#আজ_শৈলীর_বিয়ে
#পর্ব_৩
#সায়েদা_সানা
_____________
আমাদের প্রেমটা খুব সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছিলো। দু’জনে লুকিয়ে লুকিয়ে একে অপরের জন্য সময় বের কথা বলা। কখনো আপুর শ্বশুর বাড়ির দাওয়াতে লুকিয়ে একে অপরকে দেখা এইভাবে চলছিল। এরমাঝে একদিন হঠাৎ করে আমার ইচ্ছে হলো দেখা করব ওর সাথে। সেবার অনেকদিন দেখা হয়নি কিনা! তাই। রক্তিম রাজি ছিল না। কোনো মতেই ওকে রাজি করাতে পারছিলাম না জানেন। ও বললো শৈলী এইভাবে মিথ্যে বলে বাইরে দেখা করাটা খুব রিস্কের হয়ে যাবে। যদি কেউ জেনে যায়! তারচে বরং অপেক্ষা করি আমরা। সুযোগ আসবেই কখনো না কখনো।
আমি শুনলাম কিন্তু মানলাম না। জেদ ধরলাম, কাঁদলাম। আমার কান্নার সামনে ঝুঁকতে হয়েছিল ছেলেটাকে। সে এলো এবং আমাদের দেখা হবার কিছু পল, হয়তো পাঁচ মিনিটেরও কম সময় হবে; আমরা দেখলাম ওর বাবা দাঁড়িয়ে সামনে। ব্যস আর কী? জানাজানি হলো দুই বাড়িতে। রক্তিমের মা সবটা চাপিয়ে দিলেন আমার আপুর ঘাড়ে। বললেন আপু এসবের জন্য দায়ী। কথাটা ফুপি মেনে নিতে পারেননি। আর ফুপি থেকে বাবা, বাবা থেকে সমস্ত রাগ এসে পড়ে আমার উপর। পরিবারের সকলের আদরের এই আমি সেই দিনের সেই কয়েক ঘণ্টায় হয়ে গেলাম সবার থেকে দূরে।
_____________
“ভুলে যাও যা কিছু ছিল। তোমার আর ওই ছেলের মাঝে কিছুই হবার নয়।”
শৈলীর বাবা এই বাক্য আওড়ে বেরিয়ে গেলেন শৈলীর জন্য বরাদ্দ ঘর ছেড়ে। রইলেন ওর মা। মেয়ের মাথায় আলত হাত বুলিয়ে বললেন,
“ভুলে যা মা। সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যা। তোর বাবাকে ভুল বুঝিস না। শুধুমাত্র তুই খুশি হবি বলেই উনি গিয়েছিলেন রক্তিমের বাবা মায়ের কাছে। ওরা তোর বাবাকে আর ফুপিকে যা নয় তা শুনিয়ে দিয়েছেন। আর এরপরে আবার তোর ফুপি ওনাকে শুনিয়ে গেল।”
শৈলী চুপ। ওকে চুপ থাকতে দেখে আবার বললেন, “শোন আমার কথা, রক্তিম যদি তোকে চায় আমি নিজে তোর বাবাকে বোঝাব কিন্তু এখন নয়। বয়সটাই বা কত তোর? মাত্র ষোলো। এখন তোর পড়াশোনা করার বয়স। পড়াশোনায় মনোযোগী হ। তাড়াছাড়া ওরা বলছে এ তোর আবেগ মাত্র। তুই কিছুটা সময় নে। ভাব আসলে এটা কী? প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে এসব সাধারণ কোনো বিষয় নয়। এটার মাঝে যেমন একে অপরের প্রতি যত্ন থাকে তেমনই থাকে সম্মান। দুইজন মানুষের একে অপরের জন্য সম্মান। তাদের পরিবারের একে অপরের প্রতি সম্মান। সেখানে তোর বাবা অসাম্মানিত হয়েই ফিরেছে। আবার যদি প্রয়োজন হয় তোর খুশির জন্য ঝুঁকতেও রাজি মানুষটা।
আমার কথা না হয় বাদই দিলাম। তোর দেখা এতোবছরের তোর বাবা ঠিক কেমন। তোর কথা ভেবে কি কি করতে পারে সেসব ভেবেই না হয় অপেক্ষা কর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রূপে আসুক। হু?”
শৈলী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। এরপর কেটে যায় কয়েকটি মাস। হঠাৎ করে শৈলীদের দাওয়াত পড়ে ফুপাতো বোনের শ্বশুর বাড়িতে। শৈলী যেতে চায়নি কিন্তু যেতে বাধ্য হয়। সকলে যাচ্ছে ও যাবে না। এই নিয়ে অনেক তর্ক, মতবাদের পরেই ও তৈরি হয় যাওয়ার জন্য। গিয়ে সারপ্রাইজড হয়ে যায় ও।
_____________
মনমরা হয়ে একটা জায়গায় একা বসে শৈলী। তার পাশে এসে কেউ বসে। টের পেলেও কে বলেছে তা জানার আগ্রহ প্রকাশ করে না মেয়েটা।
“কেমন আছো?”
পরিচিত গলা। ফিরে দেখে শৈলী। রক্তিমের মা বসে আছে তার পাশে। তড়িঘড়ি করে দাঁড়িয়ে সালাম জানায় তাকে। শৈলীর অবস্থা দেখে স্ফিত হাসেন তিনি। পরপর ওর হাত ধরে আবার পাশে বসিয়ে দেন কিন্তু হাতটা আর ছাড়েন না। অন্য হাতে থাকা একটা চিকন স্বর্ণের আংটি পরিয়ে দেন তাকে। শৈলীর বিষ্ময় তখন সপ্তম আসমান ছুঁয়েছে। পরে অবশ্য জানতে পারে রক্তিমের জেদের কাছে হার মেনেই আজকের এই দিনে তারা একত্রিত হয়েছেন। এমনকি শৈলীর অগোচরে সপ্তাহ আগে তাদের একটা মিটিংও হয়েছিল। এসব জানার পরে শৈলী খোঁজে তার বাবাকে। দেখতেও পায়। পেয়ে দেখতে থাকে তাকে। আর দেখে বাবার খুশি খুশি মুখখান। যা তার সমস্ত দ্বিধা দূর করে দেয় নিমেষে। খুশি ছলকে পড়ে শৈলীর ঠোঁটে।
“তারপর?”
মেয়েটির কথায় আবারও স্মৃতি পুস্তক বন্ধ হয়। শৈলী চায় তার দিকে। বলে,
“সেদিনই আমি জনতে পারি রক্তিম দেশের বাইরে যাচ্ছে। আমার বয়স ষোলো বছর দশ মাস ছিল সেই সময়। সকলের মতে আমি ছোট তাই তখনি বিয়ের কথা ভাবেননি তারা। ঠিক হয় রক্তিম ফিরে এলে বিয়ে হবে আমাদের।”
“কখন ফিরলেন উনি?”
“এইতো মাস খানেক আগেই।”
কথা শেষ করে শৈলী খেয়াল করে ডান হাতের মেহেদি দেওয়া শেষ হয়ে গেছে। আর সেই ডিজাইনের মাঝখানে বড় করে ইংরেজি অক্ষর ‘R’ জ্বলজ্বল করছে।”
শৈলীকে অপলক এক দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি হাসে একটুখানি। হেসে বলে,
“নামটা তো আমি জেনেছিই তাই আর আপনার গল্পের মাঝে হস্তক্ষেপ করিনি। নিজেই লিখে দিয়েছি। কেমন হয়েছে?”
“খুব সুন্দর। ঠিক যেমন আমি কল্পনায় নিজের হাতে ওর নামের অক্ষর দেখেছিলাম তেমন।
______________
মাঝখানে কাঁচা ফুলের পর্দা। একপাশে বর অন্যপাশে কনে। কাজি সাহেব বসে আছেন কনের সাইডে তার সামনে। তার হাতে থাকা কাবিননামা এগিয়ে দিলেন শৈলীর দিকে। শৈলীর ফুপাতো বোন সেটি হাতে নিয়ে বোনের হাতে তুলে দেয়। সাথে দেয় কলম খানা। বিয়ে পড়ানো শেষ হয়েছে ইতমধ্যে। এখন শুধু সাইনটুকু বাকি। সই করার আগে বরের নামের জায়গায় চোখ বুলিয়ে নেয় একবার। সেখানে স্পষ্ট লিখা আছে একটি নাম। ‘অঙ্কন জোবায়ের।’
চলমান।