আজ শৈলীর বিয়ে পর্ব-০১

0
34

#আজ_শৈলীর_বিয়ে
#সূচনা_পর্ব
#সায়েদা_সানা

বিয়ে মানেই সেই বাড়ির কোনো কোনায় ব্যস্ততা, কোনো কোনায় আমেজ, কোনো কোনে শোকের ছায়া। ঠিক তেমনই শৈলীর বাড়িতে চলছে আয়োজন। বাড়ির আদরের দুলালি, সকল সদস্যের প্রিয়, ভালোবাসার শৈলীর বিয়ে বলে কথা। চলুন ঘুরে আসা যাক প্রতিটি কোনায় কোনায়। দেখা যাক বিয়ের আগের দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ের কিছু দৃশ্য।

বিকেল তখন সাড়ে চারটা। শৈলীর দুই চাচাতো ভাই ব্যস্ত বাড়ির আলোকসজ্জা নিয়ে। এতোটাই ব্যস্ত যে দুপুরের খাবারটুকুও খায়নি তারা। এখন কি আর খিদেকে প্রশ্রয় দিলে চলবে! ওদের আদরের ছোট্ট বোনটি শৈলী। কাজিনদের মধ্যে সকলের ছোট সে। তার বিয়েতে পাত্র পক্ষকে কোনো প্রকার অভিযোগের সুযোগ দেবে না এই পন করেছে ভাইয়েরা মিলে। দু’জন এখানে ব্যস্ত রইলো আরো তিন জনের কথা, তারা গিয়েছে শৈলীর হলুদ সন্ধ্যার কারুকার্য খচিত বোর্ডটি আনতে। সেটি না এলে হলুদ সন্ধ্যার ডেকোরেশন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বিয়ের এক টুকরো আনন্দ।

শৈলীর মা চাচীরা ব্যস্ত রান্না ঘরের দিকে। হলুদ সন্ধ্যার পায়েস, ফল, কেক সেগুলো সাজাতে ব্যস্ত তারা। এরপর শুরু হবে ছুলে রাখা আদা, রসুন পেস্ট করার কাজ। পিষতে হবে বাদাম সহ আরো নানান মশলা। ইতিমধ্যেই পেঁয়াজ গুলো ছুলে রাখার কাজে ব্যস্ত শৈলীর ফুফু। কেটে রাখা যাবে না তাই ছুলে কাজ এগিয়ে রাখছেন আজই।

শৈলীর বাবা- ফুফা- চাচারা ব্যস্ত বিয়ের প্যান্ডেল নিয়ে। বরের আসন নিয়ে। এসবের মাঝে একমাত্র নিরব এক কোনে দাঁড়িয়ে থাকা শৈলী। সকলের ব্যস্ততা দেখছে সে। উপভোগ করছে ব্যস্ততার মাঝে সকলের ঠোটে লেগে থাকা সেই খুশিটুকুন।

___________
রাত তখন বারোটা বাইশ হলুদ পর্ব শেষে ঘরে বসে আছে শৈলী। গায়ে কাঁচা হলুদের গন্ধ মাখা হলেও হাতে পরা হয়নি মেহেদি। রাঙানো হয়নি ওই মানুষটার নামে নিজের হাতদুখানা। ঘুম এসে ভীড় জমিয়েছে চোখে। শৈলী ব্যস্ত নিজেকে জাগিয়ে রাখতে। মেহেদি পরবে সে। তার বোনেরা পারে সুন্দর মেহেদি পরাতে কিন্তু হবু শাশুড়ি মায়ের আদেশ তার পাঠানো মেহেদি, তার ঠিক করা আর্টিস্ট এবং তার ঠিক করে দেওয়া ডিজাইন চড়ানো হবে শৈলীর হাতে। যার মাঝে জ্বল জ্বল করবে তার একমাত্র পুত্রের নামখানা। এক মায়ের শখ বলে কথা, তাই তো শৈলি এখনো অপেক্ষা করছে সেই আর্টিস্ট এর। শৈলী শুনেছিল মেয়েটি বিকেলে আসবে কিন্তু হঠাৎ বিপদের সম্মুখীন হয়ে সময় চেয়ে নিয়েছে সে।

হবু শাশুড়ির আবদারের কথা ভাবতে ভাবতে অপেক্ষায় ডুবে থাকা শৈলীর কানে আসে একটা শব্দ। শব্দটা আসছে ওর ঘরের বেলকনি হতে। অলস ভঙ্গিতে হেঁটে যায় সেইদিকে। ঘুমুঘুমু চোখ দুটো যখন মেলে তাকায় তখন সামনে ভেসে ওঠে চেনা এক অবয়ব। যার দর্শন মাত্র ঘুম পালিয়ে যায় বহু মাইল দূরে। ভীত কণ্ঠে শুধায়,

“তুমি এখানে?”

কথা বলে না সেই ব্যক্তি। এগিয়ে আসে, দাঁড়ায় শৈলীর মুখোমুখি। ওর ডান হাতটা নিজের দিকে টেনে তাতে ছুঁইয়ে দেয় একটু খানি মেহেদি। যার দিকে নিবন্ধিত হয় শৈলীর স্থির দৃষ্টি। স্মৃতিরা ভীড় জমায়। তাদের মাঝে থেকে একটি দৃশ্য ঢেলে সামনে ভাসে শৈলীর মনে। মস্তিষ্কে গুঞ্জন তুলে কিছু বাক্য বার বার আসতে থাকে সামনে। ভাসতে থাকে মনে।

“আজ সবার আগে মেহেদি নিয়ে বসেছ ঠিক আছে কিন্তু আমাদের যেদিন বিয়ে হবে সেদিন কনে শৈলীর হাতে প্রথম মেহেদি ছুঁয়ে দেব আমি।”

“সেদিন কেউ তোমাকে আমার কাছে আসতে দেবে?”

“দেবে না জানি। আমি লুকিয়ে আসব তোমার কাছে। শত বাধা পেরিয়ে শুধু তোমার হাতে মেহেদি ছোঁয়াতে আসব আমি। তুমি কিন্তু অপেক্ষা করবে আমার জন্য।”

স্মৃতির পাতা বন্ধ হতেই বন্ধ চোখের পাতা মেলে ধরলো শৈলী। শুনো কানের কাছে ফিসফিসে আওয়াজ,

“ভালোবাসি আমার শৈলী। বধূ বেশী শৈলীকে দেখার অপেক্ষায়।”

আশেপাশে চাইলো শৈলী। কেউ নেয় সেখানে। নজর বুলিয়ে দেখলো নিজের ডান হাত খানা। মেহেদি লেগে আছে সেই হাতে। যা দেখে চোখ ছাপিয়ে জল গড়ালো। বুকে হাতটা চেপে ধরে নিজেকে শুধালো,

“আমি কাঁদছি কেন? আমার তো কাঁদার কথা নয়।”

উত্তর মেলে না। তার আগেই কেউ ডাকে তাকে। মেহেদি আর্টিস্ট এসেছে তার ঘরে। সাথে আছে তার ফুফাতো বোন।

চলমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে