আজল পর্ব-২১

0
567

#আজল
#পর্ব-একুশ

৩৭.

বাপের বাড়িতে প্রায় মাসখানেক কাটিয়ে আজ নিজে বাসায় এসেছে সাঁচি। আসার ইচ্ছে ছিলো না যদিও কিন্তু ফুয়াদকে কথা দিয়ে ফেলেছে তাই বাধ্য হয়ে আসতে হলো। ফুয়াদের কাছে এতো তাড়াতাড়ি মাথা নোয়াতে ইচ্ছে হচ্ছে না সাঁচির। যতই ভালোবাসুক ও ফুয়াদকে, তবুও সেটা নিজের আত্মসম্মান এর উর্ধে নয়। যতোটুকু আত্মসম্মান চুর্নবিচুর্ন হয়েছে তা আগে জোড়া লাগতে হবে তবেই আবার সবকিছু ভাবা যাবে। সাঁচি আজকাল এসব নিয়ে খুব ভাবে। কোনো সমাধান খুঁজে পায় না। এরমধ্যেই নিজে নিজে উদ্দোগি হয়ে দেশের বাইরে কয়েকটা ভার্সিটিতে এপ্লাই করেছে। যদি হয়ে যায় তবে চলে যাবে। কাউকে কিছু জানায়নি অবশ্য! জানালে কে কি ভাববে সেটা নিয়েও ভয় হয়। এমনিতেই বাবা মা গতদিন ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছে, ফুয়াদের সাথে ওর কোন প্রবলেম চলছে কিনা। ও কোনোরকমে বুঝ দিয়ে সরে এসেছে। এরপর এরকম কিছু শুনলে তারা নিশ্চয়ই হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে না? আফটার অল ওদের এরেন্জ ম্যারেজ। তাই সাঁচি ভয়ে ভয়ে থাকে, কেউ যেন কিছু না বোঝে!

সাঁচিকে আসতে দেখে ওর শাশুড়ী মা ভীষণ খুশি হলো।
“আসছো মা? আমি খুব খুশি হইছি। তোমাকে ছাড়া বাড়িটা একেবারে ফাঁকা ফাঁকা লাগতেছিলো। এখন তুমি চলে আসছো এবার দেখো চাঁদের হাট লাগতেছে। ”
“জ্বী মা।”
“আচ্ছা, যাও। আগে ফ্রেশ হও তারপর কথা বলবোনে।”
সাঁচি মাথা নাড়িয়ে চলে আসে। শাশুড়ী কে আজ একটু বেশিই উৎফুল্ল মনে হলো। সত্যি হয়তো ও আসাতে খুশি হয়েছে! রুমে ঢুকতেই সাঁচির মনটা একটু উদাস হলো। কতোদিন পর এই রুমটাকে দেখলো? কতশত স্মৃতি এই রুমে জমা আছে। বিয়ের শুরুতে এটা একটা স্বপ্নপূরী ছিলো ওর কাছে আর এখন? এখন ঠিক কি বোঝে না সাঁচি! প্রথম অনুভূতিগুলো নষ্ট হয়ে গেলে সবকিছু জীর্ন আর মলিন হয়ে যায় মনে হয়। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে লাগেজের চেন খুললো সাঁচি।

এক এক করে নিজের কাপড়গুলো আলমিরা তে তুলছিলো সাঁচি। সে সময় নজরে এলো প্যাকেটগুলো। একবার ভাবলো দেখবে না। ফুয়াদের জিনিস ওর হাতানো উচিত নয়। পরক্ষনেই সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করলো। সবগুলো প্যাকেট নিয়ে বিছানায় এসে বসলো। প্রত্যেকটা প্যাকেটে একটা করে শাড়ী। সাঁচি খুব কৌতুহল নিয়ে সোনালী রঙের শাড়িটা খুলতেই ভেতর থেকে চিরকুটটা বের হলো। তাতে লিখা-
“আমাদের সবথেকে সুন্দর দিনগুলো
আজও আমরা পাইনি
মধুরতম যে কথা আমি বলতে চাই
সে কথা আজও আমি বলিনি।”
যেদিন আমি কথাটা বলবো সেদিন যেন পরনে এই শাড়ীটি থাকে।
মুখে এক ধরনের খুশির হাসি ফুটে উঠলো সাঁচির। সে দ্বিগুন কৌতুহল নিয়ে দ্বিতীয় প্যাকেটটা খুললো। সেটাতে একটা অফ হোয়াইট জামদানী শাড়ি। ভাজ খুলতেই চিরকুট বের হলো-
“হাত বাড়িয়ে ছুই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুই।
কোনো একদিন তোমার মন ছোয়ার অপেক্ষায়। ”
চিরকুট গুলে আবার যথাস্হানে রেখে দিলো সাঁচি। বাকি প্যাকেট দুটোও খুলে দেখলে, একটাতে সবুজ আর একটাতে নীল রঙের শাড়ী। প্রত্যেকটা রংই সাঁচির প্রিয়। ঐ দুটোর চিরকুট আর খুললো না। ভাবলো যেদিন পড়বে সেদিন খুলে দেখবে। যদিও মন কন্ট্রোল করতে ভীষণ কষ্ট হলো ওর। সাঁচির ঠোঁটের কোনে একটা মন ভালো করা মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো। ফুয়াদ ওর জন্য এই শাড়ীগুলো কিনেছে সেটা ভেবেই ওর মন ভালো হয়ে গেলো। ও মনের আনন্দে গুনগুন করে বাকী কাপড়গুলো আলমিরাতে তুলতে লাগলো।

ফুয়াদ ও আজ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলো। সাঁচি তখনও আলমিরায় ওর কাপড়গুলো গুছাচ্ছিলো। রুমে ঢুকেই ফুয়াদ পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলো-
“কখন আসলে? ”
“এই তো কিছুক্ষণ। আপনি আজ এতো তাড়াতাড়ি? ”
” চলে আসলাম। বউ, কাপড় তুলো না বরং নতুন করে কাপড় গুছিয়ে নাও তো?”
“কেন?”
“আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি আজ রাতে। সবাই মিলে?”
“মানে?”
“তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে আগে বলিনি। তোমার ফ্যামিলি, আমার ফ্যামিলি, তানভীরের ফ্যামিলি সবাই যাচ্ছি। একটা বড় গাড়ি নিয়ে, বুঝলে?”
“কই, মা বাবা তো আমাকে কিছু বললো না?”
“আমি মানা করেছিলাম তো, তাই।”
সাঁচির কাঁধে থুতনি রেখে কথা বলছে ফুয়াদ। কথাগুলো বলার সময় ফুয়াদের নিঃশ্বাস বাড়ি খাচ্ছিলো সাঁচির গলায়,ঘারে। সে নিঃশ্বাসের স্পর্শে সাঁচি শিউরে উঠলো। ফুয়াদকে সরিয়ে দিতে চাইলো-
“ও এইজন্যই আমাকে বাসায় আনার এতো পায়তারা? ”
“হুম। কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বলো তো?”
“দেখি, সরেন! কাজ করছি তো?”
সাঁচি ফুয়াদকে সরাতে চায়। ফুয়াদ সরলো না-
” এইবার আমরা হানিমুনটা সেরে ফেলবো, কি বলো? গতবার তো কেবল ঘুরে ফিরে চলে চলে এসেছি?”
ফুয়াদ কি বলতে চাইছে তা বুঝতে পেরেই মুখ, চোখ গরম হয়ে গেলো সাঁচির। ফুয়াদকে সুযোগ দেয়ার কথা বলেছে সাঁচি কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি? নাহ৷ সম্ভব না। আরো সময় চাই ওর। নয় মাসের অপমান এতো দ্রত ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। যে ব্যাপারটা ফুয়াদ বাসর রাতেই বলতে পারতো সেটা বলতে নয়টা মাস লাগিয়েছে, এতোগুলো দিন ওকে কষ্ট দিয়েছে এই ব্যাপারগুলো হজম করতে পারে না সাঁচি। মনের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে ওর। আবার ও এও জানে কোন ধরনের হার্ড ডিসিশন নেয়া ওর পক্ষে সম্ভব না। আরো একটা ছোট বোন আর ভাই আছে ওর। আর তাছাড়া বাবা মা ব্যাপারগুলো বুঝবে কিনা কে জানে? জামাইতো তাদের কাছে ভালো মানুষই। এই কয়েকটা দিন ফুয়াদ ওর যথেষ্ট যত্ন করেছে। ওর সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ওর সাথেই ছিলো সবসময়। তারপর গত কিছুদিন সাঁচির মন জয়ের, মান ভাঙানোর জন্য কম কিছু করেনি ফুয়াদ। তবুও সবকিছু যেন সাঁচির কাছে মেকি মেকি লাগে। মনেহয় জোর করে করছে সবকিছু, মন থেকে না। যে মানুষ টা এতগুলো বছর তার প্রাক্তনকে মনে রেখে জীবনে সামনে আগাতে পারেনি সে কিভাবে এতো সহজে সবকিছু মেনে নিচ্ছে! সাঁচির মনের খটকা যেন যায় না। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না ফুয়াদকে।
“বউ, কি ভাবো?”
ফুয়াদের ডাকে সম্বিত ফেরে সাঁচির।
“কিছুনা। আপনি কি সরবেন? সবকিছু গোছাতে হবে তো নাকি?”
সাঁচির রুক্ষস্বরে ফুয়াদ একটু দূরে সরে যায়।
“তোমার কি কোন কারনে মন খারাপ? ”
“নাহ। প্লিজ, বিরক্ত করবেন না তো!”
“আচ্ছা বাবা আর বিরক্ত করবো না।”
বলে যেতে চেয়েও ঘুরে আবার আসে সাঁচির কাছে।
“তোমার জন্য শাড়ী কিনেছিলাম। দেখেছো? পচ্ছন্দ হয়েছে তোমার?”
সাঁচি কোনো জবাব দিলো না। একমনে কাপড় গোছাতে লাগলো। ফুয়াদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওখান থেকে সরে এলো। ফুয়াদ জানে, সাঁচির মনের ঘরে ঢুকতে আরো অনেক সময় লাগবে এখন। যে দরজা কেবলই বন্ধ হয়েছে সে দরজা সহসাই খুলবে না। তবুও ও হাল ছাড়বে না, চেষ্টা করে যাবে।

রাত দশটা নাগাদ গাড়িতে ওঠার জন্য নিচে নামলো সাঁচি। ওর পড়নে একটা সাদামাটা কালো রঙের সুতির শাড়ী। শাওয়ার নেওয়ার কারনে চুলগুলো ভেজা তখনো, মুখে স্নিগ্ধতা খেলে যাচ্ছে। ফুয়াদ কিছুক্ষণ সাঁচির দিকে তাকিয়ে ছিলো হা হয়ে। নরমাল কালো শাড়ীতে উইথআউট মেকআপ কাউকে এতো সুন্দর লাগে? পাশে দাড়ানো তানভীর ফুয়াদকে গুতো দেয় –
“ভাইয়া,দেখার অনেক সময় পাওয়া যাবে। আপাতত মুখ বন্ধ করে গাড়িতে উঠুন।”
ফুয়াদ লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। মাথা চুলকে অন্য দিকে ব্যস্ত হওয়ার ভান করে।

আর ওদিকে সাঁচি ওর বাবা,মা,বোন প্রাচি আর ভাই রন্জুকে দেখে অবাক। ও যখন আজ বাসা থেকে আসলো তখনও এরা কিছুই জানালো না ওকে। আর এখন দেখে মনে হচ্ছে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না। ওকে চোখেই দেখছে না? সাঁচির খুব রাগ হলো ওদের উপর। নিজের বাবা মা হয়ে এমন করলো? ওকে আগে থেকে জানালে কি হতো? ফুয়াদ বলতে মানা করেছিলো? তাই আর বলেনি। মেয়ের চেয়ে এখন জামাই আপন হয়েছে ওনাদের কাছে। অভিমানে ও কারো সাথে কোন কথা বললো না। সাঁচি সামনের দিকে একটা সিটে বসতেই ফুয়াদ ওকে টেনে পিছনে নিয়ে গেলো। সেখানে প্রিয়তা আর ওর বড় তানভীরও বসে আছে। ফুয়াদ সাঁচিকে ফিসফিস করে বলে-
“আমরা নতুন জোড়া, একটু রোমান্স টোমান্স করবো, সামনে বসলে সবাই দেখতে পাবে। পেছনে বসাই ভালো, কি বলো?”
বলে চোখ মেরে ছিলো সাঁচিকে। বিরক্ত লাগলেও সাঁচি আর কিছু বলেনি। ফুয়াদ পাশে বসতে বসতে আবার কানের কাছে ফিসফিস করে-
“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, সাঁচি। এই মুহুর্তে তোমাকে একেবারে আদরে আদরে মেরে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে যে? কি করবো বলো তো?”
ফুয়াদের কথা শুনে সাঁচির শরীর জুড়ে কম্পনের ঝড় বয়ে গেলো। কিন্তু সে তা ফুয়াদকে বুঝতে না দিয়ে সিটে বসে কানে হেডফোন গুঁজে ছিলো। আর ফুয়াদ পাশের সিটে বসে ওকে সমানে গুতিয়ে যাচ্ছিলো।

রাত গভীর হলে বাসের বাতিগুলো যখন বন্ধ হয়ে গেলো ফুয়াদের জালানি আরো বাড়লো। সে কিছুক্ষণ পর পর চুপচাপ হঠাৎ হঠাৎ টুপ করে একটা করে চুমু দিয়ে যাচ্ছিলো সাঁচির গালে। জানে বাবা মায়ের সামনে কিছু বলতে পারবো না সাঁচি তাই সুযোগ নিচ্ছে ফুয়াদ।

কিছুক্ষণ ফুয়াদ আরো একটু সাহসী হলো। সে সাচির শাড়ীর ফাঁক গলে পেটে হাত দিলো। সাঁচি সে হাত সরিয়ে দিতেই ফুয়াদ আবার দেয়। এবার সে সাঁচির হাত দুটো তার এক হাত দিয়ে ধরে রাখে যাতে সাঁচি বাঁধা দিতে না পারে। ফুয়াদের অন্য হাতটি ঘুরে বেড়াচ্ছে সাচির পেটময়। ফুয়াদের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে সাঁচি। হাত ছাড়াতে মোচরা মুচরি করছে। শেষে রাগী দৃষ্টিতে ফুয়াদের দিকে তাকাতেই ফুয়াদ চট করে সাঁচির ঠোঁটে একটা চুমু দিয়ে দেয়। বেশ লম্বা একটা চুমু। আলো আধারির মাঝে ফুয়াদ যখন সাঁচির মুখ থেকে ওর মুখ সরালো দেখলো সাঁচি কাঁদছে।
“সরি! আর করবো না।”
মন খারাপ করে ফুয়াদ সাঁচিকে ছেড়ে দেয়। একটু দূরে যেয়ে বসে। ওর কারনে সাঁচি কাঁদলো? কিন্তু ও তো কষ্ট দিতে চায়না সাঁচিকে? সাঁচিকে মানানোর জন্যই তো এতো কিছু? মনটা বড্ড ছটফট করে ফুয়াদের। সারারাস্তা আর বিরক্ত করেনি সাঁচিকে। শুধু প্রয়োজনীয় কথাটা বলেছে।

৩৮.

সকালে নয়টা নাগাদ কক্সবাজার পৌছোলো সাঁচিরা। সকালের নাস্তা করে সবাই যার যার রুমে চলে গেল। ঠিক হলো একেবারে বিকেলে বের হবে সবাই মিলে। এই ফাঁকে সবাই একটা লম্বা ঘুম দেবে। সাঁচি রুমে ঢুকে কোনোরকমে ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়লো। ওর এমনিতে গাড়িতে জার্নির অভ্যাস নেই। তাই শরীর টা একটু বেশিই খারাপ লাগছে। ও বেডে শোয়া মাত্রই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। ফুয়াদ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো সাঁচি গভীর ঘুমে। ও সাঁচির কপালে একটা চুমু দিয়ে সাঁচির পাশে শুয়ে পড়লো। ফুয়াদ জানে সাঁচির মনে এখনও অনেক প্রশ্ন ভীর করেছে। হঠাৎ করে ফুয়াদের ওর প্রতি ভালোবাসা হয়তো সাঁচির মনে প্রশ্ন তৈরী করছে। কিন্তু ফুয়াদ কি করবে? ও কি জানতো ও সাঁচিকে ভালোবেসে ফেলবে? রেহনুমার সাথে দেখা করিয়ে দিয়ে সাঁচি একদিনে যেন ফুয়াদের মনের আরো কাছে চলে আসলো একেবারে! আর এই কয়েকদিন সাঁচির মান অভিমান ভাঙাতে ভাঙাতে ফুয়াদ যেন আরো বেশি করে ওর দিকে ঝুকে গেছে ! সাঁচিকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা বেড়েছে দ্বিগুন হয়ে। মাঝে মাঝে মনের কোনে রেহনুমা কে খুঁজে বেড়ায় ফুয়াদ। আজকাল সেখানে সাঁচি ছাড়া আর কারো প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় না ও। ভারী অদ্ভুত ব্যাপার! ও কি তবে রেহনুমা কে পুরো পুরি ভুলে গেলো? ফুয়াদ কি তবে সাঁচিকে ভালোবেসে ফেললো? নিজেকে নিয়ে এভাবে ভাবতে ভয় হয় ফুয়াদের। রেহনুমা কে ধরে রাখতে পারেনি এইটা যেন ওর বিশ্বাসের ভিতটা নষ্ট করে দিয়েছিলো। এরপরে তো ভালোবাসা ব্যাপারটা ওর কাছে ভিতিকর মনে হতো। কিন্তু এখন সাঁচি যেন ওকে নতুন করে ভালোবাসতে বাধ্য করছে। ফুয়াদের ভালো লাগে সাঁচির হাত ধরে রিকশা করে ঘুরতে। ওর ফুচকা খাওয়া দেখতে। কিংবা ওকে একটু জরিয়ে ধরলে বা চুমু দিলে সাঁচির শরীরে যে কাঁপন ওঠে, ফুয়াদের কাছে ঐ মুহুর্তটা ভীষণ ভালো লাগে। এই যে এতো এতো অনুভুতি সেটা এই পাগলি কবে বুঝবে? ও কিভাবে মেয়েটাকে বুঝাবে যে, যাকে মন থেকে ভালোবাসা যায় না তাকে কাছে টানা অর্থহীন। এতো এতো ভাবনা মনটা অসার করে দিচ্ছে ফুয়াদের। সব চিন্তা দূরে ঠেলে ঘুমানোর চেষ্টা করে ফুয়াদ।

