আধার রাতের আলো পর্ব-০১

0
1608

#আধার_রাতের_আলো
#নুসাইবা_ইভানা
সূচনা পর্ব

নিজের ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে এসে সেই মেয়েকে নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন মাহতাব সাহেব। দরিদ্র ঘরের মেয়ে হুরাইন।সুন্দরী হলে কি হবে বাবার টাকা না থাকায় অবহেলিত হুর। টাকার প্রলোভন দেখিয়ে হুরের বাবাকেও রাজি করিয়ে নেয়। সেদিন হুর বুঝেছিলো দরিদ্র হওয়ার শাস্তি কত কঠিন। মাহতাব সাহেব হুরের বাবা রুহুল মিয়াকে বললেন, আপনার আপত্তি না থাকলে আপনার মেয়ের সাথে কিছু কথা বলতে চাই।

লোভে চকচক করছে রুহুল মিয়ার চোখ। পান খাওয়া দাঁত গুলো বের করে বলে,এরজন্য আবার অনুমতি লাগে। আপনার জিনিস আপনে কথা কন যা খুশি করেন।

পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে হুরের নিজের বাবার কথাগুলো শুনে রাগে দুঃখে ম*রে যেতে ইচ্ছে করছে
মনে মনে বলছে, আত্মহত্যা বুঝি এজন্যই হারাম করা হইছে। নাইলে আমার মত কত অভাগী নিজের জীবন শেষ করে দিত। কওমি মাদরাসার মেশকাত জামাতের ছাত্রী হুর।বুঝ হওয়ার পর তার চেহারা বাহিরের কেউ দেখেনি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। হরের চোখে টলমল করছে অশ্রু। তবে সে তা গড়িয়ে পরতে দিলো না। গাড়িয়ে পরার আগেই মুছে নিয়ে বলে, কাঁদতে হলে তোমার কাছে হাত তুলে কাঁদবো।দুনিয়ার সামন্য পরিক্ষায় কাঁদবো না। কারণ হাদিসে আছে, দুনিয়া হচ্ছে পরিক্ষার জায়গা। মু’মিনদের জন্য দুনিয়া কারাগারের মত।এসব ভাবনার মাঝেই কারো শক্ত পুরুষ কন্ঠ কানে আসল। আমি আসতে পারি?
মাহতাব সাহেবের কথা শুনে হুর সরে দাঁড়ালো।
হুরের পরনে একটা আধা পুরানো সুতির থ্রি পিস। মাথায় দুই পেঁচ ওড়না দিয়ে ঢাকা। অতি সাধারণ একজন যুবতী।
মাহতাব সাহেব এক পলক তাকলেন হুরের দিকে।তাকিয়ে বলেন মাশা আল্লাহ।
হুর নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহতাব সাহেব বললেন, তোমাকে আমি আমার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চাই। এতে তোমার কোন আপত্তি আছে?

হুরাইন চুপ করে রইলো।
মাহতাব সাহেব আবার বললো,কিছু তো বলো।

হুরাইন নিম্ন স্বরে বললো,আমার কোন কথা নেই বাবার কথাই শেষ কথা। হুর মনে মনে বলছে নিজের হাঁটুর বয়সি একটা মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে আপনার লজ্জা করছে না।কথা গুলো দলা পাকিয়ে ভেতরেই রয়ে গেলো মুখ দিয়ে শব্দ হয়ে আর বের হলো না।
মাহতাব সাহেব নিজের পকেট থেকে একটা বাক্স বের করে সেখান থেকে একটা আংটি বের করে। হুরকে বলল,তোমার বা’হাতটা দেখিতো।
হুর না চাইতেও হাতটা বাড়িয়ে দিলো মাহতাব সাহেবের দিকে। মাহতাব সাহেবের চোখে লালসা। হুরের হাতটা স্পর্শ করবে তার আগেই হুর বলল,আমার নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা ছিলো আমি কাউকে অবৈধ ভাবে আমাকে স্পর্শ করতে দেবো না।

মাহতাব সাহেব বললেন, আমি তোমার হবু স্বামী।আমি তো স্পর্শ করতেই পারি?

হুর বললো,আল্লাহ চাইলে অনেক সময় পাবেন। আংটি দিন আমি পরে নিচ্ছি। হুর আংটি নিজেই পরে নিলো। মাহতাব সাহেব চলে গেলেন। যাওয়ার আগে বিশ্রী দাঁতগুলো বের করে বলে গেলেন খুব তাড়াতাড়ি আমার বিবি করে নিয়ে যাবো তোমাকে।

হুর নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু বললো না। মাহতাব সাহেব বের হয়ে যেতেই। জায়নামাজ বিছিয়ে বসে পরলো দু’হাত তুলে মোনাজাত ধরে আল্লাহ তায়ালার দরবারে কান্নাকাটি করলো।

মাহতাব সাহেব বাসায় ফিরে নিজের ছেলে নাহিদকে বললেন,মেয়ে আমার পছন্দ হয়নি। তোমার জন্য অন্য মেয়ে দেখবো।

– আমি তোমাকে বলেছি আমি বিয়ে করবো। বিয়ে করার ইচ্ছে হলে তুমি বিয়ে কর। আমি করবো না।

– তবে তাই হোক বিয়ে আমিই করবো।

নাহিদ আশ্চর্য না হয়ে বলে,কোন মেয়ের জীবন ধ্বংস করতে চাইছো? আমি থাকতে তা কিছুতেই হতে দেবো না।

– দেখো আমার পথে আসবে না।আমার বউ প্রয়োজন আমি বিয়ে করবো। রোজ রোজ ওই নোংরা জায়গায় যেতে আর ভালো লাগে না।

ঘৃণায় গা গুলিয়ে এলো নাহিদের। ভাবতেও অবাক লাগে এই চরিত্রহীন লোকটা তার জন্ম দাতা পিতা।
জানে কোন কথা বলে লাভ নেই। চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে আসলো।ফুয়াদের বাসায়। নেশায় বুদ হয়ে থাকা ফুয়াদের সাথে খুলে বলল মনের কথা। ফুয়াদ
পুরোটা ঠিক বুঝলনা তবুও বললো,বিয়ে করলে করুক। ওই সব জায়গায় যাওয়ার চেয়ে বিয়ে করাই ভালো।

– তাই বলে হাঁটুর বয়সি একজন মেয়েকে বিয়ে করবে!
– মেয়ের আপত্তি না থাকলে আমাদের কি?
বাদ দে চল একটু চিল করি।

আলো বেগম নামাজ শেষ করে সালাম ফেরাতেই দেখলেন হুর দাঁড়ায়ে আছে। বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা নেকাব দিয়ে নিজেকে আবৃত করা।আলো বেগম মুচকে হেসে বলল,হুর এসেছো। আসো মা। নুর ঘরেই আছে। ছয় বছর বয়সি নুরকে আরবি পড়ায় হুর। নেকাব খুলে রেখে নুরকে পড়ানো শুরু করতেই।
আলো বেগম পাশে এসে বসলো। হুরের চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে,তোর মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেনরে মা?

হুর মলিন হেসে বলে,কই তেমন কিছু না তো।

– আমাকে বল মা।

নুর বলল দাদু মনি তুমি আমার আরবী ম্যামকে ডিস্টার্ব কেন করছো। আমি বাবাকে বলে দেবো

হুর নুরকে কোলে নিয়ে বলে,তোমাকে কি বলেছিলাম নূর। মনে নেই।

– সরি ম্যাম। না, না আমি দুঃখিত ম্যাম আর এমন হবে না।
– এইতো আমার মিষ্টি বাচ্চা।
এবার পড়ো।

আলো বেগম বললেন, তোর মতো একটা মেয়ে পেলে ছেলেটাকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করানোর কথা চিন্তা করতাম।

দাদু মনি বাবা তো বলেছে আমার মা পঁচা তাই আমার আর মা লাগবে না।

– মেয়েটা এতো পাকা হয়েছে কি বলবো,কোন কথা বলা যায় না ওর সামনে। তুমি ওকে পড়িয়ে আমার রুমে এসো।

আলো বেগম চলে যেতেই হুর মনে মনে চিন্তা করলো,ওই লোকের সাথে বিয়ে হওয়ার চেয়ে নূরের মা হওয়া শতগুণ ভালো।আবার নিজেই নিজেকে বলে,নফস আমাদের ধোঁকা দেবেই তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে।এসব ভাবা পাপ।আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই উত্তম পরিকল্পনা কারী।তিনি যা ভেবে রেখেছেন সেটাই আমার জন্য উত্তম।

নূর বলল,জানো আমার মা, কি করেছে?
হুর জানে নূর কি বলবে মাঝে মাঝেই এই কথা হুর বলে,

এখন কিছু বলতে হবে না। মনযোগ দিয়ে পড়ো।

– তোমাকে শুনতেই হবে।আমার মা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে দরজা বন্ধ করে চলে গেছে।কত পঁচা আমার মা।আমি মা চাইনা।তুমি কেন আমার মা হবে? মা মানেই পঁচা।বাবা বলেছে আমি অনেক কেঁদেছি তাো মা আসেনি।

হুর নুরের গালে হাত রেখে বলে,এভাবে বলতে হয়না নূর।এসব কথা আর কখনো বলবে না। এগুলোতো পঁচা কথা। আর আমি তোমার কে?

– আরবি ম্যাম।

– তাহলে আমাদের সম্পর্ক এটাই
নূর খুশি হয়ে বলে হ্যাঁ ঠিক বলেছো।জানো বাবা বলছে আর মা আনবে না।

– বলেছিনা এসব বলবে না।

আচ্ছা নূর কারো সাথে দেখা হলে কি করতে হয়?

– কোন মুসলিম ভাই- বোনের সাথে দেখা হলে মিষ্টি করে,আসসালামু আলাইকুম ও রহমাতুল্লাহি ওবারাকতুহ। বলতে হয়।

-কারণ কি?
কারণ হাদিসে এসেছে আগে সালাম পরে কথা।

– খুব ভালো। তার কি করতে হয়।

– তারপর মুচকি হেসে কুশল বিনিময় করতে হয়।

-কারন?
– মুচকি হেসে কথা বলা সুন্নত।

-এইতো আমার ভালো মেয়ে।এবার আজ শিখবো।
খাবার খাওয়ার সুন্নত। ঠিক আছে।

– হুম ঠিক আছে।এরমধ্যেই আলো বেগম হুরের জন্য খাবার নিয়ে আসলেন। হুর কিছু খাবার খেলো।আলো বেগম বলল, হুর তুমি আজ চলে যাও।আমার ছেলে তার বন্ধুকে নিয়ে বাসায় আসছে।

হুর, আলো বেগম আর নুরকে বিদায় জানিয়ে বাসা থেকে বের হলো।

হুর রাস্তায় আসতেই ফুয়াদের চোখ পরলো হুরের উপর। পা’ থেকে মাথা অব্দি কালো কাপড়ে আবৃত। এক মানবী দেখে এক পলক তাকালো ফুয়াদ।হুর নিচের দিকে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

ফুয়াদ নাহিদকে উদ্দেশ্য করে বলল,জানিস নারী মানেই ছলনাময়ী। এদোর ছলনা বোঝা বড় দায়।

______________________________________________
হুর বাসায় এসে দেখে বাসায় বেশ মানুষ জন। হুরের বুকটা কেঁপে উঠলো। আল্লাহ তায়ালা প্রতি ভরসা রেখে ভেতরে প্রবেশ করলো।
মাহতাব সাহেব, কিছু লোক আর কাজী নিয়ে হাজির হয়েছে।হুরের বাবা রুহল মিয়া তার স্ত্রী সালমা বেগমকে বললেন, যাও মেয়েকে তৈরী করো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে