#গল্প_আজ_সৃষ্টি_সুখের_উল্লাসে
#পর্ব_৪
#লেখক_দিগন্ত
তানভী বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে ছিল।দিব্য হঠাৎ রুমে প্রবেশ করে বলে,
-“তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।আমরা আজ তোমার বাড়িতে যাব।”
তানভী বুঝতে পারে তাকে বাড়িতে রেখে আসতে চাইছে।কিন্তু তানভী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে সোহাগীকে এই অবস্থায় রেখে সে যাবেনা।তাই দিব্যকে বাহানা দেখিয়ে বলে,
-“এই অবস্থায় আমি কি করে এত বেশি জার্নির ধকল সামলাবো বলো?”
-“কোন অবস্থার কথা বলছো? তোমায় তো একদম সুস্থ লাগছে।”
-“আমি তো তোমার মা হতে চলেছি।”
তানভীর কথা শুনে দিব্য এতটা অবাক হয় যে আরেকটু হলে অজ্ঞানই হয়ে যেত।দিব্য নিজেকে সামলে নিয়ে দিব্য বলে,
-“বাচ্চা! কিভাবে?”
-“যেভাবে হয় সেভাবে।”
-“যেভাবে মানে?”
-“আরে ভাই যেভাবে অন্যদের বাচ্চা হয় সেভাবে আমাদের বাচ্চা হবে।”
-“কিন্তু আমাদের মধ্যে তো কিছু হয়নি।”
-“কি হয়নি?”
দিব্য আর কোন কথা বলে না।সে বুঝতে পারে তানভী এসব নাটক করছে।দিব্য এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তানভীর জালেই তাকে আটকে দেবে।তাই দিব্য বলে,
-“এটা তো খুব ভাল কথা।কিন্তু জানো আমাদের বাড়িতে একটা নিয়ম আছে।প্রথম কেউ গর্ভবতী হলে তাকে গ্রামের সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে হয়।তো তুমি কি নিয়ম মানবে না?”
দিব্যর কথা শুনে তানভী ঢোক গিলে বলে,
-“আমার মনে হয় বুঝতে ভুল হয়েছে।আমাদের মধ্যে তো কিছুই হয়নি তাহলে আমার বাচ্চা হবে কিভাবে।”
-“এই তো সোজা পথে এসো।এখন আর বেশি নাটক না করে তৈরি হয়ে নাও।তোমাদের বাড়িতে গিয়ে আবার কালকের মধ্যেই কিন্তু ফিরে আসতে হবে।আবার ভেবোনা ওখানে অনেকদিন থাকবে।”
দিব্যর কথা শুনে তানভী আশ্বস্ত হয়।তারমানে দিব্য তাকে রেখে আসবে না।
____________
দিব্যর সাথে নিজের বাড়িতে ফেরে তানভী।এখন কিছুটা স্বস্তি লাগছে।এখানে এসি আছে,কোন কাজ করতে হচ্ছে না।সবমিলিয়ে দারুণ পরিস্থিতি।তানভীর মেজাজ ফুরফুরে হয়ে যায়।কিন্তু নিজের রাগ আর জেদের কারণে বাবা-মায়ের সাথে কোন কথাই বলে না।
রাতে খাবার টেবিলেও খেতে যায়নি।মোবাইলে অর্ডার করে খাবার এনে খেয়েছে।দিব্যর ব্যাপারটা ভালো লাগছিল না।তাই সে তানভীকে বলে,
-“তুমি এরকম ব্যবহার কেন করছ? ওনারা তো তোমার বাবা-মা হন।”
-“মা-বাবাকে হলে কোনদিনও একটা ড্রাইভারের সাথে আমার বিয়ে দিত না।ওনারা আমার ভালো চান না।আমি ওদের মা-বাবা হিসেবে মানি না।আর কার সাথে কিরকম ব্যবহার করবো সেটা নিশ্চয়ই তোমার কাছ থেকে শিখব না।তুমি আমার ব্যাপারে নাক গলানোর সাহস দেখাবে না।”
দিব্য আর তানভীর সাথে কোন কথা বলে না।পরের দিন সকালে উঠে তানভী ঘুম থেকে উঠে দেখে দিব্য নেই।তারমানে কি কালকের কথায় দিব্য মন খারাপ করে চলে গেছে।
তানভী দৌড়ে নিচে নেমে যায়।গিয়ে তার মার কাছে দিব্যর খোঁজ করে।
তানভীর মা বলে,
-“ও তো সকালে বেরিয়ে গেছে।বলল কি যেন কাজ আছে।কেন তোকে বলে যায়নি?”
তানভী নিশ্চুপ থাকে।তানভীর মা আবার বলে,
-“ছেলেটার সাথে খারাপ ব্যবহার করিস না।ও কিন্তু তোকে বিয়ে করতে চায়নি।তোর বাবা একপ্রকার অনুরোধ করে তবেই রাজি করিয়েছে।তাছাড়া ছেলেটা যথেষ্ট শিক্ষিত।শুধু ভালো একটা চাকরির অভাবে এখানে ড্রাইভারের কাজ করত।তোর বাবা একজন গহনার ব্যবসায়ী।হিরে চিনতে ভুল করবে না।”
তানভী কোন কথা না বলে আবার নিজের রুমে চলে আসে।দিব্য তাকে রেখে যায়নি এটা জেনে ভালো লাগছে।
___________
দুপুরে রোদেলা ও তার মা আসে তানভীদের বাড়িতে।তানভী ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকে।রোদেলা এসে তানভীকে ডাকে কিন্তু তানভী কোন সাড়া দেয়না।
অনেকক্ষণ নক করার পর তানভী দরজা খুলে দেয়।তারপর বলে,
-“আমার জীবনটা নষ্ট করে তোর শান্তি হয়নি।আবার চলে এসেছিস?”
-“তানভী তুই এমন কেন করছিস? আমি তো ক্ষমা চেয়েছি।আমার জন্যই ভিকির সাথে তোর পরিচয় হয়েছিল আর সেই সূত্র ধরে প্রেম।কিন্তু যখন জানলাম ভিকি ভালো ছেলে নয় তখন সব সত্য প্রমাণসহ তোকে দেখালাম।তুই প্রতিজ্ঞা করে বসলি ভিকির উপর প্রতিশোধ নিবি।কিন্তু এতে তোর বিপদ হতে পারে ভেবে আমি ভিকিকে নিজের হাতে…”
-“চুপ আর একটা কথাও বলবি না।ভিকিকে তুই মে’রে ফেলার চেষ্টা করেছিস।যদিও ভিকির মতো ছেলে এটাই ডিজার্ভ করে।কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।কিন্তু তাই বলে তুই নিজের এত বড় ঝুঁকি নিলি।ভিকির জ্ঞান ফিরলে তোর কি হবে? পুলিশ তো তোকেই গ্রেফতার করবে।আর তুই ধেই ধেই করে বিয়ের জন্য পাত্র দেখা শিশু করলি।আমার কথা শোন তুই এখনই দেশ ছেড়ে চলে যা।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে আসিস।”
-“আমি চলে গেলে যে তুই ফেসে যাবি।আমি তো সেটা হতে দিতে পারি না।তুই আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না।এমনিতেও নিজের জীবন নিয়ে আমার আর কোন আশা নেই।জানিসই তো আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত।জানি না কখন কি হয়ে যাবে।”
-“একদম বাজে কথা বলবি না।ডাক্তার তো বলেছে এখনো লাস্ট স্টেজে পৌঁছে যায়নি।তোর বাঁচার আশা আছে।”
তাদের কথার মাঝেই তানভীর বাবা সেখানে চলে আসতে।তিনি আসতেই তানভীর ব্যবহার বদলে যায়।রোদেলাকে অনেক খারাপ কথা বলতে থাকে সে।
তানভীর বাবা খুব রেগে যায় এবং তানভীর গায়ে হাত তুলে।তানভী মুখ বুজে সব সহ্য করে।কারণ সেইদিনের সেই ঘটনার পর যে এভাবেই তারা অভিনয় করে চলেছে।তানভী কখনো বিগড়ে যায়নি।সে শুধু অভিনয় করছিল।এর পেছনে রয়েছে ২ বছর আগের এক ভয়াবহ ঘটনা।
__________
বিকালে দিব্য এসে তানভীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়।
বাড়িতে ফিরেই তানভী আগে গিয়ে সোহাগীর খোঁজ নেয় যে সে ঠিক আছে না।
দেলোয়ারা তানভীর সাথে সেভাবে কথা বলছিল না।তানভীও আগবাড়িয়ে কথা বলার মতো মেয়ে না।
তানভীর চোখ খুঁজছিল আরেকজনকে।সে হলো আশরাফ।আসার সময় সে রাস্তায় আশরাফকে দেখেছিল।কোন এক মহিলার হাত ধরে টানাটানি করছিল।যা দেখে তানভীর রাগ হতে থাকে।তার ইচ্ছে করছিল সেখানেই আশরাফকে জ্যান্ত ক/বর দিতে।কিন্তু দিব্যর জন্য কিছু করতে পারে নি।
২ বছর আগের সেই ঘটনার পর থেকে পুরুষদের উপর তার রাগ জন্ম নিয়েছিল।কোন ছেলেকেই সহ্য করতে পারত না।আর যেসব পুরুষ নারীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তাদের উপর অত্যাচার করে তাদের তো একেবারেই না।ঠিক সেই কারণে সোহাগীর উপর হওয়া অত্যাচারে এত রেগে গিয়েছিল।
কিছুক্ষণ পর দিপা কাদতে কাদতে বাড়ি ফেরে।তানভী তাকে জিজ্ঞাসা করে কি সমস্যা।
দিপা তখন বলে,
-“স্কুল থেকে আসার সময় কিছু ছেলে আমায় বিরক্ত করে।বাজে অঙ্গভঙ্গি করে।আমার না খুব খারাপ লাগছিল।”
দিপার কথা শুনে তানভীর বুকে থাকা ছাই চাপা আগুন আবার জ্ব/লে ওঠে।দিপার হাত ধরে বলে,
-“নিয়ে চলো আমায় ওদের কাছে।সবাইকে উচিৎ শিক্ষা দেব।এমন শিক্ষা দেব যে ভবিষ্যতে আর কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না।”
(চলবে)