আধারে তুমি পর্ব-০৭

0
1163

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৭

সোহা ঢুলতে ঢুলতে রান্নাঘরে চলে গেলো। শান গিয়ে রান্নাঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। সোহা শানকে খেয়ালই করেনি। কফি বানানো শেষ করে সোহা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই শান তার সামনে এসে দাঁড়ালো। সোহা চমকে বলে
” কি চাই ?” শান কফির দিকে তাকিয়ে বলে
” আমিও একটা মানুষ। নিজে একা একা না খেয়ে আমাকেও তো একটু দিতে পারো ?”
সোহা মুখ বাকিয়ে বলে
” এহ ! শখ কত আপনার ! আমাকে সারাদিব বাদর বলে বেড়ান আবার আমি আপনাকে কফি বানিয়ে দেবো ? হুশ নিজেই বানিয়ে খেয়ে নিন।” শান চোখ ছোট ছোট করে তাকালো কিন্তু সোহা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে উপরে চলে গেলো। শান রুমে গিয়ে ইউনিফর্ম চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে ওই বাড়িতে ফোন দিয়ে কি অবস্থা জেনে নিলো। অনেক্ষণ ফোনের মাঝে ডুবে থাকে।
সালমা ডিনারের জন্য ডাকতেই শান ডিনার টেবিলে গিয়ে বসে। সোহাকে না দেখে সালমাকে জিজ্ঞেস করলো
” কিরে সোহা কোথায় ? ডেকে নিয়ে আয়। সোহার ভালো করে খেয়াল রাখ মা জানলে কিন্তু রাগারাগি করবে।” সালমা মাথা নাড়ালো। শানকে খাবার দিয়ে উপরে চলে গেলো। শান খাবার নিয়ে বসে থাকে। শানের একা খাওয়ার অভ্যাস নেই। থানায় ইমন এর সাথে খায় আর বাড়িতে সবাই একসাথে বসে খায়। তাই সোহার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পায়ের শব্দ শুনেই মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে সালমা একাই এসেছে। শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কিরে সোহা কোথায় ?” সালমা চিন্তিত হয়ে বলে
” আপামনিরে কেমন জানি লাগছে। খাবারের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলছে মাথা ব্যাথা করে এখন খাইবো না কিছু পরে ঘুমাইয়া গেছে। গলাও কেমন শুনা গেছে।” শান চিন্তিত হয়ে বলে
” কি হয়েছে ?” সালমা মাথা নেড়ে বুঝালো জানে না সে। সালমা শানকে খাবার খেয়ে নিতে বললো। শান কিছুটা খেয়ে আর খেতে পারলো না। একা একা একদমই খেতে পারে না। সালমাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” তোর খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আমাকে কফি দিয়ে যাবি আর সব লাইট অফ করে ঘুমিয়ে যাবি। আমি দরজা লাগিয়ে যাচ্ছি।”
সালমা মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো। শান তার সব কাজ শেষ করে রুমে চলে গেলো।
এখনও ঝিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে। আজ পুরোটো দিনই বৃষ্টি হয়েছে। কিছুক্ষণের জন্যেও থামেনি। অবশ্য বৃষ্টির দিনটা খুবই মুগ্ধকর থাকে। সালমা কফি দিয়ে গেলো। শান আলমারি খুলে সেই লক করা ড্রয়ার খুলে একটা সুন্দর ডায়রী বের করলো। সেটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে কফি খেতে থাকে। ডায়রী খুলতেই একটা শুখনো গোলাপ ফুলের দেখা দিলো আর সাথে কিছু লিখিত অনুভূতি। যেগুলো আজও লুকোনো ভালোবাসার এক অনুভূতি শুধু। গোলাপ ফুলটা আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো শান। পরের কিছু পেজ উল্টাতেই কয়েকটা শুখনো বেলি ফুলের দেখা পেলো। ডায়রীটাতে কিছু ফুলের সাথে কারোর প্রতি লিখিত অনুভূতি মিশ্রিত ভালোবাসা লুকিয়ে রয়েছে। সেই ব্যাক্তিটা হলো সোহা। শান পুরো ডায়রীটা একবার দেখে মুচকি হেসে ডায়রীটা বন্ধ করে নিলো। চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিশ্বাস নিলো। ডায়রী দেখতে দেখতে কফিও শেষ হয়ে এসেছে। শান উঠে তার ডায়রীকে নিজের স্থানে রেখে দিলো। কফির শেষ চুমুক দিয়ে কফির মগ রেখে আসার জন্য বের হতেই কাচ ভাঙার শব্দ কানে বাজলো। শান পা চলা থামিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। শব্দটা কোথা থেকে এসেছে বুঝতে পেরে সোহার রুমে ছুটে গেলো। রুমের দরজায় আলতো ধাক্কা দিতেই দরজা পুরোপুরি খুলে গেলো। রুমে ঢুকতেই পায়ের সামনে ভাঙা কাচের গ্লাসটা দেখলো। শান সাবধানে জায়গাটা পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো। সোহার দিকে তাকাতেই দেখলো সোহা হাটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে। শান আলতো স্বরে বললো
” সোহা গ্লাস ভেঙেছে কিভাবে ?”
সোহা শানের গলা শুনেই মাথা তুলে তাকালো। সোহার চোখ জোড়া লাল হয়ে রয়েছে। সোহা কাঁপাকাঁপা গলায় বললো
” পানি খাওয়ার জন্য নিচ্ছিলাম পড়ে গিয়েছে।”
সোহার কন্ঠস্বরও অস্বাভাবিক মনে হলো শানের কাছে। শান এগিয়ে এসে সোহার মাথায় হাত রাখলো। ঠান্ডায় সোহার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। শান বিস্ময়ের স্বরে বলে
” এতো জ্বর আসলো কি করে ?” সোহা ঠোঁট উল্টে বলে
” ওই একটু বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম তাই।” শান রাগান্বিত চাহনি দিয়ে ধমকের স্বরে বললো
” একটু ভিজলে এমন অবস্থা হতো ? জ্বরে বসে থাকতে পারছো না এখনই পরে যাবে মনে হচ্ছে আর বলছো একটু ভিজেছো ?”
শানের কথা শেষ হতে হতেই সোহার মাথা ঘুরে যায়। পরে যেতে নিলেই শান কোনো রকমে ধরে নিলো সোহাকে। শান অস্থির গলায় বলে
” দেখলে তো কি হলো ! না ধরলে এখনই মাথা ফাটতো।” শান ধমকে সোহাকে শুয়ে ব্ল্যাংকেট দিয়ে দিলো গায়ে। সোহা দুর্বল চাহনি দিয়ে বলে
” পানি খাবো আমি।” শান মাথা নেড়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে চলে গেলো। কফির মগ রেখে সোহার জন্য পানি আর খাবার নিয়ে নিলো সাথে মেডিসিনও। রুমে আসতেই দেখতে পেলো সোহা ঘুমিয়ে গিয়েছে। শান ভাঙা কাচগুলো সরিয়ে রাখলো সাইডে। সোহাকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু সোহা উঠলো না। শান সোহার মুখে দুইবার পানি ছিটিয়ে দেয়। সোহা কাঁদোকাঁদো চাহনি দিয়ে শানের দিকে তাকালো। শান শান্ত ভাবে বলে
” উঠো পানি খাবে।” সোহা ভালো করে উঠে বসতে পারছে না দেখে শান ভালো করে বসিয়ে দিলো সোহাকে। পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়তে নিলে শান বাধা দিয়ে বলে
” খাবার খেয়ে মেডিসিন খেয়ে ঘুমাবে।”
সোহা মাথা নেড়ে না করলো কিন্তু শান সোহাকে জোড় করে নিজেই খাইয়ে দিতে থাকে। সোহা জ্বরে আধঘুমন্ত অবস্থায় খেতে থাকে। খাওয়া শেষে মেডিসিন খাইয়ে দেয়। সোহা পুরোই নেতিয়ে পরে। শান সব রেখে সালমাকে গিয়ে ডেকে তুললো। সালমা দরজা খুলে ঢুলতে ঢুলতে বলে
” কি হয়ছে ভাই ?” শান চিন্তিত হয়ে বলে
” সোহার জ্বর উঠেছে। আজকের রাতটা সোহার কাছে থাক। ওর কিছু দরকার হতে পারে।” সালমা মাথা নেড়ে বিনাবাক্যে সোহার কাছে চলে গেলো।
শান তার রুমে গিয়ে বসে থাকে। সোহার চিন্তায় আর ঘুমালো না।

মাঝরাতে সালমার ডাক পড়লো সোহার আগের থেকেও জ্বর মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়েছে। শান ছুটে এসে দেখে সোহা জ্বরে অতিরিক্ত কাঁপছে। আর সোহার গায়ের তাপে ছোঁয়াও যাচ্ছে না। শান সালমাকে দিয়ে পানি এনে সোহাকে জল পট্টি দিতে থাকে আর আরেকটা ব্ল্যাংকেট বের করে সোহার গায়ে দিয়ে দিলো। সোহা জ্বরের ঘরে বিরবির করে যাচ্ছে আর শান অস্থির হয়ে উঠেছে। জ্বর একদমই কমছে না সোহার। ভোর হয়ে আসতেই সোহার জ্বর ধীরেধীরে কমতে থাকে। শানের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
সকালে সালমার ঘুম ভাঙতেই দেখতে পায় শান সোফায় আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে আছে আর সোহা এখনও ঘুমে কাতর। সালমা ঘরির দিকে একপলক তাকিয়ে নিচে চলে গেলো। অনেক কাজ রয়েছে তার আজ আবার শাহানাজ বেগম, নিলা, সিমি কেউ নেই।
গভীর ঘুমের মাঝেই শান হঠাৎ করে চোখ খুলে ফেললো। মাথা ঝেড়ে সোহার কাছে এগিয়ে আসে। সোহার মুখটা দেখে শানের মায়া লাগলো। একদিনেই জ্বরে চোখ মুখ নেতিয়ে পড়েছে। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।
ব্রেকফাস্ট করে শান সালমাকে বলে
” সোহার খেয়াল রাখিস আর ভাবি, মা কেউ আজকে আসবে না। আমার কাজ শেষ হলে তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”
” আচ্ছা ভাই চিন্তা করবেন না। আমি আপামনির ভালো করেই খেয়াল রাখমু।” শান থানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
সোহা একদম ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। সালমা সোহাকে দেখেই বলে
” আপা আপনার শরীর কেমন এখন ? জ্বর কমছে ? কিছু খাবেন আপা ?”
সোহা মলিন হাসি দিয়ে বলে
” না কিছু খাবো না আমি। শরীরও এখন ভালো কিছুটা।”
সালমা তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরে যেতে যেতে বলে
” আপনে বসেন আমি আপনার খাবার দেই পড়ে ঔষধ খাইতে হবে।” সোহা হেসে বলে
” আচ্ছা আমি গার্ডেন থেকে ঘুরে আসছি। তুমি ধীরেধীরে কাজ করো।”
সোহা হাটতে হাটতে গার্ডেনে চলে গেলো। গার্ডেনে হাটতে হাটতে গেটের বাইরে তামিম কে দেখতে পেলো সোহা। সোহা এগিয়ে গিয়ে তামিম কে ডাকলো। সোহাকে দেখেই তামিমের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তামিম হাসিমুখে এগিয়ে আসলো।

.
.

চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে