#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-১০
ফুয়াদ হুরের দিকে তাকালো,কি নিষ্পাপ চেহারা কিন্তু মলিন হয়ে আছে। ফুয়াদ প্রথমবার হুরের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো।বলাবাহুল্য বিথীর চেয়ে হুর রূপবতী। চেহারায় একটা ইনোসেন্ট ভাব আছে। আদিয়া চলে যেতে চাইলে,ফুয়াদ বলল,দাঁড়া।
আমি জানিনা তুই কোন ধরনের মেয়েদের কথা বলছিস! কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো তুই কোন ধরণের মেয়ে?
– ভাইয়া তুমি লিমিট ক্রস করছো।
– একদম চুপ থাকো লিমিট কি সেটা তোমার মনে আছে? একজন শিক্ষত মেয়ে হয়ে তোমার বিহেভিয়ার দেখো মনে হচ্ছে কোন অজ পাড়া গায়ের অশিক্ষিত মূর্খ মেয়ে। যে কিনা পা’ য়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে পারে। একজন মেয়ে অন্য মেয়েকে অপমান করাটা কোন ধরনের মেয়ের কাতারে পরে?
সে যে হোক যেভাবেই হোক তোমার ভাইয়ের বউ। তারমানে তার সাথে তোমার সম্পর্ক হলো সে তোমার বড় ভাবি।নিজেকে নিজে সম্মান না করতে পারলে অন্য কেউ কি করে সম্মান করবে!তোমাকে শেষবারের মতো বলে দিচ্ছি নিজেকে সুধরে নাও।
আদিয়া মাথা নিচু করে চলে গেলো।
হুর বললো,এভাবে না বললেও পারতেন।
– আমি কি ভাবে আমার বোনের সাথে কথা বলবো তোমাকে শিখিয়ে দিতে হবে না। এবার যাও বের হও।
– বললেই হলো বের হও। তবে একটা শর্ত আছে সেটা মানলে বের হয়ে যাবো।
– আমি কোন শর্ত মানবো না।
– আমিও যাবো না।
– বড়দের সাথে বেয়াদবি কেন করছো।
– স্বামী তো স্বামীই সে আবার বড় ছোটে কি আছে!
আপনার সাথে রাগ জেদ করা আমার অধিকার।
– ওকে বলো কি শর্ত।
– আমি চলে যাবো কিন্তু আপনি নে/শা করতে পারবেন না। আর যাওয়ার আগে আপনার সাথে মু’য়ানাকা করবো।
– কি করবে?
– মু’য়ানাকা।
– সেটা আবার কি?
– আরেহহহ ডাক্তার মশাই মু’য়ানাকা হলো ভালোবাসা বৃদ্ধির ইসলামি মাধ্যম।
– যেখানে ভালোবাসাই নেই সেখানে বৃদ্ধি হবে কোথা থেকে!
– নেই তো কি? হতে কতক্ষণ।
– দেখো আমার দ্বারা এসব হবেনা। তাই চলে যাও না। মু’য়ানাকা না করে যাবো না।
ফুয়াদ হুরের হাত ধরলো হুরকে টানতে টানতে দরজা পর্যন্ত নিয়ে আসতেই হুর হুট করে ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরে বলে,
اللهم زد محبتي لله ورسوله
অর্থঃ-
(আল্লাহপাক আমাদের মধ্যে আল্লাহ ওয়াস্তে পরস্পর মোহাব্বত ও ভালবাসা বৃদ্ধি করে দিন!)
ফুয়াদ হুরকে ছাড়িয়ে দরজা দিয়ে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
হুর দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,আমাদের মধ্যে ভালোবাসা শুরু হয়ে গেছে।এবার দেখি কোথায় পালান!
ফুয়াদ বলল,মেয়েরা হলো ছলনাময়ী। আর কারো ছলনার মায়ায় আবদ্ধ হবো না। আমার জীবনে কোন নারীর প্রয়োজন নেই।যে নারী স্বামীর অনুপস্থিতিতে পর পুরুষের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে।এই মায়ায় আর জড়াবো না।
হুর নুরের রুমে এসে নুরকে কোলে নিয়ে,বলে,কি করে আমার আম্মুটা।
– ম্যাম তুমি কি এখন আমার মা?
– কোনটা হলে খুশি হবে?
– মা হলে খুশি হতাম কিন্তু মা’রা তো পঁচা হয়। তাহলে তুমিও আমাকে ঘুম পারিয়ে রেখে চলে যাবে।
– সব মা পঁচা হয়না মিষ্টি বাচ্চা। যেমন ধরো আমি আজ থেকে তোমার ভালো মা।
– তুমি আবার চলে যাবে না তো!
– নাহহ আমি আমার মিষ্টি বাচ্চাকে রেখে কোথাও যাবো না।
নুর হুরকে মা বলে জড়িয়ে ধরলো।হুরও নিজের মেয়ের মতো নুরকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
আলো বেগম আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখলেন। তার দু’চোখ ভরে উঠলো আনন্দ অশ্রুতে। কত শখ করে নিজের বোনের মেয়েকে নিজের একমাত্র ছেলের বউ করে,এনেছিলেন। সব কিছু শেষ করে মেয়েটা কিভাবে চলে গেলো?নিজের বোনের সাথেও যোগাযোগ নেই চার বছরের বেশি সময় ধরে।আর একটা মেয়ে কয়েকদিনেই কেমন সবাইকে নিজের করে নিচ্ছে।
আলো বেগম চোখ মুছে ফুয়াদের দরজায় কড়া নাড়লেন।
ফুয়াদ রাগী স্বরে বললো,এবার কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম
– বাবা আমি দরজাটা খোল।
ফুয়াদ কোনমতে দরজা খুলে বলে, তুমি!
– আমি ভাবলাম ওই বিচ্ছু মেয়েটা।
– এসব কি কথা ফুয়াদ মেয়েটা কত ভালো। এরকম একটা বউমাই তো চেয়েছিলাম।
– কিন্তু মুখের আড়ালে মুখোশ থাকে মা।
– সবাই একা না ফুয়াদ। হ্যা মানছি বিথীকে বউ করে আনা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কিন্তু কে জানতো শর্ষের ভেতর ভুত।
– সেটাই তো বললাম। মুখ আর মুখোশ।কবে না এই মেয়েও পালিয়ে যায়?
– কোথাও যাবে না।এই মেয়ে আমার সংসারটাকে গুঁছিয়ে নেবে।দেখেনিস।
শোন বাবা বলছিলাম কি, মেয়েটাকে একটা সুযোগ দে তোর স্ত্রী হওয়ার।ওর জ্ঞান আর বুদ্ধিমত্তা আমাকে মুগ্ধ করে বারবার। কেন জানি নতুন করে সব ভাবতে ইচ্ছে করছে।ভুলে যা বাবা অতীতের গ্লানি। শুরু কর এক নতুন জীবন।
ফুয়াদ শান্ত কন্ঠে বলল,আমি ভেবে দেখবো বিষয়টা।
আচ্ছা মা তোমার নাহিদকে কেমন লাগে?
নাহিদ ছেলেটাকে আমার পছন্দ তবে আমার নিজের মেয়েটাকে পছন্দ হচ্ছে না। কেমন উগ্র হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।
নাহিদ অন্য দেশে চলে যেতে চাইছে।তবে আমার মনে হয়,আদিয়াকে আগে নিজেকে শুধরে নিতে হবে।তুমি ওর সাথে কথা বলে, দেখো।
আলো বেগম চলে আসলেন।
ফুয়াদ রেডি হয়ে নুরের রুমে আসলো,।নুর আর হুর দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। দু’জনকেই বড্ড আদুরে লাগছে। হুরের মাথায় উড়না নেই। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে বেশি বড় না হুরের চুলগুলো।ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে নুরের কপালে চুমু দিতে যেয়ে। ফুয়াদের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি লাগলো হুরের কোমল গালে। হুর হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলে, নিজের অজান্তেই হাত যেয়ে পরলো ফুয়াদের গালে। ফুয়াদের কেমন একটা অদ্ভুত অনূভুতি হলো।দ্রুত সরে আসলো। বুকে হাত রেখে বলে,বাপরেহহহ এই মেয়ে জাদু জানে নাকি। সত্যি কি ভালোবাসা শুরু হচ্ছে। আবার নিজেই নিজেকে বলছে,তুই ও পাগল হয়েছিস মেয়েটার সাথে। পকেট থেকে চকলেট বের করে টেবিলে রেখে চলে গেলো।
সন্ধ্যা সাতটা থেকে ন’টা অব্দি চেম্বারে বসে ফুয়াদ। গন্তব্য এখন জালকুঁড়ি মমতা ক্লিনিক।
————————————————————————
রেহানা বেগম আর বিথী বসে আছে মুখোমুখি। রেহানা বেগম রাগ নিয়ে বললেন, এ বাড়িতে তুমি কেন এসেছো? মানসম্মান শেষ করেও শান্তি হওনি।
– কান্না ভেজা কন্ঠে বিথী বলল,মা এভাবে কেন বলছো আমি আর কোথায় যাবো।
– যার জন্য সব ছেড়েছো, তোমার সেই প্রেমিকের কাছে।
– মা সে আমাকে আরো এক বছর আগেই ছেড়ে দিয়েছে।আমার ছেলেটা এখন বাবার আদর থেকে বঞ্চিত।
– যে মেয়ে নিজের জন্ম দেয়া বাচ্চা মেয়েকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে মৃ/ত্যু/র মুখে ফেলে চলে যেতে পারে!সে আবার সন্তানের জন্য কাঁদে। এসব নাটক অন্য কোথাও যেয়ে দেখাও।
-মা আজকে আমাকে আর ফিরিয়ে দিও না আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
– ভুল বোঝার একটা সময় থাকে সে সময় তুমি কবেই হারিয়ে ফেলেছো। তুমি যা করেছো সেই পাপের শাস্তি পেয়েছো। যাও এবার ভিক্ষে কর নয়তো গার্মেন্টসে চাকরি করো যা খুশি করো আমার চোখের সামনে থেকে যাও।
বিথী নিজের আট মাসের বাবু টাকে রেহানা বেগমের পায়ের কাছে রেখে বলে,মা এই নিষ্পাপ বাচ্চাটার মুখের দিকে চেয়ে আমাকে একটু আশ্রয় দাও।
রেহানা বেগম কোন কথা না বলে,নিজের রুমে চলে গেলেন। বিথী সেখানেই বসে রইলো।
______________________________________________
ঘড়ির কাটা একটা ছাড়িয়েছে তবুও ফুয়াদের আসার কোন নাম নেই। হল রুমে কখনো বসে, কখনো হেঁটে অপেক্ষা করছে হুর।
আদিয়া নিচে এসেছিল কফি করে নিতে। রাতে দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস আদিয়ার। হুরকে দেখে কিছু না বলে রান্না ঘরে চলে গেলো।হুরও পিছন পিছন আসলো। আদিয়া যা করছে হুর মনোযোগ দিয়ে দেখছে।
কিছু সময় পর আদিয়া বিরক্ত হয়ে, বলে সমস্যা কি?
– নাহহ কোন সমস্যা নেই।
– তাহলে এভাবে কি দেখছো। যাও কিচের থেকে বর হও আমি গেলে তারপর আসবে।
– হুর নম্র স্বরে বলল,একটা কথা বলবো?
– না
– একটাই বলবো।
তাড়াতাড়ি বলো আর এখান থেকে বিদায় হও।
#চলবে