আজ শৈলীর বিয়ে পর্ব-০২

0
45

#আজ_শৈলীর_বিয়ে
#পর্বঃ_২
#সায়েদা_সানা

_____________
মেহেদি আর্টিস্টের হাতে শৈলীর বা হাত। খুব দক্ষতা সম্পন্ন মানুষ উনি। ডিজাইন দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। এই হাতে ব্রাইড আঁকা হবে। সেটাই করছেন তিনি। একেকটা ডিটেইলস খুব সুন্দরভাবে ফুঁটে উঠছে তার কাজে। শৈলীর মনোযোগ ছিল সেই ডিজাইনে তখন তার ধ্যান আকর্ষণ করে নেয় আর্টিস্ট আপুর একটি কথা।

“ভাইয়া খুব ভালোবাসেন আপনাকে।”

শৈলী চমকে তাকায়। দেখতে পায় আর্টিস্ট আপুর মুখে হাসি হাসি ভাব। তিনি চোখ তুলে শৈলীকে দেখেন তারপর আবার কাজে লেগে পড়েন। কথা কিন্তু বন্ধ হয় না, চলতে থাকে।

“কিছু মনে করবেন না আপু। আপনার ব্যক্তিগত বিষয় এইভাবে বলছি বলে। আসলে ভাইয়াকে দেখেছি আমি ব্যালকনি থেকে যখন লাফ দিলেন সেই সময়। আমি তখন আপনার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।”

“কী বলছেন! আপুও তো ছিল সাথে। দেখে ফেলেনি তো!”

শৈলী আতঙ্কিত। বুঝতে পারে মেয়েটি। সে তাকে আস্বস্ত করে বলে দেয়।

“চিন্তা করবেন না। উনি দেখেননি কিছু। আমাকে রেখে উনি নিচে গিয়েছিলেন, কেউ ডেকেছিল উনাকে।”

“ওহ।”

“কালই তো বিয়ে তাই না?”

“উহু।”

“তাহলে!”

মেয়েটির কপালে ভাঁজ পড়ে। যা দেখে হাসে শৈলী। বলে,
“তারিখ পাল্টেছে আপু। সেই হিসেবে বিয়েটা আজ।”

এই কথার পরে দু’জনেই হেসে ওঠে। মেয়েটি বলে,
“কিছু ঘণ্টার বিষয়। ভাইয়া দেখছি আপনাকে চোখে হারাচ্ছেন।”

“হয়তো।”

আনমনে বলে ওঠে শৈলী৷ ডান হাতটা এগিয়ে দেখায় সে। মেহেদির দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক। বলে,
“ওর ইচ্ছে ছিল আমাদের বিয়ের মেহেদি সবার আগে ওই পরাবে। এই দেখুন ছুঁইয়ে দিয়ে গেল।”

“এ মা। আপু এইভাবে তো ডিজাইন নষ্ট হয়ে যাবে। কিছু মনে না করলে আমি এটা মুছে দিই। এইভাবেও ভাইয়ার ইচ্ছে পূরণ হয়েই গেছে।”

মেয়েটিকে অপেক্ষা করতে হলো না। নিজেই এক টুকরো টিস্যু নিয়ে মেহেদিটুকু মুছে ফেলল শৈলী।

“মেহেদি ওয়ালা ভাইয়ার নাম কি আপু?”

“রক্তিম।”

“নামটা সুন্দর আপু।”

“ধন্যবাদ।”

______________
এখনো ডান হাত এবং উভয় হাতের উল্টো পিঠে মেহেদি লাগানো বাকি অথচ ওদের দু’জনের চোখেই ঘুম। শৈলীকে ঢুলুঢুলু করতে দেখে মেয়েটির মায়া হলো। সে তো আর ইচ্ছে করে এমন পরিস্থিতি বানায়নি। তার পরিবারের এক সদস্য হঠাৎ হসপিটালাইজড হওয়ায় জানিয়েছিল আসতে পারবে না, অন্য আর্টিস্টের ব্যবস্থা করে দেবে সে। কিন্তু ইমার্জেন্সি কেউই রাজি না হওয়ায় তাকেই আসতে হবে বুঝতে পেরে কিছুটা সময় চেয়ে নিয়েছিল সে। দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দিন পার করে রাত দশটায় গিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। এই যে এখন এই কাজটা শেষ হলে আবারও ছুঁটবে হসপিটালে।

“দুঃখিত আপু। আমার কথায় আমি অটল থাকতে পারিনি বলে আপনার ঘুম বিসর্জন দিতে হচ্ছে।”

“সমস্যা না। আপনি আপনার কাজ করুন।”

ডান হাতটায় মেহেদি চড়ানো শুরু করেছে মেয়েটি। ধীরে ধীরে রক্তিমের দেওয়া রঙটুকু ঢেকে গেল তার মাঝে। সেটা দেখে শৈলী বলল,

“একটা গল্প শুনবেন আপু? একটা প্রেমের গল্প। আমাদের গল্প। রক্তিম ও শৈলীর গল্প।”

মেয়েটি দেখে শৈলীকে। শৈলী একটুখানি হাসে তার চেহারার অভিব্যক্তি দেখে। অপেক্ষা করে না উত্তরের। শোনাতে শুরু করে গল্প। ওদের গল্প। ওর আর রক্তিমের গল্প।

_____________
রক্তিমের সাথে শৈলীর দেখা হয় ওর ফুফাতো বোনের শ্বশুর বাড়িতে। সম্পর্কে রক্তিম শৈলীর বোনের মামাতো দেওর। বউভাত অনুষ্ঠানে ভিড়ের মাঝে ধাক্কা লাগে ওদের। ছেলেটা ব্যস্ত ছিল, শৈলীকে না দেখেই স্যরি বলে দিয়ে চলে গিয়েছিল। ফিরেও চায়নি ওর দিকে। শৈলী ঠিক দেখতে কেমন সেটাও দেখেনি। কিন্তু শৈলী ওকে দেখেছিল। হ্যাংলা পাতলা ফর্সা দেখতে একটা ছেলে যার পরনের কাপড় ঘামে ভেজা, কপালে বিরক্তির রেখা। হয়তো ভাইয়ের বিয়েতে খেটেছিল খুব। কে জানে! জানার আগ্রহও দেখায়নি শৈলী। সেদিনকার মতো সেখানেই সমাপ্তি ঘটেছিল গল্পের।

এরপর কয়েক মাস পরের কথা। ফুপির বাসায় দাওয়াত ছিল ওদের। সেখানে দেখা হয় আবার। শৈলী নিজের মতো সবার সাথে ব্যস্ত থাকে। তার সেই ব্যস্ততা ছিল কারো নজর কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কেন না, শৈলী ব্যস্ত ছিল হাসিতে, মেতে ছিল গল্পে। তার সেই চোখের পলক ফেলা, অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করা আবার লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেওয়া। ভুল কিছু বলে ফেলায় চোখ ঢেকে নেওয়া আবার আঙুলের ফাঁক গলিয়ে সকলের মুখোভঙ্গি পরখ করা। ষোড়শীর সব কিছুই যেন কারো মনে ধরেছিল সেদিন। আর সেই কেওটা ছিল রক্তিম।

শৈলীর ফুপাতো বোনের কাছে জানতে চেয়েছিল, “মেয়েটা কে ভাবি?”

“কোন মেয়েটা?”

রক্তিম দেখিয়ে দেয় শৈলীকে। তারপর জানতে পারে শৈলী তার ভাবির কাজিন বোন। এইতো এই ছিল তাদের গল্পের পরবর্তী ধাপের আগের গল্প।

“আর তারপর?”

মেয়েটির কথায় স্মৃতিপুষ্কত বন্ধ হয়। ঘোর কাটে শৈলীর। বলে, “তারপর। তারপর প্রেম হয়েছিল। দু’জনে পাগলের মতো মজেছিলাম সেই প্রেমে।”

“তাই তো আজকের এই দিন।”

“উহু।”

“মানে?”

“আমরা সেই পাগল প্রেমিক-প্রেমিকা যেদিন ধরা খেলাম পরিবারের কাছে সেদিন দু’জনেরই পরিবার ছিল নারাজ। কেউই সম্পর্কটা মেনে নেয়নি।”

“তাহলে!

“আর কি পরিবারের মান ভাঙিয়ে লম্বা একটা সফর পার করে আজকের এই দিন।”

“বাহ! চমৎকার তো।”

“হু, চমৎকার বটে।”

হাসে শৈলী। আবারো ডুব দেয় সেই স্মৃতিপুস্তকে। পাতা উল্টে পৌছে যায় সেই দিন গুলোয় যেদিনগুলো কঠিন ছিল। যেন ক্ষরা ছিল ভূমিতে এরপর পরিবারের কিছু শীতল বাক্যের বর্ষণে কেটেছিল সেই ক্ষরা।

চলমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে