#গল্পপোকা_ছোটোগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
গল্প: আড়ালে অন্যজন
সাদমান রাতুল
মেজাজ আজ সপ্তমে উঠে এসেছে। সবকিছুই খিটখিটে লাগছে। কেনো যে সেদিন শয়তানের পাল্লায় পড়তে গেলো? কে জানে! একটু আগেই রমিজের উপর সব জীদ ঝারলো ফারহান। তবুও যেনো মেজাজটা কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না। অফিসে এসি থাকা সত্ত্বেও শরীর থেকে অনবরত ঘাম বের হচ্ছে ফারহানের। কপালে চিন্তার রেশ পড়েছে। কিভাবে ব্যাপারটা ঠিক করা যায় কিছুতেই কিছু মেলাতে পারছে না। মুখে একটু কফি গুজলে হয়তো কিছু একটা সমাধান পেতো। ওদিকে রমিজ যে সেই কখন কফি আনতে গেলো এখোনো ফেরেনি। টেবিলে রাখা মোবাইলটি অনবরত বেজেই চলছে। এ পর্যন্ত পনেরোটা কল অলরেডি এসে পড়েছে। ষোল নাম্বার কল আসতে না আসতেই রিসিভ করে ফোন কানে ঠেকালো ফারহান।
-” কি হয়েছে তোমার বলোতো? সেই কখন থেকে কল করছি। রিসিভ করছো না কেনো? ”
-” কি বলবে সোজাসুজি বলো। এমনিতেই আজ ভাল লাগছে না। এটা আমার অফিস।কল রিসিভ সেন্টার না। তোমার কল রিসিভের জন্য তো আমি ফোন নিয়ে বসে থাকি না। ”
-” যাষ্ট চিল ফারহান। বুঝেছি তোমার কি হয়েছে। আমার কাছে আজ একটা চিঠি এসেছে। ”
শেষ উক্তি শুনে ফারহান কিছুতেই স্থির থাকতে পারছে না। চারদিকটায় ঘোলাটে ঘোলাটে লাগছে। বিগত একমাস ধরে ফারহানের কাছে কিছু চিঠি আসছে। শুধু চিঠি বলাটা ঠিক হবে না ব্লাকমেইল চিঠি বলতে হবে। প্রতিটি চিঠির সাথে জুড়ে দেওয়া একটি করে ছবি। ছবিগুলো কে কখন কিভাবে তুললো তা এখনো রহস্যের পৃষ্ঠায় আকা আছে। আজও সেই একই চিঠি এসেছে। ছবি যুক্ত সেই চিঠিতে চেয়েছে দশ লক্ষ টাকা। কোথায় কিভাবে টাকাটা দিতে হবে তা পরবর্তী চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিদিন পিয়ন নাকি রমিজের হাতেই চিঠিটা দিয়ে যায়।
-” কি জানতে চাইবে না কি লেখা আছে তাতে? ”
নিগারের কথায় হুশ ফিরলো ফারহানের।
-” কি…. কি লেখা আছে?? ”
-” আমার কাছে দশ লাখ টাকা চেয়েছে। সময়মত টাকা না দিলে ছবিগুলো তোমার বউ আই মিন মাইশার কাছে পৌছে দিবে বলেছে। এরপর এগুলো নাকি মিডিয়াতে আপলোড করবে। ”
-” তারপর! ”
-” তারপর মানে! আমি এতো কিছু বুঝি না। এসব ঝামেলা সব তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। কখন কি কিভাবে করবে সব তুমি জানো। ”
-” বাহ! কি সুন্দর কথা। সব তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। শোনো এই সম্পর্কটা প্রথমে তুমি শুরু করেছিলে। আমি না। তোমার জন্য আজ আমার এই অবস্থা। ”
-” এক হাতে তালি বাজে না! হাতে তালি দিতে হলে দুটো হাত ই প্রয়োজন হয়। সো এসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে আসল কাজ করো। তুমি না চাইলে কিছুই হতো না। ”
=========================
পূর্ব হতে সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ছে। এই সন্ধ্যা হয়ে এলো বলে। অফিসে আজ ফারহানের জরুরি মিটিং ছিল। মিটিং করার পুরো এনার্জি আজ সকালেই দুমড়ে মুচড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে।তাই অফিসে সময় নষ্ট না করে ছুটি নিয়ে আজ একটু জলদিই বাড়ি ফিরলো ফারহান। বাড়ি বসে ঠান্ডা মাথায় কিছু একটা ভাবা যাবে। কিছু একটা সলিউশন তো বের করতেই হবে। এসময় ফারহানের মাইশাকে পুরো দমে প্রয়োজন ছিল। কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে মাইশার বিরুদ্ধে যে পাপ করেছে ফারহান।এখন কোন মুখে তার অপকর্মের কথা মাইশার কাছে বলবে। তবে আজ মাইশার নিয়মমাফিক রুটিনের কাজ সম্পূর্ণ উলোট পালোট হয়ে গেছে। সকালে ফারহানের নাস্তা তৈরীর পর পরই খুব দ্রুত ঘরের কাজ গুলো শেষ করে ফেলে মাইশা। দুপুরে সাওয়ার নিয়ে কিছু একটা খেয়ে বিছানায় নেতিয়ে পড়ে। মাইশার দুপুরে খাবারের ঝামেলা নেই বললেই চলে। সকালে খাওয়ার পর যা বাচে তাই খেয়ে নেয় দুপুরে। ফারহান দুপুরের খাবার তার অফিসেই সেড়ে নেয়। তাই রান্না বান্নার ঝামেলা একেবারে রাতেই সারতে হয়। দুপুরে একটু মোবাইল গুতিয়ে টলিয়ে পড়ে ঘুমের রাজ্যে। কিন্তু আজ ফারহান জলদি বাড়ি ফেরায় ঘুমের পাশাপাশি সব কিছুরই ব্যঘাত ঘটেছে।
ফারহান ফ্রেস হয়ে কেবল মাত্র বিছানায় হেলান দিয়েছে।মাইশা ঠিক ফারহানের সামনেই দাড়িয়ে আছে।
-” কিছু বলবে? ”
-” তুমি কিভাবে বুঝলে? আমি কিছু বলতে এসেছি। ”
-” যেভাবে দাড়িয়ে আছো।তা যে কেউই বুঝবে।কিছু বলতে এসেছ। ”
-” চলো না কোথাও ঘুরতে যাই। বাড়িতে আর ভালো লাগছেনা। ”
একটু আহ্লাদি কন্ঠে বলল মাইশা । ফারহান একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল,
-” সরি কাল একটা মিটিং আছে। ”
-” উফ্। বাদ দাও তো এই মিটিং ফিটিং। এসব করতে করতে তুমি আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো। একটু বিনোদনেরো তো ব্যপার আছে। বিয়ের তিন বছর প্রায় এগিয়ে এলো। আজ পর্যন্ত কোথাও নিয়ে যাও নি। ”
-” আচ্ছা। তাহলে কাল মিটিং শেষ করে রাতেই কোথাও রওনা দেব। একেবারে তিনদিনের ট্যুরে। ”
মাইশা একেবারে খারাপ কিছু বলেননি। একটু বিনোদনের ও ব্যাপার আছে। এমনিতেই ফারহান অনেক ডিপ্রেশনে আছে। কোথাও ঘুরে এলে হয়তো একটু ভালো লাগবে। তাই সবদিক থেকে ভেবে চিনতে মাইশার কথা রাখতে হলো ফারহানের। ফারহানের ভাবনায় ছেদ ঘটালো ঐ হতোচ্ছারা মোবাইলটা। কারণে অকারণে শুধু বাজতেই থাকে।যদি মোবাইলটা একেবারের জন্য ফেলে দেওয়া যেতো। মনে আছে এই মোবাইলের যন্ত্রনায় একদিন জিদ করে মোবাইল সুইচ অফ করে রেখেছিল। সেদিনই নাকি অফিসের বস পচিশটা মিসকল দিয়েছিল। তারপরের দিনই অফিসে বসের ঝারি খেতে হয়েছিল। সেদিনই ফারহান প্রতিজ্ঞা করেছিল। যত যাইহোক কখনো মোবাইল সুইচ অফ করবে না। সবচেয়ে বড় কথা এই মোবাইলের মাধ্যমে ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল নিগারের সাথে। সম্পকটা প্রথমে ভাই বোনের হলেও কখন যে বোন থেকে বউয়ের স্থান দখল করছে নিগার তা আজও অজানা। প্রথমে ফেসবুকে চ্যাটিং। কিছুদিন চ্যাটিং করার পর নিগারের প্রতি কখন যে ইমপ্রেস হয়েছিল বলতে পারবে না ফারহান। এরপর চ্যাটিং প্লাস অডিও ভিডিও কল। আর এ সবকিছুই হয়েছিল মাইশাকে না জানিয়ে। নিগার আর ফারহানের সম্পর্কটা আরো মজবুতের জন্য সেদিন প্রথমবারের মতো তারা ঘুরতে বেরিয়েছিল রমনা পার্কে। এবং ওটাই তাদের সরাসরি শেষ দেখা। সেদিন কোন হারামজাদা তাদের ছবি তুলে রেখেছিল। নানা ঝামেলায় পরর্বতীতে মোবাইল ছাড়া নিগারের সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
-” কি হলো? কই হাড়িয়ে গেলা? বুঝছি নিশ্চয়ই তুমি ঘুরাঘুরির জন্য প্লানিং করছো? ওদিকে তোমার ফোন যে বেজেই চলছে সেদিকে খেয়াল আছে? ”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মাইশার কথায় ফারহান একটু হতবত খেলো বটে। কিছু সামলাতে না পেরে ফারহান বলল,
-” খুব মাথা ব্যথা করছে! একটু চা দেবে প্লিজ। ”
মাইশা চলে যেতে নিলেই ফারহান সাথে সাথে মোবাইলটা কানে ঠেকালো,
-” এসময় কেনো ফোন করেছ? যানোনা এসময় আমি বাড়িতে থাকি। শোনো আগামী তিনদিন আমাকে ফোন করবে না। আমি আর মাইশা তিনদিনের ট্যুরে যাচ্ছি। ”
-” এতো চেচাচ্ছো কেনো? মাইশা দেখে ফেলেছে নাকি? ”
-” মাইশা দেখলেও বুজবে না। আমি তোমার নাম্বার নিগার থেকে নাফিস নামে সেভ করে রেখেছি। ”
কথাটা বলা মাত্রই ফারহান চুপসে গেলো। তাৎক্ষণিক মুখটা মলিন হয়ে গেছে। চোখে মুখে ধরা পরা ধরা পরা ভাব।হাত থেকে ফোনটা ধপাশ করে পরে গেছে। ফারহানের সামনেই মাইশা চা হাতে দাড়িয়ে আছে।
==============
স্বভাবজাতই মানুষ ভ্রমণ করতে ভালোভাবে। অগাত জলরাশি দেখার জন্য মানুষ সমুদ্রের দিকে ছোটে, নদী ভ্রমণে যায়।তেমনি মাইশা ফারহান ও ছুটে চলছে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।
শুভ্র নির্মল সচ্ছ সকাল। আলতো সিন্ধ বাতাস।পূর্ব আকাশে সূর্য লালিমা ছড়িয়ে উদয়নে প্রস্তুত। কোনো এক অদৃশ্যের অনুমতি পেলেই নির্মল আলো ছড়িয়ে দেবে বিশ্ব বাতায়নে।জানালার পাশে বাসে বসে হেলে দুলে ঘুমাচ্ছে মাইশা। সূর্যের লালিমা জানালার পাশে বয়ে এসে মাইশা সম্পূর্ণ মুখশ্রী ছড়িয়ে পড়লো।সঙ্গে সঙ্গে মাইশার তন্দ্রা কেটে গেল। কাল সারারাত দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি ফারহান। দুটো কারণে খুব টেনশন হচ্ছিলো। এক ঐ চিঠি। দুই সেদিন রাতে নিগারের সাথে কথা বলার সময় মাইশা এসে পড়েছিল। মাইশা হাব ভাবে যা বুঝা যায় সে হয়তো কিছুই শোনেনি। পরবর্তীতে ব্যাপারটাকে খুব সহজেই সামলে নিতে পেরেছে ফারহান। ফারহানের একটা অসাধারণ প্রতিভা আছে যে কোনো জিনিস খুব সহজেই সামলে নিতে পারে সে।সারারাত না ঘুমালে কি হবে। এখন চোখ জোড়ায় তন্দ্রা এসে ভর করেছে। চোখে জল দিয়ে তন্দ্রা কাটানোই স্নেয় মনে করল ফারহান।
~~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~~~~~
-” স্যার আইজকাও ঐ ব্যাট্যা আফনেরে চিডি দিয়া গেছে। ”
রমিজ ফারহানের হাতে চিঠিটা দিয়েই দ্রুত কেটে পড়লো। রমিজ একটা বিষয় খুব ভালো ভাবে খেয়াল করেছে। ফারহানের কাছে যেদিনই কোনো চিঠি আসে সেদিনই ফারহান রমিজের সাথে কারণে অকারণে রুক্ষ আচরণ করে।
ফারহান তড়িঘড়ি করে চিঠিটা খুলল। আজ পর্যন্ত ফারহান চিঠি খোলায় এতোটা আগ্রহ দেখায়নি । চিঠির খামের উপরে বড় করে একটি ব্রেকিং নিউজ দেওয়া আছে। ‘এটাই শেষ। কথা মত কাজ করলে এরপর আর কোনো চিঠি আসবে না। ‘ সেজন্যই চিঠি খোলায় এতোটা আগ্রহ।
খুব কষ্টে অল্প অল্প করে কিছু টাকা সঞ্চয় করছে ফারহান। ভেবেছিলো আরো কিছু টাকা লোন নিয়ে একটি ফ্লাট কিনবে।ভাড়া বাসায় থাকতে গেলে বেতনের নব্বই ভাগ টাকাই বাড়ি ওয়ালাকে দিতে হয়। কিন্তু এই অসভ্য চিঠি তার সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিলো। কতটা কষ্ট করে এই টাকা গুলো সঞ্চয় করেছে এটা শুধুমাত্র ফারহানই জানে। দুপুরে যেখানে তার পেট ভরে ভাত খাওয়ার কথা সেখানে ফারহান একটা কলা আর রুটি দিয়ে কাজ চালিয়েছে। এখন টাকাগুলো তার দোষ ঢাকার জন্য দিয়ে দিতে হবে এ ভেবে বুক চিরে কান্না পাচ্ছে ফারহানের। যার যায় সে বোঝে। যদি চিৎকার করে কাদতে পারতো তাহলে হয়তো কিছুটা সস্তি পেতো। এছাড়া তো কোনো অপশন ও খোজে পাওয়া যাচ্ছে না।থানা পুলিশ করতে গেলে সবাই জানবে। বাড়বে নতুন আরেক কেলেঙ্কারি। বিষয়টা যেহেতু গোপন, গোপনই থাক। টাকা গেলে যাবে। টাকার সাথে সাথে নিগারের সাথেও ইতি টানতে হবে।
প্রায় দিন দু’এক পরের কথা,,,,,,
ঘুম ভাঙে এলার্মের ডাকে। পাশে মাইশা নেই। বোধয় ওয়াশরুমে গেছে। কিন্তু সবসময় ফারহান ই মাইশাকে ডেকে তুলে। ওদিকে ওয়াশরুমের দরজাটাও বাইরে থেকে লক করা। কোথায় গেলো মাইশা। বেড সাইডের পাশে এক কাপ চা রাখা। পাশে একটা চিরকুট।
‘চলে যাচ্ছি একেবারের জন্য। আর ফিরবো না। চিন্তা করোনা,,খুব শীঘ্রই ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে।আর কতদিন এভাবে লুকিয়ে রাখবে আমার কাছ থেকে। ডিভোর্স হওয়ার পর নিগারকে বিয়ে করে নিয়। ও হ্যাঁ আরেকটা কথা! এরপর তো আর আমাদের দেখা হবে না। শেষ দেখা করতে চাইলে নিচের ঠিকানায় চলে এসো। ‘
==================
-” এই নিন আপনার পারিশ্রমিক। এডভান্স দিলাম। বাকি অংশটুকু নাটকের পরে পাবেন। ফারহান খুব শীঘ্রই এসে পড়বে। ও আসার পর আপনি কিছুক্ষণের জন্য আমার বয়ফ্রেন্ড সাজবেন। ফারহানের সামনেই আমার হাত ধরে বাসে উঠবেন। সামনের স্টপেই আপনি নেমে যাবেন। সেখানেই আপনার আমার কাহিনী খতম। ”
খুব শান্ত ভাবে শীতল কন্ঠে কথাগুলো বলল মাইশা।
-” কিন্তু আপনি কই যাবেন। ”
-” বাপের বাড়ি। মা’র কাছে চলে যাবো। জানি যাওয়ার পর অনেক কেলেঙ্কারি হবে। বাট আমি এখানে আর থাকতে চাই না। ”
সূর্যটা ঠিক মাথার উপর। ঠা ঠা রোদে পুড়ে ফারহান পাগলের মতো মাইশাকে খুজে বেড়াচ্ছে। প্রচুর ঘামছে সে। ঘামে ফারহানের শার্ট ভিজে একাকার। চারিদিকে ভলোই ভীর জমেছে। ভীরের মধ্যে মাইশাকে খুজতে ফারহানের বেশ একটা অসুবিধায় পড়ে । ফারহান খুব হাপাচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সম্ভবত ভীরের কারনেই। হাপাতে হাপাতেই ফারহান মাইশাকে বলতে লাগলো,
-” পি… প্লিজ বাড়ি চলো। জানিনা কখন কি কিভাবে জেনেছো । বিষয়টা সত্যিই। কিন্তু কালই সব শেষে হয়ে গেছে। প্লিজ বাড়ি চলো। ”
-” কি চলো! এখুনি বাস ছেড়ে দেবে। ”
ফারহানের কথার মঝে হঠাৎই বলে উঠলো সামির।
ফারহান আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক। সামিরের কথায় কিছুটা চমকে মাইশাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়লো ফারহান।
-” ইনি কে? ”
-” মিট মাই বয়ফ্রেন্ড। ও সামির। ”
মাইশা সম্পূর্ণ চেষ্টা করল ফারহানের সামনে হাসি ধরে রাখতে।মাইশা বোঝাতে চায় প্রিয় মানুষের সাথে অন্য কাউকে পাশে দেখলে কেমন ফিল হয়।মাইশার কথায় ফারহানের পায়ের রক্ত মাথায় উঠেছে। কিছুতেই কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।
-” মিথ্যা। ”
-” না মিথ্যা না। সামির আমার বয়ফ্রেন্ড। যেমনটা নিগার তোমার। ”
ফারহানের মুখ থেকে কিছুই বেরুচ্ছে না।
-” আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলাম। তাই না ফারহান। কেন করেছিলাম তাও তো জানো। আমাদের চিন্তা ভাবনা এক আচার আচরণ এক। এটলিস্ট বলতে গেলে আমাদের সবকিছুই একই রকম।আমরা একে অপরের ফিলিংস খুব সহজেই বুজতে পারতাম। তুমি তো এটাও বলতে’ আমাদের মন এক। সৃষ্টিকর্তা আমাদের মনকে দুভাগে ভাগ করেছে। ‘ যদিও এটা সত্য না। কারণ আল্লাহ আমাদের সবার রুহুকে আগেই তৈরি করে রেখেছে। সবদিকে এক হলে চরিত্রের দিক দিয়ে আমি কেনো পিছিয়ে থাকবো? ……. ”
-” তাই বলে…………. ”
-” হ্যাঁ। তাই বলে আমিও তোমার পথ ধরেছি। ”
-” এতো কিছু বুঝি না। তুমি এখন আমার সাথে বাড়ি যাবে। এটাই ফাইনাল। ”
-” কেন? ”
-” কারণ বিয়ের প্রথম রাতে তুমি বলেছিলে আমাদের মাঝে যত যাই হোক না কেনো দুজন দুজনকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। ”
-” সেই রাতে তুমিও তো বলেছিলে আমাদের মাঝে কোনো কিছুই গোপন থাকবে না। কি রাখতে পেরেছো সেই কথা? ”
মাইশা ফারহানের দিকে শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। চোখ জোড়া ফারহানের উত্তরের অপেক্ষায় স্থির। ফারহান একেবারেই স্তব্ধ হয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না সে। বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে।মাইশা ফারহানকে উদ্দেশ্য করে সামিরের হাত নিজের হাতের সঙ্গে জড়িয়ে ধরল। না সামিরের হাত ধরাটা অতিরিক্ত হয়ে যায়।ফারহান তো মাইশার সামনে এমনটা করেনি। তাই হাত ছেড়ে দিল। মাইশা ফারহান দুজন দুজনের মুখমুখি।
-” তোমাকে একটা গোপন কথা বলার ছিল। ওই টাকাগুলো আমিই নিয়েছি। প্রথমে টাকা নেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। ভেবেছিলাম চিঠি পেয়ে সব আমাকে বলে দিয়ে মিটমাট করে ফেলবে। পরে সেরকম কোনো আভাস পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে কাজটা করলাম। ভালো থেকো। ”
শেষ কথাটা খুব কষ্টে বলল মাইশা। চোখ বন্ধ করে বুক চিরে নিঃশ্বাস ছাড়লো।ফারহানকে ছাড়তে একেবারেই ইচ্ছে করছে না। ফারহান চুপ। খুব কষ্টে মুখ হতে একটা কথাই বেরুল,
-” খুব ভালো করেছো।যে টাকাটা নিয়েছো সেটা তোমার দেনমোহর। ”
কি আর বলবে ফারহান যখন মাইশাই চায় না তার সাথে যেতে। তাহলে জোর করে লাভ কি।মাইশাকে তাই মুক্ত করে দেওয়াই স্নেয়।
মাইশা একথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল।ভেবেছিল ফারহান তাকে আবারও জড়াজড়ি করবে বাড়ি নেওয়ার জন্য।কিন্তু না।তার মানে ফারহান মাইশাকে সত্যিই চায় না।তাহলে মাইশাও ফারহানকে চায় না।সে একাই সাড়া জিবন কাটিয়ে দেবে।যেভাবে আগে মা’র কাছে ছিল।সামির তো শুধু ভাড়া করা লোক মাত্র।কিছুক্ষণ পরেই তো সে চলে যাবে।আর মাইশা যাবে তার মা’র কাছে।কিন্তু ফারহানকে সেটা বুঝাতে হবে যে মাইশাও তাকে ছাড়া থাকতে পারে।মাইশা ফারহানের সামনে শক্ত চেহারায় তাকিয়ে আছে।যতটা সম্ভব ফারহানকে বুঝাতে চাচ্ছে এতে মাইশার কোনো দুঃখ নেই।মাইশা চোখ ফারহানের চোখের উপর স্থির।মুখ থেকে শুধু এটুকুই বের করল,
-” জানো ফারহান আমি না একদম তোমারই মতন। প্রকাশ্যে একজন আড়ালে অন্যজন । ”
সমাপ্ত❤