আধার রাতের আলো পর্ব-১১+১২

0
870

#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১১

অপারেশন থিয়েটার থেকে বেড় হয়ে, নিজের কেবিনে বসে নি/কো/ টি/ নের ধোঁয়া ছেড়ে যাচ্ছে ফুয়াদ। বাড়ি ফেরার কোন তাড়া নেই। আগে একটা সময় ছিলো দশটার পর বাড়ির বাহিরে থাকতে পারতো না। এখন কত রাত বাহিরে পার করে দেয়। না তার মায়ের শাসন মানে আর না কোন পিছুটান আছে। এভাবেই দিন পার করছে। মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে দেখে একটা ছাড়িয়েছে। হাতে থাকা সি/গা/রে/টে শেষ টান দিয়ে বেড়িয়ে পরলো।

______________________________________________
তুমি কি বলবে, নাকি আমার চেহারা দেখবে।
আদিয়ার কথা শুনে হুর বলে,তুমি সব সময় এমন তেতো কথা কেন বলো?

– তোমার বাজে কথা শোনার মত টাইম নেই আমার। সরো সামনে থেকে।

– তুমি একা একা খাবে! আমাকেও একটু দিতে পারতে। যদি তোমার পেট খারাপ হয় তো?

– তোমার সমস্যা কি! আমাকে বিরক্ত কেন করছো?

– জানো মানুষের ব্যবহার হলো তার ব্যাক্তিত্বের পরিচয়।

– তোমার থেকে আমাকে ব্যবহার শিখতে হবে না।

– আচ্ছা আমি তোমাকে একটা কথা বলি শোন। তুমি কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো?জানি পড়ো না।জানো নামাজ কি? নামাজ হলো আমাদের সমস্ত খারাপ কাজ থেকে রক্ষা করাী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন.. ؕ
اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡکَرِ ؕ

অর্থঃ-নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।

একদম ফটর ফটর করবে না।আমি কি করবো না করবো আমি বুঝে নেবো। বলেই চলে গেলো।

আদিয়া চলে যেতেই হুর ভাবতে লাগলো, মেয়েটা রাগী, তবে রাগী মানুষের মন নরম থাকে। কিন্তু সেটা নারিকেলের মত। বাহিরে শক্ত ভেতরে নরম। সেই পর্যন্ত যেতে হবে।

দূর ভাল্লাগে না। এই রাগী ডাক্টার এখনো আসছে না কেন? আবার কোন বাজে অভ্যাস নেই তো!ছিহহহ আল্লাহ মাফ করুন। এসব কি ভাবছি। কারো ব্যাপারে ধারণা করা তো কবিরা গুনাহ। সোফায় পা গুটিয়ে বসে আছে। বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পরছে সে খেয়াল নেই।

ফুয়াদের কাছে সব সময় বাসার চাবি থাকে। ফুয়াদ বাসায় ঠুকে দেখে লাইট অন করা। সোফায় তাকিয়ে দেখে হুর শুয়ে আছে। একপা সোফায় আর এক পা নিচে।

ফুয়াদ হুরের সামনে দাঁড়ালো। আস্তে করে হুরের পা তুলে দিলো। হুরের দিকে তাকিয়ে বলে,তোমার আমাকে সামলানোর মত বয়স হয়নি। আর সবচয়ে বড় কথা হলে। আমি আমার লাইফে দ্বিতীয় বার কাউকে সুযোগ দেবো না। বলে, উঠে যেতে নিলে হুর ফুয়াদেে হাত ধরে বলে,আপনি বললেই হলো সুযোগ দেবেন না। সুযোগ ছাড়াই কি করে আপনার লাইফে জড়িয়ে গেছি দেখেন।আর ভালো তো আপিন একদিন আমাকে বাসবেনই। বলেই আমার জড়িয়ে ধরে, মু’য়ানাকার দোয়া পরলো।

ফুয়াদ হুরকে ছাড়িয়ে বলে,তুমি বড্ড গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়ে। একদম আমার থেকে দূরে থাকো।

– তো আমি আপনার গায়ে পড়বো না তো কার গায়ে পড়বো!দেখনু একবার ওই দোয়া পরে তো কাজ হবে না বারবার আপনাকে জড়িয়ে ধরবো আর দোয়া পড়বো।তাহলে ভালোবাসা তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে।

-দেখো মেয়,তুমি আমার জীবনে প্রথম নারী নও। আমার জীবনে তোমার আগেও কেউ ছিলো।আর আমার ওই বয়সও নেই যে তোমার এসব বাচ্চামো দেখে তোমার প্রেমে পড়ে যাবো। সে এসেছিল আবার আমাকে একা করে চলেও গেছে। সে চলে যাওয়ার পর নতুন করে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনি। সে বলে ছিলো ভালো থাকতে আমি ভালো থাকাও শিখতে পারিনি। এই সে,,,, যে বলেছিলো তোমাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারিনা।আজ সে আমাকে ছাড়া বাস্তবে বিরাজ করছে।সময় কত দ্রুত বদলে যায়! শুধু সময়ের ক্ষতগুলো রয়ে যায়। আমি দ্বিতীয় বার আর কাউকে এই সে হওয়ার সুযোগ দেবো না।

– বলেই হলো দেবো না। আমি আপনার সেই সে হতে চাইনা। আমি আপনার আধার_ রাতের_ আলো হতে চাই। আপনার সাথে শুধু দুনিয়াতে নয়, মৃত্যুর পরেও আপনার সাথে থাকতে চাই।

ফুয়াদ হুরের কথার উত্তর না দিয়ে সামনে অগ্রসর হতেই, হুর বললো,আমি কিন্তু না খেয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আপনি কি আমাকে না খাইয়ে রাখবেন!

ফুয়াদ সামনে এসে হুরের মুখোমুখি দাঁড়ালো হুরে বাহুতে হাত রেখে বলে,কেন করছো এসব! এসব করে কোন লাভ হবে না। তুমি খেলে খাও না খেলে না খেয়ে থাকো তাতে আমার কি।বলেই হুরের বাহু ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
হুর ডেকে বলে, আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার বেড়ে রাখছি। আমি কিন্তু রাতে না খেয়ে থাকতে পারিনা।

ফুয়াদ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে পায়চারি করছে, মেয়েটা নাছোরবান্দা। কি করা যায়! সাত, পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজে এসে দেখে হুর টেবিলের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।ফুয়াদ হুরকে উদ্দেশ্য করে বলে,এই যে মিস তিন ফুট।

– হুর চোখ বন্ধ রেখেই বলে মোটেই আমি তিন ফুট নই। আমব পাঁচ ফিট দুই ইঞ্চি।

– এবার ভাষণ বন্ধ করে খাবার বেড়ে দিন।

ফুয়াদ আর হুর,, খেতে বসলো ফুয়াদ খাবার মুখে দেবে এমন সময় হুর বলে,এই দাঁড়ান খাবার খাওয়ার দোয়া পড়ে নিন।

ফুয়াদ হুরের দিকে তাকালো, হুর বললো,পাড়েন না তাইতো ঠিক আছে আমার সাথে সাথে পড়ুন…

بسم الله وعلى بركة الله
(বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ)
এবার ডান দিক থেকে খাওয়া শুরু করুন।
ফুয়াদ খাচ্ছে আর আড় চোখে হুরের দিকে তাকাচ্ছে।
হুর বললো,আপনি চাইলে সরাসরি তাকাতে পারেন আমি কিছু মনে করবো না। বরং খুশি হবো। কারন ভালোবাসা তো আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে। পবিত্র ভালোবাসা।

খাবার শেষ করে, ফুয়াদ উঠে যাবে,তখন হুর বলে,খাবারের পরে শাহাদাত আঙুল দিয়ে প্লেট চেটে খাওয়া সুন্নত। তিরমিজি শরিফ বর্ণিত আছে। এর ধারা ফেরেশতা দোয়া করতে থাকে। আর আঙ্গুল ও চেটে খাবেন। এই যে ঠিক এভাবে।

ফুয়াদ বললো,অনেক হয়েছে আর না। আরেহহহ কিছুি হয়নি। এই ছোট একটু সুন্নত পালন করে কি হবে।প্লিজ করুন প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

অবশেষে ফুয়াদ মানতে বাধ্য হলো।
হুর খুশি হয়ে বলে, আর একটা কাজ করতে হবে,আমার সাথে সাথে এই খাবার শেষের দোয়াটাও পড়েনিন,

الحمد لله الذي اطعمنا وسقانا وجعلنا مسلمين

হুর ফুয়াদ কে বলল,শুনুন দোয়া গুলো মুখস্থ করে নিয়েন ইউটিউব দেখে। নয়তো সবার সামনে আমার মুখে মুখে পড়তে কেমন লাগবে বলুন।

ফুয়াদ চলে গেলো,পেছন পেছন হুরও আসলো।

– তুমি আমার রুমে কেনো?

– ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখুন।

– তিনটে সাত বাজে। এখন নুর আর আন্টি ঘুমোচ্ছে তাদের ডিস্টার্ব করবো!,তারচেয়ে আপনার রুমেই ঘুমাই। আপনার বেড তো ইয়াহহহ বড় আর আমার এইটুকো জায়গা লাগবে ঘুমোতে।

– তুমি গেস্ট রুমে চলে যাও।

– আপনার মনে কি একটুও দয়া মায়া নেই নাকি!এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে একা ঘুমোতে বলেন!যদি আমাকে জ্বী/নে ধরে তো!

– ফুয়াদ বেডে শুয়ে লাইট অফ করে দিলো। হুর দাঁড়িয়ে ছিলো। লাইট অফ হতেই বলে যাহহহ কারেন্ট চলে গেলো। এই আপনি কোথায়? বলছে আর হাত দিয়ে খুঁজতে লাগলো। বেডে হাত দিয়ে দেখে সামনের সাইডে কেউ নেই। হুর ভীত কন্ঠে বললো,কথা বলেন কোথায় আপনি? আমার কিন্তু একটু একটু ভয় হচ্ছে। শুনছেন।
ফুয়াত চুপচাপ শুয়ে আছে। বিছানায় আর এক পাশে হাত দিতেই হাত যেয়ে পরলো ফুয়াদের বক্ষে।হুর বুঝতে পেরেও বলে,এটা কি এতো শক্ত কেন? বলে হাত একটু নাড়াচাড়া করতে লাগলো।

ফুয়াদ হুরের হাত ধরেতেই হুর হুমড়ি খেয়ে ফুয়াদের বুকের উপর পড়লো।হুরের নিশ্বাস আর ফুয়াদের নিশ্বাস মিলেমিশে একাকার।বদ্ধ রুমে শুধু একে অপরের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।

#চলবে

#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব১২

হুর আস্তে করে নিজের মাথাটা ফুয়াদের বক্ষে রেখে চুপটি করে রইলো।
ফুয়াদ হুরকে সরিয়ে দিতে চাইলে হুর শক্ত করে ফুয়াদকে ধরে বলে,আপনি দেখি কিছুই জানেননা। আপনি দু’মিনট এভাবে থাকুন দেখবেন আপনার অস্থিরতা কিছুটা কমে গেছে। প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
ফুয়াদ হুরকে সরিয়ে দিয়ে বলে,বেশি বাড় বেরোনা।

হুর বলে ঝড়ে পরে যাব তাইতো।পড়ার আগে আপনার হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি করে তবেই পড়বো।
ফুয়াদ পাশ বালিশটা মাঝখানে রেখে বলে,এই লাইন ক্রস করবে না।
– আমি করবো না এটা আমার বিশ্বাস আছে।তবে মনে হচ্ছে আপনি করবেন।

– একটা কথা বললে, একদম চিলে কোঠায় রেখে আসবো।চারটা বাজতে চললো তাড়াতাড়ি ঘুমাও।

মুয়াজ্জিনের আজান কানে আসতেই হুরের ঘুম উবে গেলো।তবে চোখ মেলে তাকাতে ইচ্ছে করছে না। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাতেই আধো আলোতে ফুয়াদের চেহারা দেখতে পেলো। হুর উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ওজু করে বের হয়ে জায়নামাজ খুঁজতে লাগলো। খুঁজে না পেয়ে ফুয়াদকে ডাকতে লাগলো, “এই যে শুনছেন। কয়েকবার ডেকেও কোন সাড়া না পেয়ে।ফুয়াদের কাভার্ড খুঁজে একটা পাঞ্জাবি নিয়ে সেটা বিছিয়ে নামাজ পরলো। নামজ শেষ করে বেশ কিছু আমল করলো।

জগ থেকে নিজের চুল ভিজিয়ে ফুয়াদের সামনে যেয়ে চুল ঝারতে লাগলো। বিরক্ত হয়ে ফুয়াদ উঠে বসে বলে,কার এতো বড় সাহস?

– হুর খিলখিল করে হেসে বলে,এই সাহস আপনার একমাত্র বউয়ের।

– তোমাকে এত সাহস কে দিলে?

– আল্লাহ তায়ালার হুকুমে আপনি দিয়েছেন। আমার মা বলতো, স্বামী যদি মন্ত্রী, মিনিস্টার ও হয়,সেসব বাহিরের মানুষের জন্য। তার ঘরে সে তো সাধারণ একজ মানুষ। বাকি কথা পরে বলবো, এবার যান তো ওজু করে আসেন নামাজের সময় চলে যাবে তাড়াতাড়ি করুন।

– আমি ঘুমাবো।

– নামাজ না পরে কোন ঘুম নেই। হুর হাত ধরে টেনে বলে তাড়াতাড়ি ওজু করে আসুন। ফুয়াদ উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমে।

হুর মধুর কন্ঠে সূরায় ইয়াসিন তেলাওয়াত করছে।

* ফজরের নামাজের পর সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের ফজিলত- আতা বিন আবি রাবাহ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি শুনেছি যে- রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, তার সব হাজত (প্রয়োজন) পূর্ণ করা হবে।’ (ফাজায়েলে আমাল : ০১/৫২)**

ফুয়াদ হুরকে ডিস্টার্ব না করে নামাজ আদায় করে নিলো। নামাজ পড়ার সময় খেয়াল করলো তার সখের পাঞ্জাবি দিয়ে হুর জায়নামাজ বানিয়েছে। কি ভেবে ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। সেখানে বসেই মনযোগ দিয়ে হুরের তেলাওয়াত শুনলো।
তেলাওয়াত শেষ হতেই হুর ফুয়াদের একদম কাছাকাছি এসে মুখোমুখি বসে বলে, আপনি চাইলে আমাদের প্রতিটি সকাল এমন পবিত্র ভালোবাসা পূর্ণ হবে।

ফুয়াদ হুরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।যেনো কত যুগযুগ ধরে ফুয়াদের চোখ এমন একজনকেই খুঁজতে ছিলো। আজ যেনো তার দৃষ্টি তৃপ্তি পাচ্ছে। হুর আস্তে করে ফুয়াদের কাঁধে মাথা রাখলো। ফুয়াদও হুরের কাঁধে মাথা রাখলো। কোন কথা না বলে কিছু সময় এভাবেই পার করলো দু’জনে।
ফুয়াদের হঠাৎ মনে হলে, সে আবেগে গা ভাসাচ্ছে। তাই হুরকে সরিয়ে দিয়ে বলে,তুমি আমার আশেপাশে আসবে না।
ফুয়াদের কথা শুনেই হুর চট করে ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে মুয়ানাকার দোয়া পড়ে ফুয়াদকে ছেড়ে দিলো। দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার আগে হুর বলে,এই যে রাগী ডাক্তার তোমার হৃদয়ে আমার ভালাবাসার শেকড় তৈরি হয়ে গেছে এখন চাইলেও আর পালাতে পারবে না।

হুর চলে গেলো। ফুয়াদ নিজের বুকের বা পাশে হাত রাখলো। আশ্চর্য হলো। এটা কি আগে এখানে হাত রাখলেই বিথীর ধোঁকার কথা মনে পড়তো, কিন্তু আজ কেমন শান্ত হয়ে আছে! তাহলে কি ওই মেয়েটা যা বলছে তাই সত্যি?

হুর চুপিসারে এসে ফুয়াদের সামনে কফি মগ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,আমার কথা ভাবার জন্য অনেক সময় আছে।এবার ধরুন এই আপনার মতো এক কাপ কফি পান করুন।

ফুয়াদ নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে বলে আবার তুমি?

– হু আপনার জন্য আপনার মতো কফি।

– আমার মতো কফি মানে?

– আরেহহহ তেতো লোকের তোতো কফি।তবে আপনি চাইলে আমি এক চুমুক খেয়ে দেবো।তাহলে এটা মিষ্টি হয়ে যাবে।

ফুয়াদ কফি মগটা হুরের হাত থেকে নিয়ে বলে,তুমি হলে এ্যাঁচড়ে পাকা।

– সে আপনি যা ইচ্ছে বলতেই পাড়েন। কারন নিজের স্ত্রীকে ভালোবেসে কত কিছুই তো ডাকা যায়।

– তুমি যাবে নাকি?

– এই তো চলে যাচ্ছি। আপনিও আসুন নাস্তা বানাচ্ছি। বলেই চলে গেলো।

কফিটা মুখে দিয়ে দেখে এটার স্বাধ একটু ভিন্ন। মনে মনে বলছে,মেয়েটা সত্যি জাদুকর। কফি শেষ করে রেডি হয়ে নিচে আসলো।

হুর তখন নুরকে খাইয়ে দিচ্ছে। ফুয়াদ আসতেই হুর ফুয়াদকে খাবার বেড়ে দিলো।

ফুয়াদ খবার শেষ করে বলে, নুর আসো তোমাকে আজ আমি দিয়ে আসবো।

নুর বললো,বাবা আজকে আমি ভালো,মা’কে সাথে নিয়ে যাবো। সবাইকে বলবো আমার ভালো মা আছে।

– আজকে না অন্য কোনদিন নিয়ে যাবে।আজ দেরি হচ্ছেতো চলো।

নুর হুরের দিকে একবার তাকাচ্ছে তো একবার ফুয়াদের দিকে তাকাচ্ছে। হুরও এগিয়ে এসে নুরকে ধরলো, ফুয়াদও ধরলো। একে অপরের হাতের উপর হাত। নুর নিজের দু’হাত দু’জনের কাঁধে রাখে। হুর নুরের কপালে চুমু দিয়ে বলে,জান বাচ্চা আমার আজ তুমি বাবার সাথে যাও। একদিন আমার সাথে যেও।
নুরও হুরের কপালে চুমু দিয়ে বলে ঠিক আছে ভালো মা।

নুর আর ফুয়াদ চলে গেলো। নুর দরজায় দাঁড়িয়ে
দোয়া পড়লো….

اَسْتَوْدِعُ اللٰه دِيْنَكَ وَاَمٰنَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ

কোন মানুষকে বিদায় দেয়ার দোয়া।

হুর টেবিলের সামনে আসতেই দেখে আদিয়া খাবার খাচ্ছে।

হুর আলো বেগমের জন্য রং চা বানাতে কিচেনে গেলো।
আলো বেগম নিচে এসে চেয়ার টেনে বসে আদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,তুমি কি চাচ্ছো?

আদিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে, মানে!

– মানে খুব সোজা যেই মেয়ে একজন আদর্শ মেয়ে হয়ে উঠতে পারেনি। তাকে কারো ঘাড়ে বউ হিসেবে কি করে চাপিয়ে দেবো!

– তুমি বলতে কি চাইছো? সোজাসাপটা বলো।

– নাহিদ তোমার চেয়ে ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে।

– সেটা নাহিদ বুঝবে।

– তুমি বেহায়ার মতো নিজে নিজে নাহিদের কাছে চলে যেতে চাইলেও নাহিদ তোমাকে একা গ্রহণ করবে না। বুঝে আসে না নাহিদের মত ছেলেকে কি করে বশ করলে।

মায়ের কথাগুলো আদিয়ার হৃদয়ে আ/ঘা/ত করলো।চোখে জল টলমল করছে।

হুর আলো বেগমের দিকে চা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, মা আমাদের আপুও কোন অংশে কম না। একটু রাগী তবে মনটা কিন্তু একদম নরম।

– তুই বুঝবি না। তাই তুই চুপ থাক ইদানীং ওর ব্যাবহার দেখে আমি অবাক হই।

আদিয়া খাবার ছেড়ে উঠে চলে গেলো।

হুর আলো বেগমের পাসে বসে, বলে আন্টি এভাবে না বলে বুঝিয়ে বললেই তো হয়।

– সবাই বুঝের কথা বোঝেনা। তাইতো কড়া কথা বললাম। বাদ দে ওর কথা তুই নাস্তা করেছিস?

– না এই এখনি করবো।
আলো বেগম আর হুর বসে গল্প করছেন এমন সময় একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা আসলো। একটু এগিয়ে এসে বলল,কেমন আছিস আলো?

সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে আলো বেগম এক মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলেন। পাশে থাকা হুরের হাতটা শক্ত করে ধরে বললো, হুর আমাকে একটু পানি এনে দে মা।

______________________________________________
ফুয়াদ রোগি দেখা শেষ করে, হুরের ভাইকে দেখতে আসলো। হারিসের কেবিনে এসে হারিস কে চেক করে যখন বের হবে। তখন কেবিনের আয়াকে দেখে ফুয়াদের বুকে কেমন চিন চিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। বাকহারা হয়ে গেলো স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে