আত্মা পর্ব-০৩

0
201

###আত্মা(৩য় পর্ব)
###লাকি রশীদ

মাহির যেন অদ্ভুত কোনো কথা শুনছে এমন ভাবে বলে উঠলো, কোথায় যাবে? বাড়ি? বাড়ি কোথায় তুমি সেটা আদৌ জানো? ওখানে কে থাকে তুমি চেনো? ইদানিং একটু বেশি বেশি করছো মনে হচ্ছে না? অতিরিক্ত ভালো ও মহৎ সাজার চেষ্টা
করো না নওশীন। এটা তোমার জন্য কিন্তু মোটেই ভালো হবে না। আমি ভেবে দেখলাম, সম্পুর্ন দোষ
আমার। আমি আসলেই আগে মাহির এর সাথে কথা বলে বাবাকে প্রমিজ করা উচিত ছিল। কিন্তু, ভুল তো অলরেডি করে ফেলেছি। এখন এই ভুল সংশোধন করি কিভাবে?

গলা নামিয়ে বলি,আমি স্বীকার করছি আমার হুট করে বাবাকে এসব বলা উচিত হয়নি। কিন্তু,তখন যদি তুমি ঐ পরিস্থিতি দেখতে……..তাহলে হয়তো
বুঝতে পারতে। সামলানো মুশকিল ছিল বাবাকে।আর কি একটা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন, সেজন্য দুঃখে বলে ফেলেছি। আমার কথা বিশ্বাস না হলে মাকে জিজ্ঞেস করো। এবার সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলছে, আমি তো আর তোমার মতো এতো সহৃদয় ও বুদ্ধির সাগর নই। সুতরাং,কারোর ই বাড়িতে যাওয়া হবে না। এটা শুনে এতোক্ষণ ধরে নিশ্চল হয়ে তাকিয়ে থাকা আমার শশুড় কি বুঝলেন আল্লাহ মালুম, আমার হাত ধরে বলছেন
আমি বলেছিলাম না মা,এরা মা ছেলেরা কোনো ভাবেই আমাদের যেতে দিবে না। তুমিও ওদের মতো বাটপারি করো না মা। তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছো, আগামী কাল আমাকে নিয়ে যাবে।

আমি ও আমার শাশুড়ি কে শুনিয়ে শুনিয়ে এবার মাহির বলছে,হ্যা পরের মেয়ে তো নিজের ছেলের থেকে ভালো হবেই। বেশি বাড় বেড়ে গেছে এবার।
যা ইচ্ছে যেন তাই করছে। কথা দিয়েছি !!! হুহ্ !!!
চলো বাবা তোমাকে রুমে দিয়ে আসি। মা চলো তো। আমার শশুড় ওর দিকে কড়াদৃষ্টিতে তাকিয়ে
তারপর বলে বলে যাচ্ছেন, আমি আর তুমি কিন্তু কালকে আমাদের বাড়িতে যাচ্ছি বৌমা। মনে করে বেশি বেশি কাপড়চোপড় নিয়ে যেতে হবে।
তোমার না চিনলেও হবে। আমার বাবা ছিলেন মোকাম্মেল মাষ্টার। তার বাড়ি বললেই যে কেউ
দেখিয়ে দিবে। বুঝতে পারছো তো বৌমা? ভোরে উঠে রওয়ানা দিতে হবে কিন্তু। তিনি কথা বলছেন,
আর আমার মনে হচ্ছে নির্বোধ,অসহায় এক নারী কে গাছের সাথে বেঁধে প্রচন্ড বড় বড় গদা দিয়ে
অনেক মারছে আর বোকা গালি দিয়ে যাচ্ছে। একটু বুদ্ধিও কোথায় দেখাতে পারিস না নওশীন?

বাবা মা কে রুমে দিয়ে এসে এখনো মাথায় হাত চেপে বসে আছি দেখে মাহির পাশের চেয়ারে বসে
বলছে, শোনো আমি তোমার শত্রু নই। আমি জানি বাবাকে তুমি অনেক ভালবাসো। কিন্তু, মাঝে মাঝে আবেগটা কন্ট্রোলে রেখে মাথাটা কাজে লাগানো উচিত। তুমি জানো গত কয়েক বছর ধরে বাড়িতে আমরা যাইনি? আমাদের খুব ভালো অবস্থা থাকলেও ওদের কোনো দিনই খবর নেয়া হয়নি। আমার নানাবাড়ির সবার এই বাসায় অবাধ বিচরণ দেখলেও,দাদাবাড়ির কাউকে কখনো দেখিনি। এর রহস্য আমি জানি না আর জানতে চাইও না। ৩ ভাইয়ের মধ্যে আমার বাবা সবচেয়ে বড়। ছোট ২ ভাই ও ২ বোন। বড়চাচা মারা গেলে আমরা ভাইরা তখন বাবার সাথে গিয়েছিলাম। সেই শেষ তাও অনেক বছর পেরিয়ে গেছে।এই অবস্থায় ওখানে বাবা গেলে কোন মোক্ষ লাভ হবে বলতে পারো? আর ওরাই বা কি
ভাববে বলো তো? একটু চিন্তা ভাবনা করে সব ডিশিসন নেয়া ভালো না?

আমি এবার বলি, তোমার অস্বস্তি লাগলে যেতে হবে না। আমরা যাই, একটা লোক শুধু আমাদের সাথে দিয়ে দিবে প্লিজ। রমু থাকলে তাও বলতাম না। জন্মস্থান দেখতে ইচ্ছে করছে মনে হয়, আমি কথা দিয়েছি কাল যাবো। না গেলে বাবা আর কোনো দিন বিশ্বাস করবেন না আমাকে। প্লিজ মাহির আপত্তি করো না। ক্রোধে এবার অগ্নিশর্মা হয়ে গেল সে। চিৎকার করছে,সময় নিয়ে আমি এতোক্ষণ বুঝানোর পরও তুমি একই আগের
বুলি কপচাও !!! তোমার বাবা মা আসলে তোমার পড়াশোনা বুঝেশুনে ই বন্ধ করে বিয়ে দিয়েছেন। নয়তো তুমি তাদের একহাটে কিনে অন্যহাটে বেচে
দিতে পারতে। সারা গায়ে কে যেন আমার বিছুটি পাতা ঘঁষে দিয়েছে।সাথে সাথে আমি দাঁড়িয়ে বলি, ঠিক করেছেন না ভুল করেছেন সেটা না হয় তুমি আমাকে বুঝতে দাও। তুমি এতে নাক না গলিয়ে অন্য কাজ করো। এরপর সোজা রান্নাঘরে চলে গেছি।

রাতে খাওয়ানোর সময় বাবা বাচ্চাদের মতো হাত ধরে বলছেন,গাড়ি কয়টায় আসবে গো মা? আমি আমার শাশুড়ির দিকে তাকাই, উনি বুঝতে পেরে বলেন, আসবে আসবে সকালে আসবে। খাওয়ার সময় কথা বললে, গলায় বেঁধে যাবে। আমি বেশ বুঝতে পারছি, খুব কষ্ট করে খাচ্ছেন। চিকন চালের গলা ভাত, আমি একটু জাউয়ের মতো মেথি আর পেঁয়াজ দিয়ে বাগাড়(ফোড়ন) দিয়ে আনি। যখনি বানাই বুকটা হু হু করে কেঁদে ওঠে। আমার বিয়ের পর,উচ্ছল প্রাণবন্ত মানুষটা এক দিন আমাকে বলেছিলেন,নরম খাবারের সাথে আমার চিরকালের আড়ি রে মা। আমি খুব শক্ত খাবার খেতে পছন্দ করি। আমার মা কি বলতেন জানো, ভাত দিয়ে যদি চোখ কানা না করা যায়…..
তবে সেটা খেয়ে লাভ কি? বলেই হা হা করে জোরে হেসে উঠতেন‌। এখন স্বাভাবিক ভাত ই খেতে পারেন না। চিবোতে গেলে মনে হয় কষ্ট হচ্ছে খুব। একটু প্রোটিন শরীরে যাবে ভেবে এক পিস মাছ ভাজা এনে বেছে ভাতের সাথে মিশিয়ে দিয়েছি। দিন দিন যেন শক্তিহীন হয়ে পড়ছেন।

ভাত খাইয়ে সাথে সাথে ঔষধ খাওয়ালে বমি হয়ে যায়। একটু বসে গল্প করে তারপর ঔষধ দেই। কতো কিছু যে গল্প করছেন,তার দক্ষিণের ঘরের চাচা কিছুক্ষণ আগে না কি তাকে দেখতে এসে ছিলেন। আমি কি ভালো করে তাকে ভাত খাইয়ে দিয়েছি? না হয় রাতে তার ক্ষিদে পাবে। তখন সবাইকে বকা দিবেন। আমি অনেক আগে মারা যাওয়া তার সেই অদেখা, অচেনা চাচাকে খুব ভালো করে আদর যত্ন করেছি বলি। তখন আবার ভীষণ খুশি। প্রতিদিনের তুলনায় আজ একটু বেশি সময় এই রুমে থাকা হয়েছে। রহিমা এসে এবার বলছে,মামী মামায় আপনারে বুলায়। আমার শাশুড়ি এবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তুমি তাড়াতাড়ি যাও তো বৌমা। মাহির ডাকছে মনে হয়। এবার চাপা স্বরে বলছেন, কালকের যাওয়া
নিয়ে আর বেশি উচ্চবাচ্য করোনা বৌমা। জানোই
তো মাহির রেগে গেলে যেন চন্ডাল রাগ উঠে ওর।
তোমার শশুড় কিছুক্ষণ চেঁচিয়ে ঠিক হয়ে যাবে।

রুমে ঢুকতেই মাহির বলছে, তারিন তোমার ফোনে
বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। মোবাইল সঙ্গে রাখো না কেন? দেখো কোনো জরুরি কিছু নাকি?
তারিন ধরেই স্বভাবসুলভ ভাবে কতোক্ষণ চেঁচাল,
সংসার কি শুধু তুই একা করছিস না কি? রাত সাড়ে দশটায় ফোন করলেও তোকে মিলে না? শোন এতো গাধার খাটুনি খেটে কোনো লাভ নেই।যেসময় সেবা দেয়া বন্ধ করবি, আবার খারাপ হয়ে যাবি। আমি মৃদু স্বরে বলি, আমি তো গাধাই।
কি জন্য করেছিস বল্? এবার বলছে, কালকে
লিঙ্কন ভাইয়ার এনিভার্সারির দাওয়াত দেয় নি তোকে? সন্ধ্যার ঠিক পর পর আমরা একসাথে যাবো বুঝলি? তুই তোর গাড়িতে ভাইয়াকে নিয়ে, আমি আমার টাতে শাফকাতকে নিয়ে এদিকে চলে গেলাম। চাচ্ছিলাম একরকম শাড়ি পরে দুইবোন যাবো। কি পরা যায় বলতো?

আমি এবার বলি, আমি যাচ্ছি না। তুই তোর নতুন
জামদানি পরে যেতে পারিস। বিটরুট কালারের
শাড়িটা আসলেই সুন্দর হয়েছে। এখন রাখি রে।
জোরে এবার চেঁচিয়ে উঠলো, খবরদার ফোন রাখবি না বলে দিলাম। কেন যাবি না সেটা আগে বল্। আমি শক্ত গলায় বলি, ভালো লাগছে না তাই যাবো না। পরে কথা হবে,বাই। কোনো দিকে না তাকিয়ে নাইটি নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেছি। ঘুমে মনে হয় পড়ে যাচ্ছি। কোনোমতে ব্রাশ
করেই বের হয়ে বিছানায়। ইভান আলাদা রুমে শোয়। সিমিন কে একপাশে শুইয়ে দিয়েছে ওর বাবা। বিছানায় গা লাগাতেই মাহির বলে, কোথায়
যাবার কথা বলছিল তারিন?

বালিশ ঠিক করতে করতে বলি,লিঙ্কন ভাইয়ার এনিভার্সারিতে। এবার সে বলছে,ও সেটা কালকে নাকি? আমি আর জবাব দেই না। মনে মনে বলি,
আজকের মতো অনেক কথা বলে ফেলেছো নওশীন। এতো বকবক করার দরকার নেই, চেনা সেই ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে যাও তুমি। এভাবেই চলা ঠিক হবে তোমার জন্য। মাহির এবার কাছে টেনে বলছে,রাগ করেছো? আমি মাথা নেড়ে বলি,
সীমানা ভুলে গেলে এসব তো হবার ই কথা। রাগ করবো কেন? তোমার সাইডের লাইট অফ করো প্লিজ। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে এবার বলছে, এটা বলে তো মেরে ফেললে ডিয়ার। তোমার সীমানা কতোটা সেটা তুমি জানোই না আসলে। আমি চুপ
করে চোখ বন্ধ করে পড়ে আছি। কথা বলতেই ইচ্ছে করছে না। ঘুমানোর সময়ই কি শুধু তোমার হৃদয় প্রেমসিক্ত হয় মাহির……… সেটাই ভাবছি।

কিন্তু সব ভাবনা মিথ্যে করে দিয়ে মাহির বলে উঠলো, ঠিক আছে কালকে বাড়িতে যাচ্ছি আমরা। কিন্তু সকাল সকাল উঠে অস্থির বানিয়ে ফেলো না। দশটার দিকে রওনা হবো। বাচ্চারা
স্কুলে যাচ্ছে না যখন তাদেরকেও ভোরে ডাকার দরকার নেই। আমি আমার নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তড়াক করে উঠে বলি,
সত্যি? কালকে যাচ্ছি আমরা? সে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই পা দুটো মেঝেতে নেমে গেছে আমার। এবার বলছে,আশ্চর্য এখন আবার কই যাও? আমি বলি, মাকে বলে আসি। না হয় সারা রাত এটা নিয়ে ভাববেন।

রুমে ঢুকে দেখি আমার শাশুড়ি বেতের সোফায় বসে আছেন। আর শশুড় তার বড় এক গামছাতে
লুঙ্গি, পাঞ্জাবি এসব ঢুকিয়ে কোনাগুলো বাঁধতে চেষ্টা করছেন। আমাকে দেখেই হাসতে হাসতে বললেন,কিছু কাপড় বেঁধে নিয়েছি বৌমা। তোমার
শাশুড়ি কে বলে বলে হয়রান, কথা ই শুনছে না সে। শুধু বলে,যাওয়ার সময় আমি নিবো তো বললাম। আমার চোখ দুটো জ্বালা করে উঠলো,
যদি মাহির যেতে রাজি না হতো তবে এই বৃদ্ধকে
সামলানো কি আদৌও সম্ভব হতো? মনটা ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যেতো না তার? আমি শীর্ণকায় হাত দুটো ধরে বলি, না ঘুমালে আপনার ছেলে তো আবার হাঙ্গামা করবে বাবা। বলবে,যাওয়ার কোনো দরকার নেই। আমি নিশ্চিন্ত মনে ঘুমান।

সকালে আপনাকে ডেকে দিবো। ঠিক ইভান যেভাবে বলে সেরকম করে বলছেন, আমার ঘুম আসছে না মা। আমি বলি, ঘুম কি এভাবে বসে থাকলে আসবে বাবা? শুয়ে চোখ বুজে থাকুন, আসবে ইনশাআল্লাহ। মাকে বলি, আসেন তো মা আপনিও শুয়ে পড়ুন। আমি ডিমলাইট জ্বালিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। বের হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আমি বারবার বলছি, আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি শোকরিয়া জানাচ্ছি মাহিরের মনটা বদলে দেবার জন্য। আমি কি বললে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পাবে? আসলেই আপনি হৃদয় পরিবর্তনকারী। আপনি আমাকে কতো বড় অসম্মান থেকে যে বাঁচিয়ে দিলেন। আমি কায়মনে আপনার শোকর আদায় করছি।

সকালে উঠে নিঃশব্দে বেরিয়ে এসেছি। আমাকে গদাইলস্করি চালে চলতে দেখে রহিমা অবাক হয়ে বলছে,ও মামী ভুইল্যা গেছেন আইজ শুক্কুরবার
না বিষুধবার। ইভান এখানে থাকলে এখন তাকে শুক্র ও বৃহস্পতি জপাতে থাকতো। আমি হেসে বলি, আমি জানি তো। কিন্তু তোর মামা রাতে বলেছে, আমাদের কে আজ বাড়িতে নিয়ে যাবে।
তুইও যাচ্ছিস, বাচ্চারা যাবে তো। এবার সে হেসে
আইতাছি মামী বলেই দৌড় দিয়েছে। সেলিমা এবার গজগজ করছে, কেন আমি এত তাড়াতাড়ি ওকে যাবার কথা বললাম? এবার ড্রেস নির্বাচন ও
সাজগোজ করতে করতে ই দিন যাবে। আমি বলি
তোমার বয়স আর ওর বয়স কি সমান না কি? বাচ্চা একটা মেয়ে, ও যা করতে চাচ্ছে করুক।

দশটায় বের হবো বললেও বের হতে হতেই এগারোটা বাজলো। গাড়িতে উঠে সিমিনের খুশি দেখে কে? অনবরত হাততালি দিচ্ছে আর আমায়
বাইরের দিকে তাকাতে বলছে। সবচেয়ে ভালো লাগছে আমার শশুড়কে। ইস্ত্রী করা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি ও লুঙ্গিতে ফিটফাট হয়ে বসেছেন। মাহির অনেক বলেছে, প্যান্ট না পরলে পায়জামা
অন্তত পরো‌। উনি বলছেন,না লুঙ্গি পরেই যাবো।পরে আমি বলেছি, ঠিক আছে। বাবার কাপড় আরামদায়ক না হলে,পরে কষ্ট পাবেন তো। তার ছেলে এবার বলছে,তাই বলে লুঙ্গি !!! ছেলের এই পরাজয়ে বাবা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছেন।
কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আমার শাশুড়ি ভীষণ রকম অস্বস্তিতে যেন পড়েছেন। কিচ্ছু বলছেন না, কিন্তু চুপ করে আছেন।

মাহির সামনে বসেছিল, তার ইম্পোর্টেন্ট কি কি ফোন কল নাকি সারবে। শহর ছাড়িয়ে কিছুদূর এগুতেই এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় আমরা সবাই অনবরত ঝাঁকি খাচ্ছি দেখে সে গাড়ি থামিয়ে পিছনে এসে বসলো। সিমিন কে তার কোলে নিল,
তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলছে বাড়িতে যাব
বলে বলে অস্থির হয়ে এলে। কি খারাপ রাস্তা !!! সেটা দেখেছো? বাবা বলছেন,চৌমাথার বাজার এলেই ভালো রাস্তা পাবি। এবার সে হেসে বাবাকে বলছে, বলতো বাবা কে বেশি ভালো আমি না তোমার বৌমা? একসেকেন্ডও না ভেবে হাসিমুখে বললেন, আমার বৌমা বেশি ভালো। ঠিক বলেছি না বল্? মাহির হো হো করে হেসে উঠলো, একদম ঠিক বলেছো বাবা। তোমার কি কখনো ভুল হয়? আমার শাশুড়ি এবার তার ছেলেকে বলছেন,
হুট করে কাউকে না জানিয়ে যাচ্ছি। তুই বাজার এলেই নেমে চাপাতা,দুধ,চিনি,২/৩ পদের বিস্কুট নিয়ে নে বাবা। মাহির বললো, ঠিক আছে বাজার আসুক। আমি কিনে নিবো মা।

ড্রাইভার এবার বললো,স্যার এই যে এইমাত্র আমরা সিতাবগঞ্জের বাজারে এসেছি। এখন কি আপনি নামবেন? মাহির নেমে সবকিছু নিয়ে এসেছে। এবার ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে,কোনদিকে যাবো? মাহির বলছে, এটা তো জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। তুমি একটু কষ্ট করে নেমে দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করে এসো মোকাম্মেল মাষ্টার মশাইয়ের বাড়ি কোথায়? আমার শশুড বলছেন, আরে জিজ্ঞেস করতে হবে না। সামান্য এগিয়ে বামদিকে গেলেই হবে। মাহির ড্রাইভারকে নামতে ইশারা করলো। দেখা গেল বাবার কথাই ঠিক। এই পথে ৫ মিনিট যেতেই গন্তব্যে পৌঁছে গেছি।

আমি গাড়ির গ্লাস দিয়ে তাকিয়ে দেখি, বাড়ির সামনের বিশাল সেই দীঘির অর্ধেকটাই ময়লা ও শ্যাওলায় বুজে গেছে। পানিও পরিস্কার নয়, অনেক ময়লা। ভাবছি, বাবা নেমে আরেকটা ধাক্কা খাবেন,যন্ত্রণা পাবেন। আমি জানি,স্বপ্লভঙ্গের যন্ত্রণা বড় তীব্র। সহ্য করা খুব কঠিন। এর চেয়ে কি আগের স্মৃতি নিয়েই চলে যাওয়া ভালো ছিল? কিন্তু তখন তো আবার আমরা প্রিয়জনেরাও আফসোস করতাম, বাবা দেখে যেতে পারলেন না বলে। পৃথিবীতে কোনটা যে ঠিক আর কোনটা যে ভুল তা বুঝা সত্যি ই বিষম দায়।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে