#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৭
হুর এবাড়িতে প্রায় বছর খানিক সময় ধরে নূরকে পড়াতে আসে। সেই সুবাদে বাড়ির কে কোন রুমে থাকে হুরের জানা। যদিও আলো বেগম আর নূরের রুম ছাড়া কখনো কোন রুমে যাওয়া হয়নি। হুর হালকা আলোতে এক হাতে খাবার আর আরেক হাতে দেয়াল ধরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আলো বেগমের রুমের সাথে আদিয়ার রুম আদিয়ার রুম পেরিয়ে একটা রুম পরেই ফুয়াদের রুম।এসব ঘুরে ঘুরে আলো বেগম তাকে দেখিয়েছেন। বুকের ভেতর কেমন ধুক ধুক শব্দ হচ্ছে। চোখের কোনের জল গুলো এখনো শুকোয়নি। ধীরে ধীরে এসে উপস্থিত হয়েছে ফুয়াদের রুমের সামনে। দরজা আধ খোলা। ভিতরে নীল রাঙা ড্রীম লাইটের আলো। হুর পা’টি/পে টি/পে দরজা ফাঁকা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিচ্ছে।
ফ্লোরে বসে একের পর এক ম/দে/ র গ্লাস ফাঁকা খালি করে যাচ্ছে ফুয়াদ। নিজেকে জ্বা/লি/য়ে হয়তো হৃদয়ের দহন নেভানোর সামান্য চেষ্টা। ফুয়াদের আজও মনে আছে সেদিনের কথা যে-দিন বিথীর সাথে শেষ কথা হয়েছিল।সেদিন ফুয়াদের ফাইনাল এক্সাম ছিলো। বিথী হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করে ছিল। নূরের বয়স তখন চার বছর। ফুয়াদের বন্ধুরা তখনো বিয়েই করেনি। সবাই ফুয়াদকে কত খেপাত। তখন । ফুয়াদ যদিও বিথীর সাথে সেরকম ভাবে সময় কাটাতে পারেনি। বীথীকে নিয়ে ঘুরাও হয়নি। তবে সেটা নিয়ে নিত্যদিন বীথিকে বলতো আমার ডিগ্রি শেষ হলেই তোমাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর যাবো।তোমাকে নিয়ে পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়াবো। পড়ালেখার চাপে সেভাবে সময়ও দিতে পারেনি। ফুয়াদ বীথিকে বলেছিল আর ছ’মাস তার পরেই আমি দেশে ফিরে আসবো ততদিনে আমার নূর মাও আরএকটু বড় হবে।বীথীও কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলেছিল,তাহলে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটল তবে! আমার চার বছরের সাধনা শেষ হতে চলল,কে বুঝেছিলো, সেই হাসির আড়ালে কোন নোংরা প্লানিং চলছিলো।
ফুয়াদ বলল,চার বছরের বিনিময়ে তোমাকে আমি সারাজীবন ডাবল ভালোবাসা দেবো। বিথী হেসে বলল,দেখা যাবে ডাক্তার সাহেব।এখন ছাড়ুন সেসব কথা, আমার লাক্ষ খানেক টাকা লাগবে।
– ঠিক আছে আমি ম্যানেজারকে বলে দেবো।এখন রাখি পরিক্ষা দিতে যেতে হবে তো? এসব কথা ভাবতেই রাগে হাতে থাকা ম/দের গ্লাসটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। নুর আবছা নীলাভ আলোয় আড়ালে দাঁড়িয়ে সেসব দেখছে।মূহুর্তেভ গ্লাসটা ভেঙে কাঁচের টুকরো গুলো হাতে গেঁথে রইলো। আর হাত থেকে তাজা র/ক্ত ঝড়তে লাগলো। হুরের শরীে কেমন কেঁপে উঠলো।ভয়ে দু’পা পিছিয়ে গেলো। পর মূহুর্তে মনে পরলো আছিয়া (রায়িঃ) তো ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন।তবুও তিনি হাল ছাড়েন নি।এতো অত্যাচার সহ্য করেও দ্বীনের কথা বলে গেছেন। আর আমার স্বামী তো ফেরউন না। আমি যদি তাকে দ্বীনের পথে আনার চেষ্টা না করি। তাহলে জবাব তো আমাকে দিতে হবে।নূর দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো। ফুয়াদ দরজার দিকে তাকালো। আবছা আলোতে এক নারী ছায়ামূর্তি। যদিও নে/শায় বুদ হলে বীথিকে হ্যালোসুলেশন করে। কিন্তু আজ এখনো নে/শা ধরেনি। ফুয়াদ রাগ দেখিয়ে বলল,কে এখানে? হুর উত্তর না দিয়ে সামনে এগিয়ে আসলো। এই নীলাভ আলোতে এদিক সেদিক তাকিয়ে খুঁজতে লালগো সুইচবোর্ডে। কারণ আগে তাকে আলো জ্বালাতে হবে।
ফুয়াদ বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মানবীর দিকে। যদিও এই মূহুর্তে তার মাথায় হুরের কথাটা আসছে না। ফুয়াদ নিজেই আলো জ্বালিয়ে দিলো। প্রচন্ড ভয় হচ্ছে হুরের তবুও সমান্য চেষ্টা করছে নিজেকে সামলে ফুয়াদের মুখোমুখি হতে। আলো জ্বলে উঠতেই চোখে চোখ পরলো দু’জনের প্রথম দৃষ্টি বিনিময়। ফুয়াদ তাকালে হুরের দিকে হুরও তাকালো তবে সেই দৃষ্টি বেশি সময় স্থায়ী হলো না। ফুয়াদ রাগে গর্জে উঠে বলল,কে তুই?তোর সাহস কি করে হলো এই ঘরে রুমে ঢুকার। হুর ভয় পেলেও তা প্রকাশ করলো না হাতে থাকা খাবারের প্লেটটা পাশের টেবিলের উপর রেখে ধীর কন্ঠে বলল,আমি সেই যে আপনার আধার_রাতের_আলো জ্বালাতে চাই!
ফুয়াদ উঠে আসলো রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে, কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে।হাতের ব্যথার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। হুরের সামনে এসে বলে,তোদের মত মেয়েরা নিজের রুপের ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই পারেনা। হুর ফুয়াদের রাগকে উপেক্ষা করে নিজের হাত বাড়িয়ে ফুয়াদের হাত স্পর্শ করতে চাইলো। ফুয়াদ হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,এক্ষুনি বের না হলে ঘাড় ধা/ক্কা দিয়ে বের করে দেবো।হুর নিজের মধ্যে কথা তৈরি করে সাহস জুগিয়ে বলল,বিয়ে যখন করে নিয়ে এসেছেন তখন আর বের করে দেয়ার অধিকার আপনার নেই। এখন আপনি সহ আপনার সব জিনিসের উপর আমার অধিকার আছে।আর হুর নিজের অধিকার আদায় করে নিতে জানে।
ফুয়াদের মাথায় আসলো মেয়েটাকে। তবুও বললো,দেখো মেয়ে বিয়ে করে এনেছি তাই বলে,মাথায় চড়ে বসবে না।ভালোয় ভালোয় রুম থেকে বের হয়ে যাও।
আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করবে না।
হুর বললো আচ্ছা আমি চলে যাবো তবে আমার কথা আপনাকে শুনতে হবে।আমি বলবো আপনি শুনবেন, মানা, না মানা আপনার কাছে।আর যদি বলেন শুনবেন না তবে হুরও এক পা নড়বে না।
ফুয়াদ ভাবলো রাতের বেলা সিনক্রিয়েট না করে শুনে নেয়া ভালো। ফুয়াদ বললো,তোমার কথা শেষ হতেই বেড়িয়ে যাবে এক মূহূর্ত দেরি করবে না।হুর সম্মতি জানালো। ফুয়াদ ওয়াশরুমে চলে আসলো নিজের হাত ক্লীন করে, চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হলো। খাটের এপাশে হুর বাসা ও পাশে ফুয়াদ বসা। ফুয়াদের পড়োনে থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট আর টিশার্ট।হালকা চাঁপ দাঁড়ি। হুর এক পলক ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। হুরের চোখ ঝপসা হয়ে এলো।চোখের জলে চোখ ভরে উঠলো। ফুয়াদ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বলল,কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।
হুর নিজের মধ্যে কথাগুলো,সাজিয়ে নিচ্ছে।
হুর বলল, আপনাকে জ্ঞান দেয়ার মতো জ্ঞান আমার নেই। কারন আপনি সম্পূর্ণ বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষ। তবুও ছোট একটা কথা বলবো।
আর আমার কথা শেন না হওয়া পর্যন্ত আপনি কোন কথা বলবেন না।হুর বলা শুরু করলো।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন…….
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَالۡمَیۡسِرُ وَالۡاَنۡصَابُ وَالۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
অর্থ ঃ-
হে মু’মিনগণ! ম/দ, জু/য়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা ওটা বর্জন কর-যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
(—আল মায়িদাহ – ৯০)
রাসূল (সাঃ)বলেছেন,তোমরা মদ্যপান করবে না। কেননা তা সকল খারাপ কাজের চাবিকাঠি।
আমার মনে হয় না আপনি এসব জানেননা। আর যে জানে তাকে জানানোর কেউ নেই। সে বুঝেই ভুল করে।আর রইলো স্বাস্থ্যের কথা সেটা আমার চেয়ে আপনি ভালো জানেন শতগুণ। শুধু এতোটুকু বলবো,যে ভাবেই হোক আমাকে আপনার সাথে জড়িয়ে ফেলেছেন। আর এসব বলা আমার দ্বায়িত্ব। আপনার অতীতে কি হয়েছে আমি জানিনা।কিন্তু সেই অতীত আগলে ভবিষ্যত কে নষ্ট করা বোকামি বই কিছুই না।হুরের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।কখন ভাবতে পারেনি একজন নে/শা খোড়ের সাথে তার জীবন জড়িয়ে যাবে।হুর চুপ করতেই ফুয়াদ বললো, তোমার বলা শেষ হলে তুমি যেতে পারো। হুর উঠে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই ফুয়াদ বলল,খাবার নিয়ে যাও খেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
হুর শাড়ীর আঁচলে চোখ মুছে নিয়ে বলল,আপনি খেলেই আমি খাবো।
কথাটা শুনে ফুয়াদের রাগ তরতর করে বেড়ে গেলো। তবুও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,তোমার সাথে আমার এমন কোন সম্পর্ক নেই, যে আমি না খেলে তুমি খেতে পারবে না।
হুর নিম্ন স্বরে বলল,যেই মূহুর্তে আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সেই মূহুর্ত থেকে এটা আমার দ্বায়িত্ব।
ফুয়াদ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,এখানে এক প্লেট খাবার কি ভাবে খাবো?আমি এক সাইড থেকে খেয়ে নিচ্ছি বাকিটা তুমি খেয়ে নেবে।পারবে নাকি ঝুটা খেতে পারবে না।
হুর বললো,স্বামী স্ত্রী এক প্লেটে খাওয়া সুন্নত। আর আপনার রেখে দেয়া খাবার খেতে আমার কোন সমস্যা হবে না।
ফুয়াদ আর তোন কথা না বলে, দু’তিন লোকমা খাবার খেয়ে প্লেটটা হুরের দিকে বাড়িয়ে দিলো হুর প্লেট হাতে নিতেই ফুয়াদ বললো, এখানে বসে খেয়ে নাও। হুর ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে খাবার খেয়ে চলে আসলো। ঘুম আর তার চোখে নেই। জায়নামাজ পেতে সেখানে দাঁড়িয়ে দু’রাকাআত সালাতুল হাজতের নামাজ আদায় করে আল্লাহ তায়ালা কাছে মোনাজাত ধরলো। মোনাজাত শেষ করে নুরের পাশে শুয়ে পরলো।মনে হাজার চিন্তা কি হয়ে গেলে এটা এখন প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হবে স্বামী নামক মানুষটাকে সঠিক পথে আনার জন্য। এস ভাবতে ভাবতে ঘুমে তলিয়ে গেলো হুর।
হঠাৎ কারো চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেলো হুরের।
#চলবে