#আজল
#পর্ব-বাইশ
৩৯.
ফুয়াদের বাবা আর মা সমুদ্রের ধারে একটা রিলাক্সিঙ বেঞ্চে বসে নিজের ছেলে মেয়ে দু’টো কে দেখছিলেন। তখনই ফুয়াদের মা বলে উঠলো-
“প্রিয়কে আজকাল একটু বেশিই হাসিখুশি লাগে,দেখছো। চেহারা যেন ফুটে ফুটে বের হয়।”
শুনে একটু মুচকি হাসে আজমল সাহেব।
“প্রিয় কিছু বলছে?”
“কি বলবে?”
“এই যে, এতো খুশি কেন?”
“হুম, আমি জিজ্ঞেস করছিলাম। বললো, তোমার জামাই ভালো হয়ে গেছে। আমাকে এখন অনেক কেয়ার করে। দোয়া কইরো আম্মা।”
খুশিতে চোখ মুছে ফুয়াদের মা।
“ছেলেরে নিয়া চিন্তা হয় গো? কেমন জানি মনে হয়, দু’জনের মধ্যে কিছু হইছে?দেখলে কেমন জানি ছাড়া ছাড়া লাগে?”
“আরে, এতো চিন্তা কইরো নাতো। ফুয়াদ ঠান্ডা মাথার ছেলে ওকে নিয়ে আমার চিন্তা নাই।”
“আগে তো খালি ছেলেকে মারতা কথায় কথায়। এখন ছেলে ভালো?”
“শাসন টা করছিলাম বইলাই তো এখন ভরসা করতে পারি। ওদের মধ্যে যদি কোনো সমস্যা থাকেও তবুও আমার বিশ্বাস দুইজনে মিলে ঠিক করে নিবে।”
“হুম, সেইটাই যেন হয় গো?”
“সেই রকমই হবে। তুমি এতো চিন্তা কইরো না। আচ্ছা, তোমাকে একটা কথা বলি?”
“বলো না?”
“তোমার কি আমাকে নিয়ে কোন অভিযোগ আছে? তুমি কি সুখি আমার সাথে?”
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ফুয়াদের মা। কি বলে মানুষটা। যখন বিয়ে হচ্ছিল না, একের পর এক বিয়ে ভেঙে যাচ্ছিলো তখন এই লোকটা বিয়ে করেছিলো তাকে। হ্যা সংসারে উনার কথাই শেষ কথা ছিলো কিন্তু অবজ্ঞা তো করেনি কখনো। তাই কখনো লোকটাকেও অবজ্ঞা করার কথা মনেই আসেনি। লোকটার যে স্বভাব টাই এমন। সুখে দুখে,কষ্টে আনন্দে ত্রিশ বছর একসাথে কাটিয়ে দিলেন। সময় কিভাবে গেলো টেরই পেলেন না। তিনি লজ্জিত হয়ে জবাব দিলেন-
“আলহামদুলিল্লাহ, তোমার সাথে অনেক সুখের একটা জীবন পার করছি। আর তাছাড়া ছেলেমেয়ে সুখে আছে এর বেশী আর কি চাই?”
আজমল সাহেব বউয়ের দিকে তাকিয়ে বেশ তৃপ্তির একটা হাসি দিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে দূরে সাগরের পানে চেয়ে রইলো।
৪০.
রাতে হোটেলে ফিরে সবাই রাত বারোটায় প্রিয়র ম্যারেজ এনিভারসারির কেক কাটার জন্য তৈরী হচ্ছিল। ফুয়াদ ওর লাগেজ থেকে নিজের পোশাক বের করছিলো আর আড়চোখে সাঁচিকে দেখছিলো। সাঁচি কোনো কথা বলছে না ওর সাথে। মেয়েটার মনে কি চলছে?এখনো কেন এরকম অসহযোগিতা মুলক আচরন করছে? ফুয়াদ কাশি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করছে-
“সাঁচি, তুমি কি আমার দেওয়া শাড়ী গুলো এনেছিলে?”
সাঁচি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো ফুয়াদের দিকে-
“হ্যা,এনেছি তো?”
“তাহলে প্লিজ আজকে তুমি অফ হোয়াইট জামদানী শাড়ীটা পড়বে? প্লিজ! এটা তোমার পচ্ছন্দের রং, আমি জানি। ”
সাঁচি কিছু না বলে শাড়িটা নিয়ে বাথরুমে যেতে চাচ্ছিলো।
“কোথায় যাও?”
“ওয়াশরুমে। শাড়ি পরবো?”
“এখানে পড়ো। আমি বাইরে যাচ্ছি।”
ফুয়াদ দরজা চাপিয়ে চলে যায়। সাঁচি শাড়িটা পড়ে নেয়, আয়নায় নিজেকে দেখে। বেশ সুন্দর লাগছে। সাঁচি চুলগুলো সাট করে আঁচরে পিঠে ছড়িয়ে দিলো। চোখে একটু হালকা কাজল দিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক দিতেই যাবে তখনই ফুয়াদ দরজায় নক করলো। সাঁচি দড়জাটা খুলে দাঁড়ায় একপাশে। ফুয়াদ ওকে দেখে থমকে দাঁড়ায়। ইস কি সুন্দর লাগছে সাঁচিকে? একেবারে সাদা পরি যেন! মনে হয় যেন নজর টিকা লাগিয়ে দিই! ভাবতে ভাবতে সাঁচির চোখের কোনা থেকে একটু কাজল নিয়ে ঘারে লাগিয়ে দিলো। সাঁচি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ফুয়াদের দিকে। ফুয়াদ মৃদু হেসে বললো-
“এতো সুন্দর লাগছ যে ভয় হচ্ছে পাছে কেউ নজর না লাগায়? তাই নজর টিকা দিয়ে দিলাম।”
সাঁচি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। প্রশংসা কার না ভালো লাগে?
“কিন্তু বউ, চুল খোলা রেখেছো কেন? রাতের বেলা চুল খোলা রাখতে নেই। বেনী অথবা হাত খোঁপা করে নাও একটা।”
বলে ফুয়াদ নিজের কাপড় পাল্টাতে চলে যায়। ফিরে এসে আরেক প্রস্থ অবাক হয়। ইস মেয়েটা এমন করে পাগল বানাতে চাচ্ছে কেন ওকে? সেই যে বিয়ের পর পর সাঁচি এরকম করে সেজে থাকতো আর ফুয়াদ না দেখার ভান করতো। আজ যেন সেইসব দিন ফিরে আসছে। কিন্তু এখন তো ইগনোর করা যাচ্ছে না! এতো বড় গলার ব্লাউজ কে পড়তে বলেছে ওকে? মেয়েটা নিশ্চয়ই ওকে পরীক্ষা করছে? সেই সব সময়ের শোধ তুলছে নিশ্চয়ই! সাঁচি হাত খোপা করে শেষ মুহুর্তে এসে একটু হাল্কা করে লিপস্টিক দিচ্ছিলো। ফুয়াদ সেটা হাত থেকে কেড়ে নিলো। সাঁচি দু হাত ঝেরে প্রশ্ন করলো-
“কি হলো?”
“এটা দেওয়া লাগবে না। একটু লিপজেল দিয়ে নাও তাতেই হবে। আর ব্লাউজের গলা এতো বড় কেন? সবাইতো তোমার ঐ খোলা পিঠের দিতে তাকিয়ে থাকবে এখন। এসব সৌন্দর্য দেখার অধিকার তো শুধু আমার হওয়া উচিত, অন্য কেউ কেন দেখবে?”
বলেই শাড়ির আঁচল টা তুলে পিঠ ঢেকে দিলো। চট করে কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলো।
“চলো। সবাই নিচে চলে গেছে, আমরাই লেট।”
” হুম ঢং হচ্ছে এখন? ফরহেড কিস, আঁচল দিয়ে পিঠ ঢেকে দেয়া, খুব ঢং হচ্ছে এখন। এতোদিন তো ফিরেও চাইতো না। তোমার জিনিস অন্য কেউ কেন দেখবে?”
মনে মনে বলছে আর ভেংচি কাটছে ফুয়াদকে।
” খুব এসেছে আমার পত্নী ব্রতা পতি!”
বিরবির করে সাঁচি।
“কি হলো, এসো? আবার আঁচল সরিয়েছো? এবার সরলে কিন্তু ভালো হবে না? আর এর পর ব্লাউজ বানাবে গলা একেবারে ছোট দেবে বুঝলে?”
সাঁচি কোনে জবাব দেয় না ফুয়াদকে। নিচে এসে দেখে ওদের জন্যই ওয়েট করছে সবাই। একটু লজ্জা পেলো সাঁচি। সবাই কি না কি ভাবছে? ছি!
ওদের দেখা মাত্রই প্রিয়তা বলে উঠলো-
“দিস ইজ নট ডান, ভাবি। তুমি আবার লেট। কেক কাঁটতে পারছি না। এসো তাড়াতাড়ি। ”
হাত ধরে নিয়ে গেলো ওকে।
কেক কাঁটার পর্ব শেষ করে হালকা খাওয়া দাওয়া করে সবাই উপরে চলে গেলো। সাঁচি অবাক হয়ে দেখছে ওর বাবা মা যেন এবার বেড়াতে এসে নতুন জোড়া হয়ে গেছে। একজন আরেকজনকে ছাড়া নড়ছেই না। মনেহচ্ছে ওনাদের নতুন বিয়ে আর হানিমুন পিরিয়ড চলছে। বেচারা ওর ভাইবোন দুটো প্রাচী আর রঞ্জু বাবা মায়ের কাছে পাত্তা পাচ্ছে না। দেখে সাঁচির হাসি পেলো। ও প্রাচী আর রন্জুকে ডাক দিতে যাচ্ছিলো তখনই কেউ ওর মুখ চাপা দিলো পিছন দিক থেকে। ফিসফিস করলো-
“আমি ফুয়াদ। কোনো আওয়াজ করো না। আমার সাথে এসো তো। ফুয়াদ সাঁচির হাত টেনে একপাশে সরিয়ে আনলো ওকে।
“চলো বিচে হাঁটতে যাবো!”
“এতো রাতে? ”
“হুম।”
“কিন্তু আমার ঘুম পাচ্ছে যে?”
ফুয়াদ কিছু না বলে ওকে টেনে নিয়ে গেলো। হোটেলের সাথে লাগোয়া বিচটুকু হোটেলের নিজস্ব… কাউকে দেখা গেলো না। সাগরের ঢেউয়ের আওয়াজ আর তার সাথে বহমান ঠান্ডা বাতাস, শরীরে কাঁপন ধরে যাচ্ছে। সাঁচি শিউরে শিউরে উঠছে। হঠাৎ পেছন থেকে ফুয়াদ ওকে জড়িয়ে ধরলো, পিঠে ফাঁকা জায়গাটাতে নাক ঘষছে, ছোট ছোট চুমু দিচ্ছে। সাঁচি সরে যেতে চাইলো,ফুয়াদ শক্ত করে দু’হাতে পেচিয়ে ধরলো সাঁচিকে-
“মানা করেছিলাম না আঁচল যেন না সরে? তবুও কথা শোনোনি, এখন সাজা দিচ্ছি। চুপচাপ নাও, বেশি নড়াচড়া করলে বেশি সাজা পাবে।”
“প্লিজ ছাড়ুন। এমন করলে আমি কিন্তু ভীষন রাগ করবো?”
সাঁচি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে।
“ইচ্ছে করছে না বউ! একদম ইচ্ছে করছে না ছাড়তে। তুমি দিন দিন এতো সুন্দর হচ্ছো কেন বলোতো? আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ। ”
বলতে বলতে ফুয়াদ ফটাফট আরো কয়েকটা চুমু দিয়ে আঁচল দিয়ে সাঁচিকে ঢেকে দিয়ে চুপচাপ দাড়ায় ওর সাথে-
“রাগ করলে? কিছু বলো?”
“কি বলবো? আমার আজকাল কথা বলতে ভালো লাগে না। বরং আপনি বলুন আমি শুনি।”
“শুনবে? সত্যি শুনবে তো?”
“হুম, বলুন।”
“আমাকে কি মাফ করা যায় না, সাঁচি? আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি, তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি, তোমার মন ভেঙেছি! কিন্তু আমি তো মানুষ সাঁচি! ফেরেশতা না যে কোনো ভুল হবে না আমার। হয়ে গেছে ভুল, আর তারজন্য আমি সরিও তো বলেছি? এই যে গত একটা মাস আমি তোমার মন জয় করার জন্য যা কিছু করেছি তার কিছুই কি তোমার মন ছুয়ে যায় নি? মন থেকে আমাকে একটুও কি ভাবোনি? মানলাম আমি তোমাকে নয় মাস কষ্ট দিয়েছি, তার বদলে তুমিও কি আমাকে নয় মাসই কষ্ট দেবে, সাঁচি? আমাকে আর একটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না?”
সাঁচি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না সাঁচি। ফুয়াদ আবার বললো-
“ছোটর থেকেই আমি মানুষটা এমন৷ আমি ভালোবাসা, রাগ কিংবা ঘৃনা কোনোকিছুরই ঠিকঠাক প্রকাশ করতে পারি না। সেটা কি আমার দোষ বলো? পৃথিবীতে সব মানুষ কি এক রকম হয়? আমি না হয় এতোদিন তোমায় ভালোবাসিনি কিন্তু এখন তো বাসি? তুমি কি একটুও বোঝো না? সাঁচি বলো না? প্লিজ কিছু বলো না?”
ফুয়াদ সাঁচির দুহাত জড়িয়ে ধরে। সাঁচি ফুয়াদের চোখের দিকে তাকালো। ওর চোখে পানি চিকচিক করছে। যে কোন সময় সেই পানি গাল বেয়ে পড়বে। সাঁচির খারাপ লাগলো একটু। প্রিয় মানুষের চোখে পানি! এটা কোনো ভাবেই সহ্য হচ্ছে না সাঁচির। পুরুষ মানুষ কাঁদলে ভালো লাগে না মোটেও।
“প্লিজ কাঁদবেন না! এটা আমার মোটেও ভালো লাগবে না যে কেউ আমার জন্য কাঁদছে। ”
ফুয়াদ চোখের পানিটুকু হাত দিয়ে মুছে নিলো।
“এসো না ঐ খানে বসি। একটু মন দিয়ে আমার কথা শুনো। ”
“চলুন, বসি।”
সাঁচির খারাপ লাগছিলো ফুয়াদের জন্য তাই সে না করলো না। ফুয়াদ কথা বলছে-
“তোমাকে একটা উদাহরন দেই। যদিও আমাদের মনের ক্ষেত্রে এমনটা ভাবা ঠিক না তবুও তুমি বুঝবে আমি কি বলতে চাইছি।”
“বলুন, শুনছি।”
“ধরো একটা গ্লাস পানিতে পরিপূর্ণ, এখন কি ঐ গ্লাসে নতুন করে আর পানি ঢালা যাবে?”
ফুয়াদ প্রশ্ন ছুড়ে দেয় সাঁচির দিকে।
“এটা আবার কেমন কথা হলো? যেটা আগে থেকেই পানিতে পূর্ণ সেটাতে কিভাবে পানি ঢালা যাবে?”
“তাহলে কি করতে হবে?”
“গ্লাসে পানি ঢালতে হলে অবশ্যই আগে গ্লাস টা খালি করতে হবে। তারপর নতুন করে গ্লাসটাতে…. ”
“রাইট! নতুন করে পানি পূর্ণ করতে হবে, তাইতো? এখন তোমার যদি তেষ্টা না পায় তাহলে কি করবে? মানে ধরো, তোমার সামনে একটা পানি পূর্ণ গ্লাস রাখা আছে, কিন্তু তোমার তেষ্টা নেই,তাহলে…”
“সিম্পল, তেষ্টা না পেলে পানি খাবো না, পানি না খেলে গ্লাস ফাঁকা হবে না আর গ্লাস ফাঁকা না হলে নতুন করে গ্লাসে পানিও ঢালতে পারবে না। তাই তো ব্যাপারটা?”
সাঁচি মাথা নাড়ে।
“আমি তোমাকে ঠিক এই কথাটাই বোঝাতে চাইছি। এখন আমার মনটাকে তুমি ঐ পানিপূর্ণ গ্লাসের সাথে তুলনা করো, যেটা কারো ভালোবাসা কিংবা বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে পূর্ন ছিলো। ওখানে আমি কিভাবে তোমাকে জায়গা দিতাম বলোতো?”
সাঁচি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে মাথা নিচু করে, বুঝতে পারছে ফুয়াদ কি বলতে চায়।
“তোমাকে পুরো ব্যাপারটা যখন বলতে পারলাম, বিশ্বাস করো খুব হালকা লাগছিলো নিজেকে। তোমার উপর নির্ভরতা বাড়ছিলো। তোমার জন্য তৃষ্ণা বাড়ছিলো। যখন বিদেশে ছিলাম তখন রেহনুমা আস্তে আস্তে ধুসর হতে শুরু করেছিলো। তখন কেবল তোমাকেই মনে পড়তো কারনে অকারনে। আমি ঠিক করেছিলাম যে,এবার দেশে ফিরে তোমার সাথে দুরত্বটা শেষ করবো। কিন্তু দেশে ফিরে তোমাকে কেমন যেন নিস্পৃহ পেলাম।আমার এই একটা স্বভাব, আমি কাউকে জোর করতে পারি না। তোমার সাথেও পারলাম না। হয়তো তখনও একটা কিন্তু রয়ে গেছিলো মনে, যার কারনে তোমায় জোর করিনি। যেটা পরবর্তীতে তুমি দূর করে দিয়েছো। রেহনুমার সাথে দেখা হওয়াটা জরুরী ছিলো বোধহয়। ও আমার সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব দূর করে দিয়েছিলো। আমার যে আজল বা অতীত আমাকে পিছু টানছিলো, শেষ পর্যন্ত সেটাকে আমি ত্যাগ করতে পারলাম। সেও তো তোমারই কারনে! এখন আমার মনটা পুরোপুরি খালি আছ, ঠিক সেই গ্লাসটার মতো। এখন আমি আবার নতুন করে তৃষ্ণার্ত। তুমি কি আমার এই মনটাকে নতুন করে ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করতে চাও,সাঁচি? আমাকেও কি নতুন করে ভালোবাসার সুযোগ দেবে আরেকবার?”
আবেগপূর্ণ চোখে কথাগুলো বলে সাঁচির দিকে তাকিয়ে আছে ফুয়াদ। শেষের কথাগুলো বলার সময় গলাটা ভীষন রকম কাঁপছিলো ফুয়াদের। সাঁচি কি বলবে ভেবে পায়না। মেনে নেবে সে? নাকি সেও ফুয়াদের মতো সময় গড়াতে দেবে? এইরকম মূহুর্ত কতো কল্পনা করেছে সাঁচি বিয়ের পর? ঠিক সে রকম একটা মূহুর্ত, বাস্তব! বিশ্বাস হয় না যেন? অন্যসময় হলে মনে হয় সেও ভেসে যেত ফুয়াদের সাথে। কিন্তু এখন? মানুষের মন যে কতটা বিচিত্র তা কি কেউ জানে? আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়ে গেলে খুব সমস্যা! এ দেয়াল টপকানো যায় না সহজে? সে যেন চাইলেও আগের সাঁচি হতে পারছে না? কি করবে? নিজের অপারগতায় নিজের ই কান্না পায় সাঁচির! তেষ্টা পায় না কেন ওর? কেঁদে ভেসে যায় সাঁচি। ফুয়াদ ভেবে নেয় ‘নিরবতা সম্মতির লক্ষন’। সে সাঁচিকে বুকে জড়িয়ে নেয়।মাথায়, চুলে, পিঠে হাত বুলিয়ে নির্ভরতা জাগাতে চায়।আর সাঁচি অনেকদিনের তৃষ্ণার্ত পাখির ছানাটা, ভেসে জেতে জেতে, ডুবে যেতে যেতে খরকুটোর আশ্রয় নিতে চায়! ফুয়াদের বাহুডোরে তার পুরুষালি বলিষ্ঠ বুকে আশ্রয় নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে উত্তর দেয় ,
“আমাকে একটু সময় দাও? আমার আত্মসম্মান এর দেয়ালটা ভাঙতে একটু সময় দাও, প্লিজ। আমি চাইছি তোমাকে ভালোবাসতে, তোমার ভালোবাসা গ্রহন করতে কিন্তু পারছি না। আমি কি করবো বলোতো?”
ফুয়াদের হাত থেমে যায়, সাঁচিকে একটু সামনে এনে ওর মুখের দিকে তাকায়, মুখ নিচু করে আছে মেয়েটা, কান্না চাপার চেষ্টায় ঠোঁটদুটো কাঁপছে তিরতির করে। ফুয়াদ আবারও গভীর মমতায় ওকে বুকে টেনে নিলো। মেয়েটার মাথাটা জোর করে ওর বুকে চেপে ধরলো –
“পাগলী, কোনে চাপ নেই, তুমি সময় নাও। শুধু এই খালি বুকে মাথা রেখে এটাকে পূর্ণ করে আমাকে শান্তি দাও। বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি একা থাকতে থাকতে। আপাতত এতটুকুই চাই তোমার কাছে। এতটুকু তো দিতে পারবে নাকি?”
সাঁচি মাথা নাড়ে। দু’হাতে আকরে ধরে ফুয়াদকে। ওর চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে ফুয়াদের বুক। যেন এই জলই ঝর্নাধারা হয়ে শীতল পরশ দিচ্ছে ফুয়াদকে…..
চলবে—–
©Farhana_Yesmin