#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৪৯
সোহা উত্তর না দিয়ে মিটমিট করে হাসতে থাকে।
সকাল থেকে সোহা রেস্টের উপরেই থাকে। শান সোহাকে বিছানা থেকেই নামতে দিচ্ছে না। দুপুরে খাবার খাওয়ার পর সোহার সাথে সাথে শানও ঘুমিয়ে পড়ে। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে শান ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। হোটেলের রুম থেকে বাইরের খুব সুন্দর একটা দৃশ্য দেখা যায় সেটাই দেখছিলো। দেখতে দেখতে অনুভব করলো সোহা এসে দাঁড়িয়েছে তার পাশে। শান রাগি চোখে তাকিয়ে বললো
” তোমাকে আমি বিছানা থেকে নামতে না করেছি না ? তুমি আবার নেমেছ ?” সোহা রেগে নাক ফুলিয়ে বললো
” অদ্ভুত তো ! সারাদিন বিছানায় বসে থাকবো নাকি আমি? একটু হাটতে পারবো না ? ডক্টর রেস্ট করতে বলেছে কিন্তু বেড রেস্ট তো আর করতে বলেনি! আপনি একা একাই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আনন্দ করবেন আমি করবো না ?”
শান এক হাতে সোহার কোমড় পেঁচিয়ে নিজের সাথে ঘেঁষে দাড় করিয়ে রাখে। সোহা শানের অন্য হাত ধরে খোঁচাতে থাকে। শান কিছুক্ষণ লক্ষ করার পর শানের মনে হলো সোহা।কিছু বলতে চাইছে। শান ব্যালকনির রেলিঙ এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দুই বলিষ্ঠ হাত জোড়া দিয়ে সোহার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে সোহার এক কাধে হাত রেখে বললো
” আমার বউ কি বলতে চাইছে ?” সোহা ফট করে শানের চোখের দিকে তাকালো। সোহা শানের হাত ধরে পিটপিট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেসু হয়ে বললো
” আচ্ছা আপনার পছন্দের ফুল কি কি ?”
শান ভেবে বললো
” তেমন তো স্পেশাল কোনো ফুল নেই তবে তোমার চুল থাকা বেলি ফুলের বাহারটা আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয়। কিন্তু হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো, মিসেস চৌধুরী ?” সোহা কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ভাবার ভান করে বললো
” ‘মিসেস’ ওয়ার্ডটা থেকে ‘মিস’ ওয়ার্ডটা কিউট তাই না !” শান মুখ কুঁচকে তাকায় সোহার দিকে। রাগি গলায় বললো
” মিস ওয়ার্ড যখন এতো ভালোই লাগে তাহলে বিয়ের পিরিতে বসার কি দরকার কি ?”
সোহা ঠোঁট উল্টে বললো
” তখন তো দুটোই ভালো লাগতো এখন ‘মিস’ ই ভালো লাগে।” শান সোহাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে তারপর বাইরের দিকে মুখ ফিরিয়ে গম্ভীর গলায় বললো
” তারমানে তোমার এই বিবাহ জীবন ভালো লাগছে না ? তুমি কি আমার উপর বিরক্ত ? শোনো বিরক্ত হও, রাগ হও বা ঘৃণা করো যাই করো না কেনো তুমি আমারই থাকবে। ছেড়ে যাওয়ার মতো দুঃস্বপ্ন দেখবে না আর দেখার চেষ্টাও করবে না। মাথায় থাকে যেনো।” সোহা ঠোঁট কামড়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রবোটের মতো মাথা নাড়ালো। শান সোহার দিকে একপলক তাকিয়ে হনহন করে রুমে চলে গেলো। সোহা মুখ চেপে মিটমিট করে হাসলো। শানকে রাগাতে ভালোই লেগেছে তার। রুমে গিয়ে দেখে শান ইউনিফর্ম পরে তৈরি হচ্ছে। সোহা শানের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো
” কোথায় যাচ্ছেন আপনি ?” শান গম্ভীর গলায় বললো
” ইউনিফর্ম পরে নিশ্চই ঘুরতে যাবো না ! থানায় যাচ্ছি। মিডিয়াদের সাথে মিটিং রয়েছে রাত হতে পারে খাবার খেয়ে, ঘুমিয়ে পরবে অপেক্ষা করবে না।” সোহা মাথা নাড়ালো। শান বেড়িয়ে যেতেই সোহা বড় একটা হাসি দিয়ে তার কাজে লেগে পড়ে।
শান সব কাজ শেষে থানা থেকে বেড়িয়েছে অনেক্ষণ। শান জিপ চালিয়ে চালিয়ে এদিক ওদিক ঘুরছে। ইমন শানকে কিছু জিজ্ঞেস করেও করছে না। চুপচাপ ভুট চিবিয়ে যাচ্ছিলো এবার আর নিজের কৌতূহল কমাতে না পেরে বলে উঠলো
” তুই আজকে এখনও হোটেলে না ফিরে এদিক ওদিক ঘুরছিস কেনো ? মন খারাপ কেনো তোর ?” শান উত্তর না দিয়ে চুপচাপ ড্রাইভ করতে থাকে। ইমন শানকে হালকা ধাক্কা দিয়ে কিড়মিড় করে বললো
” কথা বলছিস না কেনো তুই ?” শান শান্ত গলায় বললো
” ভাবছিলাম তোকে তো কথা দিয়েছিলাম। এই কেসটা শেষ হলে এক সপ্তাহের ছুটি দেওয়া হবে তোকে। মনে আছে তো ?”
ইমন বাঁকা হেসে বললো
” আমার মনে না থাকলে চলবে ? আমি তো ভেবেছিলাম তোকে মনে করাতে হবে।” শান আলতো হেসে বললো
” আমি ভুলিনি। কালকে থেকেই তোর ছুটি শুরু।”
ইমন হেসে বললো
” বাহ এতো দেখি মেঘ না চাইতেই জল। কালকে থেকে ছুটি হলে তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ রয়েছে।”
শান ভ্রু কুঁচকে ইমনের দিকে একপলক তাকিয়ে বললো
” আমার জন্য কিসের সারপ্রাইজ ?” ইমন দাঁত কেলিয়ে বললো
” তোর কি মনে হয় সারপ্রাইজ এর কথা আগেই বলে দেবার মতো বোকা আমি ?” শান আড়চোখে তাকিয়ে বললো
” আমি বোকা কখন বললাম ?” ইমন মাথা নেড়ে বললো
” হ্যা, বলিসনি তবে এটা বল তুই হোটেলে কখন যাবি ?” শান ড্রাইভ করতে করতে বললো
” দেখতো কোথায় আছি আমরা।” ইমন চোখ বুলিয়ে দেখে হোটেলের কাছেই এসে পরেছে তারা।
ইমনের থেকে বিদায় নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলো রুম অন্ধকার হয়ে রয়েছে। সোহা ঘুমিয়ে গেছে ভেবে শান রুমে লাইট অন না করে ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে নিজের কাপর নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর শান টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে ওয়াসরুম থেকে। রুমের দিকে তাকাতেই শান বরফের মতো স্থির হয়ে গেলো। চোখ জোড়া স্তব্ধ চাহনিতে সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে। সোহা লাজুকলতায় আবৃত হয়ে শানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শান ধীরপায়ে সোহার সামনে এসে দাঁড়ায়। লাল শাড়িতে নিজেকে আবৃত করে রেখেছে। ঠোঁট জোড়া লাল রঙ্গে রাঙানো। আঁখি জোড়া কাজলরেখায় আঁকানো। খোঁপা করা চুলে বেলি ফুলের গাজরা।
শান এক ঘোরের মাঝে ডুবে যায়। আলতোহাতে সোহার গাল ছুঁয়ে দিতে থাকে। পুরো শরীর কেঁপে উঠে সোহার। সোহা আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। শান তার অন্য হাত সোহার কোমড়ে রাখে। সোহার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। গালে রাখা শানের হাতের উপর নিজের হাত রেখে পিটপিট চাহনিতে তাকালো। হুট করে শানের ঘোর ভেঙে যায়। শান সোহাকে ছেড়ে পুরো রুমে চোখ বুলায়। পুরো রুম ক্যান্ডল দিয়ে ডেকোরেশন করা। রুমে অন্যরকম এক আবহাওয়া মনে হচ্ছে। শানল ভ্রু কুচকে সোহার দিকে তাকিয়ে বললো
” এসব কি ?” সোহা আলতো হাসলো শানের প্রশ্ন শুনে। শানের হাত জোড়া ধরে শীতল চাহনি দিয়ে বললো
” ভালোবাসি আপনাকে।” দুটো শব্দের প্রতিধ্বনি শানের কানে বাজতে থাকে। মানে টুকু বুঝে উঠতেই শান অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকালো সোহার দিকে। শানের চাহনি বড্ড হাস্যকর মনে হলো সোহার কাছে। সোহা ফিকফিক করে হেসে দেয়। শান ঢোক গিলে বললো
” কি বললে তুমি ?” সোহা হাসি থামিয়ে শানের একদম কাছে আসলো পা উঁচু করে ৬ ফুট লম্বা ছেলেটার গলা জড়িয়ে ধরে ধীর গলায় বললো
” বলেছি ভালোবাসি। খুব, খুব ভালোবাসি আপনাকে।” শান কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
” ত..তুমি আমাকে ভ..ভালোবা..সো !” সোহা ফিচকে হেসে বললো
” হ্যা, ভালোবাসি। আমি জানি আপনিও আমাকে কতোটা ভালোবাসেন। তাই আজ আমি আপনার আর আমার ভালোবাসার পূর্ণতা চাই। দেবেন আমার চাওয়াকে পূরণ হতে ?” শান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। স্বপ্ন যখন আজ সত্যি হচ্ছে তখন সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে শানের। সোহা তাকে ভালোবাসে ? ভাবতেই শানের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সোহা মুখ ফুলিয়ে শানকে ছেড়ে দিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বললো
” আপনি শুনেছেন আমি কি বলেছি ?” শান হুট করে সোহাকে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সোহা আলতো হাসলো শানের কাজে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান জড়ানো গলায় বলে উঠে
” কতোদিন কতোদিনের স্বপ্ন ছিলো আমার তুমি জানো ! তোমার মুখে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য কতো রাত ছটফট করেছি আমি। কতো রাত বিদ্ধস্ত অবস্থায় কাটিয়েছি তোমাকে একপলক দেখার জন্য। আজ আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না তুমি আমাকেও ভালোবাসো। খুব ভালোবাসি সোহা, খুব ভালোবাসি।” সোহা জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই বলে উঠে
” আমাকে নিজের করে নিন তাহলে ! আজ আমাদের ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে চাই। আমাকে নিজের ভালোবাসার আড়ালে মুড়িয়ে নেবেন ?” শান সোহাকে ছেড়ে সোহার আঁখিজোড়ার দিকে তাকালো। চোখে আজ ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা দেখা যাচ্ছে। শান ঢোক গিললো সোহাকে দেখে।
.
.
চলবে…….