ফুয়াদের হাত ধরে বলে,আপনার আদেশ আমার মাথার উপরে। আপনি যা চাইবেননা তা আমি কখনো করবো না। জানেন একদিন হুজুর ক্লাসে বলেছিল স্ত্রীর দ্বায়িত্ব হলে স্বামীর আদেশ, নিষেধ মেনে চলা। তার কথার উপরে কথা না বলা।তাহলে সেই সংসারে সয়তান প্রবেশ করতে পারেনা। আর আমাদের সম্পর্ক পবিত্র ও হলাল। সেখানে আমি সয়তান প্রবেশ করতে দেবোও না।
বিথী এবার উপায় না পেয়ে আম্মি আম্মি বলে, চিৎকার করতে লাগলো।
আদিয়া বলল,সে কোনদিন তোমার ডাকে সাড়া দেবেনা। তার চেয়ে যে ভাবে এসেছো। সে ভাবেই চলে যাও। শুধু শুধু তোমাকে টানাহেঁচড়া করে বেড় করতে চাইছি না।
বিথী নিরুপায় হয়ে চলে গেলো।
ফুয়াদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ভাগ্য বড়ই নিষ্ঠুর।
হুর বলে,নিজের কর্মের ফলকে ভাগ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে কি হবে? কথায় তো আছেই যেমন কর্ম তেমন ফল।ঘরে স্বামী সন্তান থাকতেও দিনের পর দিন অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক রেখে যে অন্যায় সে করেছে। তার শাস্তি তাকে তো ভোগ করতেই হতো। নিজের জন্ম দেয়া মেয়েকে ঘুমের ঔষধ খেয়ে যে মা তার সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আরেকজনের হাত ধরে চলে যেতে পারে।সে তো কখনো মা হতেই পারে না!
ফুয়াদ নিরবে চলে গেলো উপরে। শতহোক প্রথম অনূভুতি তো বিথীই ছিলো।
হুরও পিছু পিছু গেলো। পেছন থেকে ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
#চলবে
#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১৬
হুর ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। ফুয়াদ হুরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আলত হাতে হুরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,কাঁদছেন কেন হুর পরি?
– স্বামী যদি অন্য মহিলার চিন্তায় মন খারাপ করে তাহলে তো হুর পরি কাঁদবেই।
ফুয়াদ হুরের গাল টেনে বলে,আপনার স্বামী তার হুর পরি ছাড়া,আর কারো কোন মেয়ের কথা ভাবতে পারবে না তাইতো?
হুর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। আহা তাহলে আপনি কে? আমার জীবন থেকে তো মেয়েদের ভাবনা বাদ দিতে হবে।
হুর আর একটু শক্ত করে ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে বলে,আরেহহ আমি,নুর,বোন আর মা এ ছাড়া সব মেয়ের ভাবনা বাদ।
– ফুয়াদ হুরকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,ওকে বিবিজান। এবার চলুন আমার মেয়েটা-তো একা আছে।
হুর ফুয়াদকে ছেড়ে দিলো,নিজের হাতে চোখের জাল টুকু মুছে নেবে তার আগেই ফুয়াদ নিজের হাতে হুরের চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,আপনার চোখের জল মুছে দেয়ার অধিকার শুধু আমার।
নুর বসে আছে। উদাস হয়ে হুর আর ফুয়াদ দু’জনে নুরের দু’পাশে বসে নুরকে আগলে নিয়ে বলে,আমার জান বাচ্চাটা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে কেন?সে কি জানেনা তার ভালো মা, তার মুখ ফুলোনো দেখলে কষ্ট পাবে।
নুর হুরকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ভালো মা”, আমি তোমাদের ছেড়ে যাবো না।
– আমার বাচ্চাটাকে আমি কোথাও যেতে দেবো না তুমি তোমার বাবাই আর ভালো মায়ের সাথেই থাকবে।নুর দু’জনের গলা জড়িয়ে একে একে দু’জনের গালে চুমু দিলো।
হুর নুরকে কোলে তুলে নিয়ে ফুয়াদের উদ্দেশ্য বললো,আপনি রুমে যান আমি নুরকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে আসছি।
ফুয়াদ নিজের রুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ তার চোখ আটকে গেলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। আদিয়া নামাজ পড়ছে!
আদিয়া নামাজ শেষ মোনাজাত ধরলো। বেশ সময় নিয়ে আল্লাহ তায়ালার দরবারে কান্নাকাটি করলো। নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলো।জায়নামাজ ভাজ করে রেখে নিজের চোখের অশ্রুগুলো মুছে নিলো।
ফুয়াদ দরজায় কড়া নেড়ে বলে,আসতে পারি?
– আসো। ফুয়াদ ভেতরে আসলো। অদিয়ার পাশে বসলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,আমি সত্যি অবাক হয়েছি। তুই নামাজ পড়ছিস! তোর এই পরিবর্তনটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
-ভাইয়া জীবন বড়ই অদ্ভুত জানো তো,আমরা জীবনের অর্ধেক সময় ভুল কাজেই ব্যায় করে দেই। দেখো হুর মেয়েটা কি জ্ঞানী! একটা মেয়ে, এইটুকু বয়সে কত বুঝ তার।ও আমাকে বলল,নামাজ মানুষকে সমস্ত খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। আপনি নামাজ পড়া শুরু করেদিন। আমি বলেছিলাম আমার এতো এতো অন্যায় আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবে? ও বলল,আল্লাহ তায়ালা দয়াশীল। যদি কেউ নিজের ভুল বুঝতে পরে অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা যায় তাহলে তিনি ক্ষমা করে দেন। আমরা ডিপ্রেশনে থাকলে ডিপ্রেশন কাটানোর জন্য গান শুনি, সিনেমা দেখি কিন্তু হুর বলল,তুমি নামাজ পড়ো,জিকির করো। একাকিত্বে আল্লাহ তায়ালাকে স্বরণ করো,দেখবে তোমার অন্তর প্রশান্তিতে ছেঁয়ে গেছে। তার কথা মতো কাজ করে দেখলাম। এখন মনে হচ্ছে আমার সাথে যাইহোক ভালোই হবে।কিন্তু এভুলের মাশুল আমি কি ভাবে দিবো। আল্লাহ তায়ালা আমাকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুক।আমিন।
ফুয়াদ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আদিয়ার দিকে, গভীর চিন্তায় মগ্ন। মনে হচ্ছে তার চঞ্চল বোনটার মনে কোন তুফান চলছে।সরাসরি জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না। দ্বিধা কাজ করছে।
আদিয়া বলল,কি ভাবছো ভাইয়া?
– কিছু নাতো। আচ্ছা তুই থাক আমি যাই।
– একটা কথা বলি ভাইয়া?
– হ্যা বলো একটা কেন যত খুশি বল।
– তুমি মেয়েটাকে মেনে নাও।সবার জীবনে দ্বিতীয় বার বসন্ত আসে না। তোমার জীবনে দ্বিতীয়বার বসন্ত এসেছে। কালবৈশাখী ঝড়ের আগেই বসন্তকে আপন করে নাও।হারাতে দিলে এ শহরে কেয়বা রাখে খোঁজ। নিখোঁজ সংবাদ বিলীন হচ্ছে অন্ধকারে রোজ।
ফুয়াদ মুচকি হেসে বলে,এ বসন্তকে আর যেতে দিচ্ছি না।হাজার কালবৈশাখী ঝড়ের পরেও আমার এই ব্যক্তিগত বসন্তকে আগলে রাখবো।
– তোমার জন্য শুভকামনা রইলো ভাইয়া।নতুন জীবন সুখের হোক।
ফুয়াদ নিজের রুমে চলে আসলো,আজকে তার বিষাদের রাত হওয়ার কথা ছিলো? কিন্তু আজ কেমন ফুলসজ্জার রাতের মতো এক্সাইটেড লাগছে।কেমন অস্থির অনূভুতি হচ্ছে। সব কিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হিসেবে যেটা বড্ড বে মানান।রুমের মধ্যে পায়চারি করছে,কি থেকে শুরু করবে?কি বলবে সেসব ভেবে ভেবে অস্থির। এসির বাতাসেও ঘেমে যাচ্ছে। অনেক ভাবা ভাবির পর হাতে মোবাইল নিলো,স্ত্রীর অধিকার শরীয়ত মোতাবেক কি কি? এটা লিখে সার্চ দিলো। তারপর হুট করে সেদিনের হুরের গাওয়া গজলের কথা মনে পড়লো। সার্চ দিলো সঙ্গীনি গজল লিখে। পেয়েও গেলো। ঘন্টা খানিক সময় নিয়ে সেটা শিখলো। তারপর মু’য়ানাকার দোয়াটাও শিখলো।
এখন সেটা বারবার পড়ছে,,,
اللهم زد محبتي لله ورسوله
অর্থঃ-
(আল্লাহপাক আমাদের মধ্যে আল্লাহ ওয়াস্তে পরস্পর মোহাব্বত ও ভালবাসা বৃদ্ধি করে দিন।)
______________________________________________
আলো বেগম রেহানা বেগমের মুখোমুখি বসে আছে,রেহানা বেগমের দু’চোখে অশ্রু টলমল করছে।যে কোন সময় গড়িয়ে পড়বে।
দু’জনেই চুপ কারো মুখে কোন কথা নেই। বিথীর বড় বোন বর্ষা নিরবতা ভেঙে বলে,আম্মি যা হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি আমরা মানছি। কিন্তু তাই বলে কি নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক শেষ করে দেবো!
আলো বেগম কাটকাট ভাষায় বলে দিলেন,আমার আপনাদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। যে জিনিস ভেঙ্গে যায় তা জোড়া লাগনো যায় না। আর লাগালেও সেখানে দাগ থেকেই যায়।
– আম্মি বিথীর ভুলের জন্য আমরা ক্ষমা চাইছি। ওকে ক্ষমা করে দাও।একটা ভুল করেই ফেলেছি এটা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে?
– সে কোন ফিডার খাওয়া বাচ্চা নয়। যে তাকে ক্ষমা করে দেবো।আমার ছেলের জীবনে ওর ছাঁয়া আমি সহ্য করবো না।
– তুমি না চাইলেও তো সম্পর্ক একটা থেকেই যায়। অস্বীকারতো করতে পারবে না। নুরের মা বিথী।এই নারীর টান কি ভাবে ছিন্ন করবে?
– সেটা অনেক আগেই ছিন্ন করে আপনার বোন চলে গিয়েছিল।আর আমার ছেলের গোছানো জীবনে আর কোন কালো ছাঁয়া পড়তে দেবো না।আর শরীয়ত অনুযায়ী ডিভোর্সের পর আর সেই স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া যায় না।
– ওই ভাবে না নাও তোমাদের বাসার এক কোনায় পড়ে থাকবে শুধু ওর মাথা গোঁজার ঠাঁই দাও।
– আমার বাড়ি কোন ধর্মশালা বা আশ্রয় কেন্দ্র নয়, যে যাকে তাকে থাকতে দেবো।
বর্ষা বুঝে গেছে কোন লাভ হবেনা। তাই কথা না বাড়িয়ে ডিরেক্ট বলে,আমরা নুরের জন্য কেস ফাইল করবো।হয়তো তোমরা বিথীকে তোমাদের বাসায় থাকার অনুমতি দেবে। নয়তো নুরকে বিথীর হাতে তুলে দেবে।
– আপনাদের মানসিকতা যে কতটা নোংরা সেটা আমি জানি। আপনাদের যা ইচ্ছে করতে পারেন। দেখি আইনের দৌঁড়ে কে কতদূর যেতে পারে!
আলে বেগম উঠে আসার আগে একবার রেহানার দিকে তাকিয়ে বলে,শুনেছি, মেয়েরা মায়ের মত হয়। তোর মনে যে এতো,নোংরামী ছিলো বুঝতেই পারিনি।এখন মনে হচ্ছে দুধ,কলা দিয়ে কাল সা’প পুষে ছিলাম।
আলো বেগম চলে যেতেই রেহানা বেগম কেঁদে দিয়ে বর্ষাকে বলে,এই ঘোর পাপ তোরা করিস না।যে যেমন কর্ম করে তেমন ফল পাবেই। অন্যায়ের সঙ্গ দেওয়া আরো বড় অন্যায়।
– তোমার নীতি বাক্য তোমার কাছে রাখো,এখন ডিভোর্স নিয়ে নাড়া দিলে কম করে হলেও কাবিনের দশ লাখ টাকা তো পাবো।আমাদের না হয় দু’লাখই গেলো।
– লোভ সব সময় মানুষকে ধ্বংস করে,কথায় তো,আছেই লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
– তুমি মাঝখানে আসবে না বলে দিলাম। মা হয়ে কয় মেয়ের সাথে থাকবে তা-না করে বোনের পক্ষ করো।কেমন মা তুমি?নিজের মেয়ের দূর্দশা চোখে পড়েনা। তোমার চোখ নাকি চুলো। যা করার বোনটার জন্য আমাকেই করতে হবে।
– সফল তো হতে পারবি না।তোর বোন অন্যায় করেছে আর সেই অন্যায়ের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
– তোমার কথা শুনে ইচ্ছে করছে তোমার চুলের গোঁছা ধরে যদি দু’চারটা থাপ্পড় দিতে পারতাম তো শান্তি পেতাম।
রেহানা বেগম আশ্চর্য দৃষ্টিতে নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন!চোখ থেকে অশ্রুকণা গড়িয়ে পরছে।এই মেয়েদের সে জন্ম দেয়ার জন্য এতো যন্ত্রণা সহ্য করেছে!
বিথী ঘরে ঢুকে বলে এদেরকে কিছু বলে লাভ নেই।দু’বোনই এক।যা করার আমাদের করতে হবে।তুই সুজনকে ধরতো বনু। ছেলেটাও আমার ক্লান্ত হয়ে গেছে।
– ওই বাসায় কেউ তোকে কিছু বলেছে?
– রিতীমত অপমান করেছে।আর ওই ফুয়াদ যাকে ভেজা বেড়াল ভাবতাম। সে-তো আসলে সেয়ানা পাবলিক।আমার সামনে ওই মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো।আর কি ন্যাকা ন্যাকা কথা।
______________________________________________
হুর নুরকে ঘুম পাড়য়ে রুম থেকে বের হলো। আলো বেগম তখন মনমরা হয়ে নিজের রুমে ঢুকবেন। হুর দ্রুত নিচে যেয়ে এক গ্লাস লেবুর সরবত করে নিয়ে আসলো।আলো বেগমের দিকে সরবতের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,মা এটা খেয়ে নিন আপনাকে বড্ড ক্লান্ত লাগছে।
এই প্রথম হুরের মুখে মা ডাক শুনে আলো বেগম আনন্দিত হয়।সরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলে,আমি জানি তুই পারবি সব মোকাবেলা করতে।তোর উপর আমার ভরসা আছে।
– আগে সরবতটা শেষ করে নিন পরে কথা বলুন।
আলো বেগম সরবতটা পান করে গ্লাসটা বেড সাইড টেবিলে রেখে বলে,তুই আমার ছেলেটাকে কোন ভাবেই আর একা ছাড়বি না তো হুর?
#চলবে