#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৪
তবে ফোন দেবে নাকি দেবে না এই নিয়ে দ্বিধাধন্ধ তে পরে গেলো। পরে ভাবলো সকালে নাহয় কথা বলবে। রাতটা ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো। রাতটায় আর ভালো করে ঘুমানো হলো না।
সকালের খাবার খাওয়া শেষ করেই রুমে ঢুকে শাহানাজ বেগমকে ফোন লাগালো।
শাহানাজ বেগম মাত্রই খাওয়া থেকে উঠেছে। হাত পরিষ্কার করার আগেই সোহার ফোন। শাহানাজ বেগম আলতো হেসে ফোন রিসিভ করে। সোহা সালাম দেয় শাহানাজ বেগমকে। শাহানাজ বেগম তার হাত পরিষ্কার করতে করতে সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
” কেমন আছিস মা ?” সোহা মুখ ফুলিয়ে বললো
” ভালো আর থাকতে দিলে কোথায় ? বাবা আমাকে রাতে সব জানালো। জানো আমি কতোটা কনফিউজড এ পরে গিয়েছি ?”
শাহানাজ বেগম সোহার কথায় শব্দ করে হাসলো। উত্তরে বললো
” পাগলি মেয়ে কনফিউজড হওয়ার কি আছে ? মনের কথা বলবি শুধু। তোর যদি মনে হয় এই সম্পর্কে খুশি হবি তাহলে হ্যা বলবি আর নাহলে না !” সোহা মাথা চুলকে বোকার মতো বললো
” কিন্তু আমি তো বুঝতেই পারছি না আমার মনের কথা কি !” শাহানাজ বেগম ভেবে বললো
” তাহলে আমি একটু হেল্প করি। আচ্ছা বল তো আমার ছেলেকে তোর কেমন লাগে ?”
সোহা মুখ কুঁচকে বললো
” তোমার ছেলেকে তো ভালোই লাগে তবে আমাকে দেখলেই সবসময় বকাবকি করি।” শাহানাজ বেগম হেসে দিলো সোহার কথায়।
” আমার ছেলেটা একটু শান্তশিষ্ট তাই তোকে দেখলে বকা বকি করি। এবার বল আমার ছেলের কি এমন কোনো হ্যাবিট রয়েছে, যেটা তোর চোখে খুবই খারাপ অভ্যাস ?”
সোহা খুঁজে পেলো না তেমন কিছু তাই বললো
” নাহ তা তো নেই কিন্তু আমার টমিকে সহ্য করতে পারে না উনি।” শাহানাজ বেগম বললো
” আরে ওটা তো ওর এলার্জি রয়েছে তাই। এছাড়া আর কিছুই না। এসব বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার ছেলে একজন সৎ পুলিশ অফিসার। আমার মনে হয়না শানের আর কোনো খারাপ হ্যাবিট রয়েছে। আর যেগুলোর কথা বললি সেগুলো তো খুঁটিনাটি বিষয় সবারই থাকে এবং থাকা উচিত। এবার বল আমার বাড়ির কেউ কি তোকে কম ভালোবাসি ?”
সোহা হেসে বললো
” তা তো নয়। তোমরা সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসো। কিন্তু তোমারা যদি তোমার ছেলেকে জোড় করে বিয়ে দিয়ে থাকো ?”
শাহানাজ বেগমের বড্ড হাসি পেলো কথাটা শুনে। যেই ছেলে সোহাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো তাকে নাকি জোড় করে বিয়ে দেবে ! শাহানাজ বেগম তার হাসিটা আড়াল করে বললো
” ধুর বোকা মেয়ে ! আমাদের কি তো তেমন মনে হয় ? শানকে আমরা জোড় করে বিয়ে দিচ্ছিনা। বিয়েতে ওর ও সম্মতি রয়েছে এবার শুধু তোর উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। তুই আমার ছেলেকে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস। শান কখনো তোকে কষ্ট দেওয়ার কথাও ভাববে না। আমার ছেলেকে আমি ভালো করেই চিনি। নিজের দায়িত্বগুলো প্রাণ দিয়ে হলেও পালন করে যাবে।” সোহা এবার চুপ করে রইলো। শাহানাজ বেগম বললো
” মনে হচ্ছে তোর সব কনফিউজড দূড় করে দিতে পেরেছি। এবাএ তুই ভেবে চিনতে নিজের মতামত জানাবি। তোর সব উত্তর মেনে নিতেই আমরা প্রস্তুত।”
সোহা বিদায় জানিয়ে ফোন রেখে দিলো। সোহা আবারও ভাবনায় ডুবে গেলো। ধীর পায়ে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াল। রাতে বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব থাকলেও রাতে বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও ছিলো না শুধু বৃষ্টি বৃষ্টি ভাবটাই ছিলো। তবে এখন মনে হচ্ছে জোড়ে সোরেই বৃষ্টি হবে। সোহা ধ্যান মগ্ন হয়ে ফ্লোরে বসে পরলো তাও সাবধানে নয় বেখেয়ালি ভাবে বসায় পেটে ব্যাথাও পেলো। সোহা চেঁচিয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে পেটে হাত দিয়ে বসে থাকে। রুম থেকে পানি আর মেডিসিন হাতে নিয়ে এলো ইতি। সোহার সামনে দিয়ে বললো
” করে ঔষধ কে খাবে ?” সোহা নাক টেনে ইতির হাত থেকে সেগুলো নিয়ে খেলো। ইতি সোহার পাশে বসে বললো
” তো কি ভাবলি তুই ?” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” জানি না।” ইতি বিরক্ত হয়ে বললো
” উফফ তুই কিরে ? আমি হলে সাথে সাথে হ্যা করে দিতাম। আমার সেটিং রয়েছে দেখে নাহলে এরকম গাধার মতো কাজ করতাম না। ভাইয়া একজন পারফেক্ট ছেলে। এরকম ছেলের জন্য মেয়েরা পাগল হয়ে থাকে।” সোহা বসে থাকে। বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। বৃষ্টির বেগও বাড়ছে।
সোহা শানকে নিয়ে ভাবতে লাগলো। সত্যি লোকটার মাঝে কোনো কিছুর কম নেই। যেই দোষ গুলো বলেছে সেগুলো তো দোষেরও তালিকায় পরে না। একটা মানুষের পছন্দ, অপছন্দেরও একটা ব্যাপার রয়েছে। সেখান থেকে শান তো ঠিকই রয়েছে। একটা মানুষের খুঁটিনাটি বিষয়ে আপত্তি থাকতেই পারে। নাহলে সেই মানুষটাকে অন্যরকম ভাবে বর্ণনা করা যায় না। দুই বাড়ির সবাই এই সম্পর্কে খুশি। শানও রাজি। সোহার নিজেরও এখন আপত্তি করার মতো কোনো প্রশ্ন আসছে না। তাহলে আর কি ভাববে ?
সোহার ভাবা ভাবি শেষ হলে সোহা সাবধানে উঠে দাঁড়ালো। ইতির হাত টেনে বললো
” চল বাবার কাছে যাই।” ইতি লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো। উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো
” কি ভাবলি তুই ?” সোহা যেতে যেতে বলে
” কি আর বলবো ? না করার মতো কোনো কিছু তো দেখছি না। হ্যা ই বলবো।”
ইতির চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। খুশির সিমা রইলো না তার। শানকে একটা ছেলে হিসেবে ইতির খুবই ভালো লাগে।
সোহা বাবাকে সোফায় বসে থাকতে দেখলো। অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বসে রয়েছে। বৃষ্টির জন্য এখনও বের হতে পারেনি তাই পেপার পড়ছে। কারণ রিয়ানা রহমান বৃষ্টির সময় কখনোই গাড়ি ড্রাইভ করতে অনুমতি দেয় না। যদিও ইমতিয়াজ রহমান মাঝে মধ্যেই স্ত্রীর কিছু নিষেধ পরোয়া করে না তবে সেই পরোয়া না করাটা সবসময় না হওয়াই ভালো। এতে সম্পর্কের মূল্য থাকে সবার কাছেই।
রিয়ানা রহমান খিচুরি রান্না করছে তার সাথে আচার আর ভাজাপোড়া কিছু তো রয়েছেই।
সোহা সব কিছু ফেলে তার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইতিয়াজ রহমান তাকে দেখে মুচকি হাসলো। পেপারটা টি টেবিলে রেখে বললো
” কি বলবে বলো।” সোহা আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করে কিন্তু অস্বস্তিতে আর বলতে পারছে না। বিয়ের কথা কি আর অস্বস্তিহীন ভাবে বলা যায় ! যায় না। ইতি ধৈর্য করতে না পেরে বলে ফেলে
” আংকেল সোহা বিয়ের জন্য রাজি। এটাই বলতে এসেছে।” ইতিয়াজ রহমান আলতো হেসে সোহার দিকে তাকালো। ইমতিয়াজ রহমানকে দেখে মনে হচ্ছে উত্তরটা যেন আগেরই জানা। শষী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবই শুনতে পেয়েছে। ছুটে রান্নাঘরে গিয়ে রিয়ানা রহমানকে সব জানালো। রিয়ানা রহমান খুশি হয়ে দৌঁড়ে সোহার কাছে আসলো। সোহার কপালে চুমু দিয়ে খুশি হয়ে বললো
” তোর যাতে আরো সুবুদ্ধি হয়। তুই বস বস তোর জন্য খিচুরি নিয়ে আসছি আমি।”
ইমতিয়াজ রহমান বোকার মতো রিয়ানার রহমানের যাওয়ার পথ চেয়ে তাকিয়ে রইলো। এই মহিলা কালকে বিয়েতে রাজি হচ্ছিলো না আর এখন খুশির জোয়ার নেই তার। নিশ্চই সোহা তাকে বুঝিয়েছে নাহলে এমনি এমনি রাজি হতো না। ইমতিয়াজ রহমান হেসে সোহাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” তুমি তোমার রুমে যাও আমি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছি ওদের।” সোহা মাথা নেড়ে উপরে চলে গেলো।
রাত ১০ টা ছুঁইছুঁই বাজছে। দরজা হাত রাখতেই দরজা হা করে খুলে গেলো। শান ভ্রু কুঁচকে নেয় দরজা খোলা দেখে। ভেতরে ঢুকে জুতো জোড়া পায়ের থেকে খুলে সামনে অগ্রসর হলো। ভেতর থেকে সবার হইচই এর আওয়াজ কানে আসছে।শান সেদিকে আর পা বাড়ালো না সোফায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেয়। আজকে আর শরীর আর মনে কোনোটাতেই শক্তি নেই। দুই এক মিনিট পর নিলা বেড়িয়ে আসে শাহানাজ বেগমের রুম থেকে। শানকে দেখেই মুখে এক গাল হাসি নিয়ে শানের দিকে এগিয়ে গেলো। শান তাকে দেখে ক্লান্তিমাখা একটা হাসি দিলো। নিলা শানের পাশে বসে বলে
” ক্লান্ত বুঝি ? কিন্তু আমি একটা গুদ নিউজ দেবো যেটা শুনে তোমার সব ক্লান্তি দূড় হয়ে যাবে আর নাচতে ইচ্ছে করবে।” শান জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” এমন কি গুড নিউজ যে নাচতে ইচ্ছে করবে আমার !” নিলা মিটমিট করে হেসে বললো
” সোহা বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছে। খুব শিঘ্রই তোমাদের বিয়ে।”
কথাটা বুঝে শানের কিছুক্ষণ সময় লেগে গিয়েছে। বুঝতেই তার চোখ জোড়া উজ্জ্বল হয়ে উঠে। আজকের কাজে এতো ব্যস্ত হয়ে পরেছিলো যে সোহার কথা মাথাই ছিলো না।
” কি বলছো ভাবি সত্যি ?” শানের অবিশ্বাস্য গলা শুনে নিলা শব্দ করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বললো
” হ্যা গো একদম সত্যি। একদম তরতাজা খবর। দুপুরে আংকেল ফোন করে সব জানিয়েছে।”
শান খুশি হয়ে ছটফটা মন নিয়ে উপরে ছুটে গেলো। তার আর ক্লান্তি লাগছে না । তবে আফসোস লাগছে কিছুটা। সোহার উত্তরের অপেক্ষা করতে চেয়েছিলো সে। দেখতে চেয়েছিলো এই অপেক্ষার অনুভূতিটা কেমন হয়। কিন্তু আজকের ইনভেস্টিগেশনে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছিলো যে সেই কাজেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো অন্য কিছু মাথায় আসেনি।
বাড়িতে আজই বিয়ে বাড়ির ধুম পরে গিয়েছে। যদিও বিয়ের ডেট ঠিক হয়নি এখনও।
.
.
চলবে………..
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৫
বাড়িতে আজই বিয়ে বাড়ির ধুম পরে গিয়েছে। যদিও বিয়ের ডেট ঠিক হয়নি এখনও।
ডিনার শেষ করে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। আজ প্রচণ্ড খুশি মিশ্রিত কিছু অনুভূতি লেখার ইচ্ছে হলো। আলমারি থেকে তার সেই ডায়রী টা বের করে নিলো। আজ আবারও কিছু নতুন শব্দ লেখা হবে তাতে। শান ডায়েরীটা নিয়ে টেবিলে বসে পরলো। কলম হাতে তুলে নিপুণতা ভরা কিছু শব্দ লিখতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
শান আজ প্রচণ্ড খুশি। কিভাবে তার আনন্দ প্রকাশ করবে বুঝতে পারছে না। সোহাকে ফোন করতে ইচ্ছে করলো কিন্তু করলো না। কি কথা বলবে সোহাকে ? ভেবে আর ফোনও করা হলো না। শেষমেশ ছাদে এসে পরলো হাটতে হাটতে। অনেকদিন হলো ছাদে আসা হয়নি। ছাদটা দেখে হেসে বলে
” সোহা তো ফুল গাছ ভালোবাসে। ছাদ টা কে আবারও ফুল গাছ দিয়ে ভরিয়ে ফেলতে হবে।”
” শান ভাইয়া কি বিরবির করছো একা একা ?”
তামিমের কথা শুনে শান তাদের ছাঁদের দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে বললো
” তুই এতো রাতে ছাঁদে কি করছিস ?” তামিম মুখ কালো করে বললো
” ধুর বাড়িতে ভালোলাগছে না একা একা। মা, বাবা নানা বাড়ি গিয়েছে। আমি এসে পরেছি আজ। আমার কলেজও খুলেনি এখনো। বন্ধুরাও দিনে থাকলে রাতে নেই। তাই বিরক্তি কাটাতে রাত্রি বিলাশ করতে আসলাম ছাঁদে।”
শান নিঃশব্দে হাসলো তামিমের কথায়। তামিম আবারও জিজ্ঞেস করলো
” কিন্তু তুমি কি বিরবির করছিলে বললে না তো!”
শান বড় একটা হাসি দিয়ে বলল
” কাল বাড়িতে আসিস। মিষ্টি খাইয়ে সুখবর দিতে হয়, জানিস তো !” তামিম হেসে বললো
” কিসের সুখবর? তোমার বিয়ে নাকি ?”
শান বাকা হেসে বললো
” হ্যা তাই।” তামিম অবাক হয়ে বললো
” কার সাথে ? আমি কি চিনি তাকে ?” শান পকেটে হাত গুঁজে বললো
” তুই তো খুব ভালো করেই চিনিস। ভাবছি তুই সুখবর টা শুনে কষ্ট পাবি নাকি দুঃখ !” তামিম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে
” কষ্ট আর দুঃখের মধ্যে পার্থক্য কিসের ?” শান হাটতে হাটতে হাসফাস কণ্ঠে বলতে থাকে
” কষ্ট হলো দীর্ঘস্থায়ী বস্তু যেটা কোনো একসময় অতীতের তালিকায় পরে গেলেও সেই কষ্টটা সবসময় মানুষকে পোড়ায় আর দুঃখ হলো ক্ষণস্থায়ী যা যেকোনো সময়ে ভুলে যাওয়া যায়।”
তামিম ভেবে বললো
” তাহলে ধরো দুঃখই পেলাম। তোমার সুখবর শুনে কষ্ট পাওয়ার মতো কিছু ঘটবে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে দুঃখ কেনো পাবো ?” শান হেসে বলে
” সেটা কালকে আসলেই শুনিস। আচ্ছা যা ঘরে গিয়ে ফোন গুঁতো। একা একা ছাঁদে থাকলে পরি চেপে বসবে ঘাড়ে, যা !” তামিম বাধ্য ছেলের মতো মাথা নেড়ে চলে গেলো। শান কিছুক্ষণ ঘুরঘুর করে রুমে চলে গেলো।
রাতটা খুশিতে ছটফট করতে করতেই কেটে গেলো। সকাল হতেই থানায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিচে নামলো। ব্রেকফাস্ট করতে করতে তামিমের আগমন। শান খাবার গুলো কোনো রকমে নিজের মুখে ঠেসে ভরে নিলো। পানি খেয়ে গিলতে গিলতে ফ্রেজ থেকে কালকের আনা একটা মিষ্টির বক্স খুলে তামিমের পাশে বসলো। নিলা, নাইসা, সামির, ইশান, শাহানাজ বেগম টেবিলে বসে খাচ্ছে। মুসফিক চৌধুরী আজ সকালেই বেরিয়ে গিয়েছে। শান তামিমকে টেনে টেবিলে বসিয়ে মিষ্টি সার্ভ করে দিয়ে বললো
” নে তামিম খাওয়া শুরু কর।” তামিম ভ্রু কুঁচকে বললো
” কিন্তু তুমি তো এখনও সুখবরটাই দিলে না আমাকে।” শান হেসে বলে
” আরে খাওয়া শুরু কর তারপর বলছি।” তামিম মাথা নেড়ে খাওয়া শুরু করে। ইশান খেতে খেতে বললো
” কিসের সুখবর এর কথা হচ্ছে ?” তামিম খেতে খেতে বললো
” শান ভাইয়ার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে ! সেই সুখবরই তবে কার সাথে হয়েছে সেটা বলছে না। বললো আমি নাকি শুনে দুঃখ ও পেতে পারি।” শান ঠোঁট চেপে হাসছে। শাহানাজ বেগম, ইশান আর সামির জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই শান বললো
” ভাবি কবে আসবে মা ?” সামির খেতে খেতে বলে
” কালকে যাবো নিয়ে আসতে।”
শান তামিমের দিকে তাকিয়ে দেখলো। তার চতুর্থ তম মিষ্টি খাওয়া চলছে বর্তমানে। শান বলে উঠে
” তামিম জানিস কার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে ? তোর সোহার আপুর সাথে। বিয়ের পর কিন্তু তাকে ভাবি ডাকতে হবে বলে দিচ্ছি!”
তামিম মাত্রই মুখে পুড়ে গিলছিলো মিষ্টিটা কিন্তু শানের কথা শুনে সেটা গলায় আটকে রইলো। তামিম হতভম্বের মতো বসে রইলো। শান দাঁত কেলিয়ে উঠে চলে গেলো। কেউ কিছু না বুঝলেও নিলা মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। তামিম কাশতে থাকে। ভেসিনে গিয়ে মিষ্টিটা ফেলে দিয়ে আসলো। কাশতে কাশতে মনে হচ্ছে গলা দিয়ে এখনই রক্তক্ষরণ শুরু হবে। সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। কিন্তু তামিম কাশতে থাকলেও তার ভাবনা অন্য দিকে। শেষ পর্যন্ত তার ক্রাশ থেকে আপু আর কয়েকদিন পর আপু থেকে ভাবিতে রূপান্তর হচ্ছে ? মারাত্মক এই রূপান্তরিত কাহিনী। তামিমের বুক ফেটে কান্না আসলো কিন্তু কাঁদতে পারলো না। হঠাৎ রাতে বলা শানের কথা মনে পড়লো। তামিম কনফিউজড হয়ে গেলো এটা দুঃখ নাকি কষ্ট ? ভাবতে ভাবতে তামিমের কাঁশি থেকে যায় তামিমও বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ইশান চিন্তিত হয়ে সামিরকে বললো
” হলো কি ছেলেটার ? খুশির কথা শুনে কারো এমন রিয়েকশন হয় নাকি ?”
নিলা হেসে বলে
” খুশির খবর যখন মাত্রাতিরিক্ত খুশির হয় তখন রিয়েকশন এমনই হয়। হয়েছে এবার তোমরা যাও তো কাজে যাও !” ইশানের খাওয়া শেষ হওয়া সত্ত্বেও চেয়ারে বসে রইলো। সামির চলে যায়, শাহানাজ বেগমও তার রুমে চলে যায়। আর সালমা ঘরেই রয়েছে। সালমা কিছুটা অসুস্থ তাই আজকে কাজে হাত লাগায়নি। ইশান চারপাশে চোখ বুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নিলার কাছে এসে নিলার কোমড়ে হাত রেখে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। নিলা চমকে চোখ বড়বড় করে তাকায় ইশানের দিকে আরেকবার নাইসার দিকে তাকিয়ে দেখে নাইসা খেলনা নিয়ে খেলতে ব্যস্ত। ইশান ফিসফিস গলায় বলে
” কাজের ব্যস্ততায় কতোদিন হয়ে গেলো বউকে কাছে পাইনা। আজ তো তোমার জন্মদিন আজ নাহয় একটু আদর দিয়ে পুশিয়ে দেই ?” নিলা অবাক হয়ে গেলো ইশানের কথায়। তার জন্মদিনের কথা মাথায়ই ছিলো না। ইশান মুচকি হেসে বলে
” জানি আমার বউ এর নিজের জন্মদিনের কথা মনে থাকে না। তাই আমাকেই রাখতে হয়।” নিলা হেসে বলে
” তো কি দেবে আমাকে জন্মদিন উপলক্ষে ?” ইশান তার ওষ্ঠদ্বয় নিলার কপাল আর ঠোঁটে ছুঁয়ে দিয়ে বললো
” আপাতত এতোটুকুই বাকিটা নাহয় রাতে এসে পাবে।” নিলা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। ইশান হেসে বলে
” বিয়ে হয়ে বাচ্চাও হয়ে গেলো তাও তোমার লজ্জা আজও ভাঙতে পারলাম না।” নিলা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললো
” কিছু জিনিস থেকে যাওয়াই ভালো।” ইশান হেসে বলে
” তা তো ঠিক। কিন্তু আগের মতো জেলাসি আর নেই। তুমি এখন খোঁজও রাখো না আমার। জানো কতো মেয়ে পেশেন্ট আমার কাছে আসলে জিজ্ঞেস করে ‘ আপনি কি বিবাহিত ?’ তখন ইচ্ছে করে নিজেকে অবিবাহিত বলে পরিচয় দেই।”
নিলা রেগে ফুস করে উঠলো। ইশানের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো
” তো যাও না তাদের কাছেই যাও !এখানে ভালোবাসা দেখাতে এসেছো কেনো ?” ইশান চেয়ারে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
” কি করবো বলো ! বউ যখন নিজ থেকে ভালোবাসা কমিয়ে দেয় তখন আমাকেই তো ব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় বের করে নিতে হয় ভালোবাসার জন্য।” নিলা কোণাচোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে নাইসাকে খাইয়ে দিতে থাকে। ইশান নাইসাকে চুমু দিয়ে বিদায় নিয়ে নিলো। এপ্রোন হাতে নিয়ে নিলার গালে হুট করে একটা চুমু দিয়ে ছুটে বেড়িয়ে গেলো। নিলা গালে হাত দিয়ে হেসে দেয়।
দেখতে দেখতে কয়েকদিন কেটে যায়। এর মাঝে সোহা আর শানের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গিয়েছে আর বেশি দেড়ি নেই। এই তো কয়েকদিন পরই বিয়ে। অপেক্ষাকৃত দিনগুলোও কেটে যাবে চোখের পলকে। কাল সবাই বিয়ের শপিং এ যাচ্ছে। বিয়ের শপিং বলতে অর্ধেক বিয়ের শপিং হয়ে গিয়েছে আর বাকি যা রয়েছে সেগুলো কাল শান, সোহা সহ আরো অনেকেই গিয়ে করবে। এর মাঝে শান আর সোহার দেখা হয়নি। সোহা অসুস্থ থাকায় শপিং এ আসেনি আর শানেরও থানায় ব্যস্তায় আসা হয়ে উঠেনি। সোহা শরীরও মোটামুটি ভালো হয়েছে তাই কাল শপিং এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবাই।
.
.
চলবে……….