বিকেলের দিকে খাওয়া দাওয়া করে সবাই মিলে বিচে গেলো। বিকেল চারটার সময় বেশ করা রোদ। মুরুব্বিরা কেউ থাকতে চাইলো না। পরে ঠিক হলো ইনানী বিচে যাবে। রাতে ওখানেই কোনো রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে ফিরবে। এবার দুটো মাইক্রো নিলো ওরা, একটাতে সব মুরুব্বিরা আর একটাতে সব জোড়া, বাচ্চা কাচ্চা। এবারের রাইডটা সাঁচি বেশ এনজয় করলো। ঘুম থেকে উঠে মনে হয় শরীরটা ঝরঝরে হয়েছে। তাই চেহারায় হাসি ফিরে এসেছে বুঝি! ফুয়াদ দেখলো, সাঁচি বাচ্চাদের সাথে অল্পসল্প দুস্টুমি করে বেশ হাসাহাসিও করলো। ওর ঔ হাসিটুকু দেখেই ফুয়াদের মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। যাক বাবা, পাগলী হেসেছে তো, সেই ঢের। কাল রাত থেকে যে রকম মুড অফ করে বসেছিলো? ফুয়াদ তো ভয় পেয়ে গেছিলো যে, সাঁচি মনে হয় আর ওর সাথে বেড়াতে রাজিই হবে না?

গাড়ি থেকে নেমেই আগে ফটোসেশান হলো প্রিয়র জোরাজোরিতে। আজ রাতে প্রিয়র ম্যারেজ ডে সেলিব্রশন হবে। সে ভীষণ রকম আনন্দিত। সাঁচি খেয়াল করলো প্রিয় যেন আজ বেশিই খুশি! তানভীর এর বিহেভিয়ার ও যেন স্বামীর চেয়ে প্রেমিক প্রেমিক বেশি মনে হচ্ছে! সাঁচি খুশি হয়, সুখি মানুষ দেখতে কার না ভালো লাগে। মনে মনে ভাবে, এরকম খুশি ও নিজেও হতে পারতো। এরকম সুন্দর মুহুর্ত ওরও আসতে পারতো জীবনে। কিন্তু ওর কপালে হয়তো সুখ নেই তাই এসব মুহুর্ত মিস হয়ে গেলো ওর জীবন থেকে। ভেবে আনমনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাঁচি।

এসবের মাঝে দূর থেকে একজন সাঁচিকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো, সে হচ্ছে ফুয়াদ। সে মন ভরে সাঁচিকে দেখছিলো। হঠাৎ সাঁচির হাত ধরে টান দিলো ফুয়াদ-
“চলো আমরা ও দিকটায় যাই। হেঁটে আসি একটু।”
ফুয়াদ আলতো করে সাঁচির হাত ধরে হাটঁতে লাগলো-
“আমার সাথে থাকতে তোমার কি বেশি কষ্ট হচ্ছে, সাঁচি? আমি কি ফোর্স করছি তোমায়?”
সাঁচি কিছু না বলে চুপ থাকলো। ফুয়াদের প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না। ফুয়াদও আর ঘাটালো না।

চলবে—-
©‌‌‌‌Farhana_Yesmin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে