আজ শৈলীর বিয়ে পর্ব-০৪

0
67

#আজ_শৈলীর_বিয়ে
#পর্বঃ_৪
#সায়েদা_সানা

_______________
কাবিননামায় সাইন করার পরেও চেয়ে রইলো পাশের নামের দিকে। মনে মনে আওড়ে নিলো বার কয়েক। ‘অঙ্কন জোবায়ের’। নামটা ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত আওড়ে গেল যতক্ষণ সেই কাগজটি তার সামনে ছিল। যতক্ষণ নামটি তার চোখে ভাসছিল। এরপর ডান হাত মুঠো করে সামনে এনে মেলে ধরে সে। মাঝ বরাবর বরের নামের প্রথম অক্ষরটি দেখে সে। এই জায়গায় রক্তিমের নাম লিখা হয়েছিল রাতে। চোখ দু’টো বুজে আসে। গড়ায় এক ফোঁটা নোনাজল। মস্তিষ্ক স্মরণ করে রাতের শেষ ভাগের কিঞ্চিত পূর্বের সময়টা।

নিজের হাতের রক্তিমের নামের অক্ষরটি দেখে শৈলী। পরপর একটুখানি হেসে আরেকটি মেহেদির কোন তুলে নেয় হাতে। খুব সুন্দর ভাবে ‘R’ অক্ষরটির একপাশে গাঢ় করে দেয়। বাঁকানো মাঝের জায়গা কভার হয়ে ‘R’ হয়ে যায় ‘A’. মেয়েটি স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রয় শৈলীর কাজটি দেখে। তার নজর বলে দেয় সেখানে রয়েছে অবাকতার বিশাল ছাপ সাথে একটি প্রশ্ন৷ এই যে শৈলী যেই কাজটি করলো তার অর্থ কী!

স্মৃতিপুস্তক আবার খুলে যায়। সেই সময়ে পৃষ্ঠাগুলো আরেকবার তাজা হয়ে ভাসে শৈলীর নেত্র সমীপে।

_______________
রক্তিমের যাওয়ার পরে কতকিছুই না ঘটলো এর মাঝে সবটাই ছিল ভালো আর ভালো। কোথাও খারাপটা ছুঁয়ে দিতে পারেনি। না ওদের দুজনকে আর না ওদের পরিবারকে। রক্তিমের মা যে কিনা শৈলীকে মানতে নারাজ ছিলেন তিনি সবথেকে বেশি আপন করে নিলেন মেয়েটিকে। আর শৈলী সে তো মহা খুশি। তার কাছে রক্তিম মানে এক আকাশ সমান খুশি। তার ভালোথাকার কারণ। সেই রক্তিমের পরিবার তো তার খুব ভালোবাসার জায়গায় স্থান পাবেই। তাই না! হয়েছিলও তাই। শৈলী তার বাবা মায়ের মতো করেই রক্তিমে বাবা মাকে দেখা শুরু করেছিল। ওর কাছে নিজের বাবা মায়ের চেয়েও বেশি প্রায়রিটিই তারা পেয়েছিলেন।

এসবের মাঝে দিনের অধিক সময়টা যেত রক্তিমের সাথে। রক্তিমের কলের অপেক্ষা করে কাটতো তার প্রতিটি প্রহর। নাওয় খাওয় বাদ দিয়ে, রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়ে, সবকিছু ভুলে রক্তিমকে প্রায়োরিটি দেওয়া শুরু করেছিল সে। এর জন্য কত যে বকা খেয়েছিল কলেজের ম্যামের কাছে।

তার কলেজে অনেক টিচার থাকলেও শৈলী পড়াকু হবার সুবাদে সবচেয়ে বেশি মন জয় করেছিল প্রফেসর সালমা সুলতানার। তাই তো শৈলীর অমনোযোগীতা টের পেয়ে সবার আগে শৈলীকে ডেকেছিলেন তিনি। কত বকাঝকাই না করেছিলেন। বুঝিয়েছিলেন সময়টা একবার গেলে আর কখনো ফিরে আসবে না। কখনো না। সেদিন প্রফেসর সালমার একটা কথাও কানে তোলেনি মেয়েটা। সে যে বাস্তবের বাইরে অবস্থান করছিল। কল্পনায় তার সুখ সুখ স্বপ্নে রক্তিমকে নিয়ে ডুবে ছিল। বাস্তবতার ধারে কাছে ঘেঁষতে হলে তাকে ছাড়তে হতো কল্পলোকে সাজানো রক্তিম রাজ্যকে। যা শৈলীর কাছে একপ্রকার অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। এই তো, এখানেই ছিল শৈলীর ভুল। আবার বলা যায় শৈলীর বাস্তব শিক্ষা সফরের শুরু।

_______________
“কেমন আছে আমার শৈলী?”

“একটুও ভালো না।”

“আমায় মিস করছে বুঝি!”

“মজা করো না রক্তিম। আমি সিরিয়াস।”

“ওকে বাবা ওকে। মজা করছি না। কি হয়েছে খুলে বলো তো?”

“সকাল দশটায় আমার পরীক্ষা আর একটা ম্যাথও সলভ হচ্ছে না আনার দ্বারা।”

“টেস্টের সময় তো এমন বলো নি।”

“হ্যা কারণ সেই সময়ের গুলো খুব ইজি ছিল। আর এই গুলো খুব টাফ।”

“আগে দেখোনি?”

“না। এগুলো বোর্ড প্রশ্ন। টুকটাক কিছু ম্যাথ করে এইগুলো নিয়ে বসেছিলাম দেখি পারছি না কিছুই৷ এখন আমি কি করব রক্তিম!”

“কি করবে মান! তুমি কি করবে তা আমি কি করে জানব শৈলী। সারাবছর হেলায় পার করে এখন জানতে চায় কি করবে, নিজের সমস্যার সমাধান নিজে করো, কোথায় ভেবেছিলাম তোমার সাথে কথা বলে একটু রিফ্রেশমেন্ট হবে সেখানে এসব আদিখ্যেতা শুরু করলে তুমি।”

বিরক্ত হয়ে রক্তিম ফোন রেখে দেয়৷ শৈলী তখনো বিষ্ময় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এই সেই রক্তিম যে শৈলীর সাথে ঘণ্টার পর কথা না হলে পাগল হয়ে যেত। যার জন্য বাধ্য হয়ে নিজের অবসর সময়ের পরেও আরো অনেকটা সময় শৈলী নিজের থেকে চুরি করে বরাদ্দ রাখতো। এই কি সেই রক্তিম! শুরুতে যখন কথা বলা শুরু করলো তখন তো কত আবেগ নিয়ে ভালোবেসে বলছিল আর রাখার সময় এই এতো কথা! শৈলী যে আঘাত পেল সে বুঝেনি?

সারাটা রাত শৈলীর বাজেভাবে কাটলো। না পড়া হলো আর না ঘুম। পরীক্ষার খাতায় তেমন কিছুই লিখতে পারলো না। যতবার মাথা খাটাতে যায় পড়ার সময়ের স্মৃতিগুলো উধাও হয়ে রক্তিমের কথাগুলো ভাসে। কানের কাছে ভাসে। শৈলীর কলম আর চলতে চায় না। অসাড় হয়ে আসে শরীর।

_______________
“উনি এমন করেছিলেন আপনার সাথে!”

“অবাক হবার কিছু নেই আপু। মানুষ বদলায়, বদলায় মানুষের ভালোবাসাও।”

নিরবতায় কাটে কিছু প্রহর। তারপর মেয়েটি জানার আগ্রহ প্রকাশ করে।

“পরীক্ষার পরে কি হয়েছিল?”

শৈলী হাসে। চোখে জল, ঠোঁটে হাসি, নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম নিয়ে কপালে বুড়ো আঙুল স্লাইড করে বলে, “পরীক্ষার পরে ফেইলিওরের ট্যাগ লেগেছিল এখানে। ইগো হার্ট হয়েছিল রক্তিম নামের ব্যক্তির। ছিন্ন করেছিল সম্পর্ক।”

“তাহলে বিয়ে কার সাথে হচ্ছে আপু? আর ওই ভাইয়াই বা এসেছিলেন কেন? আপনিই বা কেন তার হাত থেকে মেহেদি পরতে গেলেন?”

“আস্তে আস্তে। এতো প্রশ্ন তাও আবার একসাথে! দিচ্ছি তো উত্তর। বলব তো সব। শোনাব আমার গল্পটা। উহু আমাদের গল্পটা। শেষ না করে উঠছি না আজ। আমার যে বলতে হবে। বলতেই হবে।”

শৈলী বসে ছিল বিছার একটা সাইডে। মেঝেছে। সে পিছনের দিকে ঝুকে মাথাটা এলিয়ে দেয় বিছানায়। মেয়েটি অমনোযোগী হয় তার কাছে। তার যে আগ্রহ জেগেছে বাকি গল্পটা জানার।

চলমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে