#গল্প_আজ_সৃষ্টি_সুখের_উল্লাসে
#পর্ব_৫
#লেখক_দিগন্ত
তানভী দিপাকে সাথে নিয়ে গ্রামের ক্লাব মাঠে আসে।দিপা ইশারা করে সেই ছেলেদের দেখিয়ে দেয় যারা তার সাথে অসভ্যতামি করছিল।তানভী লাঠি নিয়ে সেই ছেলেদের দিকে তেড়ে যায়।
ছেলেগুলো তানভীকে দেখে ঘাবড়ে যায়।তারা পালানোর চেষ্টা করে তখন তানভী তাদের লাঠিপে*টা করতে থাকে।ছেলেগুলো চিৎকার করছিল।
একজন ছেলে এগিয়ে এসে তানভীর পা ধরে ক্ষমা চায়।তানভী তাদেরকে বলে দিপার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে।তারা বাধ্য ছেলের মতো দিপার পা ধরে ক্ষমা চায়।ততক্ষণে কবিরাজ সেখানে পৌঁছে যায়।কবিরাজকে দেখে তানভী বলে,
-“এদেরকে নিয়ে গিয়ে ঝাটাপেটা করে ভূত তাড়ান।নাহলে কিন্তু আমি আপনাকেই..”
কবিরাজ দৌড়ে এসে ছেলেগুলোকে ঝাটা দিয়ে মা*রতে থাকে।এসব দেখে তানভী মানসিকভাবে প্রশান্তি পায়।এরপর তানভী কবিরাজকে থামিয়ে ছেলেগুলোকে রক্তচক্ষু নিয়ে বলে,
-“এরপর থেকে কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানোর আগে আমার কথা মনে করবি।মেয়েদের অবলা পেয়ে যা খুশি করবি? শুনে রাখ ভবিষ্যতে এরকম স্পর্ধা দেখালে তোদেরকে জ্যান্ত মাটি*চাপা দেব।”
তানভী এরপর ছেলেগুলোকে কান ধরে উঠবস করিয়ে মাথা ন্যাড়া করিয়ে ছেড়ে দেয়।
___________
বাড়িতে ফেরার পর তানভী দেখে দেলোয়ারা বেগম,লুবনা বেগম সবাই ভয়ার্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।দিব্যও চলে আসে।সে এসেই তানভীকে বলে,
-“এসব কি করেছ তুমি?”
পাশ থেকে লুবনা বলেন,
-“এটা মেয়ে নয় রা*ক্ষসী।ছেলেগুলোর কি হাল করেছে।”
তানভী বলে ওঠে,
-“ছেলেগুলো অন্যায় করেছিল।আমি ওদের শাস্তি দিয়েছি এতে অন্যায় কোথায়?”
-“এগুলো অন্যায় নয় কিন্তু তোমার একা এত ঝুঁকি নেওয়া উচিৎ হয়নি।যদি ছেলেগুলো তোমার কোন ক্ষতি করতো?”
দিব্যর কথায় দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।তানভী অবাক হয়ে দিব্যর দিকে তাকিয়ে থাকে।
লুবনা এগিয়ে এসে বলেন,
-“তুই আজও তোর বউকে শাসন করলি না।পোলামানুষরা একটু দোষ করতেই পারে তাই বলে এভাবে একটা মাইয়া হইয়া ও এভাবে ওদের মা*রবে।সবাই তো ছি ছি করছে।”
তানভী প্রচণ্ড রেগে যায়।লুবনা বেগমের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
-“আপনার মতো মানসিকতার মানুষদের জন্য আমাদের সমাজে নারীদের সাথে অন্যায় ধামাচাপা পড়ে।আপনারা সবসময় মেয়েদেরই দোষ দেন, অথচ ছেলেদের কোন দোষ খুঁজে পান না।”
লুবনা বেগম মুখ বাকিয়ে বলে,
-“মাইয়া মানুষ হইছ মাইয়া মানুষের মতো থাকবা।এরকম ছেলেদের সাথে মা*রপিট করা মাইয়াগো কাম না।”
-“তাহলে কি কাজ আমাদের বসে বসে অত্যাচারিত হওয়া।”
লুবনা বেগম আর কিছু বলতে চাইলে দেলোয়ারা তাকে থামিয়ে দেয়।তারপর বলে,
-“ভেতরে আসো তানভী মা।তুমি যা করেছ একদম ঠিক কাম করছ।মাইয়া মানুষের নিজের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য প্রতিবাদ করতে হয়।”
লুবনা অবাক হয়ে বলে,
-“কি কচ্ছো তুমি বড় বউ!”
-“ঠিকই বলছি।আপনি তো জানেন আমার ছোট বোনটার সাথে কি হয়েছিল।মেয়েটাকে সেদিন কয়েকটা জা*নোয়ার মিলে ছি*ড়ে খেয়েছিল।সেদিন যদি তানভীর মতো কোন মাইয়াটা থাকত তাহলে এমন হতো না।আজ হয়তো ও না থাইকলে আমার মেয়েটার সাথেও কোন অঘটন ঘটতো একদিন।”
_____________
পরেরদিন সকালে সবাই ব্যস্ত ছিল নিজের কাজে।তানভী ফোন ঘাটছিল।দিপা তার কাছে এসে বলে,
-“ভাবী চলো আজ আমরা একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”
তানভী রাজি হয়।এরপর তারা বাইরে ঘুরতে যায়।ঘুরে আসার পর,
বাড়িতে এসে দেখে আশরাফ একটা মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে এসেছে।লুবনা বেগম বিলাপ করে কাঁদছেন।দিব্য হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।তানভীর চোখ সোহাগীকে খুঁজছিল।
ভেতরে এসে তানভী জানতে পারে আশরাফ যেই মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে তার নাম মুমিনা।গ্রামের সবজী ব্যবসায়ী মনিরের বউ সে।ঘরে নাকি দুটো বাচ্চাও আছে।তাকেই ঘরে এনে তুলেছে আশরাফ।তাদের মধ্যে নাকি অনেক দিনের সম্পর্ক।
এরমধ্যে সোহাগী তার সমস্ত জামাকাপড় গুছিয়ে চলে এলো।আর সে এই বাড়িতে থাকতে চায়না।তানভী তাকে আটকে বলে,
-“কোথায় যাচ্ছ চাচী?”
-“বাপের বাড়িতে ঠাঁই হবে না।তাই এতদিন মুখ বুজে পড়েছিলাম।কিন্তু আজ আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে।যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে চলে যাব।”
-“এভাবে তুমি যেতে পারো না।”
-“তুমি কি চাও তানভী আমি এখানে থেকে আরো অত্যাচা*রিত হই?”
-“না।আমি তোমাকে এই বাড়িতে থাকতে বলছি না।আমি তোমার থাকার ব্যবস্থা করতে চাই।তুমি তো বলেছিলে তোমার পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছে ছিল।কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে পড়াশোনা শেষ করার আগেই তোমার বিয়ে হয়ে গেল।এবার তুমি তোমার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ কর।তুমি এখন থেকে শহরে গিয়ে আমার বাড়িতে থাকবে আর পড়াশোনাও করবে।”
সোহাগী কিছুতেই রাজি হতে চায়না।তখন দেলোয়ারা বেগম এসে বলেন,
-“দিব্যর বউয়ের কথা শোন সোহাগী।এই বাড়িতে আইছ থেকে তো কম অত্যা*চার সহ্য করোনি।এখন একটু সুখের মুখ দেখ।”
সোহাগীর চোখে জল চলে আসে।ছলছল চোখে সে দেলোয়ারার দিকে তাকিয়ে থাকে।লুবনা বেগম এগিয়ে এসে বলে,
-“এটা তো তোমার সংসার তুমি কই যাইবা? তুমি যাইওনা বউ।এই মুমিনারে আমি বিদায় করব।যদি লোক জানাজানি হয় তাহলে যে গ্রামে আমাদের একঘরে করে দেবে।”
সোহাগী এবার খুব রেগে যায়।সে অনেকদিন থেকে নিজের মনে অনেক কষ্ট অনেক ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছে।আজ যাওয়ার আগে সব ক্ষোভ উগড়ে দিতে চায়।তাই লুবনা বেগমের মুখের উপর বলে দেয়,
-“আজ যে আশরাফ এতবড় দুঃসাহস দেখিয়েছে সেটা আপনার দোষ।আপনিই আপনার ছেলেকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলেছেন।আর দেখুন এখনও অব্দি আপনি শুধু নিজের কথাই ভাবছেন, নিজের ছেলের কথা ভাবছেন কিন্তু আমার কথা একবারও ভাবছেন না।”
লুবনা মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকে।সোহাগী এরপর আশরাফের দিকে এগিয়ে যায়।তার গালে কসিয়ে একটা থা*প্পড় মে-রে বলে,
-“তোমার মতো নিচ মানুষকে যেন আল্লাহ উচিৎ শিক্ষা দেয়।”
আশরাফ সোহাগীর চুলের মু*ঠি ধরে বলে,
-“শা*লী, বে** তোকে আজ আমি এক্ষুনি তালাক দিলাম যা।এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক।”
দিব্য এসে আশরাফকে ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে দেয়।সোহাগী মৃদু হেসে বলে,
-“এই প্রথম তোকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে।আজ তুই নিজে থেকে আমায় এই অভি*শাপ থেকে মুক্তি দিলি।শহরে গিয়েই তোকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেব সই করে দিস।”
বলেই আর কোন কথা না বলে সোহাগী বেরিয়ে পড়ে।যাওয়ার আগে দেলোয়ারাকে ধন্যবাদ জানায় এতদিন আগলে রাখার জন্য।তানভীকেও ধন্যবাদ জানায় তার হয়ে প্রতিবাদ করার জন্য।
________
সোহাগী চলে যাওয়ার পর আশরাফ মুমিনাকে নিয়ে ঘরে তোলে।এতক্ষণে গ্রামে সব জানাজানি হয়ে গেছে।মনির গ্রামের লোকদের জড়ো করে নিয়ে আসে।
মনির বাড়িতে এসে চিৎকার করতে থাকে।গ্রামের লোকেরা ভাঙচুর করতে শুরু করে।কিছু লোক গিয়ে আশরাফ আর মুমিনাকে ধরে আনে।মুমিনা সুযোগ বুঝে পালটি মা*রে।সে বলে সব দোষ আশরাফের।আশরাফ জোর করে তাকে তুলে এনেছে।
গ্রামের লোকেরা আশরাফকে মা*রধোর করতে শুরু করে।কেউ এগিয়ে আসে না তাকে বাঁচানোর জন্য।কেবলমাত্র লুবনা বেগম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিলাপ করতে থাকেন।গ্রামের লোকেরা সবাই মিলে ধরে আশরাফকে জেলে পাঠিয়ে দেয়।তার নামে অপহরণের মামলা ঠুকে দেয়।
আশরাফ এতদিনে তার অন্যায়ের শাস্তি পাবে।
.
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নার্স দৌড়ে এসে ডাক্তারদের খবর দেয় ৫৫ নং রুমের পেসেন্ট ভিকি যে এতদিন কোমায় ছিল আজ সে সুস্থ হয়ে উঠেছে।
(চলবে)