#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৪
সোহা বাড়িতে কিছু না জানাতে বলেছে। কি করবে বুঝতে পারছে না শান। ফোন বাজতে বাজতে কেটে গিয়েছে দ্বিতীয় বার আবারও ফোন আসলো। ইমন ইশারায় ফোন রিসিভ করতে বললো। শান চোখ মুখ মুছে গলা ঝেড়ে ফোন রিসিভ করতেই ইশানের চিন্তিত গলা শোনা গেলো
” কিরে কোথায় তোরা ? কতোক্ষণ হয়ে গিয়েছে খেয়াল আছে তোর ? কখন আসবি তুই ?”
শান ঢোক গিলে বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে বলতে থাকে
” আসার সময় সোহা অনেক জোড় করছিলো ওর ফ্রেন্ড ইতির বাড়িতে যাবে তাই নিয়ে আসতে হলো। সোহা নাকি আজ এখানেই থাকবে আর আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কেস এসেছে তাই আমি থানায় চলে যাচ্ছি। আজ আর কেউ ফিরছি না।” ইশান অবাক হয়ে বলে
” আগে জানাবি তো নাকি ? সবাই চিন্তা করছিলো।” শান ঢোক গিলে বললো
” প্লিজ ভাইয়া সবাইকে একটু সামলে নাও। আমি সোহাকে নিয়ে কাল যেকোনো সময় আসবো। আর সোহার টমি আছে না ! ওর একটু খেয়াল রেখো।” শান কথা শেষ করেই কল কেটে দিলো। কপালে হাত দিয়ে বসে পরে শান। ইমন শানের কাধে হাত রেখে বলে
” এতো চিন্তা করছিস কেনো তুই ? হসপিটালে নিয়ে এসেছিস ঠিক সময়। ডক্টর তো দেখছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।” শানের হঠাৎ সেই লোকটা কথা মনে পড়লো। শানের অগ্নিশিখার মতো চাহনি দেখে ইমন কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। শান দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” ওই লোকটাকে আমি একদমই ছাড়বো না। সেই রেস্টুরেন্ট থেকে কালকেই সব সিসি টিভি ফুটেজ কালেক্ট করে ওই লোকটাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তোর। আর ওকে জাহান্নামের কাছ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো আমি।” ইমন মাথা নেড়ে সায় দেয়। আইসিউ এর দরজা খুলে দুইজন নার্স বের হয়। শান আর ইমন এগিয়ে যায়। ডক্টর বের হতেই শান অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো
” ডক্টর সোহা কেমন আছে ?” ডক্টর চোখ মুখ কালো করে বলে
” ভাগ্য ভালো থাকায় patient ভালো আছে বলা যায়। ছুরিটা খুবই ধারালো ছিলো তাই পেটের আঘাতটা বেশি লেগেছে তবে ভাগ্যক্রমে কিডনিতে আঘাত লাগেনি। সেলাই করা হয়েছে তবে আরেকটা প্রব্লেম হয়েছে।” শান ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঢোক গিলে বললো
” আর কি প্রব্লেম ডক্টর ?” ডক্টর নিচু স্বরে বলে
” বিয়ের পর উনার কনসিভ করা কঠিন হতে পারে আর কনসিভ করলেও প্রেগনেন্সি টাইম খুবই কমপ্লিকেট হবে। আর একটা কথা উনার আগামী একমাস ভালো করে খেয়াল রাখবেন। আঘাত শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত রিস্ক রয়েছে।” ডক্টর কথা শেষ করেই চলে যায়। কেবিন থেকেও আরো একজন ডক্টর আর নার্স চলে গেলো।
শান মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে। ইমন শানকে কি বলে শান্তনা দেবে বুঝতে পারছে না। আর কেই জানুক আর না জানুক ইমন ভালো করেই জানে শান সোহাকে কতোটা ভালোবাসে। কিন্তু শান ইমন ছাড়া আর কাউকে কখনো নিজের মনের কথা বুঝতে দেয়নি। ইমন শানের কাধে হাত রেখে বলে
” বাড়িতে কি জানাবি ?” শানের গলা যেন কেনো ধরে রেখেছে। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে সব গলায় এসে আটকেছে। তাও ঢোক গিলে কম্পিত কন্ঠে বলে
” এতোবড় কথা লুকানোর সত্যি আমার নেই। সকাল হলেই জানাবো। কিভাবে কি হয়ে গেলো না! কিছুক্ষণ আগেও মেয়েটা আমার বকা শুনে মুখ ফুলিয়ে রেখেছিলো, হাসছিলো আর এখন বেডে শুয়ে রয়েছে ! আমি মুখ দেখাবো কি করে ওকে ? আমি কাছে থাকতেও ওর এই অবস্থা !”
