আধার রাতের আলো পর্ব-০৮

0
847

#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -৮

রাতে হুরের ঘুমোতে ঘুমোতে প্রায় ফজরের নামাজের সময় হয়ে গিয়েছিল।তাই নামাজ পড়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল।যদিও বাসায় থাকলে হুর প্রতিদিন ফজরের নামজ পরে সূরায় ইয়াসিন,সূরায় আরহমান তিলাওয়াত করতো। আজ আর সেসব না করেই শুয়ে পড়লো। বিধ্বস্ত হৃদয়ে কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না হুর।তবুও আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে সামন্য চেষ্টা করা।নানা রকম ভাবনা চিন্তা করতে করতে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগে হুর ঘুমের দোয়া পড়ে…… اللهم باسمك اموت و احيا

অর্থ ঃ-হে আল্লাহ! আমি আপনারই নামে মৃত্যুবরণ করব এবং আপনার নামের সাথেই জাগ্রত হবো।

ডান কাত হয়ে, জিকির করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিল হুর। সকালে হঠাৎ এতো চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ধরফরিয়ে হঠাৎ করে আশেপাশে তাকিয়ে বেশ অবাক হয়। পর মূহুর্তেই মনে পরে জীবনের নতুন অধ্যায়ের কথা। প্রচন্ড আওয়াজ শুনে হুর শাড়ী ঠিক করে নিচের দিকে আসতে নিয়েও থেমে যায়। সে তো পর্দা করে তাহলে কে না কে? এসেছে এভাবে তো যাওয়া যাবে না। হুর দরজায় দাঁড়িয়ে রইলো। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। নূর সকাল আটটায় স্কুলে চলে গিয়েছে। এখন বাজে প্রায় এগারোটা। হুর মনে মনে পড়ছে,
نَصۡرٌ مِّنَ اللّٰہِ وَفَتۡحٌ قَرِیۡبٌ ؕ

অর্থঃ-এটার অর্থ ❝আল্লাহর সাহায্যে বিজয় নিকটবর্তী ❞

যেতেও পারছে না। যদি গায়রে মাহরাম পুরুষ থাকে এই ভয়ে।

সকাল সকাল পুলিশ নিয়ে হাজির হয়েছে মাহতাব সাহেব। চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছে। নাহিদ আর ফুয়াদ সকাল আটটায় বের হয়েছে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। আলো বেগম মাহতাব সাহেবকে বললেন,এটা ভদ্রলোকের বাসা এভাবে চিৎকার করবেন না। মাহতাব সাহেব বিশ্রী ভাবে বলল,আমার বউ আমাকে ফেরত দিয়ে দিতে বলেন আপনার ছেলেকে আমি চলে যাবো।

– আমার ছেলে আপনার মত না।তাই মুখ সামলে কথা বলুন। নিজের ছেলের বয়সী একজনের বউকে নিয়ে টানাটানি করবেন না।

– রাখুন আপনার নীতি কথা। আপনার ছেলে আমার মুখের সামনে থেকে খাবার কেড়ে নিয়ে এসেছে আবার বলছে টানাটানি করবেন না।

আদিয়া সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে,আপনার খাবার যেয়ে কেড়ে নিয়ে এসেছে তার প্রমাণ কি?

– এক পাখি হাতছাড়া হয়েছে তাতে কি আমি তোমাকে ব/ন্দী করবো।

আদিয়া পুলিশের উদ্দেশ্য করে বলল,আপনারা এই নোংরা লোকের কথায় আমাদের বাসায় কেন এসেছেন?

– ম্যাম ডক্টর ফুয়াদের নামে তিনি প্রতারণার মামলা করেছে। তাই আমরা আমাদের ডিউটি পালন করতে এসেছি।

– তা ডিউটি পালন করতে আপনার পকেটে কত টাকা পরেছে?

– দেখুন আপনি লিমিট ক্রস করছেন।

– লিমিট ক্রস আপনারা করেছেন।ওয়ারেন্টি ছাড়া একজন ভদ্রলোকের বাসায় চলে এসেছেন। এবার আপনাদের বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ আনবো।

কনস্টবল দু’জন ঘাবড়ে যেয়ে বলে, সরি ম্যাম আমাদের ভুল হয়েছে। তবে পরের বার আসলে ওয়ারেন্টি নিয়েই আসবো।

মাহতাব সাহেব বললেন,তোদেরকে আমি দেখে নেবো। আমার সাথে পা’য়ে পারা দিয়ে ঝামেলা করা।

পুলিশ দু’জন বলল,স্যার চলুন আপনার করা কেস ফাইল করে এরেস্ট ওয়ারেন্ট নিয়ে আবার আসবো।তখন দেখবো এদের চটাং চটাং কথা কোথায় থাকে?

মাহতাব সাহেব আর পুলিশরা চলে যেতেই আদিয়া উঁচু আওয়াজে বলল,দুনিয়াতে মেয়ের অভাব পরছিল! তাই জেনে বুঝে ঝামেলাকে টেনে আনতে হবে? ওই মেয়েকে এই লোক বিয়ে করুক যা করুক তাতে তোমার ছেলের কি?বিথী চলে যাওয়ার পর দিনে হসপিটালের ডিউটি আর রাতে নে/শা করার ডিউটি ছাড়া তো আর কিছু করেনি। তাহলে হঠাৎ করে মানব সেবা কারার ভূত কোথা থেকে চাপলো।

– ওর পেশাই মানব সেবা করা।

আদিয়া হাত তালি দিয়ে বলে, আগে চিকিৎসা করে মানব সেবা করতো। তা বিয়ে করে মানব সেবা প্রদান কবে থেকে শুরু করেছে!

-আদিয়া ভাষা সংযত করে কথা বলো,সম্পর্কে সে তোমার বড় ভাই।

– এই একি কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছি। বড় ভাই দেখে যা ইচ্ছে করার লাইসেন্স পেয়ে গেছে! আমি যখন বলেছিলাম নাহিদকে বিয়ে করবো। তখনতো কতো কথা বলেছিল,ওই পরিবারে মিয়ে দেবে না। আরো কত কথা। তখন তোমার ছেলের খুব মানসম্মানের কথা মনে ছিলো। আর নিজে যখন একটা গার্মেন্টসে চাকরি করার মহিলার মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে তাতে তোমাদের সম্মান বাড়লো?

– তোমার মত অসভ্য মেয়ের সাথে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই। তাই একদম কথা বাড়াবে না। নিজের পড়া লেখায় ফোকাস দাও।

চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ কমে আসতেই হুর ধীর পায়ে সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।একপা একপা করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে।

আদিয়া সেদিকে তাকিয়ে বলে,এসে পরেছে তোমার বস্তির রানী। স্বাগতম আপনাকে বস্তি থেকে রাজ প্রসাদে। বড়লোকের ছেলেদের হাত করার চেষ্টায় আপনি সফল হয়েছেন আপনাকে এওয়ার্ড দেয়া উচিৎ।
হুর কিছু না বলে নিচে নেমে আসলো, আলো বেগমকে বললো,আসসালামু আলাইকুম। আন্টি এখানে কিছু হয়েছিলো?

আলো বেগম কিছু বলার আগেই আদিয়া বলে,ওয়া আলাইকুমুস সালাম। বাহহহ কি দারুণ নাটক। তা এসব কি তোমার মা শিক্ষা দিয়েছেন! নাকি নিজেই সেয়ানা

আলো বেগম বললে,আদিয়া তুই নিজের রুমে যা।আর ভুলে যাস না সম্পর্কে হুর তোর বড় ভাইয়ের বউ।

হুর নিম্ন স্বরে বললো,আন্টি আপুকে কিছু বলবেননা। রাগ তো করারই কথা। তবে ইনশাআল্লাহ একদিন আপুকে অভিযোগ করার সুযোগ দেবো না।

আদিয়া এসে হুরের সামনে আঙ্গুল তুলে বলে,এসব নাটক জমিয়ে রেখে অন্য কোথাও দেখিও। আমার সামনে দেখিয়ে লাভ নেই। তোমাদের মতো মেয়েদের আমার চেনা আছে।

হুর ভাবলো এই কথার কোন প্রতিত্তোর করবে না। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরলো, অন্যায়ের প্রশ্রয় যে দেয় সেও সমান অন্যায়কারী। তাই হুর বলল,দেখন আমি জানিনা আপনি কেমন মেয়েদের কথা বলছেন!তবে আমাদের মত মেয়েরা। মানে আমার মত মেয়েরা বড়দের সম্মান আর ছোটদের স্নেহ করতে জানে। আমদের পেটে ভাত কম থাকলেও আমাদের সম্মান আমাদের আত্মমর্যাদা সবার আগে। আর আমার বয়স যাইহোক না কেন সম্পর্কে আমি আপনার বড় ভাবি। কাউকে সম্মান দিলে সম্মান কমে না বেড়ে যায়। আর রাসুল (সাঃ)বলেছেন,

المسلم من سلم المسلمون من لسانه و يده

অর্থঃ- প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যাক্তি যার হাত এবং জবানের দ্বারা অপর মুসলমান শান্তি পায়।

আদিয়া হুরের কথা শেষ হওয়ার আগেই চলে গেলো।
আলো বেগম হুরের মাথায় হাত দিয়ে বলে,মা তুই কিছু মনে করিস না। মেয়েটাকে মানুষ করতে পারিনি। তবে তুই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছিস তাতেই আমি ভিষণ খুশি। এবার আয় তো খেতে বসি। সেই কখন থেকে তোর জাগ্রত হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।

______________________________________________
ফুয়াদ আর সালমা বেগম সামনা সামনি বসে আছে। ফুয়াদ বল,আপনি একটু বসুন আমি আসছি।ফুয়াদ বেড় হয়ে নাহিদের কেবিনে আসলো। নাহিদ রোগী দেখায় ব্যস্ত। হাতের রুগী দু’টোকে দেখে।নাহিদ বলল,কিরে কি হয়েছে?

-আচ্ছা শ্বাশুড়িকে কি বলে ডাকবো?

নাহিদ হেসে বলে, শেষমেশ ডক্টর রুবাকে বিয়ে করতে রাজি হলি।

– তুই হয়তো জানিসনা আমি বিয়ে আগামীকাল রাতেই করেছ।

– রাতেই বিয়ে করেছিস মানে!

– এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই সেসব অনেক কথা। এবার বল শ্বাশুড়িকে কি বলে ডাকবো।

– আগে কি ডাকতি?

ফুয়াদ আর কোন কথা না বলে বের হয়ে গেলো নাহিদের কেবিন থেেকে।ছোট বেলা থেকেই ফুয়াদ বিথীর আম্মুকে আম্মী ডাকতো। দুই বোনের এক ছেলে ছিলো ফুয়াদ। বিথীরা তিন বোন ভাই নেই। তাই রেহানা বেগম ফুয়াদকে নিজের ছেলের মত আদর করত।আজ কত বছর আম্মী বলে ডাকা হয়না।বুকে হালকা চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে ফুয়াদ।মনটা ভীষণ খারাপ করে আবার ফিরে আসলো সালমা বেগমের কাছে। তার সাথে কথা বলে, কিছু কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,এখানে আপনার সিগনেচার অথবা টিপ সই দিয়ে দিন।

রাহেলা বেগম হাতে কলম নিতেই রুহল সাহেব এসে বলে,না এটা আমি কিছুতেই হতে দেবো না।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে