#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৪১
সোহা নিয়মিত ভার্সিটিতে গেলেও ইতি কিছুটা ভয়েই বলা চলে। কখন সিনিয়র দের খপ্পরে পরে যায় ঠিক নেই। এখনও পর্যন্ত তাদের ত্রিসীমানার চোখে পরেনি দুজন।
ঘুম থেকে উঠে সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বসে। সোহা নিলার সাথে সাথে সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিতে থাকে। শান এসে বসতেই সোহা মুখে অতি মিষ্টি এক হাসি ফুটিয়ে শানের সামনে তার খাবার রাখে। শান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে সোহার এই হাসি দেখে। সোহার অযথা হাসি দেখেই শান ধরে নেয় কোনো ঘাপলা রয়েছে কোথায়। সোহা আর নিলা সবাইকে খাবার সার্ভ করে নিজ নিজ জায়গায় বসে পরে। সোহা শানের পাশের চেয়ারটাতেই বসেছে। সোহা সিমিকে গ্লাসে জুস ঢেলে দিয়ে বললো
” নাও আপু সব খাবার খেয়ে আমাদের বাবুকে তোমার পেটেই বড় করো তাড়াতাড়ি।” সোহার কথাই সবাই হেসে দেয়। সিমি ভ্রু কুঁচকে সোহার দিকে তাকাতেই সোহা দাঁত কেলায়। শান সোহার দিকে তাকিয়ে স্যান্ডউইচে কামড় বসায়।স্যান্ডউইচ খেতে খেতে এর স্বাদ বুঝে উঠতেই শান মুখে নিয়ে বসে থাকে। ঝালের মাত্রা এতো যে চোখ মুখ তার লাল হয়ে যায় এক কামড় খেয়েই। শান ঘাপটি মেরে বসে থাকে কি করবে বুঝতে পারছে না। শান লাল হয়ে যাওয়া চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে সোহা শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। কান দিয়ে তার গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে ঝালে শান দ্রুত গ্লাসে জুস ঢেলে খায় কিন্তু কোনো কাজ হয়না ঝালে তার বারোটা বাজার মতো অবস্থা। নিলা শানকে খেতে না দেখে বললো
” শান বসে আছো কেনো ? তোমার চোখ লাল হয়ে আছে কেনো ?” শান বহু কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো
” এমনি। আচ্ছা আ..মার একটা কাজ আছে। আমি উপরে খখেয়ে নিচ্ছি।” কথা শেষ করে কেউ কিছু বলার আগেই শান ব্রেকফাস্ট এর প্লেট হাতে নিয়ে এক প্রকার দৌঁড়ে উপরে ছুটে যায়। সবাই একটু অবাক হয় সোহা চিন্তায় পরে যায়। প্লেট নিয়ে গেলো কেনো আবার ? শান তো একদমই ঝাল খেতে পারেনা। সোহা উঠে চিন্তিত হয়ে বলে
” আমি দেখে আসছি একটু।”
সোহা রুমে ঢোকার সাথে সাথে শানের হেচকা টানে শানের বুকের উপর গিয়ে পরে। সোহা কিছু বোঝার আগেই শান সোহার অধর জোড়া নিজের আয়েত্তে নিয়ে নেয়। ঝালে দিশেহারা হয়ে গিয়েছে বেচারা। সোহা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে কিন্তু শান তার বলিষ্ঠ হাত দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে আরো। সোহার মিষ্টি ওষ্ঠধর শুষে ঝাল কমিয়ে নিতে ব্যস্ত। সোহাও শান্ত হয়ে যায়। শান ঝাল সহ্য করতে পারে না কিন্তু সোহা রাগের বশে শানের সাথে দুষ্টুমি করতে গিয়ে ইচ্ছে করে শানের স্যান্ডউইচে কাঁচা মরিচ আর বোম্বাই মচির বেটে দিয়েছে। সোহার নিশ্বাসবন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন শান সোহার ঠোঁট ছেড়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। সোহার গলায় কামড়ে ধরে। সোহা কিছু বললো না। কিছুক্ষণ পর শান সোহাকে ছেড়ে সোফায় বসে পড়লো ধপ করে পড়লো। সোহা শানের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে চোখ, মুখের লাল ভাবটা কমে গিয়েছে। সোহা প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখে প্লেট খালি। তারমানে শান পুরোটা স্যান্ডউইচ খেয়েছে ? সোহার ঠোঁট জ্বলছে মারাত্মক। সোহা রাগ দেখিয়ে বললো
” কি করলেন আপনি এটা ?” শান অগ্নিদৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে রেগে বললো
” তুমি জানো আমি ঝাল সহ্য করতে পারি না তাও তুমি পুরো স্যান্ডউইচ ঝাল দিয়ে বানিয়েছো কেনো ? তাই এটাই তোমার শাস্তি। ঝালও তুমি দিয়েছো মিষ্টিও তুমিই দেবে।” সোহা রাগে ফুসঁতে ফুসঁতে বলে
” এতোই যখন ঝাল খেতে পারেন না তখন পুরো স্যান্ডউইচ খেতে বলেছে কে আপনাকে ?” শান বাকা হেসে বললো
” তোমাকে কে বলেছে আমি পুরোটা স্যান্ডউইচ খেয়েছি ? টমি যদি তোমার জান না হতো তোমার টমিকে ওই স্যান্ডউইচ খাইয়ে মেরে ফেলতাম আমি।” সোহা চেঁচিয়ে বলে
” আপনি বেশি বেশি করছেন ! আপনি আবার আমার টমিকে নিয়ে কথা বলছেন ! টমিকে মারার আপনি কে ?” শান চোখ মুখ শক্ত করে সোহার বরাবর এসে দাঁড়ালো। সোহা ভয় পেলেও বুঝতে দিলো না। শান গম্ভীর গলায় বললো
” কেনো এমন উদ্ভট কাজ করেছো তুমি ? Answer me !” শানের বড়সড় ধমক শুনে সোহা এবার ফুঁপিয়ে কেঁদেই দিলো। শান শক্ত চাহনি দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। সোহা কাঁদতে কাঁদতে বললো
” আপনি আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে জাননা কেনো ! আমাদের বিয়ের দুইমাস হয়ে যাচ্ছে কতোদিন ধরে বলছি নিয়ে যেতে কোথাও নিয়ে জাননা আপনি !” শান এবার নরম হলো। সোহা কয়েকদিন ধরে বায়না করছে ঘুরতে যাবে কিন্তু থানায় আজকাল নতুন নতুন কেসের ব্যস্ততায় কোথাও যেতেও পারছে না। তার উপর এক্সিডেন্টের সময়ের কিছু পেন্ডিং ফাইল এখনও জমে রয়েছে। কেসের ব্যাপারে দৌঁড়ো দৌঁড়ি করতে করতে সেগুলোও দেখা হয়নি এরমাঝে ঘুরতে যাওয়া সম্ভব না। সোহাকে বোঝালেও সোহা ঘুরতে যাবেই যাবে। শান সোহার দুই গালে হাত রেখে চোখ মুছিয়ে বললো
” তোমাকে বললাম তো আমার এখন ব্যস্ততা চলছে কয়েকদিন পর তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।” সোহা শানের হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে কেঁদে কেঁদে বলে
” আপনি সবসময় বলেন ব্যস্ত ব্যস্ত। আপনার ব্যস্ততা কখনো শেষই হয়না। এখন ঘুরতে নিয়ে যেতে বলেছি তাও আপনি ব্যস্ত !” শান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলে
” আচ্ছা দেখছি আমি সময় বের করতে পারি কিনা ঠিকাছে ?” সোহা কান্না থামিয়ে শানকে শুধালো
” সত্যি ?” শান আলতো হেসে সায় জানিয়ে সোহাকে জড়িয়ে ধরে। সোহা সুযোগ বুঝে শানের বুকের কামড় বসিয়ে দেয়। শান হেসে বললো
” এই কামড়ে কিছু হবে না আমার। প্রতিদিন এমনি এমনি জিমে যাই নাকি ? তোমার কামড়ে আমার কিছু হবে না। আমি কামড় দিয়ে দেখাবো ? আমার কামড়ের শক্তি ?” সোহা আঁতকে দূড়ে সরে গিয়ে বলে
” এই না ! লাগবে না আমার আপনার শক্তি দেখার।” শান হা হা করে হেসে দেয়। সোহা মুখ ফুলিয়ে খালি প্লেট নিয়ে চলে যায় আবার খাবার আনতে।
সোহাকে নামিয়ে দিয়ে শান থানার উদ্দেশ্যে চলে যায়। সোহা আর ইতি গল্প করতে করতে আসছিলো তখন অনয় এসে হাজির। বেচারা রুমাল দিয়ে নাক মুছে হু হা করতে থাকে। ইতি আর সোহা হেসে দেহ অনয়কে দেখে। ইতি হেসে বললো
” কিরে ! কি খেয়েছিস ? এমন হু হা করছিস কেনো ?” অনয় মাথা নাড়াতে নাড়াতে হা করে বললো
” আরে আমার বেস্টফ্রেন্ড আমাকে পেয়ে ধরে ইচ্ছে মতো ফুচকা খাইয়েছে তাও মারাত্মক ঝাল দিয়ে।” সোহা আর ইতি ফিকফিক করে হেসে দেয়। সোহা ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে অনয়ের হাতে দিয়ে বললো
” নে পানি খা।” অনয় পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে ফেললো। পানি খেয়ে জান ফিরে পায়। নিশ্বাস ফেলে সোহার হাতে বোতল ধরিয়ে বললো
” থ্যাংকস বান্ধুবি আমার !” সোহা হেসে দেয়।
তিনজন হাটতে হাটতে আসছিলো। সোহা পানি খাবে বলে বোতল খুলছিলো কিন্তু অনয় এমন ভাবে লাগিয়েছে যে সোহা খুলতে পারছে না। খোলার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা। অদ্ভুত ভাবে ইতির হাত সোহার কনুইয়ে গিয়ে লাগতেই বোতলটা হাত থেকে ফসকে সামনে গিয়ে পরে। সোহা চোখ বড়বড় করে ইতিকে ধমক দিয়ে বললো
” দেখে হাটতে পারিস না ! হাত পা ছড়িয়ে হাটছিস কেনো ?” ইতি ক্ষেপে বললো
” শাঁকচুন্নি আমি ইচ্ছে করে দিয়েছি নাকি ? হাত লেগে গিয়েছে আমার।”
” এই যে দুই শালিক পাখি ! সিনিয়র দের সামনে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করে চলেছো তোমরা ! সাহস আছে বলতে হবে।” তৃতীয় ব্যক্তির গলায় শুনে সোহা আর ইতি দুজন সামনে তাকায়। ইতি আর অনয় দুজনের গলা শুকিয়ে যায়। সোহার কোনো এক্সপ্রেশন নেই যেনো চেনেই না ওদের।
সিনিয়র দের টিম এর মূল গুরু হচ্ছে হৃদয়। দাতগে চেলাপেলা তো রয়েছেই । সোহা ভ্রু কুঁচকে বললো
” কারা আপনারা ? আপনাদের সামনে ঝগড়া করতে সাহস থাকার কি আছে ? আমি সবার সামনেই সব কিছু করতে পারি।” হৃদয় কিছুটা থতমত খেয়ে গিয়েছে তার চেহারা দেখে বোঝা গেলো আর ইতি, অনয় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সোহা কি করবে একমাত্র সেই জানে। হৃদয় গলা ঝেড়ে কড়া গলায় বললো
” এই মেয়ে বেশি মথা বলো ! তুমি জানো না আমরা কে ! আর এতোদিন তো তোমাদের দেখিনি। কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট তোমরা ?”
.
.
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৪২
হৃদয় গলা ঝেড়ে কড়া গলায় বললো
” এই মেয়ে বেশি কথা বলো ! তুমি জানো না আমরা কে ! আর এতোদিন তো তোমাদের দেখিনি। কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট তোমরা ?” সোহা
মুখ বাঁকিয়ে বললো
” আপনি আমাদের চনেনে না ! ছিঃ !” হৃদয় বোকার মতো তাকিয়ে থাকে সাথে তার চেলাপেলাও। ইতি আর অনয়ের পেট ফেটে হাসি আসলেও নিজেদের সামলে রাখে। হৃদয় আঙুল দিয়ে কপাল ঘষে তার পেছনে ঘুরে সবার দিকে তাকিয়ে রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” তোরা চিনিস ওদের ? ভার্সিটিতে স্পেশাল কেউ এসেছে অথচ সেই কথা আমাকে জানানো হয়নি ? ওদের তো পরে দেখে নিচ্ছি আমি।”
সোহা, ইতি, অনয় এতোদিনে প্রত্যেককে দূড় থেকে দেখে দেখে পরিচয়ও জেনে নিয়েছিলো। তাদের মধ্যের লিমন নামের ছেলেটি মাথা নেড়ে বললো
” না দোস্ত ভার্সিটিতে তেমন কেউই তো আসেনি। আসলে তো সেই খবর আমার কানে অনেক আগেই পৌঁছে যেতো।” সোহা গালে হাত দিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বললো
” ওমা ! ভার্সিটিতে কে আসে না আসে সব খবরই আপনার কানে পৌঁছে যায় ? এটা কিভাবে সম্ভব ? তাহলে আমাদের চেনেন না আপনি ? ছিঃ ! ছিঃ ! লজ্জার বিষয় এটা। তবে যাই বলুন না কেনো আপনাদের আমার ভালোই লাগছে। সবাই বোকা বোকা।” ইতি আর অনয় মুখে মাস্ক পরে নেয়। সিনিয়রদের সামনে হাসতে পারবে। তাই মাস্কের নিচেই হাসা ভালো এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত ব্যাপার।
এদিকে হৃদয়ের মনে হচ্ছে তার মাথায় কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তার মান-সম্মানে এভাবে পানি ঢেলে ধুইয়ে দিচ্ছে সামান্য মেয়েটা ? তার নিজেরই লজ্জা লাগছে। ইচ্ছে করছে সবাইকে মাটিতে পুতে রেখে দিতে কিন্তু আপাতত কয়েকদিনের জন্য তার হাত বাধা। এই কয়েকদিনে প্রচুর র্যাগিং করিয়েছে। তাদের এই র্যাগিং এর স্বীকার হয় এই ভার্সিটির আরেক ভিপির মেয়ে এবং তার বান্ধুবিগন। হৃদয়ের চেলাপেলার কেউই চিনতো না তাই এই ভুল করে বসেছে যার কারণে কালকে তার বাবাকে ডাকে এবং তার বাবা সহ ভার্সিটির প্রিন্সিপ্যাল, ভিপি সহ কয়েকজন ওয়ার্নিং দেওয়া দিয়েছে। তাই আপাতত কয়েকদিন চুপই থাকতে হবে।
হৃদয় দাঁতে দাঁত চেপে মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো
” তোমার নাম কি আপু ? কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট তুমি ?” সোহা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো
” আমি ফার্স্ট ইয়ার এর স্টুডেন্ট আর নাম সোহা। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ইতি আর ফ্রেন্ড অনয়।” হৃদয় মেকি হাসি ঝুলিয়ে বললো
” তা তুমি কার মেয়ে হও ? মানে তুমি ভার্সিটির কোনো টিচার বা প্রিন্সিপ্যাল স্যার বা কারো মেয়ে হও ?”
সোহা বড়সড় হাসি দিয়ে বললো
” নাতো কারো কিছুই হই না তবে ড. ইশান চৌধুরী, সামির চৌধুরী, শান চৌধুরী তিনজনই এই ভার্সিটির প্রাক্তন স্টুডেন্ট এবং প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর অনেক প্রিয় স্টুডেন্ট তিনজন। আপনারা নিশ্চই চিনেন তাদের ! তাদেরই বাড়ির কেউ একজন আমি বাকিটা পরে জেনে নেবেন একদিন। আমার সাথে কিছু করলে এই ভার্সিটি সহ আপনার উপর তাণ্ডবলীলা বসে যাবে। আচ্ছা আজ যাই ক্লাসের দেড়ি হচ্ছে।” সোহা, ইতি আর অনয়কে নিয়ে ফুরফুরে মুডে চলে গেলো। হৃদয়ের পেছনে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে সোহার যাওয়ার পথ চেয়ে। হৃদয়ের চেহারা দেখার মতো। এই মেয়ে এমন বায়োটা দিয়ে গিয়েছে যে তার হাত পা বাধা পড়ে গেলো। হৃদয় চেঁচিয়ে উঠে রাগে। পেছনে ঘুরে লিমন, মামুন, অমিত, প্রমা, রিমি সবার উপর চেঁচিয়ে বলে উঠে
” কতোবার বলেছিলাম তোদের আমাকে ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার সুযোগ দিতে ! তোরা আমার বন্ধু নামে কলঙ্ক। আজ ছাত্রলীগের নেতা হলে হাত পা বেধে বসে থাকতে হতো না। এই পিচ্ছি মেয়ে আমাকে সাবধান করে গিয়েছে। কতোবড় সাহস মেয়ের !” রিমি ফোঁড়ন কেটে বলে উঠে
” চৌধুরী বাড়ির মেয়ে সাধারণ হবে ভাবছো কি করে ? ওর থেকে দূড়ে থাকাই ভালো তার উপর শান চৌধুরী এখানকার থানার বড় পোস্টের অফিসার। এই মেয়ের কিছু করলে এমনি এমনি ছেড়ে দেবে না।” হৃদয় রেগে রিমি দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়। রিমির মুখ বন্ধ হয়ে যায়। রিমি ঢোক গিলে চুপ করে গেলো। ক্লাসের জন্য ঘন্টা বাজতেই হৃদয় হনহনিয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
হৃদয় এই ভার্সিটির একজন ভিপির ছেলে। বাবা ব্যবসাও করে। হৃদয় মাস্টার্স পড়ছে। ক্লাসের টপ বয় হলেও ব্যবহারে, চলাফেরায় প্রচণ্ড উশৃঙ্খলা রয়েছে। মারামারি, র্যাগিং এসবেই পরে থাকে। ছাত্রলীগের নেতা হতে চায় কিন্তু তার বাবা, মার আপত্তি রয়েছে। বাবার হুমকি ধমকি শুনে বন্ধুরাও এখন সায় দেয় না তাকে সেসবে। হৃদয় আর রিমির বিয়ে পারিবারিক ভাবেই ঠিক রয়েছে আগে থেকে। প্রত্যেকেই চৌধুরী বাড়ির সবাইকে চেনে। ইশান, সামির, শান তিনজনের মধ্যে প্রত্যেক বছরে নবীন বরণের সময় যেকোনো দুইভাই উপস্থিত থাকে অনুষ্ঠানে। এক কথায় তারা রেগুলো স্পেশাল গেস্টের মধ্যেই পড়ে। তাদের এতো ঘটা করে কেনো ইনভাইট করা হয় কেউ জানে না।
ক্লাস শেষ হলে সোহা, ইতি, অনয় তিনজন হাসি মজা করতে করতে বাইরে বেরিয়ে আসে। অনয়ের সাথে ভালোই বন্ধুত্ব হয়েছে দুজনের। সোহা কথা বলতে বলতে শানকে জিপের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনের মাঝে ঢুবে থাকতে দেখে। সোহা অবাক হয় শানকে দেখে। আজকে শানের আসার কথা ছিলো না তাই দেখে অবাক হলো। অনয় শানকে দেখতে পেয়ে সোহাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” আচ্ছা সোহা শান চৌধুরী কি হয় তোর ?” সোহা থতমত খেয়ে অনয়ের দিকে দৃষ্টি পাত করে। অবাক স্বরে বলে
” জানিস না কি হয় ?” অনয় মাথা নেড়ে না করলো। সোহা ইতির দিকে তাকায় ভ্রু কুঁচকে। ইতি হাই তুলে বললো
” তুই কিছু বলতে বলিসনি তাই বলিনি এখনও।”
অনয় সোহাকে কনুই দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো
” বলবি তো নাকি !” সোহা গলা ঝেড়ে বললো
” তাকে গিয়েই জিজ্ঞেস করেনে।” অনয় বিব্রর গলায় বললো
” কিছু মনে করবে না তো আবার !” সোহা ঠেলেঠুলে বলে
” নারে ভাই তোকে চেনে যা তুই।” অনয় শার্টের কলার টলার ঝেড়ে গেলো সাথে ইতি আর সোহাও আসে। অনয় গিয়ে শানকে উদ্দেশ্য করে বললো
” হ্যালো ভাইয়া ! কেমন আছেন ?” শান ফোন থেকে চোখ তুলে অনয়ের দিকে তাকালো। পেছনে ইতি আর সোহাকে দেখে অনয়ের দিকে আলতো হেসে তাকালো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখের সানগ্লাস খুলে মিহি হেসে বললো
” হাই। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুমি কেমন আছো ?” অনয় ঢোক গিলে বললো
” জি ভাইয়া ভালোই। আচ্ছা ভাইয়া একটা question করতে পারি ?” শান সায় দিতেই অনয় বললো
” সোহা আপনার কি হয় ?” শান ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে সোহার দিকে তাকালো। সোহা লজ্জা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শান অনয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে বেচারা উত্তর শোনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শান ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বললো
” আমার মেজো ভাবির ছোট বোন মানে আমার বেয়াই।” অনয় উত্তরে
” ওওও..” বললো। সোহা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ইতি মিটমিট করে হাসছে। রাগে দুঃখে সোহার চোখ টইটুম্বুর হয়ে যায়। ফুঁপিয়ে কেঁদে দেবে এমন অবস্থা। শান তা দেখে মুচকি হেসে আবারও অনয়কে উদ্দেশ্য করে বললো
” With she is my wife and my life line.”
অনয় হতবাক হয়ে তাকালো সোহার দিকে। সোহা কান্নার থামিয়ে মুখ ফুলিয়ে তাকায়। অনয় একবার সোহা আর আরেকবার শানের দিকে তাকায়। অনয় সোহাকে উদ্দেশ্য করে অবাক হয়ে বললো
” তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে ? আমাকে বলিসনি এতোদিন !” সোহা দুঃখি দুঃখি ফেস করে বললো
” সরি ! আসলে আমি ভেবেছিলাম কয়েকদিনে ভার্সিটিতে আসিনি তখন বোধয় ইতি জানিয়েছে।” অনয় রাগ নিয়ে ইতির দিকে তাকায়। ইতি বোকা হাসি দেয় বিনিময়ে। শান অনয়ের সাথে কথা বলতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে অনয় বিদায় নিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় সাথে ইতিকেও নিয়ে যায়। আজ ইতিকে ড্রপ করে দেবে বলে।
সোহা মুখ ফুলিয়ে গাড়িতে উঠে বসলে শানও এসে বসে। শান বাঁকা হেসে বললো
” কেমন লাগলো বেয়াই শুনে ? এটা প্রতিশোধ ছিলো বুঝলে আমার বউ ? সকালে ঝাল স্যান্দডউইচ খাইয়েছো সেটার জন্য। ভেবেছিলাম বোন বলবো কিন্তু আমি আবার এতো পাষাণ নই। বউ কে বোন বলতে পারিনি।” সোহা রেগে শানের হাত ধরে কামড় বসিয়ে দেয়। যদিও বেশি জোড়ে দেয়নি তাও শান ব্যাথায় কুঁকড়ে চোখ পাকিয়ে বললো
” রাক্ষস নাকি তুমি ? আমার মতো ভালো মানুষকে খেয়ে ফেলবে তুমি? পরে কিন্তু আর এতো ভালো জামাই পাবে না।” সোহা রেগে চিৎকার করে শানের চুল ধরে টেনে দেয়। শান হেসে কুটিকুটি। সোহার সাথে শয়তানি করতে করতে বাড়ি ফিরে আসে। সোহা রেগে ফায়ার হয়ে আছে আজ। বাড়িতে ঢুকতেই টমি দৌঁড়ে সোহার পায়ের কাছে এসে বসে। সোহা টমিকে কোলে তুলে উপরে চলে গেলো। ড্রইংরুমে শাহানাজ বেগম, নিলা, সিমি, সালমা, তামিম গল্প করছিলো সবাই সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শানের দিকে তাকায়। শাহানাজ বেগম জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়েছে সোহা ?” শান মাথা চুলকে হেসে বললো
” আবহাওয়া গরম করে ফেলছি।” শাহানাজ বেগম ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি করেছিস তুই ? আর আজকে এই সময় বাড়িতে যে !” শান উপরে যেতে যেতে বললো
” কাজ শেষ করে চলে এলাম। তামিম তোর মিষ্টিআপুর মাথায় একটু ঠান্ডা পানি দিয়ে যা নাহলে আমাকে পুড়িয়ে দেবে আগুন দিয়ে।” সবাই শানের কথায় হেসে দেয়।
সোহা ফ্রেশ হবে বলে তামিম কিছুক্ষণ পর গেলো। গিয়ে দেখে সোহা টমিকে কোলে নিয়ে বিছানার মাঝখানে মুখ ছোট্ট করে বসে রয়েছে। বারান্দার গাছ থেকে ফুল ছিড়ে এনেছে। টমিকে সেগুলো দিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছে। তামিম গিয়ে বেডে এক পাশে বসে সোহাকে শুধালো
” মিষ্টিআপু তোমার মন খারাপ কেনো ?” সোহা তামিমের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো অল্প সময় নিরব থেকে বলে উঠে
” ছাঁদে যাবে ?” তামিম মাথা নেড়ে বললো
” হ্যা তুমি বললে অবশ্যই যাবো তবে ভাবি বলেছে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে তোমার আর ভাইয়ার খাবার দিয়েছে টেবিলে।” সোহা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বাইরে যেতে যেতে বললো
” পরে খাবো।” সোহা তামিমকে নিয়ে ছাঁদে গেলো। ছাঁদটা ফুল গাছ দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে তামিমের সাথে গল্পে মেতে উঠে।
রাতে সোহা টেবিলে বসে পড়ছে। পড়ছে বললে ভুল হবে ঝিম মেরে ধ্যান মগ্ন হয়ে বসে রয়েছে বলা যায়। সোহার পেটের সেই জায়গায় চিনচিন করে মারাত্মক ব্যাথা করছে হঠাৎ করে। শানকে কিছু বলছেও না। দম দিয়ে বসে আছে।
সোহা পড়া রেখে চুপচাপ থাকতে দেখে শান বুঝতে পারছে না সোহা এতো কি ভাবছে । শান উঠে গিয়ে সোহার পাশে দাঁড়ালো। গম্ভীর গলায় বললো
” মুখ বন্ধ করে কি পড়ছো তুমি?” সোহা চমকে শানের দিকে তাকালো। তারপর বইটা ঠাস করে বন্ধ করে দিলো। শান রাগি গলায় বলে
” বই বন্ধ করলে কেনো তুমি ? পড়তে বসো চুপচাপ।” সোহা উঠে দাঁড়িয়ে শানকে জড়িয়ে ধরে বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকে। শান অবাক হলো সোহার এহেন কাণ্ডে। হলো কি মেয়েটার ? এক রাগছে তো একবার নিভছে ! শান অনুভব করলো শার্ট ভিজে যাচ্ছে। তারমানে সোহা কাঁদছে ! শান আদুরে স্বরে অস্থির গলায় বললো
” সোহা ! কাঁদছ কেনো তুমি? কি হয়েছে ? সোহা ! বউ আমার কাঁদছ কেনো ? বকা দিয়েছি বলে ?”
সোহা এবার ঢুকড়ে কেঁদে উঠে। শান বিচলিত হলো। সোহার মুখ উঠিয়ে চোখ মুছিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। সোহা আবারও চোখের পানি ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো
” বাড়িতে যাবো আমি। মা,বাবার কাছে যাবো আমি। এখনই নিয়ে চলুন আমাকে।”
শান হাফ ছেড়ে বললো
” এই জন্যে কাঁদতে হয় ? আমাকে বললেই তো নিয়ে যেতাম আমি। আগে কান্না বন্ধ করো তারপর সব কথা হবে।” সোহা আরো বেশি করে কাঁদতে থাকে। শান রাগি গলায় বলল
” কান্না থামাতে বললাম তো! তুমি ফের কেঁদে যাচ্ছো ! এবার কিন্তু তোমাকে নিয়ে যাবো না আমি !” সোহা চোখ মুছতে থাকে বারবার। একটু একটু করে কান্না থামিয়ে নেয়। শান সোহার দু গালে হাত রেখে সোহার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো
” আগামী পরশু তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো আর তোমাকে বাড়িতেও নিয়ে যাবো। আর কেঁদো না প্লিজ বউ ! তোমার কান্না দেখলে আমার বুকে তোলপাড় শুরু হয়। নতুন কেস সলভ করে ফেলেছি আর কিছু কাজ আছে সেটা ইমন নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে যাতে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারি। কালকে শুধু পেন্ডিং ফাইলগুলোর কাজ দেখবো। ঠিকাছে ?”
সোহা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালো। শান মুচকি হেসে বললো
” যাও এবার পড়তে বসো।” সোহা মিনমিন স্বরে বললো
” হঠাৎ করে কোমড়ে ব্যাথা করছে আজ আমি ঘুমাবো।” শান চিন্তিত হয়ে বললো
” কোমড়ে ব্যাথা করছে মানে ! কোথায় ?” সোহা বললো
” ওই যেখানে ছুড়ি দিয়ে কেটেছিলো।” শান অস্থির গলায় বলল
” এখানে ব্যাথা করছে মানে ! আমাকে আগে জানাওনি কেনো ? হঠাৎ ব্যাথা করছে কেনো ? দাঁড়াও মেডিসিন দিচ্ছি আমি।” শান ফার্স্টএইড বক্স এনে মেডিসিন দিলো সোহাকে। সোহা।সেটা খেতেই শান চিন্তিত হয়ে বললো
” ব্যাথা কমেছে ? নাকি ভাইয়াকে ডাকবো ?” সোহা বোকার মতো তাকিয়ে থেকে বললো
” মাত্রই তো খেলাম বুঝবো কি করে ?” শান শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে বললো
” ওহহ বুঝিনি। আচ্ছা আমি খাবার নিয়ে আসছি তুমি বসে থাকো একটু।” সোহা আটকে অনুরোধ করে বললো
” আমি খাবো না কিছু প্লিজ !” শান আর কিছু বললো না। সোহাকে বিছানায় জায়গা করে দিতেই সোহা ঘুমিয়ে পড়ে। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তার কাজ করতে থাকে। সোহা ঘুমিয়ে তলিয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যে। মধ্যেরাতে সোহার গা কাপিয়ে জ্বর এলো। সোহার গায়ের উত্তাপে ঘুম ভেঙে যায় শানের। সোহার গায়ে হাত দিয়েই চমকে যায় শান। হঠাৎ সোহার এতো জ্বরের কারণ বুঝে উঠতে পারলো না। থার্মোমিটারে জ্বর মাপিয়ে দেখে জ্বর ১০৩ ডিগ্রি । শান হতবাক হয়ে গেলো। দ্রুত পায়ে ইশানের রুমে গিয়ে নক করে। বেশ কিছুক্ষণ পর ইশান দরজা খুলে দেয়। শানকে দেখে ঘুম উধাও হয়ে যায়। ইশান অবাক হয়ে বললো
” কিরে এতো অস্থির হয়ে আছিস কেনো ? কি হয়েছে ?” শান অস্থির গলায় বললো
” ভাইয়া সোহার জ্বর উঠেছে ১০৩ ডিগ্রিতে চলে গিয়েছে কি করবো বুঝতে পারছি না।” ইশাম চমকে উঠে। শানকে নিয়ে দ্রুত সোহাকে দেখতে আশে আর নিলাকেও ডেকে নিয়ে এলো। নিলা সোহার মাথায় পানি ঢেলে দিতে থাকে। শান পুরো রুমে পাইচারি করতে থাকে।
.
.
চলবে……….