#গল্প_আজ_সৃষ্টি_সুখের_উল্লাসে
#পর্ব_২
#লেখক_দিগন্ত
তানভী দিব্যকে চ্যালেঞ্জ করে বলে,
-“তুই কি আমায় শোধরাবি আমি তোর জীবনটাই লণ্ডভণ্ড করে দেব।”
দিব্য তানভীর কথায় পাত্তা না দিয়ে সোহেলা বেগমকে জিজ্ঞাসা করে,
-“দাদী কি হয়েছিল।”
সোহেলা বেগম তখন পুরো ঘটনাটা বলেন।সব শুনে দিব্য তার পরিবারের সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“তোমাদের সব ভেবেচিন্তে তারপর কিছু করা উচিৎ ছিল।শুধু শুধু এত ঝামেলা হলো।”
দেলোয়ারা দিব্যকে সমর্থন করে বলে,
-“ঠিক বলেছিস দিব্য।আমাদের উচিৎ আছিল সব জেনে তারপর কিছু করা।তুই তোর বউরে বল যাতে সে কিছু মনে না করে।ওরে তখন ঐ অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
দিব্য তানভীর কাছে গিয়ে বলে,
-“আমার পরিবারের সবাই এই ঘটনার জন্য দুঃখিত।এবার তুমি আর দেরি না করে রান্নাঘরে চলে যাও।এই পরিবারের বউ হয়ে বসে বসে খাওয়া যাবে না।”
-“আমি কোন রান্না করবো না।”
-“তাহলে খাওয়াও কপালে জুটবে না।”
তানভী রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
-“আজ তোদের এমন খাওয়ান খাওয়াবো যে জন্মে ভুলতে পারবি না”
_________
দুপুরে সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসেছিল।তানভী আর সোহাগি মিলে সবাইকে খাবার পরিবেশন করছিল।
শাহীন মাংস খেয়ে বলে,
-“গোস্তটা তো খুব ভাল লাগছে।”
তানভী হেসে বলে,
-“জানি তো ভালো লাগবে কোনদিন তো ইদুরের মাংস খাননি।”
আব্দুল করিম সবেমাত্র মাংস মুখে দিয়েছে তানভীর কথা শুনে তার মুখ থেকে মাংস ছিটকে যায় লুবনা বেগমের মুখে।
সবাই খাবার টেবিল থেকে উঠে যেতে থাকে।তানভী মিটমিট করে হাসতে থাকে।
দিব্য তখন বলে,
-“এসব মিথ্যা বলে কোন লাভ নেই।আমি জানি এটা মুরগীর মাংস।সোহাগি চাচি সাক্ষী আছে।চাচি বলো?”
সোহাগি আমতা আমতা করে বলে,
-“জ্বি, ওটা মুরগীর মাংসই ছিল।”
আশরাফ খুব রেগে যায়।সে সোহাগির দিকে তেড়ে এসে বলে,
-“এতক্ষণ বলিস নি কেন? তোর জন্য আমাদের সবার খাওয়া নষ্ট হলো।”
দিব্য আশরাফকে থামিয়ে বলে,
-“চাচা তুমি ভুল বলছ।সব দোষ তানভীর।আর শাস্তিও তানভীকে পেতে হবে।”
-“তুই একদম আমাদের মাঝে কথা বলতে আসবি না।আমার বউকে আমি কি বলব সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার।”
-“সম্পর্কে আমার চাচা হলেও তুমি কিন্তু বয়সে আমার থেকে মাত্র ৫ বছরের বড়।তাই আমার থেকে তোমার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই খুব বেশি নয়।”
লুবনা বেগম এসে তাদের থামতে বলেন।তিনি দিব্যকে বলেন,
-“তোর বউরে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা কর।”
-“তা তো অবশ্যই হবে ছোট দাদী।”
দিব্য তানভীকে বলে সবার সামনে কান ধরে দশবার উঠবস করতে।তানভী বলে দেয়,
-“আমি করবোনা।”
তখন দিব্য টানতে টানতে তানভীকে বাড়ির বাইরে বের করে দেয়।আর বলে,
-“সহজ উপায় বললাম শুনলে না।এখন সারাদিন তোমায় বাড়ির বাইরে থাকতে হবে।এটাই তোমার শাস্তি।”
দিব্য তানভীকে বাইরে রেখেই গেট লক করে দেয়।তানভী রেগে গিয়ে গাল ফুলিয়ে হাটতে থাকে।
কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর তানভী দেখতে পায় দিপা(দিব্যর বোন) পুকুরে সাতার কাটছিল।তানভীকে দেখে দিপা বলে পুকুরে নামতে।তানভীও কোন কিছু না ভেবে পুকুরে নেমে পড়ে।
পুকুর নামতেই তানভীর পায়ে গাছের লতা আটকে যায়।তানভী সাপ সাপ বলে চিল্লাতে থাকে।মুহুর্তেই পুকুরের সবাই সাপ সাপ বলে চিল্লাতে চিল্লাতে পুকুর থেকে উঠতে থাকে।
তানভী বলতে থাকে,
-“ওরে বজ্জাত সাপরে।তোর ঘরে কি মা-বোন নেই।এভাবে আমার পা ধরে টানাটানি করছিস।আমি অভিশাপ দিলাম তোর কখনো বিয়ে হবেনা।”
দিপা তানভীর দিকে এগিয়ে এসে বলে,
-“ভাবী চলো আমার সাথে।”
-“আমি কিভাবে যাব? আমি তো মারা গেছি!”
-“তুমি কিভাবে মারা গেলে?”
-“সাপের কামড় খেয়ে।”
-“তাহলে আমার সাথে কথা বলছে কে?”
-“আমি।”
দিপা ভূত ভূত বলে পালাতে থাকে।তানভী কিছু বুঝে উঠতে না পেরে পুকুর থেকে উঠে আসে।দিপার আওয়াজ শুনে গোটা গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়।সাথে তারা কবিরাজকেও নিয়ে আসে।
কবিরাজ ভালো সুযোগ পেয়ে যায় তাবভীর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার।কবিরাজ বলে,
-“এই মেয়েকে গাছের সাথে বেধে পি/টাতে হবে।তাহলেই ভূত পালাবে।”
তানভী এবার দা নিয়ে কবিরাজের পিছু নিতে নিতে বলে,
-“আমাকে গাছে বেধে মা/রবি আজ আমি এই দা দিয়ে তোকেই মে/রে দেব।”
কবিরাজ ছুটে পালায়।তানভী তার পিছন পিছন ছুটতে থাকে।একসময় ছুটতে ছুটতে কবিরাজের লুঙ্গি খুলে পড়ে যায়।কবিরাজ এবার অবশ্য জাঙ্গিয়া পড়েছিল।সেই জাঙ্গিয়া পড়েই গোটা গ্রামে দৌড়াতে থাকে।আর সবাই তাকে দেখে হাসতে থাকে।
একসময় তানভী কবিরাজকে ধরেই ফেলে।তখনই দিব্য চলে আসে।কবিরাজ দিব্যর পিছনে লুকায়।
দিব্য তানভীর হাত ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসে।তারপর বলে,
-“আজ সারাদিন অনেক নাটক করেছ কিন্তু আর না।এখন তোমাকে আরো বেশি শাস্তি পেতে হবে।আর তোমার এবারের শাস্তি হতো আমার সাথে বাসর রাত কা/টাতে হবে।”
দিব্যর কথা শুনে তানভী রেগে গিয়ে লাফাতে থাকে।দিব্যর গালে চিমটি দিতে থাকে।আর বলে,
-“তোর সাথে তো মরে গেলেও বাসর করবোনা।”
-“এছাড়া তোমার কাছে আর কোন উপায় নেই।”
তানভী মনে মনে বলে,
-“আমার সাথে বাসর করার খুব সখ তাইনা।এবার এমন শায়েস্তা করব যে বাসর করার সখ জানালা দিয়ে উড়ে যাবে।”
_______________
রাতে দিপা এসে তানভীকে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে যায়।সাথে তার হাতে এক গ্লাস দুধ দিয়ে বলে,
-“এটা ভাইয়াকে খাইয়ে দিও।”
তানভী হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়।তানভী খুব শান্তভাবেই বসেছিল।দিব্য ঘরে আসতেই তানভী গিয়ে তাকে সালাম করে।তারপর নরম সুরে দিব্যর হাতে দুধের গ্লাস তুলে দিয়ে বলে,
-“খেয়ে নিন।”
তানভীর এরকম শান্ত ব্যবহারে দিব্যর সন্দেহ হচ্ছিল।দিব্যর মনে হতে থাকে তানভী কোন ষড়যন্ত্র করছে।দিব্য তাই দুধটা খেয়ে নিয়ে তানভীর কাছে যেতে থাকে।
হঠাৎ দিব্যর পেটে ব্যাথা শুরু হয়।পেটে হাত দিয়ে টয়লেটে চলে যায় দিব্য।আর এদিকে তানভী হাসতে হাসতে বলে,
-“আমার সাথে বাসর করবে কত শখ।এখন সারারাত হাগতে হাগতে টয়লেটের সাথেই বাসর কর।”
তানভী দুধে পেট খারাপ করার ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল।সেটা খেয়েই দিব্য বারবার টয়লেটে যাওয়া আসা করতে থাকে।
তানভী বিছানায় পায়ের উপর পা দিয়ে শুয়ে থাকে।দিব্য বুঝতে পারে তানভী কি কাণ্ডটাই না করেছে।দিব্য তানভীর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ঠাণ্ডা পানি এনে তানভীর গায়ে ছুড়ে মা’রে।
তানভী এক ঝটকায় বিছানা থেকে উঠে আসে।তারপর বলে,
-“কি ঠাণ্ডা পানি।আমার গায়ে পানি ছোড়া দেখাচ্ছি মজা।”
বলেই তানভী দিব্যর পাঞ্জাবীর কলার ধরে তাকে মা’রার চেষ্টা করে।কিন্তু টাল সামলাতে না পেরে দিব্য তানভীর উপর পড়ে যায়।
তানভী চিৎকার করতে থাকে।তানভীর চিৎকার থামানোর জন্য দিব্য তার মুখ চেপে ধরে।তারপর বলে,
-“আপনি যা করেছেন তাতে আপনাকে এর থেকেও বড় শাস্তি পেতে হবে।প্রস্তুত থাকুন।”
(চলবে)