ইমন অসহায় গলায় বললো
” তুই এভাবে ভেঙে পরলে কি করে হবে ? বাড়ির সবাইকে কি করে জানাবি তুই এসব? নিজেকে ঠিক কর আর চল সোহাকে দেখে আসবি।”
সোহাকে দেখতে যাওয়ার কথা শুনে শান ইমনের সাথে উঠে গেলো। কেবিনে ঢুকে দেখে সোহাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। শান কিছু বলার আগেই ইমন সোহার পাশে একজন নার্সকে দেখে বললো
” সোহাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে কেনো ?” নার্স গম্ভীর গলায় বললো
” এতো পরিমাণ ব্লিডিং হয়েছে ! স্যালাইন দেবে না তো কি জুস দেবে ?” ইমন তব্দা খেয়ে যায় নার্স এর কথা শুনে। শান বোকার মতো ইমনের দিকে তাকালো। ইমন ভ্রু কুঁচকে বলে
” এই যে মিস ! সুন্দর করে কথা বলতে পারেন না ?” নার্স তেড়ে এসে বললো
” এই যে মিস্টার ! আমাকে কিছু বলার আগে নিজেদের কাজ ঠিক করুন। আপনার এই যে এক বন্ধু ! নিজের বউকে একটা আঘাতের থেকে রক্ষা করতে পারলো না !” ইমন ভ্রু কুঁচকে বলে
” এই যে নার্স ! মুখ সামলে কথা বলুন ! এটা বন্ধুর বড় ভাইয়ের হসপিটাল আর হ্যা! আমরা জানতাম নাকি এমন কিছু হবে ? জানলে আপনার মতো কয়েকটা মরিচ এনে সোহার আসে পাশে গার্ডের জন্য রেখে দিতো আমার বন্ধু।” শানের ভাইয়ের হসপিটাল শুনে কিছুটা চুপসে গেলেও ইমন তাকে মরিচ বলে সম্মোধন করায় রেগে গেলো। রেগে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। শান নিঃশব্দে হেসে সোহার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো। ইমন শানের কাধে হাত রেখে বললো
” সোহাকে ভালোবাসিস কিন্তু আজও মনের কথা জানালি না তুই ওকে। কবে জানাবি তুই ? আর কবেই নিজের করে নিবি?” শান সোহার হাতের উপর হাত রেখে সোহার দিকে তাকালো। নিচু স্বরে বললো
” জানিনা রে। কেনো যেনো বলতে পারিনা কিছু। কখনো বলার মতো সাহস করিনি।” ইমন নিশ্বাস ফেলে বলে
” ঠিক সময়েই বল তবে সময় থাকতেই। এমন যেনো না হয় তোর কথা গুলো বলার জন্য ঠিক সময়টাই হারিয়ে যায়। আমি বাইরে আছি তুই থাক এখানে।” ইমন বেরিয়ে যেতেই শান সোহার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো। সোহার আঘাত প্রাপ্ত জায়গার উপর হাত রাখতেই সোহা ঘুমের মধ্যে কেঁপে উঠে। শান হাত সরিয়ে নিলো সাথে সাথে। উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা ঝুকে সোহার কপালে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে। শানের চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানিও গড়িয়ে পরলো সোহার কপালে। শান আবারও চেয়ারে বসে সোহার হাত ধরে রাখে আলতো করে।
রাত ৪টা বাজে….এর মাঝে শানের এক ফোটা ঘুম হয়নি। ইমন বারবার এসে দেখে যাচ্ছে। শান এক ধ্যানে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। হঠাৎ খেয়াল করলো সোহার চোখ নড়ছে। শান সোহার হাত ছেড়ে বসলো।
চোখ খুলেই উপরের দিকে তাকালো সোহা। চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে পরখ করে নিলো। শানকে দেখতে পেয়ে সোহা উঠতে গেলেই ব্যাথায় চেঁচিয়ে আহ… করে উঠে। শান সোহাকে শুয়ে দিয়ে বলে
” এতো চঞ্চলতা কিসের তোমার ? এতোবড় ব্যাথা পেলে ভুলে গিয়েছো ? চুপ করে শুয়ে থাকো।”
সোহা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে শুয়ে পরলো। পেটের ব্যাথাটা অনুভব করতে পারছে মারাত্মক ভাবে। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো
” ব্যাথা করছে তোমার ?” সোহা মলিন হাসি দিয়ে বললো
” আঘাত যখন পেয়েছি তখন তো ব্যাথা করবেই।”
শান অপরাধী চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকে। সোহা হঠাৎ আকুলতা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো
” বেশি ব্যাথা করছে আমার। ডক্টরকে ডাকুন না !”
শান দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো ডক্টরের কাছে।
ডক্টর সোহা ব্যাথার ইনজেকশন দিতেই ব্যাথা না কমলেও মারাত্মক ব্যাথা থেকে কিছুটা কমে আসে। সোহা শানকে জিজ্ঞেস করে
” বাড়িতে জানান নি তো !”
শান মাথা নিচু করে বলে
” জানাইনি তবে রাত শেষ হলেই সবাইকে জানাবো।” সোহা আতকে বলে
” আরে ! আমি বললাম তো কাউকে জানাবেন না।” শান রেগে দাঁড়িয়ে গেলো। রাগান্বিত স্বরে বলে
” এটা লুকানোর মতো কোনো কথা না, এইটুকু সেন্স নেই তোমার ? এতোবড় এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো আর কাউকে জানাবো না আমি ? না জানালেও জেনে যাবে সবাই। তখন সবাই কষ্ট পাবে এতোবড় কথা লুকানোতে তাই সবাইকে জানাতে হবে এটা। আর একটাও কথা বলবে না আমার কথার উপর।” সোহা মাথা নুইয়ে শুয়ে থাকে।
বাড়ির সবাই হসপিটালে এসে পরেছে। সোহার বাড়িতেও জানানো হয়েছে। শানের মা আর সোহার মা বসে বসে কাঁদছে। ইশান অনেক রেগে আছে। তারই হসপিটালে সোহা ভর্তি অথচ তাকেই কেউ কিছু জানায়নি। ইশান একনাগাড়ে শান আর সোহাকে বকে যাচ্ছে আগে না জানানোর জন্য। দুজন চুপচাপ বকা শুনে যাচ্ছে।
.
.
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৫
ইশান একনাগাড়ে শান আর সোহাকে বকে যাচ্ছে আগে না জানানোর জন্য। দুজন চুপচাপ বকা শুনে যাচ্ছে। ইশান রাগে রিরি করতে করতে বলে
” এতোবড় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো আর তোমরা এখন জানাচ্ছো ? মানে এটা কে কি মজা মনে করেছো নাকি দুজন ? এতোবড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।” সোহা গলা খাদে নামিয়ে বললো
” ভাইয়া আমি এখন একদম ঠিক আছি। উনি তো সময় মতো আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।” ইশান রেগে বলে
” এতোবড় আঘাত পেয়েও বলছো কোনো ক্ষতি হয়নি! তুমি একটাও কথা বলবে না আর।” সোহা মাথা নিচু করে বসে রয়েছে। রিয়ানা বেগমের তো কান্নার বন্যা বসে গিয়েছে। সোহা বিরক্ত কন্ঠে বলে
” উফফ মা থামবে তুমি ! এতো কান্না আসে কোথা থেকে তোমার ? দেখছো বসে আছি কোথায় একটু খাবার দাবার দেবে খাওয়ার জন্য ! তা না করে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছ ?” রিয়ানা বেগম কান্না বন্ধ করে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে
” তুই কি করে বুঝবি মায়ের মনের কথা ! আজ যদি বড় কিছু হয়ে যেতো ! তখন আমি কি নিয়ে থাকতাম !” সোহা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। শাহানাজ বেগম এসে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
” এখন কেমন আছিস ? ব্যাথা করছে ?” সোহা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে মাথা নেড়ে হ্যা বলে। শাহানাজ বেগম হেসে দিলো সোহাকে দেখে।
নিলা, সিমি দুজন এসে সোহার পাশে বসে কথা বলতে থাকে। নাইসাকে বাড়িতে রেখে এসেছে। ইশানের বকাবকি শেষ হতেই ইশান কেবিনে চলে গেলো। শান সোহাকে দেখতে থাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। সিমি শানের হাতে একটা ব্যাগ এগিয়ে দেয়। শান জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সিমি বললো
” তোমার পুরো শার্ট জুড়ে সোহার রক্ত লেগে রয়েছে। নিজের অবস্থা তো বাজে করে রেখেছো। ড্রাইভার কাকা কে দিয়ে শার্ট আনিয়েছি। চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।” শান মাথা নেড়ে ব্যাগটা হাতে নেয়।
” আজকে কি থানায় যাবে তুমি ?” শানের সেই লোকটার কথা মনে পরলো যাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব ইমনকে দেয়া হয়েছে। সিমি শানের মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো
” কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলে ?”
শানের হুশ আসতেই হচকচিয়ে যায়। গলা ঝেড়ে বললো
” হ্যা যেতে হবে আজকে তবে পরে গেলেও হবে।”
সিমি হেসে বলে
” ঠিকাছে। চেঞ্জ করে এসো তাড়াতাড়ি আর হ্যা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো। বিপদে আমার বোনটার এতো খেয়াল রাখার জন্য।” শান সৌজন্যতার হাসি দিয়ে মনে মনে কথা বলতে থাকে
” তোমার বোন আমারই প্রাণপাখি ছোটভাবি ! তাকে না বাঁচালে আমার প্রাণপাখিটাই উড়ে যাবে যে !” তবে মুখে বলে
” বারবার এসব বলে পর করে দিও না আমাকে।” সিমি মুচকি হেসে বললো
” যাও পর করলাম না। এবার তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।” শান আলতো হেসে চলে গেলো। রিয়ানা বেগম হালকা কিছু খাবার এনে সোহাকে খাইয়ে দিতে থাকে। সোহা বেডে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে বসে খাচ্ছে।
শান চেঞ্জ করে বের হতেই শাহানাজ বেগমও শানকে খাইয়ে দিতে থাকে।
আজই সোহাকে নিয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে রিয়ানা রহমান আর ইমতিয়াজ রহমান। সোহা বায়না ধরেছে হসপিটালে একদিনের বেশি কোনোভাবেই থাকবে না সে। এদিকে এই আঘাত নিয়ে এখনই বাড়িতে যাওয়াও রিস্ক রয়েছে তাই কেউ রাজি হয়নি। কিন্তু সোহার কান্নাকাটি দেখে আজই ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে ইশান। ইশান কড়াকড়ি ভাবে সোহাকে সাবধান থাকতে বলেছে। আর আঘাত পাওয়া স্থানে ড্রেসিং করতে হবে তাই সেই দায়িত্ব সিমিকে দেয়। সোহার এই অবস্থা দেখে শাহানাজ বেগমই সিমিকে সোহার বাড়িতে পাঠাচ্ছে। সিমি ইতিমধ্যে বাড়িতে চলে গিয়েছে সোহার লাগেজ আর টমিকে নিয়ে আসার জন্য। শাহানাজ বেগম সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলে
” শোন মা ভালো করে থাকবি। রেস্ট করবি সবসময় আর এখন কিন্তু এই অবস্থা নিয়েই একদম লাফালাফি করবি না। আর আমি তোকে দেখতে আসবো ঠিকাছে ?” সোহা মিটমিট করে হেসে বলে
” তুমি আমার সাথে চলে এসো আন্টি। আমার খেয়াল তুমিই নাহয় রেখো !” শাহানাজ বেগম হেসে দিলো সোহার কথায়। হঠাৎ করে মুসফিক চৌধুরী এসে পড়লো। এসেই তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে বসে। শান বাবাকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। সোহাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা লোকটাকে যাচ্ছে তাই বলছে। কিছুক্ষণ পর রাগারাগি করে মুসফিক চৌধুরী সোহার কাছে গেলো। সোহাকে অনেক আদর করেন তিনি। কেনো জানি মেয়েটার প্রতি এক প্রকার টান অনুভব করে। সোহার সাথে অনেক কথা বললো তিনি। শান মুচকি হেসে দূড় থেকে দাঁড়িয়ে তার বাবা আর সোহাকে দেখে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সোহাকে আপন করে নেওয়ার কথা ভাবলেই পরিবারের কথা মাথায় আসলেও কখনো পরিবার নিয়ে চিন্তিত নয় শান। তার পরিবারের প্রত্যেকে যে সোহাকে মাথায় তুলে রাখবে সেটা শান ভালো করেই জানে।
বিকেল হয়ে যেতেই সোহাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো সবাই। সোহার গাড়িতে স্পেস দরকার আর ধীরে ভাবে গাড়ি ড্রাইভ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছে। তাই শান তাই সোহাকে আলাদা ভাবে নিয়ে যাচ্ছে। সোহা পেছনে সিটে হেলান দিয়ে বসে থাকে। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে আর শান, সোহা পেছনে বসে রয়েছে। শান ঘাড় ঘুরিয়ে সোহার দিকে তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। শান নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বললো
” বাড়িতে গিয়ে আমাদের মিস করবে না ?”
সোহা চমকে শানের দিকে তাকালো। শানের প্রশ্ন শুনে অবাক হলেও মুচকি হেসে বলে
” মিস তো অবশ্যই করবো তবে প্রশ্নটা আমার আপনাকে করার কথা। কয়েকদিন তো এই বাদরের সাথে থাকলেন একই বাড়িতে। অনুভূতি কেমন ?” শান তাচ্ছিল্য হেসে বললো
” অনুভূতির কথা তুললে তো অন্য এক অনুভূতির কথাও আজ বলতে চাই। শুনবে কি সেসব ?” সোহা কথা বুঝতে না পেরে অবুঝ হয়ে বললো
” মানে ? অন্য কোন অনুভূতির কথা বলবেন ?”
শানের হুশ আসে কি বলে ফেলেছে ঘোরের মাঝে। শান মাথা নেড়ে বলে
” নাহ কিছু না। যাই হোক মিস. বাদরকে মিস করবো কিছুটা।” সোহা মিটমিট করে হেসে বলে
” বাব্বাহ ভুতের মুখে রাম রাম ! আমাকে বাদর বলে বকেন সবসময় আর এখন মিস করবেন?”
শান মুচকি হাসলো সোহার কথায়। সোহা শানের মুচকি হাসি দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। শানকে কখনো মুচকি হাসি দিতে দেখেনি আর দেখলেও হয়তো খেয়াল করেনি। কিন্তু আজ খেয়াল করলো শান ছেলেটার মুচকি হাসিটা মারাত্মক সুন্দর। সোহা কিছুক্ষণ তাকিয়ে শানের সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। দুজন আর গাড়ির মধ্যে কোনো কথা বললো না। সোহার বাড়ির কাছাকাছি চলে আসতেই শান হঠাৎ সোহার হাতের উপর হাত রাখলো। সোহার পুরো শরীরে কারেন্ট দিয়ে উঠে। সোহার গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায় শানের হাতের স্পর্শে। সোহা চোখ বড় বড় করে হাতের দিকে চেয়ে থাকে। শান নিশ্বাস ফেলে বলে
” ভালো করে খেয়াল রাখবে নিজের আর হ্যা এই সময়টা একটু বাঁদরামি কমিয়ে করবে মিস. বাদর। ওকে ?” সোহা ঢোক গিলে মাথা নাড়ালো। গাড়ি থামতেই সোহাকে রিয়ানা রহমান আর শষী এসে নিয়ে গেলো ভেতরে আর ইমতিয়াজ রহমান শানকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সোহাকে রুমে শুয়ে দিয়ে এসে রিয়ানা রহমান আর শষী বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সোহা গভীর ভাবনায় ডুবে গেলো। শানের স্পর্শ আজ তাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কি হলো বুঝে উঠতে পারছে না সোহা। কালও তো যখন সোহার ছুরি লেগেছিলো দুজন অনেকটা কাছাকাছি ছিলো। শান বারবার তাকে আগলে রাখছিলো কিন্তু তখন এমন কিছুই মনে হয়নি তবে আজ ! আজ শুধুমাত্র একটু হাতে স্পর্শ করাতেই এই সোহার এই অবস্থা ! সোহা না মেনে নিতে পারছে আর না বুঝে উঠতে পারছে এই ছোট হিসাবটা। সোহা এসব নিয়েই গভীর চিন্তায় ডুবে থাকে। কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখে শান এসেছে। সোহা নড়েচড়ে বসলো কিছুটা। শান এগিয়ে এসে বললো
” চলে যাচ্ছিলাম বিদায় নিতে আসলাম।” সোহা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে
” হ্যা চলে যান। মা..মানে আবার আসবেন।” শান সোহার ব্যবহারে ভ্রু কুঁচকে নেয়। সোহা জোড়পূর্বক হাসার চেষ্টা করে। শান বেশি না ঘাটিয়ে বললো
” ঠিকাছে রেস্ট করো আর হ্যা ভালো করে থেকো আমি কিন্তু খোঁজ নেবো তোমার।” সোহা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” আপনি ? কিভাবে খোঁজ নেবেন ?”
শান আলতো হেসে বলে
” দেখতেই পাবে। অনিয়ম দেখলে আমি কিন্তু বকা থামাবো না। আল্লাহ হাফেজ।”
শান বেরিয়ে গেলো সোহার রুম থেকে। সোহা আবারও সেই গভীর ভাবনায় ডুবে যাওয়ার আগেই তার ফোন বেজে উঠে। সোহা হাতে নিয়ে দেখলো ইতির ফোন।
.
চলবে……….