আধারে তুমি পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
1032

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৩০

আজ শান আর সোহার বিয়ে। সকাল থেকেই বাড়িতে হইচই শুরু হয়েছে। সোহার মা, বাবা আর ইতির মা, বাবাই সব কিছু দেখছে বলা যায়। সোহার বাবার কোনো ভাই নেই তাই দেখার মতো ইতির বাবাই তার একমাত্র বন্ধু রয়েছে আর বাকিরা তো রয়েছেই আত্মীয়তার পরিচয়ে। ইতির মা তার কাজের ব্যস্তার মাঝে সোহাকে উঠিয়ে দিয়ে গেলো। ইতি অনেক রাতে ঘুমিয়েছে এখন ডাকলেও কাজ হবে না সোহা নিজেই তাকে টেনে হিচরে ডেকে তুলবে তাই আর ডাকার প্রয়োজন মনে করলো না। সোহা ঘুম থেকে উঠে হাই তুলতে তুলতে মিরের সামনে দাঁড়ায়। চোখ খুলে নিজের গালে হলুদ দেখে সোহা অবাক হয়ে যায়। ইতি ঘুমে কাতর সেদিকে পাত্তা না দিয়েই সোহা ইতিকে ডাকতে ডাকতে বলে
” ইতি ! দেখ আমার গালে হলুদ কিভাবে এসেছে আমি তো রাতে শাওয়ার নিয়েই ঘুমিয়েছিলাম। রাতে তো ছিলো না হলুদ এখন কিভাবে আসলো ? তুই দিয়েছিস নাকি ?” ইতির নড়চড় না দেখে সোহা ইতির কাছে গিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ঘুম থেকে উঠালো। ইতি সোহাকে কুশন দিয়ে বারি মেরে বলে
” ধুর ! দূড়ে গিয়ে মর পাগলনি ! একটু ঘুমাতে দিচ্ছিস না আমাকে। ” সোহা চোখ বড়বড় করে অবাক হয়ে বললো
” কি বললি তুই আমাকে ! আমি পাগলনি ? তুই শাঁকচুন্নি। ঘুম থেকে উঠ বলছি !” সোহা টেনে টেনে ইতিকে ঘুম থেকে উঠালো। ইতি উঠে বসে সোহার চুল টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” বিয়ে করে শশুড় বাড়ি চলে যাচ্ছিস আজ আর এখনও ঠিক হলি না!” সোহা দাঁত কেলিয়ে বললো
” আমি ঠিক হয়ে গেলে তোদের জ্বালাবে কে ? আর সোহা তো সোহাই। সোহা বদলাবে না কখনো। এবার বল আমার গালে এতো হলুদ এসেছে কি করে ?” ইতি সোহার মুখ ধরে চোখ ছোট ছোট করে এদিক ওদিক দেখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো
” আমার কি মনে হচ্ছে বলতো ! রাতে তুই ঘুমানোর পর শান ভাইয়া চুপিচুপি এসে তোকে হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে। আহা ! কতো রোমেন্টিক আমার দুলাভাই টা।”সোহা ক্ষেপে বলে
” তুই মজা করছিস আমার সাথে ? উনার কি আর কাজ নেই রাত বিরেতে আমাকে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে যাবে !” ইতি সোহার গাল টিপে বলে
” হলুদ লাগিয়ে যেতেই পারে। আমার কথা তো সত্যিও হতে পারে। হবু বউ কে একটু হলুদ ছোঁয়ানোর ইচ্ছা তো জাগতেই পারে। অসম্ভব কিছু তো নয় তাই না !” সোহা ভাবনায় পরে গেলো। ইতি সোহাকে ভাবনায় রেখে ওয়াসরুমে ঢুকে পরে।
এদিকে শান সেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। তার নিজের বিয়েতে সে নিচেই তদারকি করছে সব কিছুর। ঘুরে ঘুরে বাড়ির ডেকোরেশন দেখছে, বাকি সব কিছু ঠিক রয়েছে কিনা সবই দেখছে। মুসফিক চৌধুরী শানের কাজকর্ম দেখে বিরক্ত হয়ে বললো
” মনে হচ্ছে আমরা বাড়ির লোকজন সব মরে গিয়েছি ? আমরা তো সবই দেখছি তুমি আবার এসব করছো কেনো ? অন্যকাজ করো গিয়ে যাও !” শান মুখ ছোট্ট করে বললো
” আর কি করবো বাবা ! বিয়ের দিন তো আর থানার কাজ করবো না ! ছুটি নিয়েছি তো তাই আর কোনো কাজ নেই।” মুসফিক চৌধুরী মুখ দিয়ে শ্বাস ফেলে বিরক্তির চেহারা নিয়ে চলে গেলো।
শান তামিমের পাশে সোহায় গিয়ে বসলো। তামিম সোফায় বসে বসে ঘুমাচ্ছে। সোহার বাড়ি থেকে এসে রাত সব গুলো ছেলে ভোর রাত পর্যন্ত নাচ গান করেছে। বলতে গেলে ব্যাচেলর পার্টি ছিলো। শান তামিমের চোখে মুখে পানি দিয়ে বলতে থাকে
” কিরে তামিম ! সোহাকে বিয়ে করে বাসরও করে ফেললাম আর তুই এখনও ঘুমোচ্ছিস ? এই তো ক্রাশের প্রতি ভালোবাসা ! ছিঃ ছিঃ ছিঃ !” আধো আধো ঘুমে শানের কথা কানে ঢুকতেই তামিম হুরমুরিয়ে বসে বলতে থাকে
” কি বলছো কি ভাইয়া ! আমি এতো ঘুমিয়েছি ? তোমাদের বিয়ে কখন হয়েছে ? আমাকে ডাকোনি কেনো তুমি ?” তামিম শানকে ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকতে দেখে মুখ কুঁচকে বললো
” তুমি মিথ্যা বললে কেনো ? আমার কাঁচা ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলে কেনো ?” শান ধমকে বললো
” ভাঙাবো না তো আর কি করবো ? এটা বিয়ে বাড়ি? সব গুলো ছেলে মরার মতো ঘুমাচ্ছে এখনো। আর দেখ তাকিয়ে মেয়েরা সেই সকালে উঠেই সাজগোছ শুরু করে দিয়েছে।” তামিম সোজা হয়ে বসে বললো
” হ্যা তোমারই তো বিয়ে । তুমিও গিয়ে একটু সেজে নাও !” শান বিরবির করে বললো
” থাক আমি ছেলে হয়ে সাজলে মেয়েদের আর খোঁটা দিতে পারবো না তাদের মেকাপ নিয়ে। তাছাড়া আমার আর সাজের কি দরকার ? আমি কি সুন্দর না নাকি ? এবার গিয়ে ছেলেদের ডেকে তোল। কোথায় না ঘুমিয়ে কাজ করবে ! কিন্তু মহাশয়রা ঘুমাচ্ছে।”
শানের কথা শুনতে শুনতে সিরি দিয়ে নেমে আসে সবাই। ইশান শার্টের হাতা উপরে বটতে বটতে শানের পাশে এসে বসলো। সামিরসহ সব কাজিনরা যা আছে সবাই ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে এসে বসে। ইমন হাই তুলে বললো
” রাতে যে এতোবড় হেল্প করেছি সেটা পাওনা দিয়েছিস ?” শান পা নাচাতে নাচাতে বললো
” কিসের পাওনা ? হাত, পা দেখেছিস ? দুই ঘা বসিয়ে দেবো তখন সব পাওনা পেয়ে যাবি।” ইশান ভ্রু কুঁচকে বললো
” কিসের পাওনা? কি করেছিস তোরা ?” ইমন জায়গা থেকে উঠে এসে ইশানের কাছে আসলো বলার জন্য তা দেখে শান এক লাফে উঠে গেলো। ইমনের কাছে গিয়ে ইমনকে দূড়ে নিয়ে সাবধান করে বললো
” ভেবে চিনতে কাজ করবি কিন্তু ! নাহলে খবর আছে তোর !” ইমন মুখ বাকিয়ে বললো
” সোহার বারান্দায় মই ধরার বদলে কোনো পাওনা দিয়েছিস তুই আমায় ! আবার বলছিস ভেবে চিনতে কাজ করতে ?” শান ভ্রু কুঁচকে বললো
” তুই তো জাস্ট মই ধরেছিস তাও কয়েক মিনিট এর জন্য। তোর হলুদের সময় আমি কয়েক ঘন্টা পাহারা দেবো তোকে।” ইমন খুশি হয়ে বলে
” এই নাহলে আমার বন্ধু !”
” ওহ এই ব্যাপার তাহলে ?” শান আর ইমন চমকে পেছনে তাকায়। সামির আর ইশান সবই শুনে ফেলেছে। শান অগ্নিদৃষ্টিতে ইমনের দিকে তাকালো। ইমন অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। সামির বললো
” তোরা কি রে ? আমি নিজের বিয়েতেও এমন কিছু ভাবিনি আর তুই আমার ভাই হয়ে এতো ফাস্ট ? এবার তো মনে হচ্ছে তোকেই আমার আগে বিয়ে দেওয়া প্রয়োজন ছিলো তাহলে কিছু শিখতে পারতাম।” ইশান সামিরের মাথায় চাটা মেরে বললো
” ছাগল তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখন এসব বলে নিজের মান-সম্মান খাচ্ছিস কেনো ? তবে শানকে নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে। আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে বিয়েটা এরেঞ্জ ম্যারেজ নয়।” ইশানের সন্দেহী কণ্ঠ শুনে শান ঢোক গিললো। তখনই শাহানাজ বেগম ডাকলো শানকে। শান আলতো হেসে বললো
” আমি যাচ্ছি।” শান কোনো রকমে পালিয়ে গেলেও ইশান আর সামির ইমনকে চেপে ধরে।
কিছুক্ষণের মধ্যে নাইসা আসলো দৌঁড়ে ইশানের আঙুল ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো
” পাপা মামনি অসুস্থ, মাম্মা ডাকছে তোমাকে।” সামিরের ভ্রু কুঁচকে যায় সিমির কি হয়েছে হঠাৎ ? সামির ছুটে চলে যায়। ইশানও ইমনকে ছেড়ে নাইসাকে নিয়ে গেলো রুমে।
সিমির হাত পা ঘষছিল নিলা আর সামিরের এক ফুফাতো বোন। সামির সিমির পাশে বসতে বসতে অস্থির হয়ে বললো
” সিমির কি হয়েছে ভাবি ?” ইশান আসতেই ইশানকে বসার জায়গা দিয়ে উঠে দাঁড়ায় নিলা আর বললো
” জানিনা কথা বলতে বলতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলো। সকাল থেকে দুর্বল লাগছিলো মেয়েটাকে।” সামির অস্থির হয়ে পড়ে সিমিকে নিয়ে। নিলা সেই মেয়েটাকে বললো
” শোনো মাকে ছাড়া বাইরে আর কাউকে বলার দরকার নেই। ঠিকাছে ?” মেয়েটা মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো। ইশান রুম থেকে তার স্টেথোস্কোপ আর কিছু জিনিস এনে সিমির চেকাপ করতে থাকে। নিলা কয়েকবার চোখে মুখে পানি ছিটালে সিমির জ্ঞান ফিরে আসে। ইশান চেকাপ করে মিটমিট হাসতে থাকে। সামির করুণ স্বরে বললো
” ভাইয়া তুমি হাসছো কেনো ? কি হয়েছিলো বলবে তো !” ইশান মুচকি হেসে বললো
” সুখবর এসেছে। ফ্যামিলিতে আরো একজন নতুন ম্যামবার আসতে চলছে।” সিমি অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সামির বললো
” তা তো আসছেই আজ সোহা।” নিলা বুঝতে পেরে শব্দ করে হেসে দেয়। ইশানও তালমিলিয়ে হাসলো। নিলা সিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
” আরে বোকারা ! তোদের দুজনের মাঝে একজন নতুন ম্যামবার আসছে মানে সিমি প্রেগন্যান্ট।” সামির আর সিমি চোখ বড়বড় করে তাকালো একে অপরের দিকে। শাহানাজ বেগমও রুমে এসেছিলো শানকে নিয়ে। দুজন এই কথা শুনেই আটকে যায় সেখানেই। খুশির বন্যা বয়ে যায় সবার মাঝে। শাহানাজ বেগম সিমির কাছে এসে কিছুক্ষণ কথা বলে একে একে সবাই বেরিয়ে গেলো। সবাই যেতেই সিমি ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। সামির অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে তোমার ? কাঁদছ কেনো তুমি? তুমি কি খুশি না সিমি !” সিমি সামিরকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” খুব খুশি আমি, খুব খুশি।” সামির হেসে সিমির মুখ তুলে বলে
” তো কাঁদছ কেনো ? তুমি জানো না আজ কতো খুশি হয়েছি আমি।” সামির সিমি দুই গালে হাত রেখে ছোট ছোট চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিলো। সিমি লজ্জা পেয়ে সামিরের বুকে মাথা রাখে।

সোহার তিন কবুল বলা হলে শান তিন কবুল বলে দুজনে এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো। তাদের এই বন্ধনে শত মানুষ সাক্ষী হয়। বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান সোহার ঘোমটা উঠিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে দুচোখ জুরিয়ে দেখতে থাকে। এতো গুলো মানুষের মাঝেও কেমন বেহায়ার মতো কাজ করছে শান। মুগ্ধা হয়ে তাকিয়ে রয়েছে সোহার দিকে। সোহার লজ্জা মাখা সেই চেহারা শানের সোহাকে দেখার তৃষ্ণা আরো বাড়িয়ে তুলছে। আর সোহা মাথা নিচু করে তাকিয়ে রয়েছে। লজ্জায় তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

.

.

চলবে……….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৩১ + ৩২

সোহার লজ্জা মাখা সেই চেহারা শানের সোহাকে দেখার তৃষ্ণা আরো বাড়িয়ে তুলছে। আর সোহা মাথা নিচু করে তাকিয়ে রয়েছে। লজ্জায় তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ইতি শানের পাশে বসে বললো
” আরে ভাইয়া এবার তো দেখা বন্ধ করুন ! বউ এখন আপনারই পরেও মন খুলে দেখতে পারবেন।” শান থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। সোহা লজ্জায় আরো নুইয়ে যায়। ইতিসহ তাদের চারপাশের ঘিরে রাখা সবাই হেসে উঠে। নিলা, ইশান এগিয়ে এসে সোহা, শানকে স্টেজে নিয়ে বসায়। সিমি বসে বসে সব কিছু দেখছে সামির তাকে ভালো করে হেলতে দুলতে দিচ্ছে না। তাকে কড়া শাসন করে পাশে বসিয়ে রেখেছে।
বিয়ের বর-বউ এর সাথে সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত। শান একটু কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না ভেবেই বিরক্তবোধে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ইমন ইতির পেছনে লেগে রয়েছে আঠার মতো চিপকে। ইতি ইমনের কাজকর্ম কিছুই বুঝতে পারছে না। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে দুই কোমড়ে হাত রেখে বললো
” কি সমস্যা আপনার ? আঠার মতো লেগে আছেন কেনো ? যেখানেই যাচ্ছি পিছু পিছু যাচ্ছেন যে !” ইমন শান্ত ভাবেই এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললো
” কেনো গেলে কি সমস্যা আমি তো বুঝতে পারছি না। প্রেমিকার সাথে হাটলেও সমস্যা এখন ? কোথায় যখন একা একা থাকি তখন তো বলো আমি তোমাকে ভালোই বাসি না।” ইতি সন্দেহী কণ্ঠে বলে
” মতলব কি আপনার ? আজ হঠাৎ এতো ভালোবাসা উতলা হয়ে পড়ছে কেনো আপনার ?” ইমন রাগি গলায় বলে
” এটাই তোমাদের মেয়েদের সমস্যা। একটু ভালোবাসছি তাতেও সহ্য হয়না আর যখন দূরে দূড়ে থাকি তখনও সহ্য হয় না। তাই না ?” ইতি অসহায় চাহনি দিয়ে বললো
” আচ্ছা জান আপনাকে আর কিছু বলছি না আমি যা ইচ্ছে করুন। এখন আঠার মতো কেনো রশ্মির মতো আমার সাথে আটকে থাকলেও কিছু বলবো না।” ইমন মাথা নেড়ে বললো
” তাহলে কাজ করতে থাকো নিজের মতো আর আমাকেও করতে দাও।” ইতি নিশ্বাস ফেলে ইমনকে নিয়ে দাঁড়িয়েই থাকে। দরকারি কাহ যখন নেই তখন অযথা পুরো বাড়িতে টোটো করার মানে দেখলো না। ইমন ইতির পাশেই দাঁড়িয়ে রইলো। শানের কাজিন আকাশের নজর পরেছে ইতির উপর তাই ইমন চায় না আকাশ কোনো সুযোগ পায় ইতির কাছে আসার।
অনেক্ষণ পর শান সুযোগ পেলো সোহার সাথে কথা বলার। শান ধীর গলায় শুধলো
” ফোন কোথায় তোমার ?” সোহা বোকার মতো শানের দিকে তাকিয়ে বললো
” আমার ফোন ! রুমে তালা মেরে ফোন তো চার্জে দিয়ে রেখেছি।” শান অবাক চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে বললো
” বাড়িতে এতো মানুষ থাকতে রুম তালা দিয়েছো কেনো ?” সোহা বিরবির করে বললো
” এতো মানুষ দেখেই তো রুমে তালা দিতে হয়। আমার এতো সুন্দর গোছানো রুমটা যদি সবাই ঢুকে ঢুলে নষ্ট করে ফেলে ? আর আমার জিনিস পত্রও তো আছে কিছু যদি চুরি হয়ে যায় ?” শান চোখ বড়বড় করে নিশ্বাস ফেলে বললো
” আমি একটা গুড নিউজ দেওয়ার জন্য তোমাকে ফোন করেছিলাম তা ত দেওয়াই হলো না।” সোহা ভ্রু কুঁচকে আগ্রহী হয়ে বললো
” কি গুড নিউজ ?” শান মুচকি হেসে বললো
” ছোটভাবি প্রেগন্যান্ট।” সোহার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। খুশিতে চেঁচিয়ে উঠলো
” কি বলছেন ?” সোহার চিৎকারে আশেপাশের প্রত্যেকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কি হয়েছে। সোহা খুশিতে কেঁদে দেবে এমব অবস্থা। বউ এর এমন কাজে সবাই উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে কি হয়ে বোঝার জন্য। শান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে নিজের বোকামির জন্য। এখন কথাটা না বললেই ভালো হতো আর বাড়ির লোক সবাই সোহার কাছে দৌঁড়ে এলো। শাহানাজ বেগম চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়েছে সোহা ? চিৎকার করলি কেনো এভাবে ?”
সোহা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো
” আপু প্রেগন্যান্ট ? আপুর বেবি হবে ! আমার অনেক খুশি লাগছে।” সোহা খুশিতে কি করতবে কি না! বাড়ির সবাই সোহাকে দেখে হাসাহাসি করছে। রিয়ানা রহমান রেগে বললো
” বাদর মেয়ে চুপচাপ বসে না থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করার কি দরকার আছে ? আশেপাশের মানুষ কি ভাব্বে? চুপ করে বসে থাক। এস্পব কথা যেনো কারো কানে না যায় !” মায়ের ধমক খেয়েও সোহা চুপ হতে পারলো না। ইতি আর ইমন সোহাকে এসব কথা ভুলাতে অন্য গল্প জুড়ে দেয়। তাও অনেক সময় পর সোহা সিমির ব্যাপার থেকে মনোযোগ সরাতে সক্ষম হয়।
বিদায়ের সময় বাড়ির প্রেত্যেকের চোখে পানি দেখা দেয় সোহার জন্য। সোহা তার মা, বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ কান্না করে। ইমতিয়াজ রহমান সবসময় শক্ত থাকলেও মেয়েকে বিদায় দেওয়ার সময় নিজেকে সামলে উঠতে পারেনি। ইতি আর ইতির মা, বাবার জন্যেও সোহা কেঁদেছে। সোহাকে গাড়িতে বসানোর পর ইমতিয়াজ রহমান শানের সাথে কথা বললো। শান কথা শেষ করে গাড়িতে বসে পরলে গাড়ি স্টার্ট দেওয়া হয়। সোহা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। শান সোহার হাতের উপর হাত রেখে আশ্বস্ত দিয়ে বললো
” এভাবে কেঁদো না। আমরা তো আবার আসবো।” সোহা কান্নার মাঝেই শানের হাতের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়। যতোই শান্তনা দেখ না কেনো মা, বাবাকে ছেড়ে আসার কষ্ট মুহূর্তেই চলে যাবে না।

শানের রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে শানের পছন্দে। এসব নিয়ে সোহার পছন্দের সম্পর্কে ধারণা ছিলো না এমনকি সিমিও বলতে পারেনি তাই শান নিজের পছন্দে রুম সাজিয়ে নিয়েছে। খাটের একদম মাঝখানটায় সোহাকে বসানো হয়েছে। সোহার পাশে বসে নিলা, সিমিসহ আরো কয়েকজন কাজিন গল্প করছে। এতোগুলো ছেলের মাঝে তামিম একা একজন ছেলে যে কিনা সোহার পাশে বসে রয়েছে। সবাই বারবার তাকে যেতে বললেও সে সোহার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। সোহা তামিমের সাথে কথা বলছে আর পুরো রুমটায় বারবার চোখ বুলাচ্ছে। তার খুব পছন্দ হয়েছে সাজানোটা। মনে মনে অনেক নার্ভাস থাকলেও কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর নিলা জোড় করে তামিমসহ সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো আর যাওয়ার আগে সোহাকে অল দ্যা বেষ্ট বলে গেলো। সবাই চলে যেতেই সোহার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে থাকে। ভয়ে জড়ো সড়ো হয়ে বসে থাকে।
হঠাৎ করে দরজা খোলার শব্দ পেয়েই সোহা ভয়ে লাফিয়ে উঠে। শান এসেছে বুঝতে পেরে ঘোমটা টেনে শক্ত করে ধরে রাখে আর চোখ মুখ খিঁচে সূরা পরতে থাকে।
শান সোহার কাজ দূড় থেকেই বুঝতে পারছে। সোহাকে ভয় পেতে দেখে ঠোঁট চেপে হাসলো। শান সোহার সামনে গিয়ে বসলো। সোহার ঘোমটা সরাতে চাইলে সোহা আরো শক্ত করে ধরে ফেলে। শান এবার হেসে দেয় শব্দ করে আর বলে
” আরে বোকা মেয়ে তোমাকে খেয়ে ফেলবো না আমি।” সোহা লজ্জা পেলো শানের কথায়। সোহা আলতো ভাবে হাত সরিয়ে মাথা নিচু করে রাখে। শান ঘোমটা উঠিয়ে সোহাকে দেখতে থাকে। লজ্জায় আর নার্ভাসনেস এর মাঝে বিয়ের সাজটা যেনো সার্থক। শান সোহার হাত ধরে উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। সোহা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয়। শান সোহাকে স্বাভাবিক করতে বললো
” বাদর রানীও লজ্জা পায় ! আমি ভাবতেই পারিনি সোহা লজ্জা পাবে।” সোহা ভ্রু কুঁচকে শানের দিকে তাকিয়ে বললো
” কেনো লজ্জা পাওয়া কি নিষেধ আমার জন্য ? আমাকে লজ্জা পাওয়া থেকে কে বয়কট করেছে ?” শান বললো
” বয়কট কেনো করা লাগবে ? তোমাকে দেখে কে বলবে তুমি এতোক্ষণ লজ্জা আর নার্ভাসনেসে মরে যাচ্ছিলে ?” সোহা হেসে দিলো শানের কথায়। শান পাশে রাখা খাবার প্লেট টা সোহার সামনে ধরে বললো
” খিধে পেয়েছে নিশ্চই ? মা পাঠিয়েছে তোমার জন্য।” খাবার দেখেই সোহা বুঝতে পারলো তার খিধে পেয়েছে। সকালে খাওয়া হয়েছিলো আর খাওয়া হয়নি শুধু নিয়ম করতে কিছুটা খেয়েছিলো। সোহা প্লেট নিতে চাইলে দেখে শান ছাড়ছে না। সোহা শানের দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো
” খিধে পেয়েছে তো দিচ্ছেন না কেনো ? শান আলতো হেসে বললো
” হুম খাবে তো আগে নামাজ শেষ করে নাও তারপর ফ্রেশ হয়ে খাবে।”
শানের কথায় সোহা জিভ কাটলো। তার নামাজের কথা মাথাতেই ছিলো না। সোহা আর শান অজু করে তাদের নামাজ করে নিলো আগে। শান সোহাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললে সোহা কনফিউজড হয়ে যায় শাড়ি পরবে নাকি অন্যকিছু। সোহাকে লাগেজের সামনে বসে থাকতে দেখে শান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়েছে ?” সোহা মাথা নেড়ে কিছু না বুঝালো। তবে কিছুক্ষণ পর শান বুঝে গেলো কি হয়েছে তাই শান্ত স্বরে বললো
” তুমি এখন রুমেই আছো। যেটা তোমার comfortable লাগবে সেটাই পরবে।” শান কথা শেষ করে ওয়াসরুমে চলে গেলো। সোহা হেসে থ্রী পিছ বের করে নিলো। শান ফ্রেশ হতে হতে একে একে সব চুরি, গহনা সব খুলে চুলও কোনো রকমে খুলতে সক্ষম হয়।
শান ফ্রেশ হয়ে বের হতেই সোহা দেখলো শান শেরওয়ানি চেঞ্জ করে একটা সাদা শার্ট পেরেছে। আর যাই হোক শানকে সাদা শার্টে অসম্ভব সুন্দর লাগে সোহার কাছে। মনে হয় ছেলেটার রূপ গাছে ধরেছে আর বেয়ে বেয়ে পরছে। সোহা শানকে দেখে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লো। শান সোহার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।
অনেক্ষণ পর সোহা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। টাওয়াল রেখেই শানের পাশে বসে বললো
” দিন।” শান আবদার স্বরে বললো
” আমি খাইয়ে দেই ?” সোহা কিছুটা অবাক আর অস্বস্তি নিয়ে তাকায়। শান ঠোঁটের কোণে মিহি হাসি নিয়ে সোহাকে খাইয়ে দিতে শুরু করে। সোহাও খেতে শুরু করলো। অস্বস্তি নিয়ে বসে থাকলে আর খাওয়া হবে না তার। সোহা খেতে খেতে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে
” আপনি খেয়েছেন ?” শান ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি বলছো !” সোহা মুখের খাবার শেষ করে বললো
” আরে বলেছি আপনি খেয়েছেন কিনা।” শান মাথা নেড়ে বললো
” হ্যা খাবো না আবার ! না খেলেও বেধে খাওয়ায়। বিয়ে বলে কথা !” সোহা ফিক করে হেসে দেয়। শান সোহাকে খাইয়ে দিতে দিতে বলতে থাকে
” সোহা ! এটা আজ থেকে তোমার বাড়ি। তুমি বাড়ির সবাইকে চেনো আর জানো তাই কোনো কিছু নিয়ে কথা বলতে বা চাইতে অস্বস্তিবোধ করবে না। তোমার আমার সাথে বিয়ে হয়েছে এর মানে এই না তোমাকে সবসময় চুপচাপ থাকতে হবে। তুমি বিয়ের আগে যেমন ছিলে সারাজীবন তেমনি থাকবে। আমি চাই সোহা কখনো যেনো না বদলায়। ঝগড়া, মারামারি, দুষ্টুমি যা ইচ্ছে তাই করবে। আর কখনো কিছু দরকার হলে আগে আমাকে বলবে। তোমার যা চাই তুমি সব পাবে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা থাকা জরুরী। কোনো কিছু বলার থাকলে স্পষ্ট ভাবে বলবে। সব কথা আমার সাথে শেয়ার করবে। বুঝেছো ?”
শানের সব গুলো কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো সোহা। শেষে শানের প্রশ্ন শুনে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। শান আরেকবার বাকা হেসে বললো
” তবে একটা কথা মাথায় রেখো। আমার অনেক অত্যাচারও সহ্য করতে হবে এখন থেকে। After all you are my one and only wife.” সোহা লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। শান হেসে সোহাকে খাইয়ে দিতে থাকে। খাওয়া শেষ করে সোহা চুপচাপ সোফায় বসে থাকে। শান সোহাকে বসে থাকতে দেখে কোমড়ে হাত রেখে বললো
” এখানেই বসে থাকবে সারা রাত ? নাকি বাসর করতে চাও ?” সোহা লজ্জা পেয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে। শান নিঃশব্দে হাসলো। বিছানার দিকে যেতে যেতে হাই তুলে বললো
” তাড়াতাড়ি এসে শুয়ে পরো। আজ অনেক ক্লান্ত তাই বাসর টাসর করতে পারবো না।” সোহা বিরবির করে বলতে থাকে
” মুখটা লাগামহীন করে ফেলেছে কয়েকদিনে লোকটা। বারবার লজ্জা দিচ্ছে আমাকে।”
” তুমি এতো লজ্জা পেলে কি আর করার ? আচ্ছা তাড়াতাড়ি এসো নাহলে কোলে করে এনে শুয়ে দেবো।” সোহা তাকিয়ে দেখে শান ইতিমধ্যে শুয়েও পরেছে। সোহা দ্রুত পায়ে শানের পাশে এসে বসে পরে। অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে ঘুমালো। প্রথম কোনো ছেলের সাথে ঘুমাচ্ছে অস্বস্তি হবেই। শান সোহাকে দেখে সোহার হাত টেনে হঠাৎ নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বললো
” এতো সাইডে গিয়ে ঘুমাচ্ছো কেনো ? আমি কি খেয়ে ফেলবো নাকি তোমাকে ? আমার বেড যথেষ্ট বড় হলেও তুমি এভাবে কিনারায় গিয়ে ঘুমালে আমার বেড আরো বড় হয়েও তোমাকে পড়া থেকে বাঁচাতে পারবে না। আর বিয়ের প্রথম দিনই বউ যদি পরে যায় লোকে কি বলবে ? বলবে বউকে বেডে জায়গা দেইনা। আমি একজন পুলিশ হয়ে অবশ্যই মিথ্যা অভিযোগ শুনবো না নিজের নামে।” সোহা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে। ছেলেটা ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে এতো কথা বলে ফেললো ? ভাবা যায় ! সোহা মাথা নেড়ে শানের টেনে আনা জায়গাতেই অবস্থান করলো। অস্বস্তি নিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে একসময় ক্লান্তি এসে ভর করলো আর ঘুমিয়ে তলিয়ে যায় ধীরেধীরে। সোহার গভীর ঘুমের ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ শুনে শান সোহার পাশ ফিরলো। সোহার ঘুমন্ত মুখের উপর হাত রেখে আলতোভাবে গালে হাত বুলায়। শান সোহার গালে ডিপলি কিস করলো। সোহার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই একসময় ঘুমে তলিয়ে গেলো।

___________________

সকালে ঘুম থেকে উঠে সোহা শানকে ঘুমেই দেখতে পেলো। সোহা বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর শানের ঘুম ভাঙতেই শান আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। ওয়াসরুম থেকে আসার পানির শব্দ শুনে পাশ ফিরে দেখে সোহা তার জায়গায় নেই। শান উঠে দাঁড়াতেই দরজায় বারি পড়লো। শান গিয়ে দরজা খুলতেই ইমন, সামির, তামিম, আকাশ আর দু-একজন মেয়ে কাজিন হুরমুরিয়ে ভেতরে ঢুকলো। শান ভ্রু কুচকে বললো
” কি হয়েছে এখানে ? লটারি লেগেছে নাকি?”
ইমন দাঁত কেলিয়ে বললো
” লটারি তো লেগেছে অনেক আগেই। লটারির কি অবস্থা সেটাই দেখতে আসলাম। কোথায় ? কোথায় আমাদের ভাবিজান !” সামির গলা ঝেড়ে বললো
” সোহা কিন্তু আমার ভাবি না শালি। কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস আমার একমাত্র শালিকে ?”
শান সোফায় আরাম করে বসে বললো
” তোমার শালিকে পাখির খাঁচায় বন্দি করে রেখেছি। আমি না চাইলে বের হতে পারবে না।”
আকাশ উঁকিঝুঁকি দিয়ে বলে
” আমি খুঁজে বের করতে পারলে কি দেবে আমাকে ?” শান গম্ভীর গলায় বললো
” তুই খুঁজে বের করলে তোকে কঠোরতম অপরাধে কারাগার বন্ধি করা হবে। বিনা অনুমতি ছাড়া আমার বউকে কেউ দেখতে পারবে না।” শানদের কাজিনদের মধ্যে মিতু নামের মেয়েটা বললো
” আজ তোমার বউ কেই সবাই দেখতে আসবে। দেখো ভেবে এতো হাজার হাজার মানুষকে জেলে জায়গা দিতে পারবে তো ?” ইমন মিতুর পক্ষ নিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো
” পয়েন্ট। আমাদের থানায় কিন্তু এতো জায়গা নেই যে তুই হাজার মানুষকে জেলে ঢুকাবি।”
তাদের কথার মাঝেই নিলা আর সিমি এসে হাজির হলো। শান আড়চোখে ইমনদের দিকে তাকিয়ে বললো
” তোমরাও কি ওদের মতো মজা নিতে এসেছো আমার সাথে ?” নিলা ভাব নিয়ে বললো
” জি না মশাই। আমরা আপাতত তোমাদের এই ঘর থেকে বিদায় করতে এসেছি।” সামির অবাক হয়ে বলল
” ওমা ! কেনো ? এখনই কি তোমরা সোহাকে সাজানো শুরু করবে নাকি ?” সিমি চোখ রাঙিয়ে বললো
” বিয়ের সব নিয়ম কানুন ভুলে গিয়েছেন নাকি? আরেকবার বিয়ে দিতে হবে আপনাকে ? এখন নিচে নিয়ে যাবো অনেক মানুষ রয়েছে তাই শাড়ি পড়াতে হবে সোহাকে।” সামির মাথা নেড়ে বললো
” তা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু তুমি আমার দ্বিতীয় বিয়ের কথা কেনো বললে ? এখন তুমি যদি চাও তাহলে তো আর কোনো উপায় নেই আমার আরেকটা বিয়ে করতেই হবে।” সিমি ক্ষেপে বললো
” খুন করে ফেলবো আপনাকে। যান এখান থেকে !” সবাই শব্দ করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো। শান মাথা চুলকে বললো
” আমি ফ্রেশ হয়ে বের চলে যাবো।” নিলা বললো
” ঠিকাছে তবে দেড়ি করলে চলবে না।”
শান মাথা নেড়ে সায় দিলো। সোহা বের হতেই শান ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো হুরমুর করে। সোহা অবাক হয়ে গেলো। নিলা আর সিমিকে দেখে বললো
” কি হয়েছে উনার ?” নিলা হেসে বলে
” তোমাকে শাড়ি পরিয়ে নিচে নিয়ে যেতে এসেছি শানকে যেতে হবে এখন। তাই ফ্রেশ হয়ে যাবে।” সোহা ঠোঁট গোলগোল করে
” ওওও” বললো। নিলা সোহাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে সোহার থুঁতনিতে হাত রেখে মুচকি হেসে বলে
” বাহ ! সবার মতো দেখি আমার সোহা রানীর ও বিয়ের পর সৌন্দর্য বেড়েছে !” সোহা লজ্জা মাখা হাসি দেয়। সিমি মুচকি হেসে সোহাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” এবার শাড়ি বের কর ! কোনটা পরে নিচে যাবি ?” সোহা পুরো লাগেজ এনে বিছানায় রাখলো। শাড়ি বের করতে করতে শান ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে চলেও গেলো। সোহা শানের এতো তাড়া দেখে মিটমিট করে হাসে। নিলা আর সিমি, সোহাকে শাড়ি পড়িয়ে নিচে নিয়ে গেলো।
রিসেপশনে সোহাকে সাদা লেহেঙ্গা পড়ানো হলো।
খুব সুষ্ঠু ভাবে রিসেপশন শেষ হলে সোহা আর শানকে নিয়ে যাওয়া হয়। শাহানাজ বেগম এতো ঝামেলার মাঝে সিমিকে যেতে দেয়নি বলেছে বিয়ের ঝামেলা শেষ হলেই যেতে। সোহা তামিমকে নিয়ে গিয়েছে সাথে ইমন আর আকাশ তো আছেই নাইসাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো তবে নাইসা মাকে ছাড়া থাকতে পারবে না তাই নিয়ে যেতে পারেনি।

সোহাদের বাড়ি থেকে এসে পরেছে সবাই আজ চারদিন হলো। বিয়ের উপলক্ষে আসা সব মানুষ চলে গিয়েছে। বাড়িটা আগের মতো শান্ত হয়ে গিয়েছে। শানও গত পরশু থেকে থানায় যাওয়া শুরু করেছে। এদিকে আজ সোহার ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট এর রেজাল্ট দেবে সেটা নিয়ে সোহা মারাত্মক দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

.

.

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে