#গল্প_আজ_সৃষ্টি_সুখের_উল্লাসে
#পর্ব_৬(অন্তিম পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
তানভী রুমে প্রবেশ করতেই দিব্য তার পেছন পেছন চলে আসে।তারপর বলে,
-“শুনেছ তুমি ভিকি সুস্থ হয়ে গেছে।”
তানভী ভয় পেয়ে যায়।অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,
-“আমাদের এখন কি করা উচিৎ দিব্য?”
-“অপেক্ষা।এটা ছাড়া কিছু করার নেই।”
দিব্য কথাটা শান্তভাবে বললেও তানভী কথাটা শুনে শান্তি পায়না।তার মনে পড়ে যায় ২ বছর আগের ভয়াবহ ঘটনার কথা।
২ বছর আগে,
তানভী প্রতিদিনের মতো ভিকির সাথে দেখা করার জন্য যাচ্ছিল।সেদিন তাদের সম্পর্কের ৬ মাস পূর্ণ হয়েছিল।তানভী খুব এক্সাইটেড ছিল আজকের দিনটা নিয়ে।কিন্তু রোদেলার একটা ফোন কলই তার সব এক্সসাইটমেন্ট কেড়ে নেয়।
রোদেলা তানভীকে ফোন করে বলে,
-“আমি এইমাত্র ভিকিকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখলাম।বারে ঐ মেয়েটার সাথে ভিকি খুব ঘনিষ্ঠভাবে ছিল।আমার মনে হয় ভিকি তোর সাথে প্রতারণা করছে।”
তানভী কিছুতেই রোদেলার কথা বিশ্বাস করে না।রোদেলা ভিকির সাথে অন্য আরেকটা মেয়ের ঘনিষ্ঠ অবস্থার ছবি পাঠালে তখন গিয়ে তানভীর বিশ্বাস হয়।পুরো ঘটনায় তানভী ভীষণ ভাবে অবাক হয় এবং রেগে যায়।তানভী সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় আজ সে ভিকিকে উচিৎ শিক্ষা দেবে।রোদেলা তানভীকে শান্ত থাকিতে বলে কিন্তু তানভী খুবই রেগে যায়।
তানভী ড্রাইভারকে বলে,
-“জোরে গাড়ি চালান।আর চলুন রিভিউ বারে।”
তানভীর কথা শুনে ড্রাইভার তাকে রিভিউ বারে নিয়ে যায়।তানভী গাড়ি থেকে মেনে সোজা ছুটে যায়।ভিকির সামনে গিয়ে তাকে থা’প্পড় মা’রে।
তারপর ভিকিকে টানতে টানতে নিয়ে বাইরে যায়।ভিকি বলে,
-“কি হয়েছে বেবি।এরকম করছ কেন?”
তানভী বলে,
-“ইউ চিটার।তুমি আমার সাথে রিলেশন করে অন্য মেয়ের সাথে…তোমাকে আজ আমি উচিৎ শিক্ষা দেব।”
-“এসব তুমি কি বলছ বেবি? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
-“বুঝতে পারছিস না তাহলে এটা কি?”
তানভী ভিকিকে ছবিটা দেখায়।ভিকি এবার হেসে ফেলে।তারপর বলে,
-“ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে একটু বেশিদিন নিজের ইচ্ছেমতো খেলব।কিন্তু এখন যখন তুই সব জেনে গেছিস তাহলে ওকে।আজ অব্দি তো কোনদিন তোকে স্পর্শ করতে দিলি না।আজ নাহয় তোকে জোরলোভাবে স্পর্শ করব।”
তানভী ভিকিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করে কিন্তু কোন লাভ হয়না।ভিকি তানভীকে ধরে ফেলে।সে তার কিছু বন্ধুদের ডাকে।তারপর সবাই মিলে তানভীকে নিয়ে যায় একটি রুমে।তারপর সবাই মিলে তানভীর উপর পাশবিক নির্যা’তন করে।তানভী অনেক চেষ্টা করেও কোন লাভ করতে পারে না।
ততক্ষণে তানভীকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে পৌঁছে যায় রোদেলা।রোদেলার সাথে ছিল রোদেলার বন্ধু দিব্য।তাদেরকে আসতে দেখে কিছু ছেলে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।ভিকি আর তার দুজন বন্ধু শুধু থেকে যায়।তারা রোদেলার সাথেও অসভ্যতামি করার চেষ্টা করে।দিব্য তখন রোদেলাকে বাঁচায়।
ভিকির বাকি দুই বন্ধুও চলে যায়।তখন ভিকি তানভীর গলায় একটা ছু’রি ধরে বলে,
-“কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে এই মেয়েটাকে এখুনি শে’ষ করে দেব।”
রোদেলা তখন একটি ইট নিয়ে ভিকির মাথায় ছু’ড়ে মা’রে।ভিকি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।তানভী এসে রোদেলার গলা জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।রোদেলা বলে,
-“চিন্তা করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
তারা তানভীকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়।তানভীকে হাসপাতালে এডমিট করা হয়।এরমধ্যে পুলিশ ভিকিকে উদ্ধার করে।পুলিশ ভিকির বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে।তারা তানভীর নামই বলে।
রোদেলা তখন তানভীকে সব সত্য খুলে বলতে বলে।কিন্তু তানভী আপত্তি জানিয়ে বলে,
-“সব জানাজানি হলে আমি বাঁচতে পারব না।তুই তো জানিস আপু সমাজে ধর্ষি’তা মেয়েদের কি হয়।সবাই তাদেরই দোষ দেয়।সমাজে বাবার অনেক সম্মান।আমি চাইনা আমার জন্য সব সম্মান নষ্ট হোক।”
তানভীর অনুরোধে রোদেলা কিছু বলে না।সবাই জানে তানভীর সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিল।আর ভিকির সাথে যা হয়েছে তার সাথে কারো তাদের সম্পর্ক নেই।
এরপর থেকে তানভী মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যায়।রোদেলার তানভীর জন্য খুব চিন্তা হতে থাকে।
রিহ্যাবে ছিল অনেকবার।সবাই পাবে ভিকির খারাপ অবস্থার জন্যই তানভী এমন করছে।
তানভীও মিথ্যা অভিনয় করে কারণ সে চাইত না সব বিষয় জানাজানি হোক।এভাবে দেড় বছর অতিবাহিত হয়।কিন্তু এরমধ্যে রোদেলা জানতে পারে ভিকির অবস্থা বেশ উন্নতির দিকে।এতদিন কোমায় থাকলেও এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে।
রোদেলা তানভীর জন্য অনেক দুশ্চিন্তা করে।তাই দিব্যকে অনুরোধ করে তানভীর সাথে যেন থাকে।রোদেলার অনুরোধে দিব্য তার ভালো চাকরি ছেড়ে দিয়ে তানভীর ড্রাইভার হয়ে যায়।
এর বিনিময়ে রোদেলা দিব্যকে অনেক টাকা দিতে চাইলেও সে নারাজ ছিল।এরমধ্যে দিব্য আর তানভী একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে।
কিন্তু তানভী চাইছিল না দিব্য তার কারণে কোন বিপদে পড়ুক।তাই তাকে কাজ থেকে বের করে দেয়।
রোদেলা তখন নতুন পরিকল্পনা করে।সে তানভীর বাবাকে বলে তানভীর বিয়ে দিলে অবস্থার উন্নতি হবে।তানভীর বাবাও রাজি হয়।কিন্তু দিব্যকে জামাই করতে তিনি রাজি ছিলেন না।হাজার হোক দিব্য একটা ড্রাইভার।তখন রোদেলা বলে,
-“দিব্য আর এখন ড্রাইভার নেই।একটা বড় কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও।”
তখন গিয়ে তানভীর বাবা রাজি হয়।
বর্তমানে,
তানভী দিব্যকে বলে,
-“আমি রোদেলা আপুকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু ও বিদেশে যায়নি।এখন কি হবে? ভিকি যদি বলে রোদেলা আপু ওকে আঘাত করেছে তাহলে তো আপুকে পুলিশ গ্রেফতার করবে।”
-“আমার মনে হয় তুমি যদি সব সত্যি বলো তাহলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে।”
-“আমি পারব না।”
-“প্লিজ তানভী বোঝার চেষ্টা করো।তুমি কি চাওনা অপরাধীরা শাস্তি পাক।”
তানভী চুপ থাকে।এরমধ্যে তানভীর বাবা তাকে ফোন করে বলে,
-“তানভী শুনেছিস ভিকি সুস্থ হয়ে গেছে।আর ও বলেছে ওর এই অবস্থা নাকি রোদেলা করেছে।তাই পুলিশ রোদেলাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।”
কথাটা শুনে তানভী আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।সে এবার সিদ্ধান্ত নেয় সব সত্য বলবে।
তানভী পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সব সত্য বলে।কিন্তু কেউই তাকে বিশ্বাস করে না।কারণ তার কাছে কোন প্রমাণ ছিল না।তাছাড়া তানভী কেন এতদিন সত্যটা গোপন করল আর এখনই বা কেন বলছে সেটাই সবার প্রশ্ন।
________
সত্য কখনো চাপা থাকেনা একসময় সব সত্য প্রমাণিত হয়।রোদেলার কয়েক মাসের কারাদণ্ড হয়।তবে সে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে।ভিকি আর তার বন্ধুদের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়।
তানভীর বাবা নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-“তুই যদি আগে সব বলতি তাহলে ভালো হতো।তোকে এত কষ্ট সহ্য করতে দিতাম না।প্রয়োজনে তোকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতাম।সমাজের কথায় আমার কিছু যায় আসেনা।তুই যে এতকিছুর পরেও বেঁচে আছিস সেটাই আমার কাছে অনেক রে।”
তানভী তার বাবার কোলে মাথা রেখে কেঁদে দেয়।সোহাগী বলে,
-“তুমি এভাবে কেঁদোনা তানভী।তোমার মতো শক্ত মেয়ের এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না।এই ভুবনে আমাদের কান্না দিয়ে নয় উল্লাস দিয়ে জয় করতে হবে।আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।”
তানভী এরপর দিব্যর হাত ধরে তার বাড়িতে যায়।দেলোয়ারার কাছে গিয়ে বলে,
-“আমার সম্পর্কে সব জেনেও কি আমায় ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবে।”
দেলোয়ারা তানভীকে কাছে টেনে বলে,
-“তোকে যদি আমি মেনে না নেই তাহলে তো আমার বোন আমায় ক্ষমা করবে না।আমার বোনকে কেউ মেনে নেয়নি বলে আজ ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।আমি চাই না অন্য কোন মেয়ের এই অবস্থা হোক।তোর তো কোন দোষ নেই তাহলে তোকে কেন শাস্তি পেতে হবে? শাস্তি নয় উল্লাস কর।আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।”
দিব্য তানভীকে নিয়ে ঘরে যায়।শুরু হয় তাদের নতুন জীবন।
~~~~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~~~