#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৮
শানের জোরা জোরিতে সবাইকে যেতে হলো।
সবাই শানদের আলাদা টেবিলে বসিয়ে অন্য টেবিলে গিয়ে বসেছে। খাবার অর্ডার করলে কিছুক্ষণ পর সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে যায়। সোহা মাথা নিচু করে চুপচাপ খাচ্ছে আর শান সোহার বরাবর বসে বসে সোহাকে দেখে যাচ্ছে। ব্যাথায় কিছুক্ষণ কেঁদেছিলো তাতেই চোখ মুখ ফুলে রয়েছে। খেতে খেতে সোহার শানের দিকে চোখ পরতেই শানকে এভাবে তাকিয়ে দেখতে থেকে লজ্জা পেয়ে গেলো। সোহা খাওয়া বন্ধ করে বসে থাকে। আর হাত কচলাতে কচলাতে মনে মনে ভাবে
” এভাবে তাকিয়ে রয়েছেন কেনো তিনি ? আমার তো আনইজি ফিল হচ্ছে ! এভাবেই তাকিয়ে থাকলে খাওয়া হবে না আর আজকে।” শান সোহাকে বসে থাকতে দেখে বলে
” কি হলো খাচ্ছো না কেনো ?” সোহা আমতা আমতা করে বললো
” আপনি খাচ্ছেন না যে ?” শান ফিচলে হাসি দিয়ে বলে
” আমার জন্য তুমি খাওয়া বন্ধ করে রেখেছো ? তোমার তো খিধে পেয়েছে তুমি খাওয়া কান্টিনিউ করো আমি খাচ্ছি।” শানকে খেতে দেখে সোহাও খাওয়া শুরু করলো আবার। শান খেতে খেতে আড়চোখে সোহাকে দেখে এক পর্যায়ে বলে উঠলো
” যেই লোকটা তোমাকে ছুড়ি মেরেছিলো তার সম্পর্কে ইনভেস্টিগেশন করেছি আমাদের টিম নিয়ে। যার মাধ্যমে জানতে পেরেছি সে একজন অনেক বড় গ্যাং এর লোক। তারা আমাদের দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং অনেক অনৈতিক কাজ করে থাকে। আমরা লোকটার ব্যাপারে অল্প স্বল্প জানতে পেরেছিলাম কিন্তু পরে আমি ডিপার্টমেন্ট কে জানানোর পর তারা আমাকে সব জানিয়েছে সেই গ্যাং সম্পর্কে। ডিপার্টমেন্টের পুলিশরা চুপিচুপি সেই গ্যাং এর লোকজন সেজে কাজ করে কিন্তু যখন গ্যাং এর লোকজন তাদের চিনে ফেলে তারা বিপদের সম্মুখীন হয়ে কোনো রকমে বেঁচে ফিরে আসে। ডিপার্টমেন্ট থেকে এখন এই কেস টা আমি নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছ। সেটা কেউ জানেনা তাই আমরা সাইলেন্টলি ভাবে আমাদের সব কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আর খুব তাড়াতাড়ি তাদের ধরতে পারবো।” শান কথা শেষ করে সোহার দিকে তাকাতেই দেখে সোহা অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে রয়েছে। শান ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি হলো এভাবে কি দেখছো?” সোহা অবাক স্বরে বলে
” এতোবড় গল্প হয়ে গেলো ? কিন্তু আমাকে ছুড়ি মারা হয়েছিলো কেনো ?”
