#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১২
আজ সবাই ঘুরতে যাচ্ছে। সবাই বলতে সোহা, সিমি, নিলা, নাইসা আর তামিম। তামিমকে সবাই এক প্রকার জোড় করেই নিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা ফ্যামিলির একজনের মতো হয়ে গিয়েছে তাই সবাই তামিমকে নিয়ে যাচ্ছে।
সিমি মিররের সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছিলো তখন সামির ওয়াসরুম থেকে বের হলো। অফিসের যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। সিমিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেই পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে। সিমি আজ অনেক দিন পর শাড়ি পরেছে। সামিরের কাছে আজ সিমিকে হুর পরি মনে হচ্ছে। সামির সিমিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সিমির কাধে থুতনি রেখে জড়ানো গলায় বললো
“ওই! এই আজ এতো সেজেছো কেনো? আমাকে বুঝি এই রূপের মায়ায় ফেলতে চাইছো ? এভাবে তোমার সাথে নিয়ে যেতে চাইছো ? সেটা কিন্তু হবে না !” সিমি তার লিপস্টিক দেওয়া শেষ করে সামিরের দিকে তাকিয়ে বললো
” তো তোমাকে যেতে কে বলেছে ? আমি তো বলিনি একবারও। তুমি অফিসে যাও আর আমাকে ছাড়ো লেট হয়ে যাবে আমার।” সামির অবাক হওয়ার ভান করে বললো
” এটা পাষাণ তুমি ? ছিঃ! অন্য কেউ হলে এতোক্ষণে আমাকে হাজারবার রিকোয়েস্ট করে ফেলতো তার সাথে যাওয়ার জন্য আর তুমি !”
সিমি সামিরের হাত ছাড়িয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে
” তো আমার কাছে কি করছিস তুই ? যা অন্য কারো কাছে চলে যা। কার সাথে ঘুরতে যেতে চাস ঘুরে আয়।” সামির থতমত খেয়ে যায়। এত ছোট একটা কথায় এভাবে রেগে সাবে সামির বুঝতে পারেনি। সামিস এগিয়ে গিয়ে দুই হাতে সিমির কোমড় জড়িয়ে ধরে। সিমি সামিরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারলো না পরে হালই ছেড়ে দিলো। সামির সিমি ঠোঁট জোড়ার উপর ডিপলিভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। এক হাত সিমির গালে রেখে আদুরে গলায় বলে
” বলো এবার রাগ করছো কেনো ? কি হয়েছে ?”
সিমি মাথা নিচু করে নেয় নিচু স্বরে বলে
” একটা দিনের জন্য ছুটি নিতে পারেন না ?”
সামির মুচকি হেসে সিমির গালে ডিপলি কিস করে বললো
” এইটুকুর জন্য এতো মন খারাপ ? কালকে তো সময় দিচ্ছিই। আর এই ডিলের ঝামেলাটা শেষ হলেই তুমি যেখানে বলবে সেখানে তোমাকে নিয়ে ঘুরে আসবো। তুমি বললে আরেকবার নাহয় হানিমুনে চলে যাবো।” সিমি লজ্জা পেয়ে নিজেকে সামিরের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। সিমি তার সাইড ব্যাগ নিয়ে পুরোপুরি রেডি হয়ে। সামির সিমিকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে দেয়। সিমি সামিরের বুকে হাত রেখে ঠেলে দূড়ে সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারলো না। কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” ছাড়ুন ! দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো।” সামির ঘোড় গালা কন্ঠে বললো
” উঁহু ! ছাড়তে পারবো না।”
দুজনের রোমেন্সের মাঝে হুট করে দরজায় কেউ ঠাস ঠাস করে বারি দিলো। দুজনই চমকে ছিটকে স্বরে গেলো। সিমি বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে দরজা খুলে দিতে যায়। সামির গিয়ে চুল ঠিক করতে থাকে। সিমি দরজা খুলে দিতেই সোহা হুরহুর করে রুমে ঢুকে গেলো। মেশিনের মতো বলত্ব থাকে
” তোমাদের দুজনের রোমেন্স এবং সাজগোছ শেষ হলে তাড়াতাড়ি নিচে এসো সবাই অপেক্ষা করছি আমরা।” সোহার কথা শেষ হতেই আগের মতো চলে গেলো। সিমি আর সামির স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সিমি গলা ঝেড়ে আড়চোখে সামিরের দিকে তাকালো। সামির অবাক স্বরে বলে
” সোহা জানলো কি করে আমরা কি করছিলাম ?”
সিমি চোখ রাঙিয়ে বলে
” জান সোহাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসুন!”
সামির থতমত খেয়ে বলে
” নাহ থাক। মান-সম্মানের একটা ব্যাপার আছে।”
সিমি ঠোঁট চেপে হেসে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সামিরও ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো। সবাই শাহানাজ বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে চলে গিয়েছে এই দুজনও বাইরে চলে আসে। সবাই গাড়িতে উঠে গিয়েছে। তবে শানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সামির অবাক হয়ে বলে
” কিরে তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ? অনেক্ষণ আগেই তো বের হলি, থানায় যাসনি যে এখনও ?”
শান বিরক্তির স্বরে বলে
” আর বলো না ! থানার সরকারি গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কালকে এক ক্রিমিনালের পিছু ধরতে গিয়ে গাড়ির হাল বারোটা বেজে গিয়েছে। ওয়ার্কশপে দেওয়া হয়েছে আধো ঠিক হবে কিনা কে জানে !”
” ঠিকাছে তাহলে আমাদের সাথেই চল আমরা ড্রপ করে দিচ্ছি।”
শান নাকচ করে বললো
” না ভাই। ড্রাইভার কাকে বলেছি আমার জিপটা বের করতে। সেটা দিয়েই এখন কাজ চালাতে হবে। তোমরা যাও।” সামির মাথা নেড়ে বলে
” তাহলে আমিও তোর সাথে চলে যাচ্ছি অনেক দিন ধরে জিপে যাওয়া হয়নি তোর সাথে।”
শান হেসে দেয় সামিরের কথায়। সামির গিয়ে সোহাদের গাড়ির ড্রাইভারকে বললো তারা যেনো চলে যায়। আর তামিম, নিলাকে পইপই করে বললো সবাইকে নিয়ে যেনো সাবধানে থাকে। সোহাদের গাড়ি বেরিয়ে যায়।
ড্রাইভার গ্যারেজ থেকে জিপ বের করতেই শান ড্রাইভার সিটে বসে পরে আর সামিরও পাশে বসে পরলো।
রাত আটটার পর সোহারা ঢুলতে ঢুলতে বাড়িতে ঢুকলো একেকজন। নাইসা গাড়িতে ঘুমিয়ে গিয়েছে তাই তাকে রুমে শুয়ে দিয়ে আসে। সোহা, সিমি, নিলা ধুপধাপ করে সোফায় গিয়ে বসে পরলো। শাহানাজ বেগম তিনজনকে দেখে বলে
” কি হয়েছে তোমাদের এই অবস্থা কেনো ?”
সোহা ক্লান্ত স্বরে বলে
” আর বলবেন না আন্টি। এতো এতো ঘুরেছি যে এখন হাতে, পায়ের ব্যাথায় ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।”
শাহানাজ বেহম হাক ডেকে সালমাকে বললো
তাদের জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে আসতে। পানি খেয়ে সবাই সবার রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
সোহা ফ্রেশ হয়েই বিছানায় লেপ্টে শুয়ে পড়লো। সিমি সামিরের সাথে কথা বলতে থাকে। নিলা ইশানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে জানলো ইশানের রাতে একটা বড় সার্জারি রয়েছে তাই রাতে ফিরতে দেড়ি হবে।
———–
আজকে সবাই ডিনের জন্য যাচ্ছে। সবাই তৈরি হচ্ছে ডিনারের জন্য। শানের মন কোথায় হারিয়ে আছে নিজেও জানে না। কোনো এক ধ্যান এর মধ্যে দিয়ে তৈরি হচ্ছে। সোহা চলে যাচ্ছে কাল ভাবতেই বুকের ভেতর থেকে একটা চির দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে আসে। ইচ্ছে করছে সোহাকে আকড়ে ধরে নিজের কাছে রেখে দিতে কিন্তু পারবে না সে। শান বড় চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো। শান নিজের ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলো। সোহার রুমের কাছাকাছি আসতেই সোহাকে দেখতে পেলো। সোহা নাচতে নাচতে দরজা লাগিয়ে দেয়। শানকে দেখতে পেয়ে দৌঁড়ে শানের সামনে ছুটে আসলো। শান এক ধমক দিয়ে বসলো
” এই মেয়ে এক থাপ্পড় দেবো ! এখানে কি দৌঁড়ের রেস হচ্ছে নাকি? এতোবড় হিল পড়ে দৌড়াচ্ছো কেনো তুমি ?”
সোহা ক্ষেপে বললো
” একটু সুন্দর করে কথা বলতে আসলাম আর আপনি কিছু বলার আগেই ধমক দিয়ে দিলেন ?”
শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” আচ্ছা ! এটাকে সুন্দর করে আসা বলে ? আবারও প্রমাণ করে দিয়েছো তুমি একটা বাদর। তোমার এসব কাজ দেখে ধমক না দিয়ে পারাই যাবে না।” সোহা মারাত্মক রেগে গেলো। তাও রাগটা সংযত রেখে মুচকি হেসে বলে
” আচ্ছা বলুন তো আমাকে কেমন লাগছে ?”
সোহার কথায় শান সোহাকে পুরোপুরি ভাবে খেয়াল করলো। কালো একটা গাউন পড়েছে সোহাকে মারাত্মক ভাবে মানিয়েছে। অপ্সরী থেকে কম লাগছে না। শান কিছুক্ষণ অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে। সোহা তুড়ি বাজিয়ে বলে
” এই যে বলুন না ! খারাপ লাগলে এখনি চেঞ্জ করে ফেলবো।” শান ভ্রু উঁচিয়ে বলে
” আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছো কেনো তুমি ? আমি কি হই তোমার ? একটা পর ছেলেকে এসব জিজ্ঞেস করছো তুমি!”
সোহা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। বিরবির করে বলে
” আমি তো এসব ভাবিইনি।” শান রেগে বলে
” কি হয়েছে তোমার ? মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো ? কি ভাবছো এখন ?” সোহা জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে বললো
” নাহ কিছু না। আচ্ছা আমি যাই।” শানের উত্তরের অপেক্ষা না করে আবার এক ছুটে নিচে চলে গেলো। শান পেছন থেকে সোহাকে এভাবে ছুটতে না করলেও সোহা কানেই নিলো না।
নিচে এসে দেখে সবাই এসে পড়েছে। শান একপলক ঘড়ির দিকে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে
” বের হও নাহলে লেট হয়ে যাবে।” শাহানাজ বেগম এসে বলে
” তোদের বাবার আর ইশানেরই তো খোঁজ নেই। তারা কোথায়?”
নিলা এগিয়ে এসে বলে
” মা আপনার ছেলে বলেছে হসপিটাল থেকেই রেস্টুরেন্টে চলে যাবে আর বাবাও অফিস থেকে যাবে সামির বললো। আপনি নিশ্চিন্তে চলুন।”
শাহানাজ বেগম ক্ষেপে বলে
” একটা দিন ! মাত্র একটা দিন ফুল ফ্যামিলি ডিনারে যাচ্ছি সেটা তেও এই বাপ ছেলে দেড়ি করে আসবে। এদের নিয়ে কোথায় যাবো আমি ? কোথায় আমার দুই ছেলে তো সব ছেড়ে ছুরে ফ্যামিলির জন্য চলে এসেছে আর এরা আসতে পারছে না ? আমার ছেলের থানায় কি কম কাজ থাকে নাকি ?” শাহানাজ বেগম রাগারাগি করতে করতেই বের হলো বাড়ি থেকে। একে একে সবাই গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি রেস্টুরেন্ট এর উদ্দেশ্যে চলতে থাকে।
সামির কালেই তাদের জন্য টেবিল বুক করে রেখেছিলো রেস্টুরেন্টে। শান, সোহাসহ সবাই আসতেই ম্যানেজার তাদের ওয়েলকাম করে তাদের বুক করা টেবিল দেখিয়ে দেয়।
.
.
চলবে………..
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৩
শান, সোহাসহ সবাই আসতেই ম্যানেজার তাদের ওয়েলকাম করে তাদের বুক করা টেবিল দেখিয়ে দেয়। সবাই গিয়ে তাদের সিটে বসে পরে। খাবার অর্ডার করতে করতে মুসফিক চৌধুরী আর ইশান এসে উপস্থিত হয়। শাহানাজ বেগম রাগ চাপা রেখে গম্ভীর গলায় বললো
” দুজন না আসলেই তো পারতে। যেখানেই যাও অফিস আর হসপিটালের থাকে ঝুলে থাকবে দুজন।” ইশান অসহায়ের মতো চেহারা বানিয়ে বলে
” সরি মা। আসলে Emergency একজন রোগী এসেছিলো তাই লেট হয়ে গিয়েছে।” শাহানাজ বেগম কিছু না বলে চোখ মুখ শক্ত করে রাখে। মুসফিক চৌধুরী শানকে দেখে কিছুটা অবাক হয়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেসই করে ফেললো
” তুমি না আসবে না বলেছিলে !” শান মুসফিক চৌধুরীর চাহনি দেখে আমতা আমতা করে বলে
” আমি আসবো না কখন বলেছি ? আমি তো না করিনি।” মুসফিক চৌধুরী আরো কিছু বলতে নিলেও নিজেকে আটকে নিলো।
শান আড়চোখে সোহাকে দেখে চোখ সরিয়ে নিলো।
একে একে সবাই খাবার অর্ডার করে। খাবার আসার পর্যন্ত সবাই রেস্টুরেন্টে ছবি তুলতে থাকে। এখানকার পরিবেশটা ভালোই আর রেস্টুরেন্ট এর বাইরে গার্ডেনের ভিউটা খুবই সুন্দর। সুইমিংপুল ও রয়েছে। সোহা সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছে সাথে মুহূর্ত গুলোর ছবি তুলে নিচ্ছে। সবার সাথে ছবি তুলতে তুলতে শানের সাথেও একটা আলাদা ছবি উঠানো হয়ে গিয়েছে সোহার। সোহা সেটা খেয়াল না করলেও শান ঠিকই করেছে। রেস্টুরেন্টে সব জায়গায় শুধ্য কাপলই দেখা যাচ্ছিলো। এর মধ্যে সোহার এক জোড়া কাপলকে দেখে খুবই ভালো লাগলো তাই লুকিয়ে লুকিয়ে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। শান এসব দেখে এগিয়ে এসে বলে
” কি করলে এটা ? অন্যদের ছবি তুলছো কেনো তুমি ?” সোহা চমকে ফোনটা পেছনে লুকিয়ে বলে উঠে
” কোথায় ! আমি তো কারোর ছবি তুলিনি।”
শান চোখ ছোট ছোট করে বলে
” আমাকে মিথ্যা বলছো তুমি ? সাহস কতোবড় তোমার ! আমি নিজের চোখে সব দেখেছি।”
সোহা ক্ষিপ্ত স্বরে বলে
” তুললে তুলেছি আপনার কি হ্যা !” সোহা রাগ দেখিয়ে সরে আসে সেখান থেকে।
কিছুক্ষণ পর সবার খাবার এসে পরতেই সবাই এসে নিজ নিজ জায়গায় বসে পরে। খেতে বসেও আরেক ঝামেলা হয়েছে শানের জন্য। তার সব খাবার ঝাল ছাড়া যার জন্য সোহা মিটমিট করে হাসছে অনবরত। শান সেটা দেখে ভালো করে খেতেও পারছে না। শান বড়সড় চোখ রাঙানি দিতেই সোহা রেগে ভেংচি নিজের খাবারে মন দেয়। শান এবার শান্তিতে খেতে থাকে।
খাবার শেষ হতেই সবাই রেস্টুরেন্ট এর বাইরে গার্ডেনের ভিউ দেখতে চলে যায়।
সোহা আইসক্রিম খেতে খেতে গার্ডেনে ঘুরছে। অনেক্ষণ ঘুরাঘুরি করার পর শাহানাজ বেগম বললো
” চলো সবাই অনেক রাত হয়ে গিয়েছে বাড়ি ফিরতে হবে।” ইশান সায় দিয়ে বললো
” হ্যা রাত হয়ে গিয়েছে। তোমরা চলে যাও দুই গাড়ি নিয়ে আমি শানের সাথে জিপে করে চলে আসবো।” শান ইশানকে বাধা দিয়ে বললো
” ভাইয়া তুমি চলে যাও। আমি বিল পে করে দিচ্ছি।” ইশান আরেকবার থেকে যেতে চাইলে নাইসা বললো
” পাপ্পা ! আমার সাথে চলো !” সোহা এগিয়ে এসে বলে
” আমি উনার সাথে যাই ? আরেকটু থাকি আমি !”
সিমি ভ্রু কুঁচকে বলে
” আবার কেনো থাকবি তুই ? এতোক্ষণ থেকেও মন ভরেনি ? অনেক রাত হয়েছে চল।”
সোহা কাঁদোকাঁদো চেহারায় মুসফিক চৌধুরীর দিকে তাকাতেই তিনি সিমিকে বললো
” থাকুক। শান সোহাকে নিয়ে আসিস সাবধানে। আমরা চলে যাচ্ছি।” শান মাথা নেড়ে সায় দিলো।
সবাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। সোহা নাচতে নাচতে চারপাশের ঘুরতে থাকে। শান আলতো হেসে রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলো। বিল পে করে এসে দেখে সোহা সুইমিংপুলে পা ডুবিয়ে বসে আছে। শান এগিয়ে এসে ধমক দিয়ে বললো
” সোহা ! এটা কি বাড়ি পেয়েছো ? উঠো এখান থেকে। অনেক রাত হয়েছে।” সোহা শানের কথা কানে না দিয়ে আগের মতোই বসে থাকে। সোহা উঠছে না দেখে শান সোহার হাত ধরে জোড় করে টেনে উঠালো। সোহা রেগে বলে
” এই আপনার সমস্যা কি ? একটু শান্তিতে বসতে দিচ্ছেন না কেনো ?” শান দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দেবো। এখন চলে যাবো আমি আর তুমি পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকবে ?” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” সব সময় বকেন কেনো আপনি ? একটু সুন্দর করে কথা বললে কি হয়?” শান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শান্ত গলায় বলে
” ঠিকাছে বলছি। চলো এখন আমরা বাড়িতে যাচ্ছি।” সোহা এক গাল হাসি দিয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায় কিন্তু গাড়িতে উঠতে পারলো না তার আগেই রেস্টুরেন্ট থেকে চিৎকার করতে কিছু লোকজন একজনের পেছনে দৌঁড়ে বেরিয়ে আসে। সামনের লোককে সম্ভবত ধরার চেষ্টা করছে। সোহা ভয় পেয়ে দৌঁড় দেয় শানের কাছে আসার জন্য কিন্তু মাঝরাস্তায় এক গগন ফাটানো চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পরে সোহা। সবাই সেখানেই থমকে দাঁড়ায়। শান স্তব্ধ হয়ে যায় সোহার চিৎকার শুনে। শান দৌঁড়ে সোহার কাছে ছুটে যায়। সোহাকে এক হাতে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে অস্থির গলায় বলে
” কি হয়েছে ? চিৎকার করলে কেনো ?” সোহা পেটের ডান পাশ চেপে ধরে কাতরে যাচ্ছে। কিছু বলতে পারছে না। পাশ থেকে এক লোক বলে উঠে
” আরে মেয়েটার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছে ওই লোকটা।” শান সোহার হাতের উপর হাত রাখতেই দেখতে পেলো সোহার হাত রক্তে লাল হয়ে আছে। শান স্তব্ধ হয়ে যায় রক্ত দেখে। সোহা বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে শানের শার্টের কলার চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে থাকে। শান সোহাকে এক হাতে জড়িয়ে রেখেই চারপাশে তাকিয়ে দেখে সেই লোকটা নেই ইতিমধ্যে চলে গিয়েছে। সবাই বলাবলি করছে সোহাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শান সোহাকে কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভার সিটে বসে পরে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হসপিটালের রাস্তায় যেতে থাকে। শান ভেজাচোখে সোহার দিকে তাকালো। পেট চেপে ধরে কাতরাচ্ছে আর অনবরত কাঁদছে। শান সোহাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। সোহার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
” কিছু হবে না তোমার সোহা। একটু অপেক্ষা করো প্লিজ ! আমি হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি তোমায়।” সোহা কাঁদতে কাঁদতে অনেক কষ্টে ঠোঁট নাড়িয়ে বললো
” আমার অ…নেক ব্যাথা করছে।” সোহা পেট চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে রাখে। ব্যাথায় নিশ্বাস নেওয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে দেখে শান সোহার আঘাত পাওয়া জায়গায় হাত রাখে। শানের হাতও কয়েক সেকেন্ডে রক্তাক্ত হয়ে যায়। শান ভেজাচোখে সোহার দিকে তাকায়।
———————————————
শান পুরো কোরিডোর জুড়ে পাইচারি করছে। নিজের বেহাল অবস্থা। শার্টের কলার, হাতায় পুরো শার্টেই রক্ত লেগে রয়েছে। কোট গাড়িতেই ফেলে রেখে এসেছে। এখনও মনে হচ্ছে শানের বুকে কেউ ছুরি চালাচ্ছে। শান না কাঁদতে পারছে আর না কোনোভাবে প্রকাশ করতে পারছে। সোহাকে আইসিউ তে নিয়ে যাওয়ার আগেই সোহা বলে দিয়েছে বাড়িতে কাউকে জানাতে না। তাই ইমনকে ডেকেছে এই রাত ভর। শানের চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। শান ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে কিন্তু পারছে না। এরমাঝে ইমন দৌঁড়ে আসলো শানের কাছে। আইসিউ এর দরজার দিকে একবার তাকিয়ে শানের সামনে হাটুগেড়ে বসে চিন্তিত হয়ে বলে
” কিভাবে হয়েছে এসব শান ?” শান ইমনের দিকে একবার ছলছল চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে আবার হাতে লেগে থাকা রক্তে দিকে তাকিয়ে জড়ানো গলায় বললো
” কি হয়ে গেলো এটা ? আমি বুঝতে পারছি না এখনও। সোহার অনেক কষ্ট হচ্ছে ইমন। সোহা ব্যাথায় অনেক কাঁদছিলো।” ইমন শানকে শান্ত করার চেষ্টা করে কিন্তু শান উঠে গিয়ে দেয়ালে ঘুষি দিতে থাকে। ইমন শানকে অনেক কষ্টে আটকে রেখে বলে
” সোহার কিছু হবে না শান। একটু শান্ত হ তুই। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর তুই। এখনই ডক্টর চলে আসবে।” শান গিয়ে আইসিউ এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই শানের বাড়ির খেয়াল আসে। চটজলদি ফোন বের করে দেখে বাড়ি থেকেই ফোন এসেছে। শান ঢোক গিলে একবার ফোনের দিকে তাকায় আবার অসহায় চোখে ইমনের দিকে তাকালো। সোহা বাড়িতে কিছু না জানাতে বলেছে। কি করবে বুঝতে পারছে না শান।
.
.
চলবে……….