আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে পর্ব-০৩

0
953

#গল্প_আজ_সৃষ্টি_সুখের_উল্লাসে
#পর্ব_৩
#লেখক_দিগন্ত

সকালের রোদ এসে লাগে তানভীর মুখে।জানালা এভাবে খোলা রাখায় তানভী খুবই রেগে যায়।কারণ তার এত সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস নেই।তানভী তেড়ে যায় দিব্যর দিকে।

দিব্য বলে,
-“এটা আপনার বাবার জমিদারি পাননি যে সারাদিন ঘুমাবেন।এ বাড়ির সবাইকে ফজরের নামাজের আগে উঠতে হবে।”

-“আমি পারব না।”

-“তাহলে বেরিয়ে যান এই বাড়ি থেকে।”

তানভী রেগে গিয়ে নিচে নেমে আসে।তানভীকে দেখে দিপা বলে,
-“ভাবী আমার না একটা জিনিস বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে।একটু বুঝিয়ে দেবে।”

-“পারব না।”

-“ভাবলাম তুমি শহরের বড় স্কুলে পড়াশোনা করেছ তাই পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক কিছু জানো।তাই জিজ্ঞাসা করেছিলাম।এখন যদি…”

তানভী দিপাকে থামিয়ে বলে,
-“ঠিক আছে।আমি তোমায় সাহায্য করব।”

তানভী কথাটা বলে দেয় ঠিকই কিন্তু বাস্তবতা হলো সে নিজে পড়াশোনায় ভালো না।পড়ার সাথে তার কোন সম্পর্কই ছিলনা।

দিপা তানভীকে জিজ্ঞাসা করে,
-“আচ্ছা মাধ্যাকর্ষণ কাকে বলে?”

তানভী অনেক ভেবে বলে,
-“যেই কর্ষণ মাধ্যার মধ্যে হয় তাকে মাধ্যাকর্ষণ বলে।”

তানভীর উত্তর শুনে দিপা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পরেই হো হো করে হাসতে হাসতে বলে,
-“তুমি এসব কি বলছ? বইয়ে তো অন্য কথা লেখা।”

তানভী নিজের সম্মান রক্ষার জন্য বলে,
-“বইয়ের লেখক ভুল লিখেছে।আমি যা বলেছি তাই ঠিক।”

বলেই আর অপেক্ষা না করে তানভী সেখান থেকে চলে যায়।
______
তানভী টিভি দেখার জন্য বসে পড়ে।তখন দিব্যর দাদী সোহেলা বেগমও সেখানে চলে আসে।সোহেলা বেগম বলেন,
-“কেমন আছ তুমি?”

-“ভালো আছি।”

-“শোন তোমায় একটা কথা কই।আমার না খুব ইচ্ছা মরার আগে একটা বাচ্চা দেখে যাওয়া।তো তুমি আর দি…”

-“আপনি বাচ্চার মুখ দেখতে চান আগে বলবেন না।চলুন আমার সাথে।”

তানভী সোহেলাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে নিয়ে আসে একজন ডাক্তারের কাছে।

তানভী সোহেলা বেগমকে ডাক্তারের কেবিনে নিয়ে যায়।

তাদের দেখে ডাক্তার বলে,
-“বলুন কি সমস্যা আপনাদের।”

তানভী বলে,
-“সমস্যা আমার না সমস্যা আমার দাদীর।উনি বাচ্চার মা হতে চান।”

তানভীর কথা শুনে ডাক্তার এবং সোহেলা দুজনেই অবাক হয়।সোহেলা বলে,
-“এসব কি কইতাছো?”

ডাক্তার এক গ্লাস পানি খেয়ে বলে,
-“আমার তো মনে হয় আপনারা ভুল যায়গায় এসে গেছেন।আপনাদের কোন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যেতে হবে।”

তানভী বলে,
-“আরে না ডাক্তার আমাদের আপনাকেই প্রয়োজন।আপনি প্লিজ দাদীকে প্রেগন্যান্ট করে দিন না।”

তানভীর কথা শুনে ডাক্তার মাথা চুলকাতে থাকে।অন্যদিকে সোহেলা তো লজ্জায় মরি মরি দশা।

ডাক্তার এবার রেগে গিয়ে বলেন,
-“এটা আমার চেম্বার তামাশা করার যায়গা না।বেরিয়ে যান এখান থেকে।”

তানভী বলে,
-“কেমন ডাক্তার আপনি? যে একজন রোগীকে প্রেগন্যান্ট করতে পারছেন না।আপনাদের মতো ডাক্তারদের কারণে ভালো ডাক্তারদেরও বদনাম হয়।”

ডাক্তার এবার খুব রেগে যায়।তিনি বলেন,
-“আপনারা ভালোয় ভালোয় যাবেন না আমি সিকিউরিটি ডাকব?”

-“আপনার এত বড় সাহস আমাকে সিকিউরিটির ভয় দেখাচ্ছেন।আমার নাম তানভী।আমাকে আপনি চেনেন না।আপনার ডাক্তারি লাইসেন্স বাতিল করে তবেই আমি দম নেব।”

তানভী সোহেলা বেগমের হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসে।তারপর বলে,
-“কোন চিন্তা করোনা তুমি।এই ডাক্তার তোমায় বাচ্চার মুখ দেখাতে পারেনি তো কি হয়েছে আমরা অন্য ডাক্তারের কাছে যাব।সেই ডাক্তার তোমায় প্রেগন্যান্ট করেই ছাড়বে দেখে নিও।”

-“আমার ক্ষমা করো মা।আর কোনদিনও তোমায় বাচ্চার কথা কইতাম না।আগে যদি জানতাম এরকম কাণ্ড করবে তাহলে জীবনেও তোমায় কইতাম না।”

সোহেলা বেগম হনহন করে চলে যেতে থাকে।দিশা তাকে এভাবে জব্দ করতে পেরে খুব আনন্দিত হয়।আর মনে মনে বলে,
-“আমাকে বাচ্চা নেওয়ার কথা বলেছিলে না বুড়ি এবার দেখো কত ধানে কত চাল।তানভীকে জব্দ করা এতো সহজ না।দিব্যর চোদ্দগুষ্টিকে এবার ঘোল খাইয়ে ছাড়ব।”
__________
সোহাগী চা দিতে একটু দেরি করে জন্য আশরাফ রেগে যায়।সোহাগী চা আনার পর আশরাফ সেই চা সোহাগীর গায়ে ছুড়ে মা’রে।তানভী বাড়িতে ঢুকতেই এই ঘটনা দেখে রেগে যায়।

সে দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস গরম পানি এনে আশরাফের গায়ে দেয়।আশরাফ চিল্লাতে থাকে।আশরাফের চিল্লানি শুনে সবাই নিচে নেমে আসে।

লুবনা বেগম এগিয়ে এসে বলেন,
-“আমার ছেলেটার এই অবস্থা কে করল?”

-“আমি।”

তানভীর কথাটা শুনে লুবনা রেগে গিয়ে তার দিকে তেড়ে যায়।দেলোয়ারাকে গিয়ে বলে,
-“দেখ তোমার ছেলের বউ কি করছে।নিজের চাচা শ্বশুরের গায়ে গরম পানি দিয়েছে।তুমি এর একটা বিহিত করো বড় বউ।”

দেলোয়ারা রাগী চোখে তানভীকে বলে,
-“তুমি ক্ষমা চাও।”

-“আমি ক্ষমা চাইতে পারি।কিন্তু তার আগে আশরাফ চাচাকেও সোহাগী চাচীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।কারণ উনিও চাচীর গায়ে গরম চা দিয়েছেন।”

লুবনা বেগম বলেন,
-“স্বামীর সম্পূর্ণ অধিকার আছে ইস্ত্রীর গায়ে হাত তোলার।তাই বলে তুমি আমার পোলাটারে এভাবে গরম পানি দেবে?”

-“যদি ওনার অধিকার থাকে তাহলে আমারও অধিকার আছে যে অন্যায় করে তাকে শাস্তি দেওয়ার।”

সোহাগী তানভীকে থামিয়ে বলে,
-“আমার হয়ে কিছু বলতে হবে না।আমার এসবে অভ্যাস হয়ে গেছে।”

দিব্য নিচে নেমে এসে বলে,
-“না চাচী তোমার প্রতি এতদিন অনেক অবিচার হয়েছে।আজ দুবছর হলো তুমি এই বাড়ির বউ হয়ে এসেছ।এই দুইবছরে এমন একটা দিনও যায়নি যেদিন তোমায় অত্যাচারিত হতে হয়নি।আমি এতদিন অনেক প্রতিবাদ করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি।তবে আজ সব সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়েছে।আজ হয় চাচা তোমার কাছে ক্ষমা চাইবে নাহলে আমি পুলিশ ডাকব।আজকাল নারী নির্যাতনের কিন্তু অনেক বেশি শাস্তি পেতে হয়।”

আশরাফ পুলিশের কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়।তাই সে সোহাগীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়।এরপর তানভীও আশরাফের কাছে ক্ষমা চায়।

তানভী সোহাগীকে নিয়ে চলে যায়।সোহাগীর হাতের কিছু যায়গা পু’ড়ে গিয়েছিল।সেখানে তানভী ওষুধ লাগিয়ে দেয়।

দিব্য আশরাফকে সতর্ক করে দেয় যেন সে ভবিষ্যতে সোহাগীর সাথে আর এমন না করে।

দেলোয়ারা হঠাৎ দিব্যকে টেনে নিয়ে যায়।তারপর বলে,
-“আজই গিয়ে তোর বউকে তার বাপের বাড়িতে রেখে আসবি।এই মেয়ে সংসারে থাকলে ঝামেলা হবে।”

দিব্য তার মাকে বলে,
-“ওকে তো একদিন ফিরতেই হবে কিন্তু এখন না।সবেমাত্র ওর ভালো মানুষ হওয়ার পালা শুরু হয়েছে ওকে সম্পূর্ণ ভালো মানুষে পরিণত করে তারপর বিদায় নেব।”

অন্যদিকে তানভী ভাবতে থাকে,
-“এতদিন আমার উদ্দ্যেশ্য ছিল এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া।কিন্তু এখন আমার উদ্দ্যশ্য হলো সোহাগী চাচীকে এই অত্যাচার থেকে রক্ষা করা।সোহাগী চাচীকে যতদিন না পর্যন্ত অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে পারব ততদিন এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না।”
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে