#গল্প_আজ_সৃষ্টি_সুখের_উল্লাসে
#সূচনা_পর্ব
#লেখক_দিগন্ত
তানভী ফুলঝুরিটা তার মায়ের দিকে ছুড়ে মা/রে।তানভীর মা শেহেরা বেগমের রাগ মাথায় উঠে যায়।তিনি তানভীকে ইচ্ছেমত মা/রতে থাকেন।পাশের ঘর থেকে তানভীর বাবা তাহসান সিদ্দিকী এসে বলেন,
-“শেহেরা কি করছ? থামো! এত বড় মেয়েকে কেউ মারে নাকি?”
-“তোমার মেয়ে কি করেছে সেটা জানো?”
-“কি করেছে?”
-“তোমার আদরের মেয়ে আমার বড় আপার বাড়িতে গিয়ে মদ খেয়ে মাতলামি করেছে।আজ রোদেলাকে দেখতে এসেছিল।এই মেয়ের জন্য রোদেলার এত ভালো সম্মন্ধটা ভেস্তে গেল”
তাহসান তানভীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এসব কি সত্যি?”
-“হ্যাঁ, সত্যি”
-“কেন এসব করেছ তুমি?”
-“রোদেলার জন্যই আমার সাথে ভিকির ব্রেকআপ হয়েছে।আর ওকে আমি সুখে সংসার করতে দেব।কোনদিনও না।”
-“রোদেলা যেটা করেছে একদম ঠিক করেছে।তুমি নিজেও জানো ভিকি ভালো ছেলে ছিলনা।”
-“আমি কিচ্ছু জানিনা।আর জানতেও চাইনা।আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করব।”
তানভী আবার তার ব্যাগ থেকে একটা মদের বোতল বের করে খেতে থাকে।শেহেরা বেগম অনেক চেষ্টা করেও তানভীকে থামাতে পারেনা।
শেহেরা বেগম তার স্বামীকে বলে,
-“মেয়েটাকে রিহ্যাবে দিয়ে এসো।নাহলে মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।”
-“এসব রিহ্যাবে দিয়ে কোন কাজ হবেনা।এর আগেও রিহ্যাবে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু ও পালিয়ে এসেছিল।এবার আর রিহ্যাবে পাঠাবো না।এবার ওকে শোধরানোর জন্য আমি ওর বিয়ে দেব।”
-“তোমার কি মনে হয় ও সংসার করবে।আবার যদি পালিয়ে আসে?”
-“যাতে পালিয়ে আসতে না পারে সেই ব্যবস্থাই করব।”
আর কিছু না বলে তাহসান সিদ্দিকী সেখান থেকে চলে যায়।
__________
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই তানভী চমকে যায়।
-“এত গরম লাগছে কেন আমার? এসি কি নষ্ট হয়ে গেল?”
-“এসি নষ্ট হয়ে যায়নি।এই বাড়িতে এসি নেই, সিলিং ফ্যান আছে।”
তানভী তাকিয়ে দেখে তার সামনে দাড়িয়ে আছে সুঠাম দেহের লম্বা একটি ছেলে।তার দিকে তাকাতেই তানভী আরো অবাক হয়ে যায়।
-“দিব্য তুমি!”
-“জ্বি, আমি।”
দিব্য তানভীর গাড়ির ড্রাইভার ছিল।একমাস আগেই লেট করে আসায় তাকে কাজ থেকে বের করে দেয় তানভী।হঠাৎ দিব্যকে সামনে দেখে তানভীর মাথা গরম হয়ে যায়।সে বলে,
-“হাউ ডেয়ার ইউ? তোমাকে সেদিন এত অপমান করে তাড়িয়ে দিলাম।তবুও নির্লজ্জের মতো ফিরে এসেছ।”
-“আমি আসিনি আপনি এসেছেন আমার বাড়িতে।”
দিব্যর কথা শুনে তানভীর হুশ ফেরে।সত্যিই তো এই যায়গাটা তার অচেনা।এ কোথায় এলো সে? তানভী ভাবে দিব্য তাকে কিডন্যাপ করেছে।তাই সে চিৎকার করতে শুরু করে।তানভীর চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে ছুটে আসে তাহসান সিদ্দিকী।তিনি এসেই হুঙ্কার দিয়ে বলেন,
-“কি হচ্ছেটা কি তানভী? এটা তোমার বাপের বাড়ি না, এটা তোমার শ্বশুরবাড়ি।এখানে অন্তত অভদ্রতা করোনা।”
বাবার কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় তানভী।নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-“শ্বশুরবাড়ি মানে? তুমি কি আমার সাথে প্রাংক করছ?”
-“আমাকে কি তোমার বন্ধু মনে হয় যে আমি তোমার সাথে মজা করব? সত্যিই এটা তোমার শ্বশুরবাড়ি।কালই তো তোমার সাথে দিব্যর বিয়ে হলো।কেন মনে নেই?”