” সিসি টিভি ফুটেজ দেখে বুঝতে পেরেছি সেখানে কোনো মিটিং করতে এসেছিলো আর কাজ শেষ হওয়ার আগেই এক ওয়েটার তাদের কথা শুনে চিৎকার করে সবাইকে ডেকে বলে দেয়। একজন আগেই পালিয়ে গেলেও সেই লোকটাকে তারা ধরে ফেলেছিলো কিন্তু তাকে কিছু করার আগেই ছুরি বের করে তাদের ভয় দেখিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো। রেস্টুরেন্ট এর লোকরা তাও চেষ্টা করেছিলো তাকে ধরার তাই সবাইকে থামানোর জন্য তোমার উপর ছুরি চালিয়েছিলো।” সোহা চোখ বড়বড় করে বললো
” কি সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার স্যাপার !” শান সোহার রিয়েকশন দেখে আলতো হেসে বললো
” হুম এবার খাওয়া শুরু করো। বাসায় যেতে হবে তো !” সোহা মাথা নেড়ে খাওয়া শুরু করে। তবে শান চিন্তিত হয়ে উঠে। কারণ তাদের এই গোপণ মিশনের কথা কেউ জানে না। যদি সেই গ্যাং রা এই খবর কোনোভাবে খুঁজে বের করে জানতে পারে তাহলে সোহার উপর বিপদ আসবে। কারণ শানের সাথে প্রত্যেকবার সোহাকেই দেখেছিলো সেই লোকটা। ভাবতে ভাবতেই খাওয়া শেষ করে উঠে।
সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। সোহা আর ইতিকে ড্রপ করে দিতে চাইলে তারা না করে দেয় তাই তাদের গাড়ি নিয়ে একাই চলে যায়।
__________________________
চোখের পলকেই দিনগুলো কেটে গেলো। দেখতে দেখতে আজ সোহার গায়ের হলুদ এসে পরেছে।
দুই বাড়িতেই গমগম করছে মানুষের। সবার চিৎকার, চেঁচামেচি, উৎফুল্লতা দেখেই এটা বিয়ের বাড়ির আমেজ বলে মনে হচ্ছে।
সোহা বাড়ির ছাঁদে রেলিং ঘেঁষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে। চোখে তার অশ্রুকণা জ্বলজ্বল করছে বারবার। পায়ের কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে টমি। টমির হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে সেও সোহার অনুভূতি গুলো বুঝতে পারছে। টমিও বুঝতে পারছে কাল সোহা আর সে তার বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে। সময় কতো দ্রুত চলে যায় তাই না ! সেই দিনই তো অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় সোহা তার বাবার কাছে আবদার করেছিলো তার জন্যে ছাঁদে দোলনা করার জন্য। কিন্তু কাল তাকে তার বাড়ি, বাড়ির দোলনা, মা-বাবা কে ছেড়ে চলে যেতে হবে। সোহা ধীর পায়ে হেটে গিয়ে দোলনায় আসন পেতে বসে পড়লো। নাক টেনে চোখের পানি মুছে নিলো। টমিও তার পিছু পিছু এসে দোলনার এক কোণে বসে থাকে
সোহাকে খুঁজতে খুঁজতে ইতি ছাঁদে এসে পড়েছে। সোহাকে দেখে সোহার পাশে এসে বসলো। আজ সোহা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখছে আর নির্জীব, স্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছে। ইতি সোহার অবস্থা বুঝতে পেরে সোহাকে জাপটে জড়িয়ে ধরলো। সোহা আবেগে আপ্লুত হয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। ইতি জড়ানো গলায় বললো
” আমাদের সোহাপাখিও কি সবার কতো এভাবে কেঁদে কেঁদে শশুড় বাড়ি যাবি ? তুই না বলেছিলি কত নাচ গান করবি নিজের বিয়েতে ! আর এখন বসে বসে কাঁদছিস ? এটা কিন্তু ঠিক না !”
সোহা কাঁদতে কাঁদতে বললো
” আমি যাবো না রে কোথাও ! তুই সবাইকে বলে দে না ! আমি এই বিয়ে করবো না।” ইতি কান্নার মাঝে হেসে দিয়ে বলে
” ধুর বোকা। বিয়ে তো করতেই হবে। কালকে না করলেও পরশু। এমন সময় সবার জন্যই আসে। কাঁদিস না নিজেকে সামলে নে। আংকেল, আন্টিও একবার ভেঙ্গে পরলে সামলানো মুশকিল হবে।” সোহা নিজেকে সামলে নিলো। কান্না বন্ধ করে ইতির হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে বসে থাকে। কিছুক্ষণ দুজন বসে থাকার পর ইতি সোহাকে দেখে বলে
” এভাবে কতোক্ষণ বসে থাকবি ? হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। চল তৈরি হবি।” সোহা মাথা উঠিয়ে বলে
” কিন্তু হলুদ তো আগে ওই বাড়িতে হবে তাই না।”
ইতি কপাল চাপরে বলে
” হায়রে ! আগে পরে যখনই হোক না কেনো তোকে তো হলুদের জন্য তৈরি করতে হবে নাকি ! তুই কি ভাবছিস হলুদের ২মিনিট আগে তোকে তৈরি করানো হবে ? চল তাড়াতাড়ি। শান ভাইকে দেখাতে হবে তো তার বউকে হলুদ সাজে কেমন লাগছে !” শানের কথা তুলতেই সোহার গাল দুটো লাল আকার ধারণ করে। ইতি মিটমিট হেসে বলে
” হায় হায় ! সোহামনিও আজ কাল লজ্জা পায়। কি দিন দেখতে হচ্ছে আমাকে। চল চল দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।” ইতি সোহাকে টেনে নিয়ে গেলো।
এদিকে শানকে হলুদের স্টেজে নিতে না নিতেই তার ভাই, ভাবি, ইমন সহ সব কাজিনরা তাকে হলুদ দিয়ে ভুত বানিয়ে ফেলেছে। প্রায় কয়েক ঘন্টা পর তাদের হলুদের উৎসব শেষ করে শান রুমে চলে আসে। শান শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ইমন আসলো রুমে। খাটের উপর ধুপধাপ করে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। শান টাওয়াল দিয়ে ইমনের পিঠে বারি দিয়ে বললো
” কি রে এভাবে বিছানায় উঠে কেউ? যা ফ্রেশ হয়ে আয়।” ইমন কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করলো বেডে। শান চোখ ছোট ছোট করে বলে
” তোকে বেড থেকে উঠতে বললাম আর তুই গড়াগড়ি করছিস ?” ইমন আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। হাই তুলে বললো
” আচ্ছা হানিমুনে কোথায় যাচ্ছিস রে !” শান ইমনের মাথায় চাটা মেরে বললো
” তোর বাড়িতে। তৈরি রাখিস সব কিছু।” ইমন মুখ বাকিয়ে বলে
” ধুর মামা বলা না ! কথায় যাচ্ছিস ?” শান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলে
” কোথাও না । সোহা কোথাও যেতে চাইলে নিয়ে যাবো নাহলে তোর বাড়িতে হানিমুন করবো এটা নিশ্চিত থাক।” ইমন মুখ বাকালো। নিচ থেকে ইমনের ডাক পরলো। ইমন বেরিয়ে যাওয়ার আগে শান ইমনকে আটকে বললো
” শোন ভাই ! সোহার কয়েকটা ছবি পাঠিয়ে দিস আমার কাছে প্লিজ ! নাহলে কিন্তু আমাকেও চলে যেতে হবে সেখানে।” ইমন বাকা হেসে বললো
” কাকে ভয় দেখাস ? পুলিশকে নাকি তোর বন্ধুকে ? ছবি দিলেও আর না দিলেও যে তুই সেখানে যাবি সেটা আমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না।” ইমন চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো।
.
.
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৯
ইমন চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো। শান ফোন নিয়ে সোহাকে ম্যাসেজ করলো।
সিমি দুই পক্ষের হওয়ায় তাদের গায়ের হলুদ আগে শানদের বাড়িতে হয়ে তারপর সোহাদের বাড়িতে হচ্ছে যাতে সিমি দুই বাড়িতেই থাকতে পারে। সিমি, সামির, ইমন, নাইসা সহ আরো দুই কয়েকজনের মতো কাজিন সোহাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পরে।
সোহার হলুদের সাজগোজ শেষ হওয়ার পর ক্যামেরাম্যান এর জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে ছবি তুলতে তুলতে। সোহা এবার বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো
” আর কতোক্ষণ লাগবে ভাইয়া ? একটু শান্তিতে বসতে দেবেন কবে ?” ক্যামেরাম্যান থতমত খেয়ে বললো
” না ম্যাম সব কাজ শেষ। তবে আপনি চাইলে আরো তুলতে পারি।” সোহা রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” আপনার বউকে এনে ছবি তুলতে থাকেন।” সোহা হনহন করে নেমে গেলো স্টেজ থেকে। ক্যামেরাম্যান মুখটাকে তেতো করে রেখে দেয়। ইতি দৌঁড়ে সোহার পিছু গেলো। সোহা মুখ ফুলিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরে। ইতি এসে বললো
” কি হয়েছে তোর ? বিয়েতে কেউ এমন করে ?” সোহা ঠোঁট উল্টে বলে
” ধুর আমার একদমই এসব ভালো লাগছে না। বিয়ে এতো নিরামিষ নিরামিষ হয় !” ইতি কপাল চাপড়ে বললো
” হায়রে ! তুই নিরামিষ কোথায় দেখছিস ? আমি তো সবার এতো চেঁচামেচির জন্য শান্তিতে বসতেই পারছি না আর তুই নিরামিষ বলছিস ?” সোহা চারপাশে চোখ বুলালো। সোহার মা, বাবার যতো আত্মীয়, প্রতিবেশি যা রয়েছে সবাই এসেছে। সোহার সব কাজিনরা বিয়ের আনন্দে মেতে রয়েছে তাও তার কিছুই ভালো লাগছে না। সব কিছুই বিরক্ত লাগছে। সোহার কানে গাড়ির হর্ণ এর শব্দ আসতেই সোহা তাকিয়ে দেখে ওই বাড়ির গাড়ি এটা। সিমি এসে বুঝেই সোহা ইতিকে নিয়ে সেখানে ছুটলো। সবাই অবাক হয়ে দেখতে থাকে সোহাকে। সোহা স্টেজ রেখে এখানে ঘুরঘুর করছে। গাড়ি থেকে সিমিরা একে একে সবাই নামতেই সোহা গিয়ে আগে নাইসাকে কোলে তুলে আদর করতে থাকে। সিমি চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেস করে
” কিরে তুই এখানে কি করছিস ?” ইতি হতাশার সাথে বলে
” তোমার বোনের নাকি ভালো লাগছে না সব কিছুই তার নিরামিষ লাগছে তাই ক্যামেরাম্যান কে ধমকিয়ে ধামকিয়ে চলে এসেছে।” সামিরসহ সবাই হেসে দেয়। সোহার কোনো হেলদোল নেই সে তার মতো নাইসার সাথে কথা বলছে। সিমি চোখ রাঙিয়ে বলে
” চল জায়গায় গিয়ে বস। বাদরের মতো শুধু নাচানাচি করা ! নিজের বিয়েতেও একটু বসে থাকতে পারছে না ! ঘুরঘুর করছিস দেখেছিস সবাই কেমন করে তাকাচ্ছে !”
সোহা নাক ফুলিয়ে বলে
” বিয়েতে তো আমার নাকি ! ওদের সমস্যা কোথায় ! আমার যা ইচ্ছে তাই করবো আমি।” সিমি ধমকিয়ে সোহাকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দিলো। সোহা এবার নাইসাকে তাকে পাশে বসিয়ে বসে থাকে। নাইসাও সোহার গায়ের সাথে লেপ্টে বসে থাকে। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হতেই একে একে সিমিরা সবাই হলুদ লাগালো। ইমন একবার সামিরের সাথে গেলেও আরেকবার ইতিকে টেনে নিয়ে গেলো। হাত ভরে হলুদ নিয়ে সোহার গালে লাগাতে নিলেই সোহা চেঁচিয়ে বললো
” একদম এসব করবেন না ভাইয়া ! আপনার বিয়েতে কিন্তু ছাড়বো না আপনাকে !” ইমন দাঁত কেলিয়ে বললো
” আমিও তো চাই যেনো না ছাড়ো আমাকে ! শালি আধি ঘর ওয়ালি বলে কথা ! আই ডোন্ট মাইন্ড।” কথা বলতে বলতে সোহাকে হলুদ দিয়ে ভুত বানালো। ইতিও হাতে হলুফ নিয়ে সোহার গালে আর হাতে দিতে দিতে বলে
” আমার বেষ্টুকে আমি ভালো করে হলুদ না লাগালে তো বিয়েই হবে না। ভালো করে হলুদ দিতে হবে অনেক ভালো করে !” সোহা কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে বসে থাকে। নাইসা সোহাকে দেখে খিলখিল করে হাসতে থাকে। চারপাশের সবাইও হাসতে থাকে তাদের দেখে।
একে একে বাড়ির আত্মীয়-স্বজনরাও হলুদ দিতে এগিয়ে যায়। ইতি সোহার পাশে থাকছে সবসময় কোনো সমস্যা হলে দেখবে। এতো ব্যস্ততার মাঝেও তার চোখ ইমনের থেকে সরেনি। ইমনকে একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে রণচণ্ডী রূপ ধারণ করে। ইতি তার কাছে যেতে যেতে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বিরবির করে বলে
” অসভ্য ! এটাকে নাকি আমি ভালোবেসেছি ! আমার সাথে কথা বলার সময় থাকে না তার আর সে এখন অন্য মেয়েদের সাথে লেগে রয়েছে !”
ইতি ইমনের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মেয়েটা বলে উঠে
” কি গো তোমার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে কেনো? রেগে আছো নাকি লজ্জা পেয়েছো ?”
ইমন মজার স্বরে বলে
” হ্যা, মনে হচ্ছে লজ্জাই পেয়েছে আপনাকে দেখে।” মেয়েটা অবাক হয়ে বলে
” ওমা আমাকে দেখে কেনো লজ্জা পাবে ? আমি এমন কি করলাম শুনি !” ইমন আড়চোখে ইতির দিকে তাকিয়ে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” আপনাকে বেশি সুন্দর লাগছে তো তাই। হয়তো ভাবছে আপনি এতো সুন্দর কিভাবে হয়েছে ! সেটাই বোধয় জিজ্ঞেস করতে লজ্জা পাচ্ছিলো।”
মেয়েটা লজ্জায় লাল নিল হতে শুরু করে। লজ্জায় মাথা নিচু করে বলদ
” কি যে বলো না তুমি! লজ্জা করছে অনেক আমার। কিন্তু তুমি বুঝলে কি করে ও কি বলতে চায়!” ইতি এবার বাকা হাসি দিলো সুযোগের সৎ ব্যাবহার সব সময় প্রযোজ্য প্রত্যেকের জন্যই। ইতি ইমনের হাত জড়িয়ে ধরে বললো
” আরে আমায় ভালোবাসার মানুষটা আমার মনের কথা বুঝবে না তো আর কে বুঝবে শুনি !” মেয়েটা আকাশ থেকে ধুপধাপ করে পরলো। হতবাক স্বরে ইতিকে বললো বলে
” তোমার কে হয় ও !” ইতি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললো
” আমার বয়ফ্রেন্ড। ইনশাআল্লাহ কয়েকদিন পর বিয়েও হবে।”
মেয়েটার মুখটা একেবারে ছোট্টখানি হয়ে গেলো। মেয়েটা দুটো কথা বলে কোনো রকমে পালিয়ে গেলো। ইতি ইমনের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ইমন আমতা আমতা করে বললো
” আমি কিছু করিনি। আসার পর থেকে পিছু লেগেছিলো তারপর ভাবিকে ডেকে এনে কথা বলা শুরু করলো তবে ভাবি চলে গেলেও এই মেয়ে যায় না।” ইতি আর কিছু বললো না। কারণ মেয়েটাকে ভালো করেই চিনে। সোহাদের প্রতিবেশির মেয়ে। দুইদিন পরপর বয়ফ্রেন্ড দের সাথে ব্রেকাপ করে আর নতুন খুঁজে নেয়। সুন্দর ছেলে দেখলেই বাদরের মতো গলায় ঝুলতে চায়।
হঠাৎ ইতির সামনে তার বাবা এসে দাঁড়ালো। ইতি চমকে যায় তাকে দেখে। ইতির বাবা জিজ্ঞেস করো
” এখানে কি করছিস ?” ইতি ঘাড় ঘুরিয়ে ইমনের দিকে তাকালো। ইমন মুচকি হেসে তাকিয়ে রয়েছে। ইতির বাবাকে সুন্দর করে সালাম দিয়ে বললো
” একটু কথা বলছিলাম আর কি আংকেল।” ইতির বাবা সালামের উত্তর দিয়ে ইমনের সাথে টুকটাক কথা বলতে থাকে। তারা কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে হাসিহাসি শুরু করে ইতি সব ঠিকঠাক বুঝতে পেরে ব্যস্ততায় সরে যায় সেখান থেকে।
হলুদের সব কাজ কর্ম শেষ হতেই সোহা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে প্রায়। সিমিরা চলে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। সোহা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসতেই ইতি কড়া গলায় বলে
” এই চুল শুকিয়ে ঘুমাবি নাহলে খারাপ হবে বলে দিলাম ! জ্বর উঠলে আমার আর রক্ষে থাকবে না।” সোহা হাই তুলে বলে
” আমার অনেক ঘুম পেয়েছে তো আমি কিছু করতে পারছি না !” সোহা ব্ল্যাংকেট টেনে ধুপধাপ করে ঘুমিয়ে পড়লো কিন্তু ইতি থাকতে তা অসম্ভব ব্যাপার। ইতি টেনে সোহাকে উঠিয়ে হাতে হেয়ার ড্রায়ার ধরিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলো। সোহা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ইতিকে বকা শুরু করলো
” শয়তান মহিলা কোনোদিন বিয়ে হবে না তোর। একটা নিষ্পাপ মেয়ের ঘুম ভাঙিয়েছিস তুই কোনোদিন ভালো হবে না তোর। দেখবি ইমন ভাইয়া অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেছে তোকে বরখাস্ত করে।” উল্টো পাল্টা প্রলাপ বকতে থাকে আর চুল শুকাতে থাকে। কোনো রকমে অর্ধেক চুল শুকিয়েই ইতিকে বকতে বকতে ঘুমিয়ে গেলো সোহা। ইতি ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে লাইট অফ করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। এখনও নিশ্চিন্তে ঘুমানো যাবে না বাড়িতে মেহমানদের জায়গা ঠিক করে দিয়ে আসতে হবে।
শান মই বেয়ে কোনো রকমে সোহার রুমে বারান্দায় এসে পৌছলো। বারান্দার দরজা খোলা থাকায় সোজা ঢুকে গেলো শব্দহীন পায়ে। সোহা ইতিমধ্যে ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে। শান হাটু গেরে সোহার মুখোমুখি হয়ে বসলো। নিজের হাতে থাকা একটু হলুদ সোহার গালে লাগিয়ে দিলো। সোহা সাথে সাথে কেঁপে উঠে ঠাণ্ডা হলুদের ছোঁয়া পেয়ে। শান আলতো হেসে সোহার হাত ধরে উল্টো পাশে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ধীর গলায় বলে
” কালকে আমি আমার ভালোবাসাকে নিজের করে পাবো। তারপর আর কোনো বাধা থাকবে না আমাদের মাঝে। আগে কথা বলার জন্য যেই অজুহাত খুঁজতে হতো সেটাও করতে হবে না। তুমি চাইলেও এখন আমার না চাইলেও আমারই। আমার জীবনের বাকি প্রত্যেকটা মুহূর্তে আমি তোমাকে চাই। আমার #আধারে_তুমি হয়ে থাকবে আমার হৃদয়ে।”
.
.
চলবে………