#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৯
সালমা বেগম সাইন করার আগেই রুহুল মিয়া এসে বলে,তোমার হাতে কখনো আমি আমার ছেলেকে তুলে দেবো না। তুমি আমার ছেলেকে হ/ত্যা করে ফেলবে।
ফুয়াদ শান্ত গলায় বলল,আপনি সিগনেচারটা করুন। আপনার ছেলের কিডনি ইমেডিয়েটলি চেঞ্জ করতে হবে।একজন তার কিডনি দান করেছে।
সালমা বেগম সিগনেচার করে দিলো।রুহুল মিয়া সাথে সাথে সালমা বেগমের চুলির মুঠি ধরতে চাইলে, ফুয়াদ রুহুল মিয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলে,নিজের সম্মান বজায় রাখতে চাইলে, এখান থেকে বের হয়ে যান। এটা হসপিটাল আপনার বাসা না।রুহল মিয়া চলে গেলো।
সালমা বেগম লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলেন। বের হয়ে যাওয়ার আগে অস্পষ্ট স্বরে বলে গেলেন বাবা এহন উপরে আল্লাহর উপর ভরসা।তিনি তোমার উছিলায় ছেলেটার মুখের দিতে যদি চান।বলেই বের হয়ে গেলো। ফুয়াদ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে রাখলো ভালোই চলছিলো জীবন হুট করে আবার সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
নাহিদ এসে পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলে,কিরে দু’টো বিশ বাজে বাসায় ফিরবি না। তোর কি আজ কোন ওটি আছে?
ফুয়াদ বলল,কি যে করছি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
– কি হয়েছে সেটা আগে বল!
– চল বাহিরে কোথাও বসি। একটা কল করে ক্যাফেটোরিয়াতে একটা টেবিল বুক করা। দু’জনের কথার মাঝেই ডাক্তার রুবা তিন কাপ কফি এনে নিজে একটা রেখে বাকি দু’টো দু’জনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে হ্যাং আউট করে নিন তারপর বের হন।রোগি দেখতে দেখতে অবশ্যই মাথা হ্যাং হয়ে আছে।
ফুয়াদ কিছু বলবে তার আগে নাহিদ বলে,মিস রুবা আপনি এখনো যাননি!
– না ডক্টর নাহিদ আজকে সানজিদা ম্যাডামের ডিউটি আমি পালন করবো। কিন্তু আপনারা এখনো কি করছেন!
ফুয়াদ উঠে দাঁড়িয়ে বলে এইতো চলেই যাচ্ছি। বলেই বের হয়ে যায়। নাহিদ বলে ধন্যবাদ মিস রুবা। আর সরি কফিটা খেতে পারলাম না তাই।
– ইট’স ওকে।
নাহিদ আর ফুয়াদ কর্নারের একটা টেবিলে বসে আছে। লাঞ্চ টাইম তাই বাঙালি খাবার অর্ডার করে দু’জনে বসে পরলো।
নাহিদ বললো,এবার বল!
– কাল রাতে আমি গিয়েছিলাম নুরের আরবি ম্যামের বাসায়।
– ওই যে প্যাকেট হয়ে থাকে ওই মেয়েটা। যার কথা নুর বলতেই থাকে!
– হুম ওই মেয়েটাই। কিন্তু সেখানে যেয়ে দেখি, তোর বাবা মেয়েটাকে বিয়ে করছে। এটা দেখে আমি প্রতিবাদ করতেই, সে তেড়ে আসলো আমার দিকে, পরে উপায় না পেয়ে নিজেই বিয়ে করে নিয়ে এসেছি।তার কারণ মা’ মেয়েটাকে আমার জন্য আগেই পছন্দ করেছে। তারচেয়ে বড় কথা নুরের সাথে কত মিশে কি সুন্দর ভালো শিক্ষা দেয়।আমি চাই আমার মেয়েটা একটা বালো সঙ্গী পাক।আর সেটা ওই মেয়ের চেয়ে ভালো কেউ হতে পারবে না।
নাহিদ বললো,তুই একদম ভালো কাজ করেছিস। কিন্তু তোকে আরো একটা ভালো কাজ করতে হবে!
– সেটা আবার কি!
– আমি সব কাজপত্র জমা দিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবো।তোর বোনটাকে একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিস। আমার সাথে তোদের যাবে না।
– ফুয়াদ কথাটার উত্তর না দিয়ে বলে খাবার চলে এসেছে, চল আগে খেয়েনি।
খাবার শেষ করে বের হয়ে পরলো যে যার গন্তব্যে
______________________________________________
হুর সবার জন্য খাবার তৈরি করল। নূর এসে হুরকে কে বলল, ম্যাম তুমি কি এখন থেকে আমাদের বাসায় থাকবে!
-হুর মুচকি হেসে বলল, আমি যদি থাকি তাহলে কি তুমি খুশি হবে!
-নূর আনন্দিত হয়ে বলল হ্যাঁ এতগুলা খুশি হবে।
হুর নুরকে চেয়ারে বসিয়ে দিল, প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে। নিজার হাত ধুয়ে নুরের মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়ার আগে বলল,খাবারের সুন্নতগুলো মনে আছে তো?
– হুম ঠিক মনে আছে,বিসমিল্লাহ বলে,ডান দিক থেকে খাবার খাওয়া শুরু করতে হবে।
– এইতো ভালো,মেয়ে আমার। এবার বিসমিল্লাহ বলে, হা করো তো।
– নুর বলল,আমি তোমার মেয়ো কি ভাবে!
– আমি কি বলেছিলাম নূর মনে নেই।
– ও হ্যা বড়দের কথার পিঠে প্রশ্ন করা যাবে না।
ফুয়াদ সেই কখন থেকে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে নুর আর হুরের কান্ড দেখছে।মনে মনে ভাবছে,আছ এই খানে তোমার থাকার কথা ছিলো বিথী।কেউ কি ভাবে এতো কিউট একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে রেখে চলে যেতে পারে! তোমার মধ্যে কি একটুও মমতা ছিলো না। সন্তানের জন্য মা নাকি সব করতে পারে! আর তুমি সেই সন্তানকে মৃ/ত্যু/র মুখে ফেলে রেখে চলে গেছো।কি ভাবে পারলে? তোমাকে তো এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।
আলো বেগম বললেন, তুই কি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি ভেতরে আসবি।
ফুয়াদ সোজা চলে গেলো নিজের রুমে।
হুর নুরকে খাইয়ে দিয়ে। আলো বেগমকে খাবার বেড়ে দিতে চাইলে, আলো বেগম বলেন, আমি খবার বেড়ে খাচ্ছি। তুই বরং ছেলেটার জন্য এক গ্লাস ফ্রেশ জুস নিয়ে যা। দেখ কোন ভাবে ছাই পাস গেলানো বন্ধ করতে পারিস কি না।
হুর জুস নিয়ে ফুয়াদের ঘরে প্রবেশ করলো অনুমতি ছাড়াই। বেড সাইট টেবিলে জুস রেখে ফুয়াদ কে খুঁজতে লাগলো, এমন সময় একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো ফুয়াদ। হুর এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিতে যেয়েও নিলো না। বরং পূর্ণ দৃষ্টিতে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফুয়াদ লজ্জা পেয়ে ড্রেস নিয়ে আবার ওয়াশরুম চলে গেলো।
হুর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। ফুয়াদ চেঞ্জ করে বের হয়ে বলে,এই বয়সেই ভারী নির্লজ্জ হয়েছো তো!
– আমি নির্লজ্জ! কি করলাম শুনি?
– এভাবে একটা অপরিচিত পুরুষের দিকে তাকিয়ে আছো।
– ছিহহহহ নাউজুবিল্লাহ। আমি আর অপরিচিত পুরুষের দিকে তাকিয়ে থাকা!
– তো কিছু,সময় পূর্বে কি করছিলে?
– দেখছিলাম নিজের স্বামীকে। জানেন আপনাকে দেখলেও আমার সওয়াব আছে। স্ত্রী যদি স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে ততক্ষণ সওয়াব হতে থাকে। আর হাত ধরলে সগিরা গুন্নাহ গুলো ঝড়ে পড়তে থাকে।
– বাজে কথা রাখো আর এখান থেকে যাও। অনুমতি ছাড়া আমার রুমে কি?
– আপনি আমাকে কালিমা পড়ে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছেন। তাই আপনি সহ আপনার সব জিনিসে অটোমেটিক অধিকার এসে পরেছে।আর ভালো কথা শুনলেই সেসব আপনার বাজে কথা কেন মনে হয়!
ফুয়াদ বলল, এখান থেকে চলে যাও।
হুর বেডে আয়েশ করে বসে বলে,আপনাদের বাসার বিছানাগুলো বেশ নরম। আমার তো দেখলেই ঘুম পেয়ে যায়।
– তোমাকে আমি বের হতে বলছি।
-এই একটা গজল শুনবেন,
অনুভবের গভীরে…
শুন্য আমার জীবনে…
মুছে দিলে যাতনা…. তুমি কি তা জানো না।
সঙ্গী প্রিয়তম, তুমি শুধু তোমার উপমা। তুমি কি তা জানো না।
ফুয়াদ এসে হুরের মুখ চেপে ধরলো। আর কোন কাজ নেই তোমার। হাঁটুর বয়সি একটা মেয়ে আমাকে ভয় পায়না। তোমাকে তো আমি তুলে আছাড় মা/র/বো
হুর উমমম,উমম করছে। ফুয়াদ বললো,চুপচাপ যদি এই রুম ছেড়ে চলে যাও তবেই মুখ ছাড়বো!নয়তো না।
হুর কিছুই ইশারা না করে চুপ করে রইলো,ফুয়াদ হুরের মুখ ছেড়ে দিয়ে বলে বের হও।
– এহহহ বললেই হলো বেড় হও। রাসুল সাঃ বলেছেন, তোমরা কুমারী মেয়েকে বিয়ে কর। তাহলে হাসি তামাশা বেশি করতে পারবে।
আর আপনার কি বা এমন বয়স। কথায় কথায় হাঁটুর বয়সি হাঁটুর বয়সি করেন। এতো সুন্দর গজল বললাম কোথায় প্রসংশা করবেন তা-না। যাইহোক আপনি যাই বলেন, আপনার সাথে আমার হৃয়ের কানেকশন। ওই যে বলেনা, আপনি তো আমার হৃদয়ের মেহমান। তাই আপনার প্রতি আমার সব অধিকার।
– দেখো ভালোয় ভালোয় এখান থেকে যাও নয়তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।
– আপনার ভালো দেখার দ্বায়িত্ব যেমন আমার তেমনি আপনার খারাপ দেখার অধিকারও আমার।
ফুয়াদ কিছু বলবে,তার আগেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আদিয়া বলে,এদের মতো মেয়েদের কিছু বলে লাভ নেই। এসব মেয়েরা ভালো করেই জানে কি ভাবে ছেলেদের বশ করতে হবে।
হুর উত্তর দিতে যেয়ে থেমে গেলো, অপেক্ষা করলো ফুয়াদের উত্তরের আশায়।
ফুয়াদ হুরের দিকে তাকালো।
#চলবে