তানভী এবার ভাবতে থাকে সে বোধহয় স্বপ্ন দেখছে।নিজের হাতে চিমটি কে/টে বলে,
-“নো ওয়ে।এটা কোনভাবেই হতে পারেনা।বিয়ে তাও আবার এই দিব্যকে।ইমপসিবল।”
-“পসিবল।আমায় তো অনেক জ্বালিয়েছ।এখন অন্তত শ্বশুরবাড়িতে ভালো ভাবে থেকো।”
তানভীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাহসান সিদ্দিকী সেখান থেকে চলে যায়।তানভীর তো কোন কিছু বিশ্বাসই হচ্ছিল না।তানভী ভাবতে থাকে কাল রাতে কি হয়েছিল।
.
গতরাতে,
তানভী ঘরে শুয়ে ছিল।তখন তাহসান সিদ্দিকী তাকে এসে বলে,
-“শোন তোমার এরকম ব্যবহার অনেক সহ্য করেছি আর না।তোমার সামনে দুটি অপশন রাখছি হয় বিয়ে করো নাহয় এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।”
-“আমি বিয়ে করব।আমার ভিকিকে এনে দাও।”
-“আমি যেটা বলেছি সেটাই শেষ কথা হয় আমার পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করো আর নাহলে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।”
তানভী রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।কিন্তু বাইরে এসেই মনে পড়ে তার তো আর যাওয়ার কোন যায়গা নেই।তাই বাধ্য হয়ে আবার বাড়িতে এসে তার বাবাকে বলে,
-“ঠিক আছে।আমি করব বিয়ে।কখন করতে হবে বিয়ে?”
-“আজই।”
-“কি আজ? কিন্তু কিভাবে সম্ভব?”
-“আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।শুধু তোমার রাজি হওয়া বাকি ছিল।তুমি রাজি হয়ে গেছ এখন আর কোন সমস্যা নেই।”
তানভী তার বাবার কথা শুনতে বাধ্য হয়।এরপর বেনারসি শাড়ি পড়ে ঘোমটা টেনে বিয়ে করতে বসে পড়ে।কাজী কবুল বলতে বললে তানভী কবুল বলে দেয়।নিজের বরের মুখ পর্যন্ত দেখে না।
এরপরই ঘরে এসে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে টেরও পায়না।
……
তারপর আর কোনকিছুই তার মনে নেই।তানভী চিৎকার করে বলে ওঠে,
-“এই বিয়ে আমি মানিনা।আমার সাথে চিটিং হয়েছে।আমি তো ভেবেছিলাম বাবা কোন বড়লোক পরিবারে বিয়ে দেবে তা না করে একটা ড্রাইভারের সাথে….”
তানভী এটা বলে যেইনা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তখনই দিব্য তাকে আটকে দেয়।দিব্যর কাছে তানভীর হঠাৎ করে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সে দিব্যকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
-“ডোন্ট টাচ মি”
-“আমার কোন ইচ্ছে নেই তোমায় টাচ করার।তুমি এখন এই বাড়ির বউ।তাই তোমায় এই বাড়ির নিয়ম মেনে চলতে হবে।”
-“এই বিয়ে আমি মানিনা।তাই কোন নিয়মও আমি মানতে রাজি নই।আমি এখনই চলে যাব।”
-“তোমার বাবা বলেছে, তুমি যদি ফিরে যাও তাহলে তোমায় বাড়িতে ঢুকতে দেবে না।আর তিনি তোমার কোন দায়িত্ব নেবে না।তাই এই বাড়ির বাইরে গেলে কিন্তু তোমার আর কোন আশ্রয় থাকবেনা।”
দিব্যর কথা শুনে রেগে গিয়ে তানভী একটা ফুলদানি তুলে ভাঙতে যাবে তখনই দিব্য তাকে থামিয়ে বলে,
-“এই ফুলদানিতে খবরদার হাত দেবেন না।এই ফুলদানি বিশেষ জিনিস দিয়ে তৈরি।”
-“কি দিয়ে?”
-“গোবর দিয়ে।”
এটা শুনেই তানভী ফুলঝুরিটা ফেলে দিয়ে ছি ছি! করতে থাকে।
দিব্য ভীষণ রেগে গিয়ে বলে,
-“আমার কমলার(গরুর নাম) গোবর দিয়ে তৈরি ফুলদানিটা ভেঙে দিলে? ভালো হলো না।”
তানভী আর কোন কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখে একজন বয়স্ক মহিলা পান চিবোতে চিবোতে টিভি দেখছে।তানভী পান খে দেখে সেখান থেকে একটা পান নিয়ে খেয়ে নেয়।
বয়স্ক মহিলাটা বলে ওঠে,
-“করো কি নাত-বউ ঐ পানে জর্দা দেওয়া মাথা ধরবে যে”
তানভী তার কথায় কর্ণপাত না করে পান চিবোতে থাকে।হঠাৎ করে তানভীর মাথা ঘুরে যায়।
চোখ উলটে মাটিতে পড়ে যায় তানভী।তানভীকে হঠাৎ এভাবে দেখে চিৎকার করে দেন দিব্যর দাদী সোহেলা বেগম।তার চিৎকার শুনে দিব্যর মা দেলোয়ারা ছুটে আসে।তানভীর এই অবস্থা দেখে তিনিও ভিমড়ি খান।তিনি বলতে শুরু করেন,
-“নিশ্চয়ই এই মাইয়ারে জ্বীনে ধরছে।ও দিব্যর বাপ কোথায় আছ তুমি? যাও গিয়ে কবিরাজকে ডেকে আনো জ্বীন তাড়াতে হবে।”
দেলোয়ারার চিৎকার শুনে তার স্বামী শাহীন ছুটে আসেন এবং বলে,
-“কি হইছে দিব্যর মা।এত চিৎকার করছ কিসের লইগা?”
-“দিব্যর বউরে জ্বীনে ধরছে গো।যাও গিয়ে কবিরাজ ডেকে আনো।”
দেলোয়ারা কথা শুনে শাহীন ছুটে চলে যায়।ধীরে ধীরে শাহীনের চাচা আব্দুল করিম, চাচী লুবনা বেগম,ছোট বোন দিপা, চাচাত ভাই আশরাফ, আশরাফের স্ত্রী সোহাগী সবাই এসে তানভীকে এই অবস্থায় দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে।
লুবনা বেগম বলেন,
-“এই মাইয়া জ্বীন ধরা লইগাই ওর বাপ এত জলদি দিব্যর সাথে বিয়া করাইয়া দিল।তাইতো কই এত বড়লোকের মেয়েকে এই বাড়িতে কেন বিয়ে দিচ্ছে।”
সোহাগী শিক্ষিত ছিল।সে বলে,
-“না আম্মা, আমার মনে হয় অন্য কোন সমস্যা হয়েছে।”
-“তুমি চুপ থাকো মাইয়া।দুই পাতা বই কি পড়ে নিছ নিজেকে বিদ্যাসাগর ভাবতে শুরু করেছ।”
সোহাগী কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু আশরাফের রাগী চোখ দেখে আর কিছু বলেনা।
শাহীন কবিরাজ নিয়ে উপস্থিত হয়।তখন তানভীরও জ্ঞান ফেরে।
কবিরাজ তানভীকে জিজ্ঞাসা করে,
-“বল তুই কয় নাম্বার জ্বীনের বাচ্চা।জ্বীনেদের শায়েস্তা করতে জানি আমি।”
তানভী কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না।তার উপর মাথা ব্যাথায় সে অস্থির হয়ে যাচ্ছিল।সেই সময় এরকম প্রশ্ন শুনে সে বলে ওঠে,
-“এই কু/ত্তার বাচ্চা।চুপ থাক।”
কবিরাজ বলে,
-“ও তুই কুত্তা জ্বীনের বাচ্চা।এই জ্বীন তাড়ানোর উপায় আমার জানা আছে।জান গিয়ে দশটা ঝাল মরিচ আর পাঁচটা রসুন নিয়ে আসুন।”
তার কথা শুনে দেলোয়ারা বেগম দৌড়ে গিয়ে ঝাল মরিচ আর রসুন নিয়ে আসেন।
কবিরাজ তানভীকে তা খাওয়ানোর চেষ্টা করলে তানভী রেগে গিয়ে ঝাল মরিচ নিয়ে তার চোখে ঘষে দেয় এবং রসুনগুলো তার নাকে ঢুকিয়ে দেয়।ব্যাথায় আর যন্ত্রণায় কবিরাজ চিৎকার করতে থাকে।
সবাই ভাবে এই মেয়ের উপর অনেক ক্ষমতাধর জ্বীন আছর করেছে।
কবিরাজ বলে,
-“এই জ্বীনকে ঝাঁটাপেটা করে তাড়াতে হবে।”
কবিরাজের কথা শুনে তানভী বলে,
-“আমাকে তুই ঝাঁটাপেটা করবি।দেখাচ্ছি মজা।”
তানভী একটা টান মেড়ে কবিরাজের লুঙ্গি খুলে দেয়।সবাই চোখ বন্ধ করে নেয়।কবিরাজ নিজের মান-সম্মান হাতে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
তখন দিব্য নিচে নেমে এসে বলে,
-“এসব হচ্ছেটা কি?”
তানভী গিয়ে দিব্যর চুল টেনে বলে,
-“তোকে আজ আমি মে/রেই ফেলব।আমাকে বাড়িতে এনে অপমান করছিস।”
দিব্যকে তানভীকে দূরে ঠেলে বলে,
-“আজ থেকে তোমাকে ভালো মানুষ করার আমার শিক্ষা শুরু।আমি তোমার বাবাকে কথা দিয়েছি তোমাকে মানুষের মতো মানুষ করব।সেই কথা আমি রাখবোই।”
(চলবে)