#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৩
হুর দ্রুত পানি এনে আলো বেগমের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,আন্টি পানিে।আলো বেগম হুরের দিকে চেয়ে বলে,কতবার বলেছি, আমাকে মা বলবি। হুর হতভম্ব হয়ে গেলো। তবুও কিছু না মনে করে বলে,মা পানিটা পান করে নিন। আপনার কি কোস সমস্যা হচ্ছে?
আলো বেগম হুরের উদ্দেশ্যে বললেন, আমাকে পারিটা তোর হাতে খাইয়ে দে মা। হুর তাই করলো।
রেহানা বেগম দাঁড়িয়ে দেখছে। ভাবছে এই মেয়েটা কে?নিজের ভাবনাকে দমিয়ে রেখে আবার বলল,আলো আমার সাথে কথা বলবি না!
হুর আলো বেগমের মুখের দিকে তাকালো। আলো বেগম বললেন, আপনি কেন এসেছেন?
– এভাবে কেন বলছিস আলো! আমি কি আসতে পারিনা?
– চার বছরেই যখন আসতে পারেননি এখন কেন আসবেন? নিশ্চয়ই আমাদের সুখে নজর লাগাতে।
– আমি কেন তোর সুখে নজর লাগাবো আলো! নুরকে একটু দেখতে আসলাম।
– এতোদিন যখন দেখার ইচ্ছে হয়নি! এখনও দেখতে হবেনা। আপনি আসতে পারেন।
এরমধ্যেই নুর আসলো নুর দু’টো হাওয়াই মিঠা দু হাতে নিয়ে হুরে দিকে দৌড় আসছে আর বলছে,ভালো মা, ভালো মা, দেখো তোমার জন্য কি নিয়ে এসেছি।
হুর নুরকে কোলে নিয়ে বলে, আমার জন্য এনেছো?
-হুম একটা তোমার একটা আমার।মায়ের একটা মেয়ের একটা।
– পাকা বুড়ি। চলো আগে ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে তারপর আমার হওয়াই মিঠা খাবো আর গল্প করবো।
নুর হুরের গলা জড়িয়ে দরে ইয়ে চলো তাড়াতাড়ি।
রেহানা বেগম অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাচ্চা মেয়েটা যে নুর সেটা বুঝতে বাকি নেই কিন্তু এই মেয়েটা কে?
আলো বেগম বললেন,আমার পূর্ণ সংসারে আপনার দৃষ্টি আমার সহ্য হবে না। আপনি চলে যান।
– ওই মেয়েটা কি নূরের আয়া।
– মুখ সামলে কথা বলুন, মেয়েটা আমার একমাত্র ছেলের বউ।
রেহানা বেগম হেসে বলে,বিয়ে করছে আমার ছেলেটা!আমি খুব খুশি হলাম।
– এবার আসতে পারেন। আমরা অতীতের কোন কালো অধ্যায় বর্তমানে টানতে চাইনা।
রেহানা বেগম কিছু বলতে যেয়েও বললো না। বেড় হয়ে গেলো বাসা থেকে।
হুর নুরেক ফ্রেশ করিয়ে দু’জন মিলে কিছু সময় গল্প করে, নুরকে গুম পাড়িয়ে দিলো। নুর ঘুমিয়ে পড়তেই হুর ফুয়াদের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
আদিয়া নিচ থেকে উপরে এসে বেশ কিছু সময় কি সব চিন্তা ভাবনা করে। উঠে এসে কাভার্ড থেকে একটা শাড়ী বের করে আনলো শাড়ীটা নাহিদ তাকে বার্থডে তে গিফট করেছে। শাড়ীটা জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করলো। আস্তে আস্তে উঠে এসে একটা চেয়ার খাটের উপর নিয়ে ফ্যানের সাথে কাপড়াটা বেঁধে নিলো। দরজা খোলা তবে পর্দা দেয়া। হুর কি মনে করে আদিয়ার রুমে উঁকি দিলো। আদিয়ার এই অবস্থা দেখে চিৎকার করে বলে,আপু তুমি এসব কি করছো।
আদিয়া এই মূহুর্তে হুরকে আশা করেনি। আদিয়া চিৎকার করে বলে, চলে যাও এখান থেকে আমাকে আমারটা বুঝে নিতে দাও।
হুর চিৎকার করে আলো বেগমকে ডাকতে লাগলো। আদিয়া হুরের মুখে হাত রেখে বলে,প্লিজ আমাকে ম/র/তে দাও এটাতেই সবার ভালো হবে। আমি সত্যি খুব খারাপ আমার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
– শান্ত হও আপু ধৈর্য ধরো সব ঠিক হয়ে যাবে।
– কিছু ঠিক হবে না। নাহিদ যখন জানবে আমি প্রেগন্যান্ট তখন ও আমাকে বিয়ে করবে না। আমাকে ঘৃণা করবে।আমার ভাই মা সবার মানসম্মান নষ্ট হবে।
হুর বললো,এসব তুমি কি বলছো আপু প্রেগন্যান্ট মানে!
– হ্যাঁ প্রেগন্যান্ট আমার ছোট একটা ভুলে আজ আমার এই অবস্থা। আমি নোংরা মেয়ে খুব বাজে মেয়ে আমাকে যেতে দাও।
– এভাবে কেন বলছো আত্মহত্যা কোন সমস্যার সমাধান হতে পারেনা। আত্মহত্যা মহা পাপা। তুমি ভুল করেছো এরজন্য ক্ষামা চেয়ে আল্লাহ তায়ালার দরবারে অনুতপ্ত হও।কিন্তু সুইসাইড করে কি পাবে বলো।মানুষ মরে গেলে সে বেঁচে যায় ঠিকি কিন্তু তার পাপের ফলে বাকি সবাইকে ভোগ করতে হয়। তুমি আমাকে বল, তুমি প্রেগন্যান্ট হলে কি করে?
– বন্ধুদের সাথে পার্টিতে গিয়েছিলাম সেখানে নেশা অবস্থায় আবার ফ্রেন্ট নিশো সুযোগ নেয়। আমি সত্যি বলছি আমার নিজের হুশে আমি এসব কখনো করতাম না।আমি নাহিদকে ভালোবাসি। কিন্তু এখন আমি কোন মুখে নাহিদের সামনে দাঁড়াবো!
– জানো কুরআনে কঠোর ভাবে নেশাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।এমন কি নেশাকে সকল খারাপ কাজের মূলও বলা হয়েছে। ভুল করে ফেলেছো সেটার জন্য সমাধান খুঁজতে হবে।নিজের ভুলের কাছে মাথা নত করে সামনে এগিয়ে চলতে হবে। তুমি এক কাজ কর ওজু করে নামাজ পড়ো তাহলে তোমার মন শান্ত হবে। আমি তোমার সাথে আছি। যা হবে দেখা যাবে।
আলো বেগম দরজায় দাঁড়িয়ে সবটা শুনলেন শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বলেন, একটা মেয়ে একটা সংসার যেমন ধ্বংস করে দিতে পারে, ঠিক তেমন ভাবে একটা সংসারকে সুখের রাজ্যও গড়ে তুলতে পারে। কথা বলতে বলতে হুরকে জড়িয়ে ধরলো।আদিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
হুরকে ছেড়ে দিয়ে আলো বেগম আদিয়ার গালে স্বজোড়ে এক চড় বসিয়ে দেন। আরেকটা চড় দেবেন তার আগেই হুর এসে বলে,আম্মা আপুকে ক্ষমা করে দিন।
আলো বেগম কেঁদে বলে ক্ষমা কিসের ক্ষমা। আমাদের মান সম্মান সব জ্বলানজলি দিয়ে ক্ষমা চাইছে।আমি কোন মুখে আমার ছেলের সামনে দাঁড়াবো!
– আন্টি আপনার ছেলের সাথে আমি কথা বলবো।
______________________________________________
ফুয়াদের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে বিথী। ফুয়াদ বাকরুদ্ধ। বিথীর চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই এই মেয়েটাই এক সময় এতো দাপুটে ছিলো। পুরো কেবিন জুড়ে পিনপতন নীরবতা। বিথী অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফুয়াদের দিকে, আগের চেয়ে ফুয়াদকে দেখেতে সুদর্শন লাগছে। রয়েল ব্লু কালারের শার্ট, ব্লু জিন্স,হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি। বিথীর চোখ যেনো আটকে গেছে।মানুষ হয়তো ঠিকি বলে, বিচ্ছেদের পরে এক্সরা দেখতে আরো সুদর্শন হয়ে যায়।
ফুয়াদ বিথীকে উপেক্ষা করে, হারিসকে বলল,কি শালা বাবু এখন কি অবস্থা?
শালা বাবু শব্দটা বিথীর কানে কাঁটার মতো বিঁধলো।
হারিস মৃদু হেসে বলে,ডাক্টার সাহেব আমি আপনার শালা বাবু হলাম কি করে?
– শালাবাবু তুমি তো অসুস্থ তাই জানোনা। তোমার বোন হুরাইন সুলতানা আমার বিবাহিতা স্ত্রী।
– হারিস চোখ বড় বগ করে বলে,সত্যি!
– আরে শালাবাবু চোখ তো বেড় হয়ে আসবে, এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। সুস্থ হও তাড়াতাড়ি। তারপর দুই শালা দুলাভাই জমিয়ে আড্ডা দেবো।
ফুয়াদ চলে গেলো,হারিস মনে মনে বলছে আল্লাহ তায়ালা তোর জন্য সত্যি ভালো কিছু,রেখেছে হুর। তুি যেমন ভালো তোর সাথে ভালোই হবে। আমি জানতাম।
হারিসের ভাবনার মাঝেই বিথী বলে,আপনার বোনের নাম সত্যি হুরাইন সুলতানা!
হারিস বলল,হুম।
বিথী নিজের কাজ করে বাহিরে বের হয়ে আসলো। নেইম প্লেট দেখে দেখে ফুয়াদের কেবিন খুঁজে বের করলো।
ডক্টর রুবা গাল ফুলিয়ে বসে আছে, পাশেই নাহিদ বসে আছে।
ফুয়াদ বলল,আপনি একটু বেশিই সুন্দরী আপনার সাথে আমাকে মানায় না।
রুবা বলল,একদম চুপ থাকেন, আমি বুঝবো আমাকে কার সাথে মানায় আর কার সাথে মানায় না। আপনি বিয়েই যখন করেছেন আমাকেই করতেন।
নাহিদ ঠোঁট চেপে হাসছে।
ফুয়াদ নাহিদের পায়ে পারা দিয়ে বলে,ডক্টর রুবা, আপনি চাইলে কিন্তু নাহিদকে বিয়ে করতে পারেন।পিউর সিঙ্গেল ছেলে।
নাহিদ কেশে বলে না,না আমার জলজ্যান্ত বউ আছে।
রুবা বলে,আপনারার দু’জনেই চুপ থাকুন। একটা কথা শুনে রাখুন আপনি তৃতীয় বিয়ে করলে ওই তৃতীয় বউ আমি হবো।
– আমার বউকে তো চেনেনা। আপনার তৃতীয় বউ হওয়ার সখ মিটিয়ে দেবে।
রুবা মুখ ফুলিয়ে বলে দেখে নেবো আমি আপনাকে।বলেই চলে গেলো।
রুবা চলে যেতেই নাহিদ হেসে বলে,আমি নিশ্চিত এই মেয়ের মাথায় গন্ডগোল আছে।
ফুয়াদ সেসব কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে,নাহিদ বিথী।
#চলবে
#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১৪
ফুয়াদ নাহিদকে উদ্দেশ্য করে বললো,বিথী। আর কিছু বলার আগেই, নাহিদ বলে, ওই অপয়া মেয়ের নাম আনবি না মুখে। ওই অভিশপ্ত কালো অতীতকে পা দিয়ে পিশে ফেল।
পেছন থেকে বিথী বলে,চাইলেই কি সব পিশে ফেলা যায়?
