আধারে তুমি পর্ব-৪৭+৪৮

0
1084

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৪৭

ম্যানেজার গিয়ে দৌঁড়ে চলে যায় লিফট আটকে দেওয়ার জন্য শান ইমনকে নিয়ে সিরি দিয়ে উপর চলে গেলো সোহার কাছে যাওয়ার জন্য।
সোহা রুমে গান ছেড়ে বসে বসে গেইম লেখিছিলো তখনই দরজা খোলার শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখে শান আর ইমন ঢুকেছে। শান দরজা আটকে দৌঁড়ে সোহার কাছে আসলো। সোহা ফোন রেখে অবাক হয়ে বললো
” কিছুক্ষণ আগেই তো বেড়িয়ে গেলেন আর এখনই চলে আসলেন যে ? কিছু কি হয়েছে ? আপনাদের এমন…” শান সোহার পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে দ্রুততার সাথে বললো
” এতপ প্রশ্ন করার সময় নেই। এখনই আমার সাথে চলো।” শান সোহাকে টেনে নামালো। ইমন গান বন্ধ করে শানদের সাথে চলে গেলো। শান সোহাকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। ইমন, শানরা রুম থেকে বের হতেই লিফট থেকে বের হয়ে আসার কোরিডোর থেকে কাশাকাশির শব্দ পায়। শান ফিসফিস কন্ঠে বললো
” এসে পড়েছে ওরা।” শান ইমনের রুমে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলো না। উল্টো কোরিডোরে এক গলির ভেতর লুকিয়ে পড়লো তিনজন।
লোকগুলো সোহার রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় তাদের মধ্যে সোহাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করা লোকটাও রয়েছে। আড়াল থেকে তাকে দেখে শানের মুখের গড়ন শক্ত হয়ে যায়। রাগে হাত মুঠো করে রাখে। সেই লোকটা কর্কশ গলায় বলে উঠলো
” দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোক। ওই পুলিশের বউকে আমাদের কবলে না নিয়ে শান্তি পাবো না। ওই মেয়েই এখন আমাদের বাঁচার একমাত্র পথ। আগেরবার না না চিনেই বাঁচার পথ হিসেবে মেরেছিলাম এবার ইচ্ছে করে হাতিয়ার বানাবো পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য।” তাদের মধ্যে দুটো ছেলে দরজা ভাঙার চেষ্টা করতে থাকে। সোহা ভয় পেয়ে শানের খামছে ধরে। শান চোখের পলক ফেলে ধীর গলায় বললো
” ভয় পাবে না আমি আছি।”
দরজা ভাঙায় সক্ষম হতেই তারা সব হুরমুরিয়ে ভেতরে ঢুকে। সবাই সোহাকে খুঁজতে থাকে কিন্তু কোথাও পেলো না। সেই লোকটা পানির গ্লাসটা আছাড় মেরে ফেলে দিয়ে রেগে চিৎকার করে বললো
” হাত থেকে বেড়িয়ে গেলো। শেষ পথও বন্ধ হয়ে গেলো। নিশ্চই খবর পেয়ে গিয়েছে আমরা আসছি নাহলে এতো পাকা একটা খবর মিস হওয়ার কথা না।”
লোকটা রেগে বেরিয়ে যেতে নিলেই দরজার সামনে শাম, ইমন আর সোহা এসে দাঁড়ায়। সবাই পুলিশ দেখে ঘাবড়ে যায়। শানদের পেছনে থেকে একে একে কয়েকজন পুলিশ এসে তাদের ধরে নেয়। তবে শান সেই লোকটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চোয়াল শক্ত করে হাত মুঠো করে সেই লোকের মুখ বরাবর ঘুষি দেয়। লোকটা ব্যাথা পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে। শান দাঁতে দাঁত চেপে লোকটার কলার ধরে বললো
” সোহাদ ক্ষতি করতে চেয়েছিলি না ? সোহার ক্ষতি করতে এসে অনেক বড় ভুল করেছিস। নিজেদের আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিসই সাথে তোর সাথে কি কি করবো তোর ধারণার বাইরে।” লোকটা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় শান আর সোহার দিকে তা দেখে ইমন তাচ্ছিল্য হেসে বললো
” পুলিশ দেখেও তেজ কমছে না তাই না ! আমাদের কি আপনার সেই কেনা পুলিশদের মতো ভেবেছেন ? টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়ে যাবেন তারপর আবার অপরাধ মূলক করে বেড়াবেন ? আমাদের হাতের নাগালে যখন একবার পরেছেন এবার কি কি হয় দেটা দেখবেন আর এই তেজ কোথায় থাকে সেটাও আমরা দেখবো। নিয়ে যাও সবাইকে।” ইমনের কথা শুনে একে একে সবাইকে নিয়ে যেতে থাকে। সোহা শানের কাছে এসে দাঁড়াতেই লোকটা হ্যান্ডকাপ হাতেই রেগে সোহাকে জোড়ে ধাক্কা মেরে বসে। আগেই সব অস্ত্র নিয়ে নেওয়ায় আঘাত করতে পারলো না ঠিকই কিন্তু সোহা পড়ে গিয়ে বেডের কোণায় লাগতেই মাথায় ব্যাথা পেলো আর কোমড়েও ব্যাথা পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে। শান রেগে লোকটাকে পরপর আরো দুটো ঘুষি দেয়। ইমন শানকে থামিয়ে কনস্টেবলকে ধমক দিয়ে বললো
” এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো জলদি নিয়ে যাও!”
শান দৌঁড়ে সোহার কাছে যায়। সোহা শানকে ধরে সোজা হয়ে বসে। ইমন এগিয়ে এসে চিন্তিত হয়ে সোহাকে বললো
” বেশি চোট পেয়েছো ? ডক্টর ডাকাবো আমি ?” সোহা মাথা নেড়ে বললো
” নাহ লাগবে না বেশি ব্যাথা লাগেনি আমার। ঠিক হয়ে যাবে।” ইমন শানকে বলে বেড়িয়ে যায় আর যাওয়ার আগে বললো
” আমি রুম সার্ভিসকে পাঠাচ্ছি রুম পরিষ্কার করতে হবে আর আইস কিউব আনতে বলবো।”
ইমন চলে যেতেই শান সোহাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কপালে কিছুটা কেটে গিয়েছে আর অনেক টুকু ফুলে গিয়েছে ইতিমধ্যে। শান সোহার হাত পা দেখতে দেখতে বললো
” আর কোথায় ব্যাথা পেয়েছো ?” সোহা শানকে থামিয়ে বললো
” আরে আর কোথাও লাগেনি আমার। একটু কোমড়ে লেগেছে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।” শান গিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। এরমাঝে রুম সার্ভিস এসে দাঁড়িয়ে থাকে। কয়েকবার নক করলে সোহা গিয়ে উঠে দরজা খুলে দেয়। আইস কিউব সোহার কাছে দিয়ে রুম ক্লিন করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রুম ক্লিন করতে করতে শানও ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে।
রুম সার্ভিসিং চলে যেতেই শান সোহার কপালে আইস দিয়ে দিতে থাকে। সোহা শানের দিকে চোখ বাকিয়ে তাকিয়ে বললো
” আচ্ছা এখন কি করবেন ? গ্যাংটা কে তো পেয়ে গিয়েছেন।” শান গম্ভীর গলায় বললো
” এখনও ফুল গ্যাং কে ধরতে পারিনি। গ্যাং এর আরো অর্ধেক লোককে খুঁজে বের করতে হবে। যদিও আজকেই ধরতে পারবো। ওই লোকটাকে এমন শাস্তি দেবো যা মরার আগেও মনে পরবে তার সাথে কি আর কেনো হয়েছিলো।” সোহা শানের দিকে তাকিয়ে দেখে শানের চোখ মুখ লাল আকার ধারণ করেছে। সোহা ঢোক গিলে চুপ করে গেলো।
হোটেলে ক্যান্টিন থাকায় দুপুরে তিনজন একসাথে সেখানেই লাঞ্চ সেরে নেয়। বিকেলের দিকে ইমন আর শান আবারও থানার দিকে রওনা দেয়।

জ্বলন্ত মোটা একটা মোমের আগুনে ছুড়িটাকে গরম করে নিতে ব্যস্ত শান। পাঁচ মিনিট হলো এই কাজে নিয়জিত রেখেছে নিজেকে। কাপড়ের সাহায্যে ছুরিটা ধরে রেখে গরম করছে। পাশেই ইমন ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি নিয়ে শানের সামনে বসে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সেই ব্যক্তির হাত, পা কেঁপে যাচ্ছে। কপাল আর গলা বেয়ে ঘামে জর্জরিত সেই ব্যক্তি। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে
” কি করবে তোমরা এসব দিয়ে ? আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছো কেনো ?” ইমন মেকি হাসি দিয়ে বললো
” আপনার তেজ কতোটা সেটাই মাপবো আমরা। তৈরি হয়ে নিন।” লোকটার গলা শুকিয়ে আসে।
ছুরিটা একদম গরম করে বাঁকা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ায় শান। লোকটা আঁতকে বলে উঠে
” কি করতে চাইছো তোমরা ? দেখো আমি বলছি একদম উল্টো পাল্টা কিছু করবে না।”
শান বাঁকা হেসে বললো
” কোনো কিছুই উল্টো পাল্টা নয়। সব আপনার প্রাপ্য। বুঝলেন ?” শেষ করেই জ্বলন্ত আগুনে গরম হওয়া ছুরিটা লোকটার পেটে ঢুকিয়ে দেয়। সেখানেই ঢুকিয়েছে যেখানে সোহাকে আঘাত করা হয়েছে। লোকটার গগনবিহারী চিৎকারের প্রতিধ্বনি রুমে খালি রুমটায় বারবার বারি খেতে থাকে। শান চোখ বন্ধ করে শুনে যাচ্ছে আর তার মনের জ্বলন্ত আগুন নিভিয়ে নিচ্ছে। লোকটা ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে চেয়ার থেকে নিচে পরে কাঁদতে থাকে ব্যাথায়। শান ছুরিটা দিয়ে আবারও লোকটার একটা হাতে আঘাত করলো। তার চিৎকার আরো বেড়ে গেলো। শান ছুরিটা নিয়ে বেড়িয়ে যায়। লোকটা ব্যাথায় কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেলে ইমনও বেড়িয়ে যায়। কনস্টেবলকে বলে লোকটাকে থানার আশেপাশের হসপিটালে হসপিটালাইজড করতে বলে দেয়। ইমন শানের কেবিনে যায়। শান শান্ত হয়ে বসে রয়েছে। ইমন কিছু বলার আগেই সেখানে সেই থানার অফিসার উপস্থিত হয় আর খুশির সঙ্গে বলতে থাকে
” শান চৌধুরী আপনার এই কাজে আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সবাই গর্ববোধ করছে। গত কয়েক বছরে কেউ এই কেস সলভ করতে পারেনি আপনি যতোটা সহজ করে করেছেন। যারাই চেষ্টা করেছে তাদের মধ্যে দুজন ওদের স্বীকারও হয়ে গিয়েছিলো। আজ আপনার জন্যে আমারও গর্ব হচ্ছে। কেউ তো একজন পেরেছে। কালকে ইন্টার্ভিউ আছে আশা করি দুজন উপস্থিত থাকবেন।” শান আলতো হেসে সায় জানায়।
হোটেলে এসে শান আর ইমন দুজন দুজনের রুমে চলে যায়। শান দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই সোহাকে অচেতন অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে। শান ভয় পেয়ে যায় সোহাকে এই অবস্থায় দেখে। দৌঁড়ে সোহার কাছে গেলো শান।

.

.

চলবে……..

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৪৮

শান দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই সোহাকে অচেতন অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে। শান ভয় পেয়ে যায় সোহাকে এই অবস্থায় দেখে। দৌঁড়ে সোহার কাছে গেলো শান। সোহার মাথাটা কোলে তুলে অস্থির ভাবে ডাকতে থাকে
” সোহা ! সোহা ! কি হয়েছে তোমার ? এই বউ ? সোহা !..” ডাকতে ডাকতে হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস নিয়ে সোহার মুখে ছিটিয়ে দেয় কিন্তু কাজ হয় না। শান আরো অস্থির যায়। কি করবে বুঝতে পারে না। শান সোহার হাত পা ঘষতে ঘষতে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখে মুখে কান্নার ভাব। সোহা হয়তো কেঁদেছিলো যার কারণে এখনও চোখ ভেজা হয়ে রয়েছে। শান উপায় না পেয়ে ইমনকে ফোন করে। ইমন রিসিভ করতেই শান জড়ানো গলায় বলে উঠে
” ইমন তাড়াতাড়ি আমার রুমে আয়। সোহার কি হয়েছে চোখ খুলছে না সোহা।”
ইমন উত্তরে আসছি বলেই ফোন কানে নিয়েই দৌঁড়ে চলে আসে। শান দরজা খুলে দিলে ইমন ভেতরে ঢুকে সোহার কাছে যায়। ইমন সোহাকে চেক করে বললো
” পানি ছেটা আরো আমি ম্যানেজারকে ফোন করছি।” শান সোহাকে কোলে উঠিয়ে বেডে শুয়ে দেয়। আরো কয়েকবার সোহার চোখে মুখে পানি দেয়। ইমন ইতিমধ্যে ম্যানেজারকে ফোন লরে ইমেডিয়েট ডক্টরকে আনতে বলেছে।
ইমন শানের অবস্থা দেখে শান্ত করার জন্য বললো
” তুই কাঁদছিস কেনো ? সোহা ঠিক হয়ে যাবে। কান্না বন্ধ কর।” শান কপালের ঘাম মুছে রুমে পাইচারি করতে থাকে।
পিটপিট করে চোখে খুলতেই সোহার ঝাপসা দৃষ্টি আগে শান আর ইমনের দিকে যায়। ইমন ফোন করছে বারবার কাউকে আর শান অস্থিরভাবে পাইচারি করছে। সোহা পুনরায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব হতেই সোহা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে ঠোঁট কামড়ে বড় একটা নিশ্বাস নেয়। চোখেত কার্নিশ বেয়ে পানি পড়লো। শান সোহার গলার শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে সোহার কাছে এসে বসে। সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে অস্থির গলায় জিজ্ঞেস করে
” সোহা ! ঠিকাছো তুমি ? কি হয়েছিলো তোমার ? তুমি কাঁদছো কেনো ? কথা বলো না !” ইমন দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে শানের কাধে হাত রেখে ধমকের সাথে বললো
” কি করছিস এসব ? একটু শান্ত হয়ে তারপর কথা বল। মেয়েটার মাত্র জ্ঞান ফিরলো।”
শান শ্বাস নিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে আবারো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সোহা শানের হাত খামছে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো
” আমার ব্যাথা করছে পেটে। আমি সহ্য করতে পারছি না। আমার খুব ব্যাথা করছে।” শান অসহায় গলায় জিজ্ঞেস করে
” এখনও ব্যাথা করছে ! কিন্তু কেনো ? কি হয়েছিলো ? বেশি ব্যাথা করছে ?” ইমন চিন্তিত হয়ে বললো
” শান আমার সিরিয়াস কিছু মনে হচ্ছে। ডক্টরের অপেক্ষা করতে হবে না। চল হসপিটালে নিয়ে যাবো আর ভাইয়ার সাথে কথা বলে নিচ্ছি রাস্তায়।” শান সময় নষ্ট না করে ফোন নিয়ে সোহাকে কোলে তুলে বেড়িয়ে যায়। ইমন নিজের আর শানের রুম লক করে লিফটে উঠলো দুজন।
গাড়িতে শান সোহাকে দুই হাতে আগলে রাখে কিন্তু সোহা মারাত্মক ব্যাথায় কাঁদতে কাঁদতে আবারও জ্ঞান হারায় এতে শান আবারও অস্থির হয়ে যায়। ইমন ড্রাইভ করতে করতে ইশানের সাথে কথা বললো। ইশান সাথে সাথে একটা হসপিটালের নাম বলে যেখানে তার খুব পরিচিত একজন রয়েছে এবং ভালো হসপিটাল। কিছুটা দূড় হলেও সেখানেই ছুটলো ইমন।
হসপিটালে আসতেই নার্সরা সোহাকে কেবিনে এডমিট করে। শান ডক্টরকে কিছু বলার আগেই ডক্টর বলে
” ড. ইশান চৌধুরী পেশেন্ট এর সব মেডিকেল ডিটেইলস দিয়ে দিয়েছে আমাকে। আপনারা নিশ্চিন্ত হয়ে বসুন। বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।”
ইমন আর শান কোরিডোরের চেয়ারে বসে থাকে।
শানের মন ছটফট করেই যাচ্ছে। ইমন শানের দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বললো
” আমার মনে হচ্ছে সকালে ধাক্কায় ব্যাথা পেয়েছিলো সেটার জন্যই কিছু হয়েছে।” শান মাথা নেড়ে বললো
” জানি না আমি কিছু। সোহা অনেক কষ্ট পাচ্ছে রে !” ইমন শানকে শান্ত করার চেষ্টা করে।

ঘন্টা খানিক ছুটাছুটির পর ডক্টর শান আর ইমনকে তার কেবিনে ডাকে। শান কিছুটা ভয় নিয়েই যায় কেবিনে। দুজন বসতেই ডক্টর তার কথা শুরু করে।
” আজকে পেশেন্টকে খাবারের মাধ্যমে ড্রাগ দেয়া হয়েছে। ড্রাগ যদিও অধিক মাত্রায় দেওয়া হয়নি কিন্তু যেই পরিমান দেওয়া হয়েছে সেটা পেশেন্টের জন্য ক্ষতিকর ছিলো। শরীরে যতোটা না প্রভাব করেছে তার চেয়ে তিনগুন পেশেন্টের অপারেশন হওয়া স্থানে প্রভাব সৃষ্টি করেছে যার কারণে সেখানে মারাত্মক ব্যাথা শুরু হয় এবং বারবার জ্ঞান হারিয়েছে। প্রথমবার ড্রাগ দেওয়ায় এমন হয়েছে আরো কয়েকবার এমন চলতে থাকলে হয়তো আরো গুরুতর কিছু হতে পারতো।” শান আর ইমন হতবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়।
“ড্রাগ দেবে তাও সোহাকে ? কিভাবে সম্ভব ?” শানের ভাবনার মাঝে ডক্টর দুজনকে পর্যবেক্ষণ করে বললো
” আপনাদের দেখে মনে হচ্ছে আপনারা কিছু জানেন না। এটা স্বাভাবিক, এসব চোখের আড়ালেই দেবে। পুলিশদের সামনে তো আর দেবে না ! তবে পেশেন্টকে আরো ড্রাগ দেওয়া হলে তারপর কি হবে সেটা নাই বললাম তবে ভাবনার বাইরেই কিছু হবে। ড. ইশানক চৌধুরীর সাথে আমি কথা বলে নেবো বাকিটা। আর পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে দেখা করতে পারেন। পেশেন্টকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে সেটা শেষ হলে নিয়ে যেতে পারবেন।”
শান আর ইমন কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। শান রাগে কিড়মিড় করতে করতে বলে
” আমি সিউর হোটেলের কেউই এসব কাজ করেছে। সেই লোকটা বলছিলো আমরা যে সেই হোটেলে রয়েছি সেটা পাকা খবর পেয়েছে। কেউ তো করছেই এমন গুটিবাজ।”
ইমন গম্ভীরতার সাথে বললো
” আমি এখনই থানায় জানাচ্ছি। আজই সব পরিষ্কার করবো তুই গিয়ে সোহাকে দেখে আয়। ” শান মাথা নেড়ে সোহার কেবিনে যায়।
সোহা চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো। দরজা খোলার শব্দ পেয়েই চোখ খুললো। শানকে দেখে মলিন হাসলো সোহা। শানের পা চলা সেখানেই থেমে যায়। সোহার মলিন হাসি দেখে শানের বুকটা পুড়ে যাচ্ছে। বারবার মেয়েটা কষ্ট সহ্য করছে শানের একদম সহ্য হচ্ছে না। বহু কষ্টে ভারী বুক নিয়ে সোহার পাশে গিয়ে বসে। শান আবদারের সঙ্গে বললো
” বউ তোমাকে একটু আদর করতে পারি ?” শানের এমন কথা শুনে সোহা কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খায়। শান সোহার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ঝুকে সোহার অধরে ছুঁয়ে গভীর ভাবে চুমু দিলো। সোহা ক্যানেলাবিহীন হাত দিয়ে শানের শার্টের কলার ধরলো আলতো ভাবে। শান আবারও কপালে আর গালে অধর ছুঁয়ে সোজা হয়ে বসলো। একহাতে সোহার হাত মুঠোয় পুড়ে নেয় অন্য হাতে সোহার গাল আদুরে ভাবে আকড়ে ধরে ব্যাথাতুর কন্ঠে বললো
” তোমাকে বারবার কষ্ট পেতে দেখে আমার আর ভালো লাগছে না। তুমি আমাকে কিছু জানাওনি আজ। আমাকে কি ফোন করা যেতো না ?”
শানের অভিমান ভরা কন্ঠস্বর শুনে সোহা ধীর গলায় বললো
” আপনি যাওয়ার পর থেকে আমার মাথা ঘুরাচ্ছিলো আর গা গুলিয়ে আসছিলো বারবার কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ মারাত্মক ব্যাথা শুরু হয়। ফোন চার্জে লাগানো ছিলো তাই ফোন করতে পারিনি। যখন সহ্য করা মুশকিল হয়ে পারছিলো তখনই বিছানা থেকে নামতে গিয়েছিলাম কিন্তু.. তারপর চোখ খুলে আপনাকে আর ইমন ভাইয়াকে পেয়েছিলাম।” শান দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো
” বুঝেছি। এখন সব ঠিকাছে আর চিন্তা করতে হবে না। তোমার ব্যাথা কমে গিয়েছে এখন নিয়মিত ঔষধ খেলে বাকিটা ঠিক হয়ে যাবে। একটু পর আমরা চলে যাবো। ঠিকাছে ?” সোহা সায় দেয়।
রাত ৯টার মধ্যে শানরা হোটেলে ফিরে আসে। সোহাকে রুমে রেখেই শান আর ইমন পুলিশদের নিয়ে হোটেলের কর্মচারীদের যেরা করতে থাকে আর সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে থাকে। সিসিটিভি দেখে একজনকে সন্দেহ হলে তাকে কঠিনভাবে জেরা করা হলে সব বলতে বাধ্য হয়।
সেই গ্যাং এরই লোক ছিলো সে তাই ইচ্ছে করে এমন করেছে সোহার সাথে। পুলিশরা সব শুনে তাকেও নিয়ে যায়।
শান আর ইমন যার যার রুমে চলে যায়। ডিনার টাইমে তিনজন রুমেই ডিনার করে নেয়।

রাতে সোহা গুটিশুটি মেরে শানের বুকে শুয়ে রয়েছে। শান বাড়িতে সব কথা বললেও সোহাকে এখনও ড্রাগ এর ব্যাপারে বলেনি। শান সোহাকে ঘুম পারাতে ব্যস্ত কিন্তু সোহা শানের বুকে আঁকিবুঁকি করতে ব্যস্ত। শান গম্ভীর গলায় বললো
” তুমি কি ঘুমাবে না ? তোমাকে রেস্ট করতে বলেছে ডক্টর।” সোহা মুখ তুলে শানের দিকে তাকিয়ে বললো
” আচ্ছা কালকে আমরা ঘুরতে যাবো না !”
শান ভ্রু কুঁচকে সোহার দিকে তাকালো তারপর বললো
” কিসের ঘুরতে যাবে ? অসুস্থ না তুমি ?” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” কেস শেষ করে আমাদের ঘুরার কথা ছিলো এখন এসব বলে আমাকে আটকাতে পারবেন না।” শান গম্ভীর গলায় বললো
” ঠিকাছে নিয়ে যাবো তবে কালকে নয় পরশু থেকে কালকে কোথাও যাওয়া হবে না। কোনো আবদার শুনছি না আর।”
সোহা ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো
” তাহলে অন্য কিছু হবে।” শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” অন্যকিছু মানে কি হবে ? কি ঘুরছে তোমার মাথায় ?” সোহা উত্তর না দিয়ে মিটমিট করে হাসতে থাকে।

.

.

চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে