#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৯
সোহা অবাক হয়েই বলে
” নাহ হজম হচ্ছে না।” শান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে সোহাকে উপরে নিয়ে যেতে থাকে।
সালমা কোনো রকমে নিজেকে কন্ট্রোল করে তার কাজে লেগে পরে।
শান রুমে এসে সোহাকে শুয়ে দেয়। সোহা ব্ল্যাংকেটের নিচে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকে। টমি ব্যালকনি থেকে দৌঁড়ে এসে সোহার গা ঘেঁষে বসে থাকে। শান নিজের মুখটাকে একদম দেখার মতো বানিয়েছে। শান রুম থেকে বেরিয়ে যায় আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথায় পানি দেওয়ার পানি নিয়ে আসে। সোহা দুর্বল গলায় বলে
” এসব আর দেওয়া লাগবে না প্লিজ! জ্বর চলে যাবে আমার।” শান গম্ভীর গলায় বলে
” জ্বর চলে যাওয়ার হলে এখনও বসে বসে তোমার মাথায় ডিম পারতো না। আমার কাজ আমাকে করতে দাও একটাও কথা বলবে না তুমি।” সোহা মুখ ফুলিয়ে রাখে। শান সব ঠিক করে সোহার মাথায় পানি ঢেলে দিতে থাকে।
সোহা শুয়ে শুয়ে ফোন টিপতে থাকে। শান আড়চোখে বারবার সোহার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। টমির কথা খেয়ালে আসতেই পাশে টমির দিকে তাকায়। টমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। শান বড়সড় চোখ রাঙানি দিলো। টমি ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। সোহা টমির দিকে একবার তাকিয়ে শানের দিকে মাথা উল্টে তাকালো। নাহ শান তো শান্ত হয়েই বসে রয়েছে।
শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি হয়েছে ? এভাবে উল্টে দেখছো কেনো ? আমাকে কখনো দেখোনি নাকি ঘার ভাঙার ইচ্ছে হয়েছে ?” সোহা ভেংচি কেটে বলে
” এসব কিছুই না। হুহ !” সোহা সোজা হয়ে শুয়ে পরে। শান আলতো হাসলো সোহার দিকে তাকিয়ে। তখন সালমা ফ্রুটস এর প্লেট নিয়ে আসে। শান ইশারা করে বলে টেবিলের উপর রাখতে। সালমা রেখে চলেও যায়। সোহা ফ্রুটস দেখেই শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসে চিৎকার করে বলে উঠে
” না আমি এসব খাবো না।” শান রেগে এক রাম ধমক দিয়ে বলে
” চুপ ! একটা টু শব্দ করলে এখানে বেধে মুখ চেপে ধরে এসব গিলাবো।” শানের ধমক খেয়ে সোহা ভয় পেয়ে বেডের অন্য কোণায় গিয়ে বসে পরে। শান টাওয়াল এনে সোহার কোলে ছুড়ে দিয়ে রাগি গলায় বলে
” মাথা মুছো নাহলে এখনি চুল কেটে ফেলবো।”
সোহা রোবটের গতিতে চুল মুছে টাওয়াল দিয়ে বেধে রাখে। শান এবার গম্ভীর গলায় বললো
” চুপচাপ এখানে এসে বসো নাহলে এখনই মেরে ফেলবো বলছি আমি !” সোহা কাঁদোকাঁদো চেহারা বানিয়ে আগের জায়গায় গিয়ে বসে। শান ফ্রুটস এর প্লেট সোহার হাতে দিয়ে রাগি গলায় বলে
” এখানের প্রত্যেকটা জিনিস যেনো খাওয়া হয়।”
সোহা ছলছল চোখ বানিয়ে শানের দিকে তাকায়। শান চোখ রাঙিয়ে বলে
” এই একদম কাঁদবে না। আমার কাছে এসব মায়া কাজ করে না। চুপচাপ খাও নাহলে কাঁদতে কাঁদতেই খাওবো আমি।” সোহা নাক টেনে শানের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে
” একজন পাষাণ লোক আপনি।” শান টেডি স্মাইল দিয়ে বলে
” ধন্যবাদ। এবার খাওয়া শেষ করো !” শান আবারও ধমক দিলো সোহাকে। সোহা ভয়ে কেঁপে উঠে। একটু একটু করে ফ্রুটস খেতে থাকে। আলেপের স্লাইসে কামড় দিয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বিরবির করতে করতে বলে
” এসব কোনো খাবার ? এসব তো গরু, ছাগলও খায় না।” শান শুনতে পেয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” এসব গরু ছাগলের খাবার না যে এগুলো গরু, ছাগলরা খাবে। এগুলো মানুষের খাবার। তবে গরু, ছাগলও মাঝে মাঝে এসবের স্বাদ পেতে ফ্রুটস খেয়ে থাকে। At last better than you. আর তুমি চাইলে গরুদের রোদে পোড়ানো বন, ঘাস, খর এসব খেতো পারো। একদম বাধা দেবো না আমি।” সোহা কথা গুলো হজম করে ঠেসে ঠেসে ফ্রুটস খেতে থাকে। অর্ধেক খেয়ে ক্লান্ত হয়ে যায়। টেবিলের উপর রাখতে শান সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সোহা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” আর খেতে পারবো না প্লিজ !” শান কিছু না বলে প্লেটটা নিয়ে বাইরে যেতে যেতে বলে
” রেস্ট করো। বেড থেকে নামার চিন্তাও করবে না। আমি চেক করে যাবো এসে।”
সোহা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে শুয়ে পড়লো। ফোন নিয়ে ইতিকে কল করলো। কল রিসিভ করতেই ওই পাশ থেকে বলে উঠে
” কিরে কি খবর তোর ? কাল থেকে কোনো খোঁজ নেই।” সোহা মুখ কুঁচকে বলে
” আর বলিস না ! প্যারায় আছি আমি।”
ইতির অবাক স্বর শোনা গেলো
” ওমা ! তুই নিজেই একটা প্যারা সেখানে তোর আবার কিসের প্যারা ? এক্সামরাই তোকে প্যারা মনে করে আর তুই কিনা প্যারায় আছিস ?”
সোহা বিরক্র কন্ঠে বলে
” এএএ ! চুপ করবি তুই ? আমি কার প্যারা ? কিসের প্যারা ?”
” ওমা তুই প্যারা না তো আর কি ? এতোবড় মেয়ে হয়েছিস। কাল বাদে পরশু ভার্সিটিতে যাবি ! কিন্তু এখনও বাড়ির একেকজন তোকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে শেষ হয়ে যায়। যখন তখন তুই কোনো অঘটন না ঘটিয়ে বসিস ! এমনকি কলেজের কোনো এক্সাম আসলেও তোর চেহারায় কোনো চিন্তা নেই। সারাদিন বাদরের মতো লাফালাফি করা। এই যে বোর্ড এক্সাম দিলি ! তোকে দেখে ক্লাসের স্যারসহ একটা মানুষও নেই যে বলেনি যে তুই এক্সাম দিতে এসেছিস নাকি চিল করতে ! তাও আবার সাইন্স নিয়ে। আরে আমিও তো একি ডিপার্টমেন্ট এর কিন্তু আমার যেখানে এক্সাম এর চিন্তায় সেদিন অজ্ঞান হবার উপক্রম ছিলো সেখানে তুই পপকর্ন খাচ্ছিলি আর কলেজে চরখির মতো ঘুরছিলি।
আমার তো মনে হয় এক্সাম টাইমে তোর চিল করা দেখে এক্সাম নিজেও ভাবছিলো নিজে এক্সাম দিতে এসেছে নাকি তোর এক্সাম নিতে এসেছে !” সোহা জোড়ে চেঁচিয়ে বলে
” চুপ ! মেরি মা আর একটা কথাও বলবি না তুই। আমি আমার কথা বলতে ফোন করেছি আর তুই তোর ভাষণ শুরু করেছিস ? একটু শান্তি দিবি তো নাকি ?”
ইতি শান্ত হয়ে বলে
” আচ্ছা বল বল কি বলবি। চুপ করেছি আমি।”
সোহা বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে
” শোন এবার !…” সোহার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইতি ফোড়ন কেটে বলে
” তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেনো ? অসুস্থ নাকি তুই ? কালকে বৃষ্টিতে ভিজে আবার জ্বর বাদিয়েছিস নাকি ?” সোহা রাগে ফুসঁতে ফুসঁতে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
“তুই চুপ করবি এবার ? আমাকে একটু কথা বলতে দে প্লিজ !” ইতি উত্তেজিত হয়ে বলে
” সরি সরি বাবু। বল তুই বল।” সোহা এবার নিশ্বাস ফেলে কালকের কাহিনি থেকে বলা শুরু করে। কথা বলতে বলতে সোহা হঠাৎ অনুভব করে তার ফোন কানে নেই। সোহা পাশে তাকিয়ে দেখে শান তার ফোন নিয়ে নিয়েছে। সোহা অবাক হয়ে বলে
” এটা কি হলো ? আপনি আমার ফোন নিয়েছেন কেনো দেখছেন না কথা বলছি !”
শান কল কেটে বলে
” এসব গল্প সুস্থ হলেও করতে পারবে। তোমাকে ঘুমাতে বলে গিয়েছি আর তুমি এখনও বসে রয়েছো !”
সোহা আর কিছু না বলে ব্ল্যাংকেট টেনে শুয়ে পরে। শান নিঃশব্দে ফোন সোফার উপর রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে ইমনকে ফোন করে থানার খোঁজ খবর নেয়। সোহার অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে কাজ অর্ধেক ফেলে রেখেই চলে এসেছে।
সন্ধ্যার আযানের আগেই সোহা ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠেই অনুভব করে শরীর আর মন দুটোই একদম ফ্রেশ হয়ে গিয়েছে। সোহা ফ্রেশ হয়ে গিয়ে সালমার সাথে কথা বলে আসলো। পরে ঘুরতে ঘুরতে শানের রুমে চলে গেলো। এবার হুট করে ঢুকে গেলো না নক করে শানের পারমিশন নিয়ে ঢুকলো। শান সন্দেহী গলায় বলে
” কি ব্যাপার আমার রুমে কি চাই আপনার ?”
সোহা মুখ কুঁচকে বলে
” এই আবার আপনার তুমি, আপনি বলা শুরু করেছেন ? আজ তো একবারও আপনি বলে সম্মোধন করেননি এখন আবার করছেন। যে কোনো একটা বলুন।”
শান ল্যাপটপে ব্যস্ত হয়ে বলে
” আমার প্রেশ্নের উত্তর পাইনি আমি।” সোহা বুঝে নিলো শান শুধরানোর লোক না। সোহা নিজের কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নেয়। গলা ঝেড়ে বলে
” আচ্ছা কালকে থেকে আপনি আমার এতো খেয়াল রাখছিলেন কেনো ?” ল্যাপটপ এর বাটন ক্লিক করতে করতে হাত হাত জোড়া থেমে যায় শানের। চোখ উঠিয়ে সোহার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়। ঢোক গিলে নিশ্বাস আটকে বলে
” একজন অসুস্থ মানুষের যত্ন করা আমার দায়িত্ব। আপনি আমার বাড়ির গেস্ট। ছোট ভাবির একটা মাত্র বোন। এর মধ্যে বাড়িতে কেউ নেই। এখন যদি আপনার জ্বরে কাতরাতে কাতরাতে কিছু হয়ে যেতো ! আর আমি চোখের সামনে দেখেও চুপ করে থাকতাম তাহলে মানুষের কাতারে তো আমি পরলাম না।”
সোহা মুচকি হেসে বলে
” যাই হোক যার জন্যেই করেছেন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আচ্ছা একটা কথা বলবো আপনাকে ?” শান নিশ্বাসফেলে ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি বলবে ?”
সোহা খোরগোশের মতো হেটে অনেকটা উত্তেজনা নিয়ে বলে
” আচ্ছা আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি না ?”
সোহার কথাটা শুনে পরিষ্কার আকাশে বাজ পরার মতো অবস্থা মনে হলো শানের। শান হা করে তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে।
.
.
চলবে……….