ফুয়াদের কপালে রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ফুয়াদ কড়া কন্ঠে বলল, সামান্য একজন আয়া হয়ে অনুমতি ছাড়া আমাদের কেবিনে কোন সাহসে আসলেন?
– ফুয়াদ আমাকে চিনতে পারোনি!আমি বিথী।
– এই মূহুর্তে এখান থেকে বের হয়ে যান। আপনি কে? সেটা শোনার সময় আমার নেই।
বিথী আর কিছু বলবে তার আগেই ফুয়াদ বলে,একটা শব্দ ও আমি শুনতে চাইনা। এখন থেকে না গেলে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।
বিথী বের হয়ে আসলো কেবিন থেকে। নিজের চোখের পানি মুছে বলে,এ আমি কোন ফুয়াদকে দেখছি! যেই ফুয়াদ ছিলো নম্র আর বিনয়ী। সে আজ আমাকে অপমান করলো!
নাহিদ ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে বলে,তুই একটা সঠিক কাজ করেছিস। তবে এই মেয়ে এখানে কি করে!
– ও নাকি এখানের নতুন বুয়া।
– আমি কি কথা বলে ওর চাকরি বাতিল করাবো?
– নাহহহ সেটা করলে সাবার মনে প্রশ্ন জাগবে আমাদের সাথে সাধারণ একজন আয়ার কি শত্রুতা। ওকে ওর মত থাকতে দে।
-কিন্তু ওর চেহারা প্রতিদিন দেখবি কি ভাবে? সহ্য করতে পারবি তো?
– আমরা যা পিছু ফেলে আসি শত চেষ্টা করেও সেই জিনিসকে আর খুঁজে পাইনা। হারিয়ে যায়। আর যদিও কখনো খুঁজে পেয়েও যাই। তবে সেটা আর আগের মত থাকেনা। নষ্ট হয়ে যায়। আর জেনে বুঝে সেই জিনিসকে আপন করা মানে, পঁচা সমুকে পা’ কা/ টা। আর আমি তো এতোটাও বোকা নই। ওকে আবার সুযোগ দেবো আমার জীবনে এখন কোন দুঃখ নেই অশান্তি নেই। ভালো আছি আমি।
নাহিদ আর ফুয়াদ দু’জনেই বেরিয়ে আসলো হসপিটাল থেকে। নাহিদ বলল,চল আজ রিকশা নিয়ে বাসায় যাই।
– এই দুপুরে রিকশা!
– তপ্ত রোদে রিকশায় ঘুরে মনের দহন ঝলসে দেবো।
ফুয়াদ হেসে বলে,আমার মনে কোন কারণে দহন নেই। জানিনা কেন তবে এটা সত্যি। বিথীকে দেখার পর রাগ লেগেছে। কিন্তু আর কোন অনূভুতি আসেনি।
– সব আমার নতুন ভাবির জাদু।
ফুয়াদ হেসে বলে তাও ভুল বলিসনি। একটা তাঁড় ছিঁড়া মেয়ে পেয়েছি।ওর কান্ড দেখলে আমার প্রচুর হাসি পায়। আমার হাঁটুর বয়সি মেয়ে সে বলে, আমার উপর সব রকম অধিকার তার আছে। আমি চাইলেও আছে, না চাইলেও আছে।
রিকশা থেকে নেমে বাসায় ঢুকবে তার আগেই দেখা হলো বিথীর সাথে। ফুয়াদের বাসার মেইন গেটের বাহিরে বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে আছে।
ফুয়াদ পকেটে থেকে হাজার টাকার নোট বেড় করে বিথীর দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে,ভিক্ষা করার জন্য আর কোন জায়গা পেলেন না?
বিথী ফুয়াদের পা জড়িয়ে ধরে বলে,প্লিজ ফুয়াদ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার ভুল হয়েছে। আমি তোমার কাছে আর একটা সুযোগ চাই।
ফুয়াদ উত্তর না দিয়ে নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসলো। আসার সময় দারোয়ানকে বলে আসলো যাতে বিথীকে ঢুকতে না দেয়া হয়।
ফুয়াদ এসেই নিজের রুমে চলে গেলো শার্টের বাটন খুলে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
হুর রুমেই ছিলো সেও ফুয়াদের পাশে বসে নিজের ওড়নার আঁচল দিয়ে ফুয়াদের ঘাম গুলো মুছে দিতে লাগলো।
ফুয়াদ চোখ বন্ধ রেখেই হুরের হাত ধরে বলে, তোমার সাহসতো কম না তুমি আমার রুম পর্যন্ত চলে এসেছো। কথাটা বলেই চোখ খুলে দেখে হুর। হুরের চোখে পানি টলমল করছে। যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে।
ফুয়াদ বললে,তুমি!
– কেন আপনার কাছে অন্য কারো আসার কথা ছিলো নাকি? আমি ছাড়া আপনার আর কেউ থাকতে পারেনা। বলুন আপনি কাকে ভেবেছিলেন?
ফুয়াদ হেসে বলে,শেওরা গাছের পেত্নী ভেবেছিলাম। এখন দেখি আমার সামনে হুর পরি বসে আছে। যার চোখ থেকে হুটহাট বৃষ্টি বর্ষণ হয়।
-একদম কথা ঘোরাবেন না। বলেন আপনার মনে কে ছিলে।
– যে ছিলো সে ম/রে গেছে। আর যে থাকবে সে একটু একটু করে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করছে।
– আপনি কি জানেননা।আপনার জন্য আমি ছাড়া অন্য সব মহিলা হারাম। প্রয়োজন ছাড়া তাদের সাথে কথা বলাও গুনাহ। আর তাকালে তো চোখের জিনা হবে।
– এসব কি বলছো। আমি কখন অন্য মেয়েদের দিকে তাকালাম!
– না তাকালে তো ভালো।আর তাকাবেনও না। আপনার তাকাতে ইচ্ছে করলে আমাকে দেখবেন। যে রকম ভাবে দেখতে চান ওই রকম ভাবেই দেখবেন। কিন্তু ওই দৃষ্টি শুধু আমার জন্য অন্য কারো জন্য না।
ফুয়াদ হুরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,সব বুঝলাম কিন্তু তোমার চোখ দিয়ে এই পানিগুলো বের করো কি ভাবে!এগুলো ফেক, নাকি রিয়েল?
হুর ফুয়াদকে জড়িয়ে দরে কেঁদে কেঁদে বলে,দেখুন ছোট বেলা থেকে আমি বাব, মায়ের বাজে সম্পর্ক দেখেছি। আমার মায়ের চোখের পানি দেখেছি।আমার আপুকে ভালোবেসে বিয়ে করার পরেও অত্যাচারিত নিপিড়ীত হতে দেখেছি। অনেক ঝড় ঝাপটা পার করে,আপনার মতো একজনকে পেয়েছি।আপনি আমাকে ঠকালে আমার জীবনে শান্তি বলতে আর কিছুই থাকবে না। একটা মেয়ে শ্বশুর বাড়ির সবার আবাদর পূরণ করে, সবার মন জুগিয়ে চলে শুধু মাত্র তার হ্যাসবেন্ডের জন্য। সেই মানুষটাই যদি দিনশেষে তাকে মূল্য না দেয়! তাহলে সব কিছু খেই হারিয়ে ফেলে। আপনার বাড়িতে সবাই আপনার আপনজন কিন্তু এই বাড়িতে আপনি শুধুমাত্র আমার আপনজন। আপনি ব্যথা পেলে যতজন কষ্ট পাবে। তার এক ভাগো আমি ব্যাথা পেলে পাবে না। তারপরেও শুধু স্বামী নামক একটা মানুষের জন্য আমরা সবাইকে নিজের করে নেই। তাই দয়া করে আমাকে ঠকাবেন না।
পৃথিবীতে সবচেয়ে অসহায় নারী সে, যার স্বামী তাকে মূল্যায়ন করে না। আমি আপনার কাছে মূল্যবান। তাহলে সবার কাছেই মুল্যবান।বিয়ের পরে একটা মেয়ের স্বামী খারাপ হলে তার জীবনে আর সুখ থাকে না।
ফুয়াদ হুরের পিঠে হাত রেখে হুরকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। কিছু সময় পর ধীর কন্ঠে বলল,আজ এই মূহুর্তে থেকে তুমি আমার কাছে মহা মূল্যবান। আমার জীবনসঙ্গিনী আমার কষ্টের ভাগিদার।
এভাবেই অনেকটা সময় পার করলো দু’জনে। ফুয়াদ হুরকে নিজের একদম কাছে বসিয়ে বলে,দেখো আমি তোমাকে এসব বলতে চাইনি। তবে আজ বলতে হবে।কারণ এখন থেকে আমরা একে অপরের পরিপূরক হতে চাই?
তুমি তো জানোই আমার বিয়ে হয়েছিল। নুরের মা চলে গেছে। নুরের মা আমার প্রথম স্ত্রী, আমার প্রথম অনূভুতি। তবে তাকে আমি আগলে রাখতে পারিনি। সে উড়ে চলে গেছে। তার সাথে আমার অফিসিয়ালি ডিভোর্স হয়ে গেছে ।
হুর বলল,ডিভোর্স হওয়ার কারণে তার আর আপনার মধ্যে এখন আর কোন সম্পর্ক নেই। এখন সে আপনার জন্য অন্য মেয়েদের মত। যদি ডিভোর্স না হতো তাহলে সে এখনো আপনার স্ত্রী থাকতো। কিন্তু ডিভোর্স হওয়ার কারণে তার আর কোন অস্তিত্ব আপনার লাইফে বিদ্যমান নেই। আর আপনার মনে যদি তার অস্তিত্ব থাকে!তাহলে হুর আপনার মন থেকে তা মুছে দেবে।
ফুয়াদ হেসে বলে,এই হুর পরির সাথে আমার আগে কেন দেখা হলো না।
______________________________________________
বিথীর মা বিথীকে বলছে,এসব তোর কর্মের ফল।একটা নিষ্পাপ মেয়েকে মৃ/ত্যু/র মুখে ঠেলে দিয়ে যার জন্য সব ছেড়েছিস। আজ সেই তোকে ছেড়ে চলে গেছে।তুই কি ভেবেছিলি তোকে দেখেই ফুয়াদ গলে যাবে! এতো সহজ না জীবনটা। একটা ছেলে সব মেনে নিতে পারে,কিন্তু তার স্ত্রীর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও সেটা মেনে নিতে পারেনা। সেখানে তোর সারা শরীরে অন্য পুরুষের স্পর্শ। তোকে দেখলে ওর ঘৃণা হবে এটাই স্বাভাবিক। আর হ্যাঁ ওর পিছু নিবি না। ছেলেটা আমার সুখে আছে। ওকে সুখে থাকতে দে।ওর সুখে নজর দিসনা। উল্টো তুই নিজেই জ্বলে যাবি।
বিথী রাগে ফুঁসছে।কিছুতেই ফুয়াদের হাসি মাখা চেহারা মেনে নিতে পারছে না। যে ছেলে বিথী অন্ত প্রাণ ছিলো সে কি ভাবে তাকে ভুলতে পারে!
#চলবে